রাজনীতি ও মানবতাকে একসঙ্গে হ্যাঁ বলতে হবে
ডা. এম এ হাসান
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে সারা বিশ্বে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে তা ক্রমে ক্রমে ভয়ংকররূপে আবির্ভূত হয়েছে নানা দেশে নানারূপে। পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থান্ধ ভূ-রাজনীতি এবং কতিপয় তল্পিবাহক অন্য দেশের নষ্টনীতি দেশে দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
যথারীতি এর পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে পরসম্পদ লোভী পরদেশে আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। কোনো কোনো দেশ নিজ স্বার্থে এতে ঘৃতাগ্নী সংযোগ করছে বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়িয়ে।
এরা দেশে দেশে অর্থসহ নানা প্রণোদনা জোগাচ্ছে এবং ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাস বিস্তারের ক্ষেত্র নির্মাণ করছে বিদ্বেষমূলক শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়ে।
ভিন দেশের সংস্কৃতিকে কলুষিত করছে এরাই। নানা কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির সঙ্গে এ শেকড়ছাড়া শিক্ষা ও সংস্কৃতি আমাদের তরুণদের আত্মপরিচয় নির্মাণে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
পেট্রোডলার তথা জ্বালানি তেলভিত্তিক রাজনীতির ছত্রছায়ায় এরাই ভিন্ন মতের বিকাশ ঘটাচ্ছে। এরা মুসলমানদের মধ্যে সূক্ষ্মভেদ রেখা সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। পাশ্চাত্যের লোভ ও ক্রোধ যে ভয়াবহ যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের সূত্রপাত ঘটাচ্ছে তা পরোক্ষভাবে শক্তিশালী করছে সন্ত্রাসীদের নষ্ট দর্শন ও রাজনীতিকে।
এরা শুধু মানুষের জীবন ও সম্পদকেই বিপন্ন করছে না, আক্ষরিক অর্থে অনেক মুসলিম তরুণকে ভয়াবহ রূপে বেপথু ও সাইকোপ্যাথ পর্যায়ে উন্মাদ করে তুলছে।
এ প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসের উন্মেষ, বিকাশ এবং জঙ্গিদের নানা কর্মকাণ্ড নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে না রাখলে বিচ্ছিন্নভাবে তাদের মোকাবেলার প্রয়াসটি সুফল বয়ে আনবে না কোনোভাবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্বের নষ্ট পরিকল্পনা এবং অন্য দেশের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের স্বরূপ উন্মোচন না করে বা প্রতিহত না করে সস্ত্রাস দমন অনেকটা রূপকথার সেই বিষধর সাপকে ছিন্ন করার ঘটনার মতোই রূপ নেবে, যার প্রতিটি অংশ নিজ থেকে নতুন একটি দানবিক সাপের জন্ম দেয়।
এ কারণে সারা বিশ্বের ভুক্তভোগী দেশগুলোকে আস্থায় নিয়ে সম্মিলিতভাবে দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে সন্ত্রাসকে সমূলে উৎখাত করার জন্য।
মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সন্ত্রাস দমন পরিকল্পনায় ব্যক্তির নষ্ট পরিচয় বর্জন এবং সুস্থ পরিচয় অর্জন বা আইডেনটিটি পুনর্নির্মাণের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা অনুভব করতে হবে রাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থাগুলোকে। এ কাজে উচ্চপর্যায়ের গবেষণা সেল গঠন করতে হবে রাষ্ট্রকে। এটা অবশ্য আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধ করার জন্য সন্ত্রাসী কর্মে অর্থের প্রবাহ, অস্ত্রের জোগান এবং পারস্পরিক যোগাযোগটি নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। এ কাজে একটি নির্ভুল তথ্যভাণ্ডার নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ কাজে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব বিষয় ব্যাপকভাবে আলোচনায় আনতে হবে। সন্ত্রাস রোধে এশিয়ার দেশগুলোর ঐক্য ও সমঝোতা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারত, রাশিয়া, চীন, জাপান- এসব দেশকে বাদ দিয়ে কোনো সমীকরণে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না কোনোভাবে। নিরাপত্তার জন্য, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে।
আমেরিকা, ইউরোপের নানা রাষ্ট্র এবং তাদের জনগণকে সমীহর চোখেই দেখে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ। এ শ্রদ্ধার সঙ্গে ভালোবাসাও মিলেমিশে আছে।
নৃতাত্ত্বিকভাবে ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের দেহে যেমন কোল, ভিল, ভেড্ডা, অস্ট্রলয়েড, নিগ্রয়েড ও মঙ্গোলীয়দের রক্ত মিশে আছে, তেমনি রয়েছে ইন্দো-এরিয়ান এবং ভূমধ্যসাগরীয় জনমানুষের নানামুখী প্রভাব। এসব মিশ্রিত রক্ত ও সাংস্কৃতিক স্রোতধারায় সিক্ত বাংলাদেশ ও ভারতের জনগোষ্ঠী।
নৃতাত্ত্বিকভাবে ভারত ও বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর শরীরে যেমন এদের ডিএনএ’র ছাপ রয়েছে, তেমনি ঐতিহাসিকভাবে ভাষায় মিল রয়েছে, বিশেষ করে এর শেকড়ে। অনৈক্যের মধ্যে রয়েছে ধর্মের ভেদজ্ঞান যা প্রকট করে তুলেছে কিছু ব্যক্তি। আর এদেরকে পর্দার অন্তরাল থেকে চালাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কিছু শক্তি। তারপরও ২০০১-এর ৯/১১ ঘটনার পর সব দেশ আমেরিকাবাসীর জন্য কেঁদেছে। ২০০৭-এ যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলায় উদ্বিগ্ন হচ্ছে এ দেশের মানুষ।
এ সামগ্রিক প্রেক্ষাপট আমলে নিয়ে আজ অর্থনৈতিক ফায়দার বিষয়টিকে গৌণ করে দেখতে হবে পাশ্চাত্যের দেশগুলোকে। তাদের ধর্ম ও দর্শন যা শিক্ষা দিয়েছে সেটাই পুনঃপাঠ করতে হবে ইউরোপ ও আমেরিকাকে। অনেক কিছু শেখার আছে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলো মার্কেলের কাছে।
বিশেষ করে, স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কীভাবে বিবেকের প্রকাশ বাস্তবায়ন করতে হয় তা প্রমাণ করতে হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তিকে। এমন কাজ করা যাবে না যা নতুন করে সন্ত্রাস সৃষ্টিতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।
শিয়া, সুন্নি ও কুর্দিদের মধ্যে বিভেদ দূর করে শাতিল আরব থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত এলাকায় শান্তি আনতে হবে। সমঝোতা হতে হবে ইরান, ইরাক, সিরিয়া, তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে। শর্তসাপেক্ষে যদি আমেরিকা ও ইউরোপ এ সমঝোতায় শরিক হয় তাহলে ওই অঞ্চলে যুদ্ধ ও সংঘাতটি শেষ হতে পারে।
আমেরিকা ও ইউরোপের অংশগ্রহণ ছাড়া ওই অঞ্চলে শান্তিরক্ষা সম্ভব নয়। ইয়েমেনের ওপর আঘাত সন্ত্রাসের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে এবং তা আঘাত করতে পারে বিভিন্ন দেশকে।
ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতার বিস্তার রোধকল্পে Demonization-এর অস্ত্রটি নিষ্ক্রিয় বা ভোঁতা করতে হবে রাষ্ট্র ও সমাজকে। Xenophobia-কে না বলতে হবে সবাইকে। ন্যায় কর্মগুলো ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হতে হবে সামাজিক মাধ্যমে। আলোচনায় আসতে হবে পাশ্চাত্যের Xenophobia, আরব ও ইসরাইলিদের Xenophobia। পাশ্চাত্য বিশ্বে বিকশিত ইসলাম বিদ্বেষ- এর কারণ এবং সমাধানের বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হতে হবে।
এসব নিয়ে ব্যাপক ঝড় উঠুক সামাজিক মাধ্যমে। সব ধর্মের সারকথা এবং মূল্যবোধের মূল বিষয়কে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তথ্যপ্রবাহে সঞ্চারিত করতে হবে দৃশ্যমান তথা বোধযোগ্য প্রক্রিয়ায়। সব ধর্মের উপাসনালয়গুলোকে এক আঙিনায় নিয়ে Interfaith dialogue-কে উঁচুস্তরে নিয়ে যেতে হবে।
ধর্মভিত্তিক দর্শন এবং যুক্তিভিত্তিক দর্শনের পাঠ বিদ্যালয়গুলোতে চালু করতে হবে। লাও, তাও, কনফুসিয়াস, চাও, লক, হবস, বেকন, শোপেনআওয়ার, কান্ট, মার্কস, হেগেল, রাসেল, হাক্সলে রাধাকৃষ্ণ, ইবনে রুশদ ও রুমিকে পাঠ করতে হবে সব বিদ্যালয়ে।
কোরআন, তাওরাত, যবুর (Old Testament) ইনজিল (বাইবেল), গীতা, জৈনধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের সারকথা জানার চেষ্টা করুন। আলকায়দা ও আইএসের উত্থানের পেছনে ভূ-রাজনীতির নষ্ট প্রভাব এবং হীন ইহুদি অভিসন্ধির কথা জানতে হবে সবাইকে।
আইএসের উৎপত্তি সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। মত প্রকাশের সুস্থ কৌশল এবং হৃদয় জয়ের সুন্দর পথগুলো তরুণদের দেখানো প্রয়োজন। জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে, সৃষ্টিশীল কর্মের মধ্য দিয়ে বিশ্বজয়ের কৌশল তাদের জানানো প্রয়োজন। তরুণরাই এটা রপ্ত করতে পারবে এবং নতুন পথ উদ্ভাবন করতে পারে।
দেশের উন্নয়নে, দুর্নীতিমুক্ত সুস্থ সমাজ নির্মাণে, বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী জাতির মনন গঠনে তরুণ সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। ভারসাম্যপূর্ণ Code of Conduct কীভাবে নির্মাণ করা যায় সেই আলোচনায় যুক্ত করতে হবে দেশের তরুণ সমাজ, সুশীল সমাজ এবং চিন্তাশীল মানুষগুলোকে। ন্যায়, শান্তি, সমঝোতা, বিনয় ও শুদ্ধতাকে সমাজ ভাবনায় অন্তর্ভুক্ত করে সমাজ গঠনে সবার অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকের মধ্যে যেমন দূরত্ব কমাতে হবে, তেমনি দূরত্ব কমাতে হবে শিক্ষালয় ও অভিভাবকের মধ্যে। পরিবার হবে শিক্ষালয়ের ক্ষুদ্র সংস্করণ। শিক্ষালয় হবে পরিবারের স্বপ্ন নির্মাণের কারখানা।
উভয় স্থানে রোষ ও অহংকার বর্জন করে, Arrogance ও violence কে নির্বাসিত করে, সহমর্মিতা ও ভালোবাসাকে শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে। লোভ, শঠতা, ঔদ্ধত্য বর্জন না করলে, ইতিবাচক ও শুদ্ধ ভাবনা-চিন্তা দিয়ে মনের শূন্যতা পূরণ না করলে, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতি দিয়ে বিচ্ছিন্নতা অতিক্রম না করলে সন্ত্রাস রোধে সাফল্য অধরা থেকে যাবে।
ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা প্রতিহত করতে নানামুখী কাউন্সেলিং, সমঝোতা ও ইন্টিগ্রেশন নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তির মনোজাগতিক শূন্যতা এবং হতাশাচ্ছন্ন চিন্তারোধে কাউন্সেলিং কার্যক্রম যেমন ব্যক্তিপর্যায় থেকে সামাজিক পর্যায়ে নিতে হবে, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টিকে সামাজিক পর্যায় থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিতে হবে।
এ কাজগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের অধীন প্রত্যক্ষ সংযোগভিত্তিক সেবা এবং দূরচিকিৎসা কার্যক্রমভিত্তিক কাউন্সেলিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
একই সঙ্গে সামগ্রিক ইন্টিগ্রেশনের কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য Social Integration Service এবং কমিউনিটি মেন্টাল হেলথ সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে। এসব কাজে যথাযথ অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। এ সেবার মাধ্যমে Identity reconstruction-এর কাজটি করতে হবে।
মূল্যবোধভিত্তিক সদাচার শিক্ষা দেয়ার কাজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মিডিয়াকে সমভাবে কাজ করতে হবে।
সন্ত্রাসী দীক্ষা নেয়া তরুণসহ কারারুদ্ধ সন্ত্রাসীদের ডির্যাডিক্যালাইজেশনের কাজটি করতে হবে প্রফেশনাল সহযোগীদের মাধ্যমে। Social Integration Commission তৈরি করে তার অধীন বড় পরিসরে ডির্যাডিক্যালাইজেশন টিমকে কাজ করতে হবে। এদের কাজ করতে হবে নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সহযোগী হিসেবে।
এ কাজে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আত্মপরিচয় ও মূল্যবোধের ভীত কাঁপানো র্যাডিক্যালাইজেশন প্রক্রিয়াটি প্রতিহত করার জন্য সৃষ্টিশীল তথা গঠনমূলক উদ্যোগ নিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে। এনজিও উদ্যোগ এবং প্রস্তাবিত জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ভূমিকা এ কাজে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন Social Integration Commission & Reconciliation Department নামক একটি সরকারি অধিদফতর এ বিষয়ে বড় মাপের ভূমিকা রাখতে পারে।
জাতিকে সন্ত্রাসী মোটিভেশনমুক্ত করার লক্ষ্যে National Center for De-radicalization নামক একটি বড় ছাতাযুক্ত প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীন। সন্ত্রাস সম্পর্কিত আগাম সংকেত পাওয়ার জন্য এবং এদের উত্থান প্রতিহত করার জন্য Counter Terrorism Database Center তৈরি করা প্রয়োজন।
সমন্বিতভাবে এসব করার জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। মেধা ও মননভিত্তিক পরিকল্পনা এবং সুচিন্তিত তথা সুপরিকল্পিত কার্যক্রমই বিপদমুক্ত করতে পারে দেশকে। ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক সমাজ এবং সামষ্টিক শান্তি ও মর্যাদাভিত্তিক সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিময় জীবন দূর কল্পনার বিষয় হয়ে থাকবে।
আমাদের সীমানা শুধু মেকং থেকে গঙ্গা নয়, তা বিস্তৃত লোহিত সাগর থেকে ভূমধ্যসাগর, এমনকি আলেপ্পো, প্রাচীন হিট্টিরাজ্য নেসা, ককেসাস ও রাইন পর্যন্ত। এ যে আত্মার বন্ধন, তাই আয়লানসহ লাখো শিশুর মৃত্যু ও ওমরানের মতো সহস্র শিশুর দুর্দশা আমাদের হৃদয়ে সীমাহীন রক্ত ঝরায়।
আমাদের দেহে বহমান বিহারের জৈন গুরু মহাবীর, গৌতমবুদ্ধ, চৈতন্য, দূর দেশের হাফিজ, রুমি, ঘরের লালন, রবীন্দ্রনাথ, রামকৃষ্ণের শোনিতধারা। বাংলা ও বিহারের মানুষগুলো অহিংসাকেই ধর্মের প্রধান উপাদান হিসেবে গ্রহণ করেছিল প্রায় তিন হাজার বছর আগে। পাঁচ হাজার বছর আগে এ অঞ্চলের এক কিরাত ও নিষাদই হয়ে উঠেছিল সত্য, সুন্দর ও শান্তির দেবতা শিব।
আজ সেই সময় আগত যখন প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন অতি অনিবার্য হয়ে উঠেছে সন্ত্রাস রোধের জন্য। রাজনীতিকে মানবতা ও শান্তির নিয়ামক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। রাজনীতি ও মানবতাকে একসঙ্গে হ্যাঁ বলতে হবে।
ডা. এম এ হাসান : চেয়ারপারসন, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, বাংলাদেশ