কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য হ্রাসের গতি নিম্নমুখী কেন?
আবদুল লতিফ মন্ডল
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। চলতি বাজারমূল্যে ২০১০-১১ অর্থবছরের স্থূল দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ৭,৯৬,৭০৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দাঁড়ায় ১৫,১৫,৮০২ কোটি টাকায়। চলতি বাজারমূল্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৫,৩৬,১৭৭ কোটি টাকায়, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২২,৫০,৪৭৯ কোটি টাকা।
২০১০-১১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১১ শতাংশে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২ ও ২০১৯)। সরকার চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশে (অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ২০১৯-২০)। তিনি আরও জানিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বাংলাদেশের।
স্বাভাবিক নিয়মে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সঙ্গে যেমন বৃদ্ধি পাওয়া উচিত কর্মসংস্থানের সুযোগ, তেমনি ঊর্ধ্বমুখী হওয়া দরকার দারিদ্র্য হ্রাসের গতি। কিন্তু, বর্তমানে উভয় ক্ষেত্রেই তা নিম্নমুখী। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য হ্রাসের গতি নিম্নমুখী কেন?
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্র্রতিক এক রিপোর্টে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ধীরগতির কথা স্বীকার করা হয়েছে (দ্য ডেইলি স্টার, ২৮ নভেম্বর)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১৬-১৭’ বা শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ অনুযায়ী দেশের মোট ১৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা হল ১০ কোটি ৯০ লাখ, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
২০১০ সালে দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৭০ লাখ (লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১০), যার অর্থ দাঁড়ায়, এই সময়কালে শ্রমশক্তিতে উল্লম্ফন ঘটেছে। এখানে আর যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হল, কর্মক্ষম শ্রমশক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যুবকদের (এখানে যুবক বলতে যুবতীকেও বোঝাবে) সংখ্যার আধিক্য। জরিপ অনুযায়ী মোট কর্মক্ষম শ্রমশক্তির ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ যুবক, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে।
গত বছরের ১৬ নভেম্বর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের কর্মসংস্থান নিয়ে ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৯৯৫-৯৬ সালের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা বিবিএসের ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপের হারের (৪ দশমিক ২ শতাংশ) চেয়ে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
আর যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের ৬ দশমিক ৪ শতাংশের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর যুবকদের বয়সভিত্তিক বেকারত্বের হার থেকে দেখা যায়, ১৫-১৯, ২০-২৪ এবং ২৫-২৯ বয়সসীমার তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার হচ্ছে যথাক্রমে- ১২ দশমিক ৭, ১২ দশমিক ১ এবং ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশে শ্রমশক্তির উল্লম্ফন ঘটছে, কিন্তু সেই শ্রমশক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- এক. শ্রমবাজারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য। বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত যুবক প্রতি বছর শ্রমবাজারে যুক্ত হলেও সে অনুপাতে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না।
এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮ অনুযায়ী এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে সরকারি খাতে কর্মসংস্থান সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। দেশটিতে মোট কর্মসংস্থানে সরকারি খাতের অবদান মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ। দুই. দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে শিক্ষিত যুবকরা আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হতে পারছে না।
এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল- তহবিলের অভাব, প্রশাসনিক জটিলতা এবং ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণনীতিমালা উদ্যোক্তাবান্ধব না হওয়া। তিন. সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এবং মালয়েশিয়ায় চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যে শ্রমশক্তি রফতানি করি তাদের প্রায় সবাই স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে সেখানে শ্রমবাজার সংকুচিত হচ্ছে। বাংলাদেশিদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার কয়েক বছর ধরে বন্ধ। এতে স্বল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত যুবকদের বেকারত্বের হার বাড়ছে। চার. প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে আসছে।
এটি অর্থনীতির প্রায় সব খাতে এবং শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চল উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত একটি স্টাডির বরাত দিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে দেশের পাঁচটি স্পেশালাইজড ইন্ডাস্ট্রিতে, যথা- গার্মেন্টস, খাদ্য ও কৃষি, ফার্নিচার, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি এবং লেদার ও ফুটওয়্যারে ৫৩ লাখ ৮০ হাজার কর্মসংস্থান চ্যালেঞ্জের মুখে। স্টাডিতে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে আগামী দু’দশকে এসব কর্মসংস্থান উধাও হয়ে যাবে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান কমবে গার্মেন্টস খাতে।
পাঁচ. কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে বেকারত্বের হার কমিয়ে আনায় প্রদত্ত রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পালিত না হওয়া। আওয়ামী লীগ দশ বছরের বেশি সময় একটানা ক্ষমতায় রয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে দলটি যে নির্বাচনী মেনিফেস্টো প্রকাশ করে তাতে যেসব বিষয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে একটি ছিল কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং বেকারত্বের হার কমিয়ে আনা। এতে ২০১৩ সালের মধ্যে কর্মক্ষম বেকার জনসংখ্যা ২৪ লাখে এবং ২০২১ সালের মধ্যে তা ১৫ লাখে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়। কিন্তু বিগত দশ বছরে বেকারত্বের হার না কমে বরং বেড়েছে।
এখন দেশে দারিদ্র্য হার হ্রাসের নিম্নগতি নিয়ে আলোচনা করা যাক। বিবিএসের হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (হায়েস) ২০১৬তে স্বীকার করা হয়েছে, ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর দারিদ্র্য ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে কমলেও ২০১০ থেকে ২০১৬ সময়কালে তা কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে। অর্থাৎ দারিদ্র্য হ্রাসের গতি নিম্নমুখী। প্রশ্ন উঠতে পারে, গত কয়েক বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগতভাবে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া সত্ত্বেও ২০১০ থেকে ২০১৬ সময়কালে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি নিম্নমুখী কেন?
চিহ্নিত কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- এক. সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস। ২০০৯-১০ অর্থবছরের ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার এখন দাঁড়িয়েছে ৩ শতাংশের সামান্য ওপরে।
কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি দারিদ্র্য বিমোচনে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই. উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী দেশে বেকারত্বের হার ১৯৯৫-৯৬ সালের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭ সালে ৪ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
আর শ্রমশক্তির চূড়ামণি যুব শ্রমশক্তির বেকারত্ব ২০১০ সালের ৬ দশমিক ৪ শতাংশের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতির সংজ্ঞা মোতাবেক বেকারত্ব ও দারিদ্র্য একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তিন. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দারিদ্র্য হ্রাসে একটি স্বীকৃত পন্থা। এটা ঠিক, এ কর্মসূচির আওতায় ক্রমান্বয়ে কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটছে এবং অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমস্যা হল, যে হারে ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ান হচ্ছে, সে হারে বরাদ্দ বাড়ান হচ্ছে না। এতে অসহায় ও অতিদরিদ্র ভাতাভোগীদের মাথাপিছু বরাদ্দ খুব কমই বাড়ছে এবং তাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। চার. আন্তঃবিভাগীয় বা আঞ্চলিক দারিদ্র্যবৈষম্য নিরসনে উদ্যোগের অভাব।
বিবিএসের ২০১৬ সালের হায়েস অনুযায়ী দেশের বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র হল উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর ও বৃহত্তর দিনাজপুর নিয়ে গঠিত রংপুর বিভাগ। এখানে দারিদ্র্যের হার ৪৭ দশিক ২ শতাংশ, যা জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য হারের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১০ সালের হায়েসের দারিদ্র্য তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছিল রংপুর বিভাগ। দেশে দারিদ্র্য হারে শীর্ষ ১০ জেলার মধ্যে পাঁচটিই রংপুর বিভাগে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, উন্নয়ন বরাদ্দের ১ শতাংশও পাচ্ছে না রংপুর বিভাগ।
রিদ্র্য তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ময়মনসিংহ বিভাগ (দারিদ্র্য হার ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং রাজশাহী বিভাগ (দারিদ্র্য হার ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ)। পাঁচ. দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা ও ছোট পরিবার গঠনের মধ্য দিয়ে উন্নত মানের জীবনযাপনের সচেতনতার অভাব দারিদ্র্য হ্রাসে একটি বড় বাধা। ১৯৯১-৯২ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৩০ লাখ।
১৯৯১-৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ কোটির কিছুটা বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এদের বেশিরভাগ এসেছে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী থেকে। শিক্ষা, সচেতনতা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে এরা ‘দারিদ্র্য চক্র’ থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারগুলো বংশপরম্পরায় দারিদ্র্য চক্রের মধ্যে আবর্তিত হতে থাকে। ফলে উল্লেখযোগ্য হারে কমছে না দরিদ্র মানুষের সংখ্যা।
ছয়. হায়েস-২০১৬-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাথাপিছু আয় ও পারিবারিক আয় দুটিই বেড়েছে। তবে সে সঙ্গে প্রতিবেদনে এটাও স্বীকার করা হয়েছে যে, ধনী-দরিদ্রের আয়বৈষম্য বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দরিদ্রতম ৫ শতাংশ মানুষের আয় ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে মোট আয়ের দশমিক ২৩ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ছিল দশমিক ৭৬ শতাংশ। দরিদ্রতম ১০ শতাংশ মানুষের আয় ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে মোট আয়ের ১ দশমিক ১ শতাংশে, যা ২০১০ সালে ছিল ২ শতাংশ।
দরিদ্র ২০ শতাংশ মানুষের আয় ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে মোট আয়ের ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশে, যা ২০১০ সালে ছিল ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। অন্যদিকে ধনীদের আয় বেড়েছে। সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় ২০১০ সালের মোট আয়ের ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে মোট আয়ের ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ হয়েছে।
সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষের আয় ২০১০ সালের মোট আয়ের ৩৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে মোট আয়ের ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ মানুষের আয় ২০১০ সালের ৫১ দশমিক ৭৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে মোট আয়ের ৫৩ শতাংশ হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল দরিদ্র মানুষ পাচ্ছে না। ফলে কাঙ্ক্ষিত হারে দারিদ্র্য কমছে না।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায়, গত প্রায় এক দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও আয়বৈষম্য হ্রাসে অগ্রগতি নেই। দারিদ্র্য হ্রাসের হারে দেখা দিয়েছে নিম্নগতি। দারিদ্র্য হ্রাসের নিম্নমুখী হারকে ঊর্ধ্বমুখী করতে সরকারের যেসব পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- এক. কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করে কমপক্ষে ২০০৯-১০ অর্থবছরের হারে (৬ দশমিক ৫৫ শতাংশে) উন্নীত করা। দুই. অধিক পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
এজন্য পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ (নগররাষ্ট্র ব্যতীত) বাংলাদেশের শিল্প ও কৃষিতে অটোমেশনের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তিন. ধনী-গরিবের আয়বৈষম্য হ্রাসে ব্যবস্থা নিতে হবে। চার. নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ভাতাভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ নির্ধারণে এমন কৌশল নিতে হবে যাতে তারা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য চক্রের বাইরে আসতে পারে।
পাঁচ. আন্তঃবিভাগীয় দারিদ্র্য নিরসনে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি দরিদ্র বিভাগ রংপুরসহ অন্য যেসব বিভাগে দারিদ্র্য হার জাতীয় দারিদ্র্য হারের ওপরে, সেসব বিভাগের বাজেটে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ এমনভাবে বাড়াতে হবে যাতে তারা ধীরে ধীরে ধনী বিভাগগুলোর পর্যায়ে আসতে পারে। ছয়. সমাজের নিম্নস্তরের জনগণকে উন্নত জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধকরণের মধ্য দিয়ে ছোট পরিবার গঠনে সচেতনতা সৃষ্টির জোর প্রচেষ্টা নিতে হবে।
আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক
latifm43@gmail.com