বিমসটেক : বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে বহুমাত্রিক সহযোগিতা উদ্যোগ

এম শহীদুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে বহুমাত্রিক প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা সংক্ষেপে বিমসটেক হিসেবে বহুল পরিচিত। এ আঞ্চলিক সংস্থাটি তার অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বঙ্গোপসাগরের আশপাশে সাতটি রাষ্ট্রকে একসূত্রে গেঁথেছে।
দেশগুলো হল- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড। ১৯৯৭ সালে ব্যাংককে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা এবং সেখানে পঠিত ঘোষণাপত্রে বর্ণিত বিমসটেকের প্রাথমিক লক্ষ্য উচ্চারিত হয়েছিল- বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্প, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পর্যটন, কৃষি, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো ও পরিবহন ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সহযোগিতার প্রকল্পগুলো চিহ্নিতকরণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রুতধারায় অর্থনৈতিক বিকাশের একটি সক্রিয় পরিবেশ তৈরি করা।
সদস্যদের সমন্বয়ে বিমসটেক দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি সেতুবন্ধ রচনা করেছে পারস্পরিকভাবে একটি নিবিড় সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসের প্রতিনিধিত্ব করতে। লক্ষণীয়, বিমসটেক অঞ্চলটি বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল অঞ্চলগুলোর একটি। জনসংখ্যা ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন এবং সম্মিলিত জিডিপি ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার।
বিমসটেক অঞ্চলটি বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যকার মূল ট্রানজিট রুট হওয়ায় তার নিজস্ব বলয়ের বাইরেও ভূ-রাজনৈতিক ও ভূতাত্ত্বিক গুরুত্ব বহন করে ক্রমবর্ধমানরূপেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সংহতিতে বিমসটেক নিজেকে একটি দক্ষ প্লাটফর্মে রূপান্তরিত করতে ক্রমাগতভাবে বিকশিত হচ্ছে। বিমসটেকের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় সহযোগিতার ছয়টি ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণের মধ্য দিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র সংখ্যা চৌদ্দে উন্নীত হয়েছে।
এগুলো হল- বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, পরিবহন ও যোগাযোগ, প্রযুক্তি, পর্যটন, জ্বালানি, কৃষি, মৎস্য, সন্ত্রাসবাদ দমন, বহুজাতিক অপরাধ প্রতিরোধ, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, জনস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, সংস্কৃতি এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ স্থাপন। বহুধারার এসব ক্ষেত্র সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিমসটেক অঞ্চলভুক্ত সব সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে একটি শামিয়ানার তলে একত্রিত করা হয়েছে।
লক্ষণীয়, সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোয় সফলতা লাভে বাস্তবতার নিরিখে প্রাথমিকভাবে গৃহীত প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে সন্ত্রাসবাদ দমন ও বহুজাতিক অপরাধ প্রতিরোধ করার মতো ক্ষেত্রগুলোকেও বিমসটেকের কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কেবল প্রকল্পভিত্তিক সহযোগিতা বাস্তবায়নই বিমসটেকের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। কিন্তু সংস্থাটির বাস্তবোচিত সহযোগিতা সম্প্রসারণে অনিবার্যভাবে এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ গঠনে ধীরে ধীরে এর আইনি কাঠামো তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা শুরু হয়, যেন এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরীয় সাতটি দেশ একটি অনন্য গ্রুপ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে একটি পৃথক পরিচয় নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
সে লক্ষ্যে, বিমসটেক ২০০৪ সালে ‘বিমসটেক ফ্রি ট্রেড এরিয়া’ বিষয়ক ‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্র্রিমেন্টের’ মতো যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এরপরই উল্লেখ করা যেতে পারে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, বহুজাতিক সমন্বিত অপরাধ দমন এবং অবৈধ মাদক পাচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সব সদস্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা সম্পর্কিত বিমসটেক কনভেনশন (২০০৯) এবং বিমসটেক গ্রিড আন্তঃসংযোগ (২০১৮) স্থাপনের জন্য সমঝোতা চুক্তি।
২০১৪ সালে ঢাকায় বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এ আঞ্চলিক ফোরামকে একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো দেয়। চারটি বিশেষায়িত কেন্দ্র যথা- ভারতে বিমসটেক আবহাওয়া ও জলবায়ু কেন্দ্র (ভারত), বিমসটেক সাংস্কৃতিক শিল্প পর্যবেক্ষণ (ভুটান), বিমসটেক এনার্জি সেন্টার (ভারত) এবং বিমসটেক প্রযুক্তি স্থানান্তর সুবিধা (শ্রীলংকা) বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যকর রয়েছে।
বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সচিবালয়ের আয়োজক দেশ হিসেবে বিমসটেক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় উদ্বোধনের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেকের প্রতি বাংলাদেশের নানাবিধ প্রতিশ্রুতির কথা দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের আপত্তিতে থেমে থাকা ‘বিমসটেক এফটিএ’ আলোচনা তিন বছরের ব্যবধানে আবার শুরু হয়েছে। এ বছরের শেষের দিকে সংস্কৃতিবিষয়ক বিমসটেক মন্ত্রিপরিষদ এবং পরের বছরের প্রথম দিকে পর্যটনবিষয়ক বিমসটেকের মন্ত্রিপরিষদ সভা আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
বিমসটেকের সামগ্রিক দৃশ্যমানতা বাড়াতে, বিমসটেক সচিবালয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বে বিমসটেকের কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সেমিনার এবং গোলটেবিল আয়োজনে আগ্রহী।
১৬ অক্টোবর, ২০১৬- ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত বিমসটেক নেতাদের অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনে সব নেতা দৃঢ়ভাবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে আরও কার্যকর ও ফলাফলমুখী হতে বিমসটেক নতুনভাবে প্রেরণা লাভ করে। এ সময়ের পর থেকে বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধি চুক্তি, শুল্কবিষয়ক সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তা সম্পর্কিত চুক্তি, বিমসটেক মোটর যানবাহন চুক্তি এবং বিমসটেক উপকূলীয় শিপিং চুক্তিসহ সব চুক্তি সম্পাদন প্রচেষ্টা দ্বিগুণ হয়েছে।
একই সঙ্গে বিমসটেক এফটিএ সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির সাংবিধানিক চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করতে বাণিজ্য আলোচনা কমিটি (টিএনসি) এবং এর কার্যনির্বাহী দলগুলো আবারও আলোচনা শুরু করে।
নভেম্বর, ২০১৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ট্রেড নেগোসিয়েশন কমিটি- টিএনসির একবিংশ বৈঠকে মালামাল বাণিজ্য সম্পর্কিত চুক্তি এবং এর উৎপত্তি বিধি ও পণ্য নির্দিষ্টকরণ বিধির (পিএসআর) কেন্দ্রীয় উপাদানগুলোর বিষয়ে সমঝোতায় উপনীত হয়।
এছাড়াও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কহীন বাধা অপসারণের লক্ষ্যে অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা চুক্তিগুলোর বিষয়েও আলোচনা অগ্রসরমান। বিমসটেক অবশ্যম্ভাবীরূপে স্বীকার করে, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল সুবিধার ফসল ঘরে তুলতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়ন বৃদ্ধি এবং একইসঙ্গে অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা জরুরি।
অর্থাৎ পর্যটন, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কেন্দ্রিক অগ্রগতি অর্জনে একটি কার্যকর পরিবহন নেটওয়ার্ক তৈরি করা বিমসটেকের সফলতার একটি পূর্বশর্ত।
২০১৪ সালে এডিবি সহায়তায় বিমস্টেক পরিবহন অবকাঠামো ও লজিস্টিক স্টাডির (বিটিআইএলএস) দ্বারা চিহ্নিত প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বাজেটের ৭৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশিরভাগ সদস্য রাষ্ট্র উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে করে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তর ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক সংযোগ স্থাপনে পূর্বের হারিয়ে যাওয়া সংযোগগুলো পুনঃস্থাপিত হতে পারে।
বিমসটেক বর্তমানে পরিবহন সংযোগ মাস্টারপ্লানের বিকাশ সাধন করছে, যাতে করে বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে এবং এর বহির্ভূত অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে বিরামবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে। এটি বাস্তবায়নে বিমসটেক বিভিন্ন পরিবহন পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যাতে করে বর্ধিত পরিবহন সুবিধা, বাণিজ্য সংযোগ এবং আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন ত্বরান্বিত করা যায়।
সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকারি কর্মকর্তা এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলোর মধ্যে নিয়মিতভাবে মতবিনিময় সহজতর করার জন্য বিমসটেক একটি কার্যকর প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে চলেছে; যার ফলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভেতর পার্থক্যগুলো সংকুচিত করা এবং সহযোগিতার জন্য সাধারণ ভিত্তি তৈরি করা সম্ভব হয়ে উঠছে।
এরই মাঝে বিমসটেকের চারটি শীর্ষ বৈঠক, ষোলটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সভা, তিনটি জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানদের সভা এবং উনিশটি পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে বিভিন্ন স্তরের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার নিয়মিত সভা করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেয়া হয়েছে।
বিমসটেকের পরিচালনা পদ্ধতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে যৌক্তিক ও একীকরণের জন্য প্রচেষ্টা চলছে। চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে নেতারা সম্মত হয়েছেন যে, শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় পঞ্চম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে একটি বিমসটেক সনদ গ্রহণ, বিমসটেক উন্নয়ন তহবিল (বিডিএফ) গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং সংস্থাটির সঠিক লক্ষ্য স্থির করতে বিদ্যমান ১৪টি খাতের পর্যালোচনা সাপেক্ষে সেগুলো যৌক্তিকভাবে হ্রাস করার বিষয়ে।
বিমসটেক সচিবালয়কে শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র থেকে একজন করে পরিচালক নিয়ে পরিচালকের সংখ্যা সাতে উন্নিত করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন-২০৩০-এর এজেন্ডা পূরণের লক্ষ্যে, বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর প্রচেষ্টার সঙ্গে এ সংস্থাটি ক্রমবর্ধমানভাবে তার কার্যলাপকে একই ধারায় সন্নিবেশিত করছে।
চতুর্থ বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলন টেকসই উন্নয়ন-২০৩০-এর এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য বিমসটেক তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সব সেক্টরের কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের অভীষ্ট যাত্রায় সর্বোচ্চ মাত্রায় অবদান রাখতে আহ্বান জানিয়েছে। ইউএন সিস্টেম, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতা স্থাপন প্রক্রিয়ায় বিমসটেক কাজ করে যাচ্ছে।
বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্য কেন্দ্র এবং বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কেন্দ্র হিসেবে বঙ্গোপসাগর ঐতিহাসিকভাবে ব্যবহৃত হতো। আর বর্তমানে এ অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, পর্যটন, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিমসটেক ঐতিহাসিক যোগাযোগ পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট রয়েছে।
বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়, সদস্য দেশগুলোর পুনরোচ্চারিত রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো স্থাপনের তাগিদের সঙ্গে বিমসটেক এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর অন্তরে একটি নতুন আশার আলো সঞ্চারিত করেছে। বস্তুত, বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি-সমৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়নে আরও বৃহত্তর ভূমিকা রাখার জন্য সময় এখন বিমসটেকের দুয়ারে দাঁড়িয়ে।
এম শহীদুল ইসলাম : বিমসটেকের সেক্রেটারি জেনারেল; সাবেক রাষ্ট্রদূত
sg@bimstec.org