Logo
Logo
×

বাতায়ন

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অসম্মতি কেন

Icon

ড. এম এল আর সরকার

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০১৯, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অসম্মতি কেন

পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি লাঘবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার দাবি অনেকের এবং অনেক দিনের। ইতিমধ্যে আটটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় সম্মত হয়েছে। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখনও এ পদ্ধতিতে সম্মত হয়নি।

অনেকেই মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ অসম্মতির কারণ হচ্ছে অর্থলিপ্সা। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে নানা কটুকথা।

এমনকি শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক প্রফেসর জাফর ইকবালও লিখেছেন শিক্ষকরা লোভী এবং ছেলেমেয়েদের জন্য তাদের কোনো মায়া নেই। আমি সবিনয়ে বলতে চাই, অর্থের লোভে শিক্ষকরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় রাজি হচ্ছেন না, এ ধারণাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জুন একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে শিক্ষকদের দীর্ঘ আলোচনা শুনেছি। সমন্বিত ভর্তির পক্ষে ভিসিসহ অনেকেই কথা বলেছেন; কিন্তু বিপক্ষের যুক্তির কাছে সমন্বিত পরীক্ষা হেরে গেছে; অর্থের কাছে নয়।

সবাই ভর্তি ফি কমানোর কথাই বলেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সমন্বিত পরীক্ষা হলেই শিক্ষকদের টাকা কম হবে বা কম নিতে হবে, এমন কোনো কথা আমার জানা নেই। টাকা নেয়ার ইচ্ছা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকভাবেই নিতে পারে।

শিক্ষকরা পরীক্ষার কাজে সামান্য অর্থই পায়। অনেকেই জানেন না, ভর্তি পরীক্ষার ফি’র একটি বিরাট অংশ (প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ টাকা) নেয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনুষদ; কিন্তু দুর্নাম হয় শিক্ষকদের। বিশ্ববিদ্যালয় এ অর্থ না নিলে অনায়াসেই ভর্তি পরীক্ষার ফি অর্ধেক কমানো যেত/যায়।

প্রশ্ন হচ্ছে, যদি শিক্ষকদের অর্থলিপ্সা নাই থাকে, তাহলে এতদিন কেন সমন্বিত পদ্ধতি চালু হয়নি? কেন এবারও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় (যেমন- ঢাকা বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় রাজি হচ্ছে না?

হ্যাঁ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১. ইউজিসি অথবা কেন্দ্রীয় সেলের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, ২. এমসিকিউর পরিবর্তে লিখিত পরীক্ষা, ৩. ফলাফলের ভিত্তিতে আসন সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো এবং ৪. একযোগে প্রায় ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা।

কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষকই মনে করেন, এ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা সহজ; কিন্তু সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে প্রায় অসম্ভব। এর ফলে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে উঠবে নানাভাবে বিতর্কিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী।

পাঠকের উদ্দেশে আমি সমন্বিত পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষকদের প্রধান তিনটি আশঙ্কা এবং গত বছর প্রফেসর জাফর ইকবাল স্যারের প্রকাশিত একটি লেখার ওপর পাঠকের কিছু মতামত এখানে উল্লেখ করছি।

জালিয়াতিমুক্ত ভর্তি পরীক্ষা

শিক্ষকরা চান, জালিয়াতিমুক্ত ভর্তি পরীক্ষা। অনেকদিন ধরেই তারা এ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারপরও ঘটছে নানা অঘটন। পরীক্ষার কাজে একটু অনিশ্চয়তা থাক, তা কোনো শিক্ষকই চান না। কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রতিটি পর্যায়ে রয়েছে বিভিন্ন অনিশ্চয়তা, যা পরীক্ষার গুণগতমানকে কলুষিত করবে।

প্রথমত, কয়েক লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রয়োজন শিক্ষক ও সহায়ক কর্মচারীর সমন্বিত একটি কার্যকরী পরিকল্পনা। ইউজিসি বা সেন্ট্রাল সেলের এরকম একটি পরিকল্পনা এখনও অনুপস্থিত।

ধরে নিলাম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শিক্ষক এবং কর্মচারীরা এসে এখানে কাজ করবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ কাজ নিয়ন্ত্রণ বা পর্যবেক্ষণ করবে কে? অনুষদ বা বিভাগভিত্তিক পরীক্ষায় অনুষদ ডিন বা বিভাগের সভাপতিই তত্ত্বাবধানের কাজটি করে। কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন এতগুলো লোক একসঙ্গে কাজ করবে, তখন ব্যাপারটি হবে সম্পূর্ণ অন্যরকম।

কে কোন দায়িত্ব নেবে এবং সেই দায়িত্ব যথাযথ পালন না হলে বা অবহেলা হলে কী হবে, তা বলা খুবই কঠিন। দেখা যাবে, সবাই দায়িত্ব নিতে চাইবে; কিন্তু দায়িত্ব পালন বা দায়িত্ব অবহেলার দায়িত্ব কেউ নেবে না। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে ‘ভাগের মা গঙ্গা পায় না’ অবস্থা। আর যদি গঙ্গা পায়, তবে তার আগেই মায়ের দেহ পচে দুর্গন্ধ বের হবে।

দ্বিতীয়ত, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশন, প্রুফরিডিং, তিন সেট প্রশ্ন বাছাইকরণ ইত্যাদির কথা না হয় বাদই দিলাম; কিন্তু কয়েক লাখ প্রশ্নপত্রের প্রিন্টিং, প্যাকেটকরণ, সংরক্ষণ এবং সারা দেশে সেগুলো নিরাপদে পৌঁছানো, উত্তরপত্র পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে সেন্ট্রাল সেলে পৌঁছানো এবং সেখান থেকে পরীক্ষকের কাছে পাঠানো ইত্যাদি কাজের জন্য প্রয়োজন দক্ষ একটি ব্যবস্থাপনা।

দুঃখজনক যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সীমিত সম্পদ এবং লজিস্টিক সাপোর্টে সারা দেশে একযোগে এ কাজগুলো সুচারুভাবে করা প্রায় অসম্ভব। নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে এ কাজে জড়িত হবে অনেক লোক। এ লোকগুলোর যে কোনো একজনের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত দায়িত্ব অবহেলা বা প্রশ্ন ফাঁসকারীদের চক্রান্ত- এসব ভর্তি প্রক্রিয়াটিকে করতে পারে বিতর্কিত।

উত্তরপত্র মূল্যায়ন

লিখিত পরীক্ষার সিদ্ধান্তটি প্রশংসনীয়। এমসিকিউ পদ্ধতিতে নানা কারণে প্রকৃত মেধা যাচাই সম্ভব নয়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ‘লিখিত পরীক্ষা হলে উত্তরপত্রের মূল্যায়ন’ সঠিকভাবে হবে কীভাবে? এটি গ্রেড বা পাস-ফেলের পরীক্ষা নয়।

এ পরীক্ষায় একটি নম্বরের গুরুত্ব অনেক। এ পরীক্ষায় একজন পরীক্ষক দিয়ে সব উত্তরপত্রের একটি প্রশ্ন মূল্যায়নের ব্যবস্থা করাই হবে উত্তম। কিন্তু যদি দুই লাখ পরীক্ষার্থী থাকে, তবে কি একজন শিক্ষকের পক্ষে দুই লাখ উত্তরপত্রের একটি উত্তর মূল্যায়ন সম্ভব? সম্ভব না হলে কি ২০ জন শিক্ষককে এ দায়িত্ব দেয়া হবে?

যদি ২০ জন শিক্ষক এ মূল্যায়ন করে, তা হলে কি তাদের মূল্যায়ন একই রকম হবে? যদি তা না হয়, তাহলে পরীক্ষার্থীরা কি ন্যায়বিচার পাবে?

মাইগ্রেশন এবং বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ভর্তি এক নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে অনেক বিভাগ। ফলে এখানে ভর্তিচ্ছুদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিষয় পছন্দের ব্যাপারটি কোনোভাবেই হেলাফেলার বিষয় নয়।

ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার পর এতগুলো বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাইগ্রেশন করার বিষয়টি হবে সম্ভবত একটি হতাশাব্যঞ্জক প্রক্রিয়া। অবস্থা এমনও দাঁড়াতে পারে, বিষয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির ইচ্ছা কম, সেসব বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করার পর ক্লাস শুরু করলেও কিছুদিন পর দেখা যাবে, শিক্ষকরা যাদের ক্লাস নিয়েছে; তারা আর ক্লাসে নেই। অন্য নতুন ছাত্রছাত্রী আবার ভর্তি হয়েছে বা হচ্ছে।

আর একটি সমস্যা হচ্ছে, যদি পরীক্ষার ফলাফলের পর ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করতে দেয়া হয়; তাহলে দেখা যাবে, যারা পরীক্ষায় ভালো করেছে, তারা ঢাকা অথবা বড় শহরকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই ভর্তি হবে।

এ অবস্থা সদ্য গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য হবে ক্ষতিকর এবং এটি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গড়ে উঠবে একটি প্রকট স্তরভেদ। এর ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ছাত্রছাত্রী নিজেরাও হীনমন্যতায় ভুগবে এবং চাকরিদাতারও এসব বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা থাকবে। অন্যদিকে আগেই পছন্দক্রম ঠিক করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উপকৃত হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ভর্তিচ্ছুরা বঞ্চিত হবে।

পাঠকের মতামত

মন্তব্য ১ : যেখানে অধ্যাপক জাফর ইকবাল কথা বলেছেন, সেখানে সমন্বিত ভর্তি নিয়ে কথা বলা কঠিন। তারপরও মতামত প্রকাশ করা দরকার। এ প্রক্রিয়া যদি চালু হয়, তাহলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি বা খরচ কিছুটা কমবে; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছার পথ অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একটি পরীক্ষা কোনো কারণে খারাপ হলে ভুল সংশোধনের সুযোগ আর থাকবে না।

মন্তব্য ২ : সময় বাঁচবে; কিন্তু দুর্নীতি বেড়ে যাবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকবে। সমম্বিত ভর্তি পরীক্ষা একই প্রশ্নপত্রে হলেও কেন্দ্র থাকবে আলাদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীকে যেভাবে কড়া নজরদারিতে পরীক্ষা দিতে হবে, প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে কিন্তু সেরকম নজরদারির মধ্যে পরীক্ষা দিতে হবে না। ‘সুবিধামতো এলাকায়’ পরীক্ষা দেয়ার অতি সুবিধা নেয়ার লোকও তৈরি হয়ে যাবে।

সমস্যার সমাধান কোথায়?

বর্তমান ভর্তি প্রক্রিয়া ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের জন্য কষ্টদায়ক; কিন্তু একটি সমস্যা সমাধানের জন্য অন্য একটি বড় সমস্যার সৃষ্টি করা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত। অবশ্যই ভর্তির প্রক্রিয়া নির্ধারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এখতিয়ার আছে; তবে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা কোনোভাবেই সুখকর নয়। বর্তমান সমস্যার সমাধানকল্পে কিছু বিকল্প প্রস্তাব ভেবে দেখা যেতে পারে। এ প্রস্তাবগুলো নতুন কিছুই নয়; বরং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবর এবং বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করেই প্রস্তুত। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সরকার এবং দেশবাসী ভেবে দেখলে হয়তো বা কিছু সমাধান হলেও হতে পারে-

প্রস্তাব

১. একক বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নয়; গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়াই হবে যুক্তিযুক্ত। সাধারণ, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং প্রকৌশল- এ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গুচ্ছ তৈরি করাই হবে শ্রেয়। যেমন ইতিমধ্যে কৃষিগুচ্ছ তৈরি হয়ে গেছে। তবে আসন সংখ্যা বেশি হলে প্রয়োজনে গুচ্ছগুলোর মধ্যে উপগুচ্ছও তৈরি করা যেতে পারে।

২. পরীক্ষার যাবতীয় দায়দায়িত্ব গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই ইউজিসি বা সেল তৈরির অবকাশ নেই। তবে কৃষিগুচ্ছের মতো মূল দায়িত্ব পর্যায়ক্রমে একটি বা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দিলে কাজের গতি এবং দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে।

৩. শুধু লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে ক্ষতিকর। একই দিনে এবং একই সময়ে এমসিকিউ-এর সঙ্গে লিখিত পরীক্ষা নেয়াই হবে শ্রেয়। এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে পরীক্ষার্থীরা উত্তরপত্র দুটি আলাদা করতে না পারে। কিন্তু কোডিং করার পর উত্তরপত্র দুটি যাতে আলাদা করা যায়, সেই ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৪. এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য যথাক্রমে ৩০ মিনিট এবং ১ ঘণ্টা সময় দেয়া যেতে পারে। এমসিকিউর পর লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেয়া যেতে পারে। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন দেয়ার সময় এমসিকিউ-এর প্রশ্নপত্র নিয়ে নেয়াই ভালো হবে।

৫. যে যেভাবেই যুক্তি দেখাক না কেন, কোনোভাবেই লিখিত পরীক্ষার সব উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার অবকাশ নেই। গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র (যারা এমসিকিউ পরীক্ষায় সর্বাধিক নম্বর পেয়েছে) মূল্যায়ন করতে হবে। অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের জন্য একই প্রশ্নের উত্তর দু’জন পরীক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন করা যেতে পারে।

৬. পরীক্ষার আসন গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাখা যেতে পারে। তবে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরের একটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা থাকলে পরীক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উভয়েরই যাতায়াতের সমস্যা কম হবে। সরকারকে অবশ্যই পরীক্ষার আগের দিন হেলিকপ্টারে পরীক্ষার যাবতীয় জিনিসপত্র বিভাগীয় শহরগুলোতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. এককভাবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা না নেয়াই উচিত। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে (যেমন ঢাকা ও রাজশাহী) যেগুলোতে কৃষি, প্রকৌশল, বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা সব বিষয়াবলিই আছে এবং আসন সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার বা বেশি।

এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে অথবা দুটি বিশ্ববিদ্যালয় একত্রে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে। তবে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি পরীক্ষা কেন্দ্র রাখাই হবে জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার প্রকাশ। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও উচিত হবে, এমসিকিউ-এর সঙ্গে লিখিত পরীক্ষা নেয়া।

৮. আসন সংখ্যা কম হওয়ায় এবং সক্ষমতা থাকায় বুয়েট ইচ্ছা করলেই নেতৃত্ব দিতে পারে অন্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। এ কাজটি করলে তাদের ক্ষতি তো হবেই না; বরং দেশের প্রকৌশল বিদ্যার উন্নতিই হবে।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, তাদের নিজস্বতা যে কোনো মূল্যে বজায় রাখতেই হবে; তাহলে বলার তেমন কিছু নেই। এক্ষেত্রে প্রস্তাবনা ৭-এর মতো তাদেরও জনদুর্ভোগ এবং পরীক্ষা পদ্ধতির কথা বিবেচনা করাই হবে সমীচীন। এটি করলে বুয়েট ১০ হাজারের বেশি আবেদনকারীকে পরীক্ষার সুযোগ দিতে পারবে, যা অনেকের এবং অনেক দিনের দাবি।

আমার এ প্রস্তাবগুলো কোনোভাবেই পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চিন্তাশীল যোগ্য লোকের অভাব নেই। তারা আমার চেয়েও ভালো বোঝেন এবং জানেন। আমার বিশ্বাস, এ চিন্তাশীল মানুষগুলো যদি খোলা মনে সচেষ্ট হন; তবে শুধু ভর্তি সমস্যা নয়, দেশের অন্য অনেক সমস্যারও সুন্দর সমাধান সম্ভব। আমার বিনীত অনুরোধ, আসুন সবাই মিলে দেশের স্বার্থে এ সমস্যার সমাধান করি।

ড. এমএলআর সরকার : প্রফেসর, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

lrsarker@yahoo.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম