
প্রিন্ট: ০১ মে ২০২৫, ০৯:৪৫ এএম
পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছে

রাকিবুজ্জামান আহমেদ
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। একটির পর একটি স্প্যানে দৃশ্যমান এখন পুরো সেতু। যে পদ্মার একদিন ছিল না কূল-কিনারা; কয়েকদিনের মধ্যেই সেই পদ্মার বুকের ওপর দিয়ে ছুটবে গাড়ি, চলবে ট্রেন।
মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত এক সুতোয় গেঁথে দৃষ্টিসীমায় পূর্ণরূপে ভেসে উঠেছে পদ্মা সেতু। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জুনের ২৫ তারিখে পদ্মা সেতু শুভ উদ্বোধন হবে। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু উদ্বোধন করে গাড়িতে চড়ে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যাবেন।
সত্যিকার অর্থে স্বপ্নটা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের; আর তা বাস্তবায়ন করলেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর দুই প্রান্তের দুটো জেলাকে সংযুক্ত করেছে পদ্মা সেতু।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ইশতেহারে যমুনা, বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী ও শীতলক্ষ্যার ওপরে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। কিন্তু ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর পদ্মা সেতুর স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় পদ্মা সেতু বাংলাদেশের গর্ব। বিশ্বব্যাংক ও তার সঙ্গে আরও কয়েকটি দাতাগোষ্ঠী যখন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করল না, তখন এ দেশের সাহসী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সুচিন্তিতভাবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে হাত দেন। এটি ছিল তার বিজ্ঞজনোচিত চিন্তা। একই সঙ্গে তিনি পদ্মা সেতুতে রেল ব্যবস্থাপনাও যুক্ত করেন। পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য খুলে যাচ্ছে। সেতুকে ঘিরে মানুষের জীবনযাত্রার মানও বদলাচ্ছে। সেখানে বিশ্বমানের অলিম্পিক ভিলেজ, বেনারসি তাঁতপল্লী, রাজউকের উদ্যোগে আইকন টাওয়ার, দেশের মধ্যে একমাত্র ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমিসহ বড় বড় প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে।
এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। ঢাকা থেকে মাওয়া-ভাঙ্গা-যশোর-খুলনা রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ঢাকা থেকে খুলনা, মোংলা, বরিশাল, কুয়াকাটা ইকোনমকি করিডোর স্থাপিত হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে (এন-৮) ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।
ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ সহজতর হবে। নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক স্থাপিত হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে এবং দেশের শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে।
২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে পদ্মা নদী পারাপার হয়ে দৈনিক যেখানে ১২ হাজার যান চলাচল করে, সেখানে সেতু খুলে দিলেই যান চলাচল দ্বিগুণ হতে পারে এবং প্রতি বছর যানবাহন ৭-৮ শতাংশ হারে বেড়ে ২০৫০ সালে দৈনিক ৬৭ হাজার যানবাহন চলবে।
তবে এ সংখ্যা বাড়তেও পারে। কারণ, যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচলের যে সম্ভাব্য হিসাব করা হয়েছিল, বর্তমানে এর চেয়ে বেশি যান চলাচল করছে। অর্থনৈতিক প্রভাবও অনুমানের চেয়ে বেশি হয়েছে। সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকৃত যানবাহন থেকে টোল আদায় দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গ্রামীণ উন্নয়নশীল এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, জীবনমানের উন্নয়ন ও জ্ঞান-মনোভাবের ব্যাপক পরিবর্তনে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির বিকল্প নেই। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এত সমস্যা মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য একটা স্যালুট শেখ হাসিনার প্রাপ্য। আর তার সঙ্গে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার এই লাইন কটি হোক আজকের দিনের স্লোগান-
সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়ঃ
জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।
সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, লালমনিহাট জেলা শাখা