Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

বিলুপ্ত হচ্ছে প্রকৃতির উপহার বনআলু

Icon

জয়নুল আবেদীন স্বপন

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একসময় ভাওয়াল ও মধুপুরের বন ছিল দেশের বৃহৎ ‘পত্রঝরা’ বনাঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাক্ষেত্র ভাওয়াল ও মধুপুর গড় বাংলাদেশকে বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গাজীপুর যেমন উন্নত হয়েছে, তেমনি হারিয়েছে তার অতীত ঐতিহ্য। প্রধান বৃক্ষ গজারি ছাড়াও শিমুল, পলাশ, কড়ই, নাগেশ্বর, বহেরা, পারুল, জারুল, গাদিলা, বট, কুটিশল ইত্যাদি গাছে সুশোভিত ছিল ভাওয়াল বন। প্রাণীর মধ্যে বাঘ, হরিণ, ময়ূর, হনুমান, বানর, খরগোশ, শূকর, বনমোরগ ছাড়াও নানা জাতের পাখিসহ জীবজন্তুতে ভরপুর ছিল এ বন। বর্তমানে গাছের মধ্যে গজারি আর প্রাণীর মধ্যে বানর ও শিয়াল ছাড়া অন্য কিছুই চোখে পড়ে না।

এক সময় ভাওয়াল বন ছিল বুনো খাদ্যের ভাণ্ডার। অরবরই, আমলকী, আনই, বংকই, চিনাডলই ইত্যাদি ফল ছাড়াও বিভিন্ন জাতের বনআলু পাওয়া যেত এখানে। এগুলোর মধ্যে গাইজা আলু, দুধ আলো, শিমুল আলু, বনআলু (স্থানীয় নাম জংলি আলু) ইত্যাদি প্রধান। ছেলেবেলায় শখ করে আলু তুলুনিদের দলে মিশে কোদাল-খন্তি নিয়ে জংলি আলু বা বনআলু তুলতাম। বর্তমানে এ বনের অধিকাংশই দখল হয়ে গেছে। বলা চলে বন ধ্বংসের মহোৎসব শুরু হয়েছে। ফলে এখানকার অফুরন্ত প্রাকৃতিক খাদ্যও বিলীন হওয়ার পথে। জনপ্রিয় খাদ্য প্রকৃতির উপহার বনআলুও দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে।

জনবহুল বাংলাদেশে খাদ্য সমস্যা বড় সমস্যা। বনআলু বা জংলি আলু খাদ্য হিসেবে উকৃষ্ট মানের ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। প্রচুর আয়রন থাকায় রক্তশূন্যতার অভাব দূর করতে এ আলুর জুড়ি নেই। বন এলাকার আদিবাসীরাই প্রথম এ আলুর সন্ধান পেয়েছিল। গাছের নিচের অংশ কাঁটাযুক্ত। অনেকটা শালুক আকৃতির ছোট পাতা থাকে। লতাজাতীয় গাছটি গজারি বা অন্য গাছ বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠে আসে। গাছের শেকড় থেকেই বংশবিস্তার হয়। আবার শেকড়ের মাথায়ও বনআলুর জন্ম হয়। আলু তুলুনিরা কোদাল-খুন্তি দিয়ে মাটি খুঁড়ে শেকড়সহ আলু তুলে আনে। আলু সংগ্রহের পর শিকড়সহ গাছটি পুনরায় পুঁতে দিলেই বংশবিস্তার হয়। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানোর কারণে বনআলুর ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন পড়ে না। ভাওয়ালের কিছু কিছু এলাকায় গাছটি রোপণ করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। লাল মাটির মধ্যে বনআলুর ফলন ভালো হয়।

মানুষের অত্যাচারে বনআলুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হলে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে বনআলুর ফলন বাড়ানো সম্ভব হবে। চৈত্র থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত বনআলু তোলার মৌসুম। এ সময় আলু তোলার অভিযান চলে। ‘কুচ’ ও ‘মান্দাই’ নামক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ তাদের প্রধান খাদ্য হিসেবে বনআলুকে বেছে নিয়েছিল। প্রকৃতির উপহার এ খাবার খেয়ে তাদের দেহ ও মন থাকত সতেজ ও সুন্দর। বর্তমানে এলাকার হতদরিদ্রদের অনেকে শক্তিবর্ধক সুস্বাদু বনআলু খেয়ে জীবন ধারণ করছে। খাদ্য সংকট দেখা দিলেই দরিদ্ররা খন্তি-কোদাল নিয়ে বনআলু তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নিজেরা খায়, বাজারে বিক্রি করে চাল নিয়ে ঘরে ফিরে।

দিন দিন বনআলুর চাহিদা বাড়ছে। লবণ পানিতে সিদ্ধ করে সুস্বাদু এ আলু খাওয়া যায়। আবার তরকারি হিসেবেও এর চাহিদা রয়েছে। বনআলু গাছের রক্ষণাবেক্ষণে সবাই এগিয়ে এলে এবং পুষ্টিবিদরা এর গুরুত্ব প্রচার করলে বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে প্রকৃতির দেয়া এ উপহার।

শিক্ষক, শ্রীপুর, গাজীপুর

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম