Logo
Logo
×

টিউটোরিয়াল

নতুন শিক্ষাক্রম : কী হবে অংশীজনের ভূমিকা

Icon

সহিদুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সিনিয়র শিক্ষক, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয় বন্দর, নারায়ণগঞ্জ

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দেওয়া নির্দেশনায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, এনসিটিবির দেওয়া রুটিন বা গাইড লাইন অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং শিখন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে হবে। শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করতে হবে। শিক্ষাক্রমে নির্দেশিত কৌশল ও পদ্ধতি শ্রেণি পাঠদানে অনুসৃত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ছোট পরিসরে শিক্ষা উপকরণ মেলার আয়োজন করতে হবে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ অংশীজনের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণের জন্য সমন্বিত গণযোগাযোগ কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বছরে ৩টি অভিভাবক সমাবেশ নিশ্চিত করা এবং অভিভাবকদের সুবিধাজনক গ্রুপ করে শ্রেণি কার্যক্রম দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব শিক্ষকের লেখার অভ্যাস রয়েছে তাদের লেখনিতে নতুন কারিকুলামের পজিটিভ দিক তুলে ধরার জন্য উৎসাহ দিতে হবে।

প্রতি ৩ মাসে কমপক্ষে একবার শিক্ষকদের ইন হাউজ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। প্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত সব বিষয়ই যথাসম্ভব বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এতে তিনি আন্তঃবিষয় সম্পর্কটি বুঝতে ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারবেন। প্রাত্যহিক সমাবেশে নীতি বাক্যের সঙ্গে কারিকুলাম বাস্তবায়নে শপথ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ফটকে দৃষ্টিগোচর স্থানে কারিকুলাম বাস্তবায়নের স্লোগান বা প্রত্যয় লেখার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিখন-শেখানো কার্যক্রম নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা ও শিক্ষকদের পরামর্শ দিতে হবে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। শিক্ষার্থীদের দ্বারা কম্পিউটার ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, গ্রিন ক্লাব-পরিবেশ ক্লাব, সাংস্কৃতিক ক্লাব, ক্রীড়া ক্লাব, হেলথ ক্লাব গঠন ও সক্রিয় রাখায় উৎসাহিত করতে হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে শিখন-শেখানো প্রক্রিয়াটি অভিজ্ঞতাভিত্তিক। এই শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষার্থী বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মধ্য দিয়ে যোগ্যতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে। এখানে শিক্ষার্থীর শিখনের উদ্দেশ্য হলো কিছু সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন। শিক্ষার্থী যোগ্যতার সব কয়টি উপাদান জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে সে কতটা পারদর্শিতা অর্জন করতে পারছে তা দিয়েই এখন মূল্যায়ন করতে হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে শেখন-শেখানো কার্যক্রমে অভিভাবক এবং অংশীজনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

পূর্বের শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষক কোন একটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিতেন, বুঝিয়ে দিতেন, শিক্ষার্থী তা শুনে নোট করতো অথবা গাইড বই বা টিউটোরিয়ালের সাহায্য নিয়ে আত্মস্থ করতো। কিন্তু বর্তমান নতুন শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষার্থীকে বৈজ্ঞানিক ধাপ অনুসরণ করে বহু এসাইনমেন্টভিত্তিক কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে অংশীজনের শরণাপন্ন হয়েছে কী না অভিভাবক হিসেবে সেদিকে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে সাক্ষাতের অনুমতি, সময় নির্ধারণ, তথ্য রেকর্ডিং ইত্যাদির ক্ষেত্রেও একজন অভিভাবককে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

শিক্ষার্থীরা কোমলমতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনভিজ্ঞ, একজন শিক্ষার্থীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে আপনাকে অবশ্যই ভালো পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে হবে। শিক্ষার্থীদের একা একা কোন অংশীজন বা সাক্ষাৎকারকারীর নিকট পাঠানো উত্তম হবে না, সেক্ষেত্রে একজন অভিভাবক সঙ্গে থাকলে কাজটি সুশৃঙ্খল হবে। প্রয়োজনে ৫-৬ জন শিক্ষার্থীর একটি দলের অভিভাবকগণ পর্যায়ক্রমে এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। শিক্ষার্থীরা গ্রামের কোনো বয়স্ক লোক, অভিজ্ঞ লোক, শিক্ষিত লোক বেছে কোন তথ্য নেয়ার জন্যে আপনার কাছে যেতে পারে, নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো তাদেরকে সময় দেয়া, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা এবং সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করা। একবার কোনো অংশীজনের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা সঠিক ব্যবহার না পেলে তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে এবং সাক্ষাৎকার নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সেক্ষেত্রে এ কারিকুলাম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না, তাই অংশীজন হিসেবে এ বিষয়ে আপনাকে পজেটিভ হতে হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে অভিভাবকদের করণীয় নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বলেছে, সন্তানদের নিজের এবং বাড়ির ছোট ছোট কাজগুলো করানোর বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে। সন্তানদের সময় দেয়া এবং তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করতে হবে। সন্তানদেরকে ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া এবং ভুল বা অপ্রয়োজনীয় কাজকে নিরোৎসাহিত করতে হবে। কারিকুলাম বিস্তরণে অভিভাবকদের যে দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে। সন্তানদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সন্তানদের বা শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট ও কোচিংয়ে নিরুৎসাহিত করতে হবে। সন্তানদের মূল্যায়নের বিষয়ে নিরপেক্ষতা, সততা এবং নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকতে হবে।

নতুন কারিকুলাম বিশ্বনাগরিক সৃষ্টির মূলমন্ত্র। এ কারিকুলাম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে একজন শিক্ষার্থী জাতীয়তাবোধসম্পন্ন বিশ্বনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে। তাই সবারই সর্বদা এ কারিকুলাম সম্পর্কে পজিটিভ ভাবতে হবে।

তথ্যসূত্র : জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, ইন্টারনেট, NCTB প্রণীত মূল্যায়ন নির্দেশিকা।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম