প্রাথমিক শিক্ষাসমাপনী পরীক্ষার বাংলা

সবুজ চৌধুরী
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সহকারী শিক্ষক, সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মোহাম্মদপুর, ঢাকা
রচনা : মৃৎশিল্প
ভূমিকা : মৃৎশিল্প বা মাটির শিল্প আমাদের দেশের স্বকীয় শিল্প। মাটির শিল্প আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশে মৃৎশিল্পের চর্চা চলে আসছে। মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়।
মৃৎশিল্প কী : আমরা যখন কোনো কিছু সুন্দর করে আঁকি, সুন্দর করে বানাই, সুন্দর করে রচনা করি, সুন্দর করে গাই তাই শিল্প। অর্থাৎ, কোনো কিছু সুন্দররূপে আঁকা ও সুচারুরূপে তৈরি করাকে শিল্প বলে। মাটি দিয়ে কোনো জিনিস তৈরি করা এক ধরনের শিল্প। মাটির তৈরি শিল্প কাজকে বলা হয় মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প।
পোড়ামাটির প্রাচীন শিল্প : ‘টেরাকোটা’ একটি ল্যাটিন শব্দ। ‘টেরা’ শব্দের অর্থ মাটি আর ‘কোটা’ শব্দের অর্থ পোড়ানো। সুতরাং উৎপত্তিগত অর্থে পোড়ামাটির তৈরি মানুষের ব্যবহারের সবরকম জিনিস টেরাকোটা হিসেবে পরিচিত। বাংলার অনেক পুরনো শিল্প এই টেরাকোটা। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো তৈরি করা হতো এই টেরাকোটা। সুন্দর পোড়ামাটির ফলকের কাজ টেরাকোটা আমাদের দেশের মৃৎশিল্প ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। এদেশে কয়েকশ বছর আগেই টেরাকোটা বা পোড়ামাটির কাজ শুরু হয়। আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, বৌদ্ধস্তূপ ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে টেরাকোটা বা পোড়ামাটির কাজ রয়েছে। তাছাড়া বাগেরহাট ষাটগম্বুজ মসজিদে পাওয়া গেছে পোড়ামাটির অপূর্ব সুন্দর কাজ। সম্প্রতি নরসিংদীর ওয়ারী বটেশ্বরে পাওয়া গেছে প্রায় হাজার বছর আগের সভ্যতার নিদর্শন। মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে নানা ধরনের সুন্দর মাটির পাত্র আর ফলক। এগুলো সবই চোখ জুড়ানো চিত্তাকর্ষক সৌন্দর্যমণ্ডিত। টেরাকোটা পোড়ামাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব।
মাটির তৈরি উপকরণ : মৃৎশিল্পের একমাত্র এবং প্রধান উপকরণই মাটি বা মৃত্তিকা। এ মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে কলস, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, বাসন-কোসন, পেয়ালা, সুরাই পিঠার ছাঁচ, নানা তৈজসপত্র এবং বিভিন্ন ধরনের দর্শনীয় দ্রব্য। শখের হাঁড়ি অর্থাৎ এক ধরনের অপূর্ব সুন্দর মাটির তৈরি হাঁড়ি যার গায়ে চিত্রিত হয় বিচিত্র ফুল, পাতা, মাছ প্রভৃতি ছবি। শখ করে নানা জিনিস এ হাঁড়িতে রাখা হয়, তাই এটি শখের হাঁড়ি। মাটি দিয়ে তৈরি হয় নানা জাতীয় ফল, ফুল, মাছ বা পশু-পাখি প্রভৃতি। মাটির তৈরি ঘোড়া, ষাঁড়, পুতুল প্রভৃতি বিভিন্ন গ্রাম্য বা শহুরে মেলায় দেখা যায়।
ঐতিহ্য ও গর্বের শিল্প : বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মাটির শিল্পে। এটা এদেশের নিজস্ব শিল্প। বৈশাখী মেলায় ও নানা পার্বণে যেসব মেলা বসে সেসব মেলায় বিক্রি হয় মাটির তৈরি নানারকম পুতুল, নকশা করা হাঁড়ি, মাটির ফল, তৈজসপত্র। গ্রামের কুমারেরা নিপুণভাবে এসব তৈরি করে। প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে মৃৎশিল্পের চর্চা হচ্ছে। ময়নামতীর শালবন বিহার, বগুড়ার মহানস্থানগড়, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে দেখা যায় পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটার নিদর্শন। তাই মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গর্বের বিষয়।
মৃৎশিল্প হারিয়ে যাওয়ার কারণ : লোকশিল্প নানা কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক নানা পণ্য সামগ্রীর সহজলভ্যতার কারণে এ শিল্প তার অতীত গৌরব হারাতে বসেছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি আমাদের দুর্বলতার কারণে আমরা আজ দেশি সংস্কৃতিকে ধারণ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। তাছাড়া প্লাস্টিক ও সিলভারের পণ্যের বিপণনের কাছে আমাদের মৃৎশিল্প হার মেনেছে। যুগপোযোগী পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় মৃৎশিল্প আজ প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।
উপসংহার : সুদূর প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমানকাল পর্যন্ত এ শিল্প সব জনপ্রিয়তায় টিকে আছে। আমাদের দেশের কুমাiiা সুদীর্ঘ কাল থেকে এ শিল্পকে জীবিকা হিসেবে নিয়ে টিকে আছে।