নারীদের স্বাভাবিক জীবন কেড়ে নিয়েছে তালেবান
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বিতীয় মেয়াদে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই ফের নারীদের জাঁতাকলে পিষছে তালেবানরা। সরকারি, বেসরকারি, সামাজিক-সব জায়গা থেকেই নারীদের ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ফতোয়াবাজ জঙ্গি গোষ্ঠীটি। ‘জনপদ’ থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। কেড়ে নিয়েছে স্বাভাবিক জীবন। মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে এমনটাই বলেন আফগানিস্তানের নারী ক্ষমতা উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী মাহবুবা সিরাজ।
তালেবান শাসন (২০২১ সালের ১৫ আগস্ট) শুরুর পর থেকেই আফগানিস্তানে দরিদ্র বেড়েছে ৯৭ শতাংশ। তীব্র হয়েছে বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি। সুপেয় পানির অভাবে অর্ধেকের বেশি নাগরিক। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে ক্ষুধার্তের সংখ্যা। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরুরি খাদ্য সহায়তা দরকার দুই কোটি মানুষের। কিন্তু এসবে নজর নেই তালেবানের। নাগরিকদের মৌলিক সংকট পাশ কাটিয়ে নারী শাসনে চড়াও হয়ে উঠেছে তালেবান। এরই মধ্যে দেশটিতে প্রায় দেড় লাখ তরুণীকে বিতাড়িত করা হয়েছে স্কুল থেকে। উচ্চশিক্ষা বন্ধ করেছে। সরকারি চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছে। পর্দাপ্রথা কঠোর করেছে। একেবারে কোণঠাসা করে ফেলেছে নারীদের। বিগত ১০ বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে দেশটিতে। অতিরিক্ত তুষারপাতে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যুসহ ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার গবাদিপশুর। রয়েছে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতেও সাহায্য সংস্থায় কাজ করা থেকে নারীদের বিরত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে এ বছরের ত্রাণ কার্যক্রম। জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থার প্রধান জানান, নারী ব্যতীত এ ধরনের ত্রাণ কার্যক্রমও পরিচালনা করা যায় না।
১৯৯০ সালের ক্ষমতাধীন অবস্থায় যে কঠোর অবস্থা বিরাজমান ছিল তা থেকে কিছুটা শিথিল হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান সরকার। কিন্তু ২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সীমিত করা হচ্ছে নারী অধিকার। সম্পূর্ণ পুরুষশাসিত তালেবান সরকারের নারী অধিকার সীমিতকরণের প্রথম পদক্ষেপ ছিল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নারী বহিষ্কারকরণের নির্দেশ। একই বছরের নভেম্বরে আফগানিস্তানের নারীদের টিভি নাটকে নারী উপস্থাপন বন্ধ করার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। এই বছরের ডিসেম্বরে নির্দেশনা আসে পুরুষসঙ্গী ছাড়া দূরের পথ ভ্রমণ করতে পারবেন না আফগানিস্তানের নারীরা। গত বছরের মার্চে স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেয়েদের ক্লাসে যেতে নিষিদ্ধ করা হয়। জনসম্মুখে নারীদের হিজাব পরতে ও তাদের মুখ ঢেকে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয় মে মাসে। এই মাসেরই শেষের দিকে সংবাদ উপস্থাপিকাদের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা আসে।