আফগানিস্তানে ভূমিকম্প
পাকতিয়ায় এবার ডায়রিয়া
আশ্রয় নেই, খাদ্য নেই, চিকিৎসকও নেই * ১০ হাজার বাড়ি ধ্বংস, নারী চিকিৎসকের অভাবে এখনো চিকিৎসা পাননি আহত নারীদের অনেকেই * ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৫ লাখ মানুষ
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![পাকতিয়ায় এবার ডায়রিয়া](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2022/06/26/image-566455-1656231538.jpg)
আফগানিস্তানে বুধবারের ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন ঘুমিয়ে থাকা সহস্রাধিক মানুষ। শুক্রবার আফটারশকে মারা গেছেন আরও পাঁচজন।
যারা প্রাণে বেঁচেছেন-তারা নতুন করে বাঁচার লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। কারণ, তাদের কাছে খাবার নেই, চিকিৎসা নেই। এমনকি থাকার মতো কোনো আশ্রয়ও নেই।
গৃহহীন হয়েছে হাজার মানুষ। শুধু তাই নয়, দুর্যোগ পরবর্তী প্রবল বর্ষণে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিপদাপন্ন মানুষগুলো।
মৃতদেহ দাফনেরও জায়গা খুঁজে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। দূষিত পানি আর লাশপচা দুর্গন্ধে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে পাকতিকায়। শনিবার পর্যন্ত পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। তোলো নিউজ, এএফপি।
খোস্ত ও পাকতিকার ভয়াবহ ভূমিকম্পে আহতদের স্বাস্থ্যের খারাপ অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও।। এক বিবৃতিতে সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ভূমিকম্পে আক্রান্ত হওয়া এক লাখ ১৮ হাজারের বেশি শিশুর জন্য গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শিশু এখন সম্ভবত বিশুদ্ধ পানীয়জল, খাবার এবং ঘুমের নিরাপদ জায়গা ছাড়াই রয়েছে।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় (ইউএনওসিএইচএ) বিষয়ক কার্যালয় শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আশঙ্কা ছিল খাবার পানির অভাবে কলেরা ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু তার আগেই শুরু হয়ে গেল ডায়রিয়া। সারা দেশে ইতোমধ্যেই তীব্র পানিবাহিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত পাঁচ লাখ রোগী নিশ্চিত করা হয়েছে। এ প্রাদুর্ভাব এড়াতে চেষ্টা করছে ইউএনওসিএইচএ।’
আফগানিস্তানের পাকিস্তান সীমান্ত এলাকার দুর্গম পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশে সংঘটিত ভূমিকম্পের পর বেঁচে যাওয়া লোকগুলোর কাছে খাবারের সংকটটাই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে। থাকার জন্য নেই কোনো কম্বল কিংবা ছিটেফোঁটা তাঁবুও।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকাটিতে পানি সরবরাহ অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ায় সেখানে বিশুদ্ধ পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে। পাকতিকার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বাড়ি।
নিহতদের কবর দেওয়ার জন্য সরঞ্জাম পেতে হিমশিম খেয়েছেন বেঁচে যাওয়া লোকগুলো। অভিযোগ উঠেছে, নারী চিকিৎসকের অভাবে অবহেলিত হচ্ছেন ভূমিকম্পের শিকার নারীরা। খোস্তবাসী এক ভুক্তভোগী জানান, প্রদেশে নারী চিকিৎসকের অভাবে আহত নারীদের অনেকেই এখনো চিকিৎসা পাননি। তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সুবিধার ঘাটতি রয়েছে।
দুঃখজনক ও মর্মান্তিক বিষয় যে, ভূমিকম্পে প্রায় প্রতিটি পরিবারই অন্তত একজন সদস্যকে হারিয়েছে। একই পরিবারে একাধিক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে-এমন পরিবারের সংখ্যাও অনেক। পাকতিকার রাজধানী শরনে একটি হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন বিবি হাওয়া বলেন, ‘এক ঘরে সাতজন, অন্য ঘরে পাঁচজন, অন্য ঘরে চারজন মারা গেছেন। আমার পরিবারে নিহত হয়েছেন তিনজন।’ ভূমিকম্পে মোবাইল ফোনের টাওয়ার ও বিদ্যুতের লাইন ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আফগানিস্তানে ত্রাণ পাঠাল ভারত : ভূমিকম্প দুর্গত আফগানিস্তানের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পিএআই) জেপি সিং শুক্রবার তালেবান কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভারতের মানবিক সহায়তা হস্তান্তর করেন।
২৭ টনের ত্রাণ সহায়তার মধ্যে তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, কম্বল এবং তোশক রয়েছে। এ ছাড়াও, রাজধানী কাবুল থেকে কাজ করার জন্য একটি কারিগরি দলকেও সেখানে পাঠানো হয়। দলটি আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তার রিলিফ বিতরণ সমন্বয় করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, কাবুলে কারিগরি দল পাঠানোকে একটি প্রাথমিক ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা কিনা আফগানিস্তানে ভারতকে নিজেদের কূটনৈতিক উপস্থিতি পুনর্বহাল করার পথে এগিয়ে নিতে পারে।