Logo
Logo
×

দশ দিগন্ত

রূপকথার গল্পকেও হার মানালেন সুগা

কৃষকের ঘর থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী

Icon

জামির হোসেন

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রূপকথার গল্পকেও হার মানালেন সুগা

জাপানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যই হয়তো জন্মেছিলেন শিনজো আবে (বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী)। কিন্তু তার উত্তরসূরি ও সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার জন্য রাজনীতির পথ কখনই সহজ ছিল না। নজিরবিহীন সংগ্রাম আর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েই তাকে ওপরে উঠতে হয়েছে। আর দশজনের জন্য যা ‘অসম্ভব’ তাই সম্ভব করে তুলেছেন। হার মানিয়েছেন রূপকথাকেও। বাপ-দাদা-চৌদ্দ পুরুষ যা স্বপ্নে দেখতেও সাহস পায়নি তাই বাস্তবে রূপ দিলেন সুগা। পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষা এক অজপাড়াগাঁয়ের সেই কৃষকের ছেলে ইয়োশিহিদে হতে যাচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। এই খবরে তার নিজ গ্রামে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। গর্বে-আনন্দে আত্মহারা তার ছেলেবেলার সাথীরা। আর কৃষকদের নজরে যেন তাদের ঘরের ছেলেই এবার দেশ চালাবে। অনেকটা সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম আবের। জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও খ্যাতনামা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তিনি। বাবা ছিলেন জাপানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ছিল তার পারিবারিক সম্পর্ক। পৈতৃক পরিচয় ও এলিট পটভূমিই তাকে রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিল। সেই সুবাদে ২০১২ সালে সহজেই প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এক্ষেত্রে আবের সম্পূর্ণ বিপরীত সুগা। তার ছিল না দেয়ার মতো কোনো পরিচয়। উন্নত চিন্তা, পরিশীলিত আচরণ ও গুণাবলি আর কঠোর অধ্যবসায়ের ওপর ভর করেই এক অসম্ভব পথে যাত্রা ছিল তার।

ইয়োশিহিদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা কৃষক পরিবারে, জাপানের হোনসু প্রদেশের তোহোকু অঞ্চলের আকিতা জেলার প্রত্যন্ত ইউজাওয়া গ্রামে। গ্রামের অদূরেই পাহাড়। বাবা ওয়াসাবুরো ছিলেন গ্রামের একজন স্ট্রবেরি চাষী। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকে পাহাড় ঘেঁষে গ্রামের মাঠে কৃষি কাজে বাবাকে সাহায্য করতেন তিনি। হাইস্কুল শেষ করার পরই পড়াশোনার জন্য গ্রাম ছেড়ে রাজধানী টোকিওতে পাড়ি জমান। বাবার সীমিত আর্থিক সামর্থ্য স্বীকার করেই ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য পার্টটাইম কাজ করেছেন। করেছেন এমন সব কাজ যা অন্য কেউ করতে চাইত না। কার্ডবোর্ড ফ্যাক্টরি এমনকি মাছের বাজারেও কাজ করেছেন তিনি।

গ্রাজুয়েশন শেষে দ্রুতই চাকরি জীবনে প্রবেশ করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দেশ ও সমাজের পরিবর্তিত বাস্তবতায় রাজনীতিকেই পেশা হিসেবে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতেই ইয়োকোহামার সিটি কাউন্সিলের মেয়র হিসেবে লড়াই। যোগাযোগ আর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। একমাত্র সম্বল কঠোর পরিশ্রম। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গেলেন তিনি। প্রতিদিন ৩০০ বাড়ি এভাবে প্রায় ৩০ হাজার পথ হেঁটে হেঁটে প্রচারণা চালাতে গিয়ে ছয় জোড়া জুতাই ক্ষয় করেছিলেন তিনি। এই পরিশ্রমের পুরস্কারও পেয়েছিলেন।

আবের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সুগাকে। প্রায় এক দশকের জন্য দু’জনের (আবে ও সুগা) জীবন যেন এক সুতোয় বাঁধা পড়ে। সুগা হয়ে ওঠেন আবের ডানহাত। ছিলেন সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক। প্রধানত প্রধানমন্ত্রীর চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া আবের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে বেশকিছু অর্থনৈতিক নীতির বাস্তবায়নে ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। তার সবচেয়ে সেরা নীতি ও সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার ক্ষেত্রে তাকে প্রভাবিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে করা পার্টটাইম চাকরির অভিজ্ঞতাগুলো। এর মধ্যে রয়েছে ‘আবেনোমিক্স’ ‘হোমটাউন ট্যাক্স’-এর ধারণা সর্বাধিক খ্যাত। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে ‘আরেক আবে’ই হয়ে উঠবেন সুগা।

সুগা পার্টিপ্রধান হয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তার হোমটাউন আকিতায় খুশির বন্যা বয়ে যায়। আকিতা প্রশাসনিক জেলার ইউজাওয়া অঞ্চলের অ্যাকিনোমিয়া গ্রামে তার বাড়ি দেখতে যায় লোকজন। একে অপরকে হাতের ইশারায় দেখিয়ে দেয় এটি হচ্ছে সেই বাড়ি, যেখানে আমাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী সুগা জন্মেছেন ও বেড়ে উঠেছেন। ইউজাওয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও সুগার পারিবারিক বাড়িটি থাকলেও সেখানে কেউ বসবাস করেন না। তিন বছর আগে তার মা বাড়িটি ছেড়ে একটি নার্সিং হোমে উঠেছেন। একিনোমিয়া হ্যামলেট গ্রামটি ধানক্ষেতের জন্য প্রসিদ্ধ। ওই এলাকার প্রাপ্তবয়স্ক কৃষকরা গ্রীষ্মকালে কাজের জন্য টোকিওতে চলে যেতেন। এ অবস্থা পরিবর্তনে ভূমিকা রাখেন সুগার পিতা ওয়াসাবুরো। তিনি সেখানে স্ট্রবেরি চাষের পদ্ধতি পরিচিত করে তুলে পরিস্থিতি বদলে দেন।

সুগা প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন- এমন খবরে সুগার হোমটাউনে তার ছবিসহ হিপহপ টি-শার্ট ও ব্যাগের চাহিদা তুঙ্গে উঠেছে। নিজেদের পরিচিত ও শহরের কারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সংবাদ অনেকে উদযাপন করছেন স্যুট পরিহিত সুগার ছবিওয়ালা টি-শার্ট ও ব্যাগ ব্যবহার করে। সেন্ট্রাল ইউজাওয়ায় নিজের দোকানে বসে ফুজিতা বলছিলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তারপর এটি সর্বোচ্চ সম্ভাবনায় এসে পৌঁছল। আমি মনে করি, ইউজাওয়ায় একটা উন্মাদনা তৈরি হবে। সুগা ইউজাওয়ার ছেলে এবং আমিও। আমি চাচ্ছি সেখানে

সব মানুষ একসঙ্গে আনন্দ উদযাপন করবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম