নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শেষ হলো কি?

ড. আর এম দেবনাথ
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এবারের বাজেটে (২০২৪-২৫) গরিব দেবে টাকা, খরচ হবে প্রশাসন ও সুদে। আর উন্নয়নের টাকা আসবে ঋণ থেকে। বরাবরের চিত্রের মতো এবারও বাজেটের চিত্র একই। একটু ব্যাখ্যা দরকার। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ৪ লাখ ৮০ হাজার জোগাড় করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ রাজস্ব আসবে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক এবং ‘অন্যান্য’ হিসাবে। আমরা সবাই জানি এর সম্পূর্ণ বোঝা চাপবে গরিব, মধ্যবিত্তের ওপর। কারণ তারাই ভোগ করে। এখানে ধনী-দরিদ্র নেই। সবাই এক হারে কর দেবে। দ্বিতীয়ত, খরচের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমাদের মোট ব্যয় হবে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন (রাজস্ব) এবং উন্নয়ন বাজেটের টাকা আছে। শুধু রাজস্ব ব্যয় হবে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এ রাজস্ব ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ ব্যয়ই হবে প্রশাসনের জন্য এবং সুদ ব্যয়ের জন্য। সুদ ব্যয় মোট রাজস্বের ২২ শতাংশ। জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৫ দশমিক ৬ ভাগ টাকা খরচ হবে। পেনশনে যাবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ টাকা এবং প্রশাসনের জন্য খরচ হবে ৯ শতাংশ টাকা। এর সঙ্গে যদি ভর্তুকি ও প্রণোদনার ২০ শতাংশ টাকা যোগ করা হয়, তাহলে মোট রাজস্ব ব্যয়ের ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ টাকাই মাত্র ৫টি খাতে। রাজস্ব আয় এবং রাজস্ব ব্যয়ের পর ‘উন্নয়নের’ জন্য কী রইল? বলাই বাহুল্য, উন্নয়নের জন্য আর বাকি কিছু রইল না। অনুদানসহ মোট ঘাটতি ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পরিমাণ/আকার হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এটা বরাবরের ঘটনা। এ বিপুল ঘাটতি মিটবে অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে। এ ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়ে হবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ নেবে সরকার ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার এ খাত থেকে কোনো ঋণ করেনি। বরং সঞ্চয়পত্রের টাকা পরিশোধ করেছে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে দুটি/তিনটি অসুবিধা হবে। এক. এত বিদেশি ঋণ ডলার সংকটের দিনে পাওয়া যাবে কি? দুই. ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে দেশে বেসরকারি খাতের ঋণের ঘাটতি দেখা দেবে।
এমনিতেই ‘প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট’ কমেছে। কমেছে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেসাতি সমস্যার সৃষ্টি করবে নাকি? তবে সুবিধা হবে ব্যাংকগুলোর, যেহেতু সরকারি খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম হারে বৃদ্ধি পাবে। তিন. সঞ্চয়পত্রে কি মানুষ যাবে? এ মুহূর্তে সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদের হার ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে কম। মানুষ তাই ব্যাংকমুখী। এ কয়েকটি কারণে বাজেটের ঋণ সমস্যা মিটবে না বলেই মনে হয়। আবার রাজস্বের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি। অথচ ‘জিডিপি’ কিন্তু সেভাবে বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ২০২৩-২৪-এ তা হবে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। আগামী বছরের জন্য নির্ধারিত হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আবার মূল্যস্ফীতির টার্গেট করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা এখন প্রায় ১০ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি। এ প্রেক্ষাপটে রাজস্ব বোর্ড এত রাজস্ব কোত্থেকে জোগাড় করবে এটাই বড় প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সরকার এবার নানাভাবে, নানা কায়দায় ভ্যাটের আওতা বাড়িয়েছে, ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করেছে। আয়করের ওপর বেশি জোর দিয়েছে। বলাই বাহুল্য এর বোঝা সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হবে। পণ্য মূল্যবৃদ্ধির তালিকা দেখলেই বোঝা যায় এটি।
মোবাইল ফোনের সিম, ইন্টারনেট, আইসক্রিম, এনার্জি ড্রিংকস, লন্ড্রি খরচ, লটারি, নিরাপত্তা প্রহরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ে কর, বিদেশি ফুল, বিদেশ ভ্রমণ, রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া, আমসত্ত্ব ও ফলের রস, বৈদ্যুতিক বাতি, পানির দেশি ফিল্টার, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়াসহ শত শত এলাকায় করারোপ করা হয়েছে অথবা কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর বোঝা নিশ্চিতভাবেই মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষের ওপর বর্তাবে। এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজ ইত্যাদির দামও বাড়বে। আয়করের ক্ষেত্রে সাধারণ আয়করদাতারা কোনো সুবিধা পাবে না, কারণ আগের করহারই অব্যাহত থাকবে। অথচ তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। এখানে স্বস্তির কোনো চিহ্ন নেই। কেবল বেড়েছে উচ্চ আয়ের করদাতাদের করহার। তাদের করহার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এখানে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ আছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে ১৫ শতাংশ হারে। কেউ এ সুযোগ নিলে কেউ কোনো আপত্তি তুলতে পারবে না। এখন একজন উচ্চ আয়ের লোক, যাকে ২০/২৫/৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, তিনি ওই টাকা কালো হিসাবে দেখিয়ে ১৫ শতাংশ কর দিয়েই স্বস্তি পাবেন। মজা হচ্ছে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য কোনো সুখবর না থাকলেও কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে করের ক্ষেত্রে সুখবর আছে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার কিছু শর্ত সাপেক্ষে কম করা হয়েছে। ‘পাবলিকলি ট্রেডেড নয়’, তাদের করহারও হ্রাস করা হয়েছে। একইভাবে নানা কায়দায় এক ব্যক্তির কোম্পানিও কর সুবিধা পাবে। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের জন্য নানা সুখবর থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হয়নি। তবে একটি ভালো সিদ্ধান্ত আছে। মাননীয় সংসদ-সদস্যরা আর করমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারবেন না। ‘মিনিমাম’ করও ঠিক রাখা রয়েছে। দোকানিদের কর পরিশোধ সার্টিফিকেট দোকানে দোকানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। বড় বড় আমানতের ক্ষেত্রে শুল্ককর বাড়ানো হয়েছে। এক কোটি এক টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতের ওপর আবগারি করের হার ছিল ১৫ হাজার টাকা। এটাকে ভাগ করে এক থেকে দুই কোটির ক্ষেত্রে করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এর ওপরে হলে তা করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তবে আয়করদাতাদের মধ্যে যাদের আয় ১২-১৩ লাখ টাকার মধ্যে, তাদের আয়কর সামান্য হ্রাস পেতে পারে। সম্পদ কর যা সারচার্জ নামে অভিহিত, তার মধ্যেও কোনো পরিবর্তন নেই। উত্তরাধিকার সম্পদ হস্তান্তরেও কোনো কর নেই।
বলাই বাহুল্য, সাধারণ পাঠকের কাছে উপরের আলোচনার কোনোই অর্থ নেই। তারা জানতে চায় মূল্যস্ফীতি রোধের কথা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটনিরপেক্ষ কতগুলো বিষয় আছে। সরকার সারা বছর ধরেই এখন থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাসের দাম বাড়াতে পারবে। আইএমএফের প্রেসক্রিপশন-বছরে চারবার বাড়াও। সেই মোতাবেক ইতোমধ্যেই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎও তাই। এসব কিন্তু প্রশাসনিক নির্দেশে হচ্ছে। এখানে বাজেটের কোনো বিষয় নেই। বাজেটে আমাদের কাছে বলা হয়েছে, বেশ কিছুসংখ্যক নিত্যপণ্যের ওপর থেকে উৎসে কর কমানো হয়েছে। ২ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ করা হয়েছে। পণ্যগুলো হচ্ছে-ধান, চাল, গম, আলু, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ছোলা, আদা, হলুদ, শুকনামরিচ, ডাল, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল ও চিনি ইত্যাদি। দৃশ্যত ভালো খবর বলতে হবে। কিন্তু এখানে সমস্যা দুটি। অতীতের সব বাজেটেই কিছু কর বসানো হয়েছে, কিছু কর প্রত্যাহার/হ্রাস করা হয়েছে। এমনকি প্রশাসনিক নির্দেশেও অনেক পণ্যের মূল্য হ্রাস করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ হ্রাসের কোনো ফল মাঠ পর্যায়ে কেউ পায়নি। এটা হওয়ার নয়। বাজেটে যার দাম বাড়ে তা তো বাড়েই, যার দাম দৃশ্যত কমানো হয়, তার দামও বাড়ে। এ হচ্ছে নিষ্ঠুর বাস্তবতা। দ্বিতীয়ত, ডলারের মূল্যমান নিয়ে কথা। ডলারের দাম নিত্য ঊর্ধ্বমুখী। এমতাবস্থায় পণ্যের আমদানি মূল্য সবসময়ই থাকবে ঊর্ধ্বমুখী। অতএব, যে হারে ‘হ্রাসের’ কথা থাকবে, সেই ‘হ্রাসের’ সুবিধা ডলারের দাম খেয়ে ফেলবে। সাধারণ ক্রেতার তাতে কোনো লাভ হবে না। তবু সরকারের এ সিদ্ধান্তটি ভালো। আরও বলা হয়েছে, ১ কোটি লোককে কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দেওয়া হবে। টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি অব্যাহত থাকবে। এতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে যে পদক্ষেপটি বাস্তবে কাজে লাগতে পারত, তা হচ্ছে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’ (সোশ্যাল সেইফটি নেট)। দেখা যাচ্ছে ‘সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয়’ খাতে সামান্য টাকা বাড়ানো হয়েছে। ২০-২৩-২৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য তা উন্নীত করা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকায়। এ বৃদ্ধি কোনো বৃদ্ধিই নয়। হয়তো ‘নেটে’ অধিকতর লোক যোগ হবে। হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক বরাদ্দও বাড়বে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, এ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারি কর্মচারীদের অবসর ভাতা, সঞ্চয়পত্রের সুদ, ছাত্রদের বৃত্তির টাকাও অযৌক্তিকভাবে ঢুকে আছে। এখানে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেড়ো অবস্থা। এছাড়া রয়েছে অপব্যবহার। প্রায় ৪০ শতাংশ লোক এর আওতায় আছে, যাদের এখানে থাকার কথা নয়। অতএব, বলাই চলে এ বৃদ্ধি কার্যত কোনো বৃদ্ধিই নয়। যে হারে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত হয়েছে, নিম্নবিত্ত গরিব হয়েছে, দরিদ্র হয়েছে অতিদরিদ্র, সেক্ষেত্রে জিডিপির অনুপাতে এ খাতের বরাদ্দ অপ্রতুল। যথারীতি বাজেটে দেশীয় শিল্পকে কিছু রেয়াত দেওয়া হয়েছে, যা বরাবরই দেওয়া হয়। কিন্তু এতে অনেক অদক্ষতারও জন্ম হয়েছে। সরকারি সুবিধার অপব্যবহার হচ্ছে। এ অপব্যবহার রোধ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশীয় শিল্পের অনেক সংরক্ষণ সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এর বোঝা স্বভাবতই ক্রেতাদের ওপর পড়বে। বলাই বাহুল্য, বাজারে মধ্যবিত্তই থাকে। বাজারের সব অত্যাচার শেষ পর্যন্ত তাকে সহ্য করতে হয়/হবে। এ ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে কারও কোনো স্বস্তি মিলবে, তা আশা করা যায় না।
বাজেটের প্রেক্ষাপটটি কী ছিল? ১০ শতাংশের ওপর মূল্যস্ফীতি, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২-১৩ শতাংশ, ডলারের উচ্চমূল্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, অর্থ পাচার, কালোটাকার দৌরাত্ম্য, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ক্রমবর্ধমান সুদ ব্যয় ও সরকারি ঋণ। এসব প্রেক্ষাপটেই এবারের বাজেট। সঙ্গে ছিল শ্লথ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সংকুচিত বেসরকারি বিনিয়োগ, বৈদেশিক বিনিয়োগে ভাটা ইত্যাদি বড় সমস্যা। এতে আশা করা হয়েছিল, নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী একটা নতুন পথের সন্ধান দেবেন। কিন্তু তিনি তা পারলেন না। শুধু বাজেট বক্তৃতার আকারটি ৫০ পৃষ্ঠার মতো হ্রাস করেছেন মাত্র। বড় বড় সমস্যা নিয়ে তার বক্তব্য, বিস্তারিত ব্যাখ্যা আমরা পেলাম না। গতানুগতিকভাবে সরকারের ‘পারফরম্যান্স’ তিনি বর্ণনা করে গেছেন। এসব বাজেট বক্তৃতার বাইরেও থাকতে পারে। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার-বাজেটটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্তৃক প্রযোজিত যদি না-ও বলি, বলতেই হবে এর পাতায় পাতায় রয়েছে আইএমএফের ছাপ। যেমন সরকার যেভাবে বাজেটের আকার বাড়ায়, এবার সেভাবে তা করা হয়নি। বাজেটের আকার, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকার বেশ কিছুটা সংযতই বলা চলে। এমনকি খাতওয়ারি বরাদ্দেও আইএমএফের পরামর্শ লক্ষণীয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ এবার সংশোধিত বাজেটের (২০২৩-২৪) তুলনায় বেড়েছে। এসব ক্ষেত্রে সার্বিক বরাদ্দ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। তাকে উন্নীত করে করা হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকায়, যা শতাংশের হিসাবে ২৩ দশমিক ৭০। এটা একটা পরিবর্তন। এসব প্রেক্ষাপটে এখন দেখার বিষয় কীভাবে মূল সমস্যা মূল্যস্ফীতি রোধ করা হয়। ডলার সংকট, রিজার্ভ সংকট, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, রপ্তানি বৃদ্ধি, রাজস্ব বৃদ্ধি-ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকার আরও কী করে তা দেখার বিষয়। ব্যাংক খাতকে শৃঙ্খলায় আনা, অর্থ পাচার রোধ-ইত্যাদি ক্ষেত্রে কী করা হয়, তা-ও দেখতে হবে। পরিশেষে বলতে হয়, আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কিন্তু শেষ হচ্ছে না। কারণ প্রশাসনিক নির্দেশে কখন যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, তেলের দাম বাড়ে-এই দুশ্চিন্তা রয়েই যাচ্ছে।
ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক