Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

সাক্ষাৎকার

বাজার অস্থিরতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে: ড. জাহিদ হোসেন

Icon

মোহাম্মদ কবীর আহমদ

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ডে দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা করেছেন। ড. জাহিদ হোসেন ১৯৯৫ সালে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে অর্থনীতিবিদ হিসাবে যোগ দেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি দেশের উন্নয়ননীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ কবীর আহমদ

যুগান্তর : দেশে খেলাপি ঋণ কমাতে অনেক ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না কেন?

ড. জাহিদ হোসেন : অতীতে উদারনীতি অবলম্বন করে নানা রকম সুবিধা প্রদান করা সত্ত্বেও দেশে খেলাপি ঋণ কমানো যায়নি। মহামারির সময়ও ঋণখেলাপিদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ঋণখেলাপিরা কতটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, এটা এক প্রশ্ন। আমরা লক্ষ করেছি, ঋণ আদায়ে উদারনীতি অবলম্বন করার প্রেক্ষাপটে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেনি, বরং বেড়েছে। ঋণখেলাপি হওয়া মানে আইন অমান্য করা। কাজেই যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদ্যমান আইন অমান্য করবেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে দেরি করা হবে নাকি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটা গুরুত্বপূর্ণ এক প্রশ্ন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে একটি অ্যাকশন প্ল্যান ঘোষণা করেছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে-এতে ব্যাংকগুলো তাদের কর্মচারীদের বোনাস দিতে পারবে না, ব্যাংকগুলোর ঋণ কার্যক্রমে সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে-এ ধরনের কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

যুগান্তর : দুর্বল ব্যাংকগুলোকে এভাবে চিহ্নিত করলে ঋণ আদায়ে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?

ড. জাহিদ হোসেন : এতে ঋণ আদায়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোর আগ্রহ বাড়বে। তা না হলে তো এসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আরও কমবে। আশা করা হচ্ছে, এসব পদক্ষেপের ফলে ঋণ আদায়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোর তৎপরতা বাড়বে।

যুগান্তর : ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

ড. জাহিদ হোসেন : এসব পদক্ষেপে কতটা সুফল মিলবে, এ প্রশ্ন থেকেই যায়।

যুগান্তর : খেলাপি ঋণ আদায়ে আপনার পরামর্শ কী?

ড. জাহিদ হোসেন : খেলাপি ঋণ আদায়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে সেসব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে কোনো রকম দেরি করার বিষয়টি বোধগম্য নয়। কোনো ঋণখেলাপি প্রভাবশালী হলে তার বিরুদ্ধেও যাতে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাও নিশ্চিত করা দরকার। তা না হলে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে কি না সন্দেহ।

যুগান্তর : অর্থ পাচারের কারণে দেশে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এত পদক্ষেপ নেওয়ার পরও অর্থ পাচার কমছে না কেন?

ড. জাহিদ হোসেন : এ সমস্যাটিও বেশ পুরোনো। অর্থ পাচার বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। দেশ থেকে অর্থ যে পাচার হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশ থেকে কেন অর্থ পাচার হচ্ছে, এর কারণগুলো খুঁজে বের করে সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত অর্থ পাচারের মূল কারণ দুর্নীতি। বিনিয়োগের নিরাপত্তা ও বেশি লাভের কথা বিবেচনা করেও কেউ কেউ অর্থ পাচারে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ কেন বিদেশে পাচার করা হয়, এটা সবারই জানা। কাজেই অর্থ পাচার বন্ধ করতে হলে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে অর্থ পাচার বন্ধ হবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

যুগান্তর : ব্যাংক খাতে সুশাসন কেন জরুরি?

ড. জাহিদ হোসেন : ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব হলে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে। সমস্যাগুলোর একটি হলো খেলাপি ঋণ। দেশে কিছু ব্যাংক ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রভাবশালী কোনো মহল বা ব্যক্তির কর্মকাণ্ড ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যাতে বাধা সৃষ্টি না করে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এটা নিশ্চিত করতে হবে।

যুগান্তর : বিদ্যুতের দাম অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে বহু বিনিয়োগকারীর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হতে পারে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে?

ড. জাহিদ হোসেন : বিদ্যুতের দাম অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। বিদ্যুৎ বা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা যতটা না চিন্তিত তার চেয়ে বেশি চিন্তিত সেগুলোর নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্তি নিয়ে। বিদ্যুৎ বা গ্যাস সরবরাহের কোয়ালিটিতে সমস্যা সৃষ্টি হলে বিনিয়োগকারীদের হতাশা বাড়ে। কারণ এতে বহুমাত্রিক সমস্যা সৃষ্টি হয়।

যুগান্তর : এ মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর কোনো বিকল্প আছে কি?

ড. জাহিদ হোসেন : স্বল্প দামে যেসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার। অর্থাৎ সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এক লাফে দাম বেশি বাড়ানোর দরকার হবে না।

যুগান্তর : মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এটি নিয়ন্ত্রণে কী করণীয়?

ড. জাহিদ হোসেন : মূল্যস্ফীতির একটি কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি। কিন্তু লক্ষ করা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ে না। এ সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। লক্ষ করা যায়, ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করা যায় না। কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হওয়ায় দেশের শিল্পকারখানার উৎপাদনে এর প্রভাব পড়ছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মুদ্রানীতিরও সম্পর্ক রয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানের লক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রানীতিতে ইদানীং কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি না কমা পর্যন্ত এগুলো ধরে রাখতে হবে।

যুগান্তর : বাজারের অস্থিরতার সঙ্গে সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে। এ সমস্যার সমাধানে কী করণীয়?

ড. জাহিদ হোসেন : বাজারের অস্থিরতার সঙ্গে অনেক কারণ জড়িত। সমস্যার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এরপর এগুলোর সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সমস্যার মূল কারণগুলো চিহ্নিত না করে পদক্ষেপ নিলে কী ফল মিলবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সিন্ডিকেটের পাশাপাশি এ সম্পর্কিত আরও যেসব সমস্যা আছে সেসব চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধানেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। লক্ষ করা যায়, নিত্যপণ্যের বাজারেই বেশি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। অস্থিরতা যখন থামে, তখন সংশ্লিষ্ট পণ্যটি আর আগের দামে পাওয়া যায় না। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে হলে কর্তৃপক্ষের উচিত প্রতিযোগিতার পথ মসৃণ করা এবং সমস্যাগুলোর সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া।

যুগান্তর : ডলার সংকটের সমাধানে রপ্তানি খাত চাঙা করা দরকার। সেক্ষেত্রে কী করণীয়?

ড. জাহিদ হোসেন : এ বিষয়ে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এলডিসির কারণে আমরা রপ্তানির ক্ষেত্রে নানা রকম সুবিধা পাচ্ছি। আগামীতে এক সময় এসব সুবিধা উঠে গেলে আমাদের রপ্তানি খাত কীভাবে টিকিয়ে রাখতে হবে, তা বিবেচনায় নিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

যুগান্তর : রপ্তানির ক্ষেত্রে যখন আমাদের এলডিসির সুবিধাগুলো উঠে যাবে, তখন বিশেষ বিবেচনায় সুবিধা পাওয়ার জন্য কী করণীয়?

ড. জাহিদ হোসেন : সেক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে লাভবান হওয়ার সুযোগও রয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতা শক্তি বাড়ানো জরুরি। বস্তুত উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমেও প্রতিযোগিতার শক্তি বাড়ানো যায়। শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিতেও বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে।

যুগান্তর : অন্য দেশও একই চেষ্টা করছে। আমাদের দেশের উদ্যোগগুলো কতটা পর্যাপ্ত বলে মনে করেন?

ড. জাহিদ হোসেন : অন্য দেশ যেটা করছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা আমরা তৈরি করতে পারছি কি না, আমাদের সেটাও দেখা উচিত। সেক্ষেত্রে অনেক ধরনের কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। আমি মনে করি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়ানো গেলে তারা একইসঙ্গে দেশ ও বিদেশে বেশি অর্থ আয় করতে পারবে।

যুগান্তর : দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির বিষয়টি ইতিবাচক।

ড. জাহিদ হোসেন : তবে কতটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে, এটি এক প্রশ্ন। আমাদের দেশে বাস্তবায়নাধীন বহু অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সেভাবে আকৃষ্ট নাও হতে পারে। অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির মাধ্যমে অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান হলেও এরপর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে আরও বহু বাধা থেকে যায়। একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে হলে বহু প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হয়। সেসব প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগবিষয়ক কর্মকাণ্ড শুরু করা যায় না। এক্ষেত্রে রেগুলেটরি প্রক্রিয়াগুলোকেও বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে।

যুগান্তর : আমরা জানি, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগবিষয়ক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বা এক ছাতার নিচে বিভিন্ন সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ প্রতিষ্ঠানটি মোটা দাগে বিনিয়োগবিষয়ক বেশকটি প্রতিষ্ঠানের নানা রকম সেবা দিয়ে আসছে। জানা গেছে, বিডার সেবার পরিধি বাড়ছে। এটাও জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন চব্বিশ ঘণ্টা এ সেবা প্রদান করছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

ড. জাহিদ হোসেন : বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, এক ছাতার নিচে সেবাপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে কাজের গতি এখনো খুবই ধীর।

যুগান্তর : আশা করা যায় এক সময় এসব সমস্যা কেটে যাবে। অর্থাৎ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রক্রিয়াগত জটিলতাগুলোর অবসান ঘটবে।

ড. জাহিদ হোসেন : কিন্তু এর পরও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। কারণ বিদেশিরা যখন শিল্প কারখানা স্থাপন করবেন, তখন তারা অবকাঠামোগত সব সমস্যার সমাধান চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আগামীতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানিপ্রাপ্তি একটি বড় সমস্যা হিসাবে দেখা দিতে পারে। বর্তমানে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সংকটে, বিশেষত গ্যাসের সংকটে বিদ্যমান কলকারখানাগুলোই ঠিকমতো চালানো যাচ্ছে না। এ দৃশ্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলতে পারে। কাজেই দেশের জ্বালানি সংকটের সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগও নিতে হবে।

যুগান্তর : আমাদের দেশে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই এসব সমস্যা থাকবে না।

ড. জাহিদ হোসেন : আপনি ঠিকই বলেছেন। আমাদের দেশে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এমনকি আমাদের সমুদ্রসীমায়ও গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে।

যুগান্তর : ধারণা করা হচ্ছে, আমাদের সমুদ্রসীমায় নানা রকম মূল্যবান সম্পদ রয়েছে।

ড. জাহিদ হোসেন : আমাদের সমুদ্রসীমায় কত রকম সম্পদপ্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন লাভজনক কিনা, এর একটি নিখুঁত জরিপ করা দরকার।

যুগান্তর : গভীর ও অগভীর সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

ড. জাহিদ হোসেন : সমুদ্রসম্পদ আহরণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা দরকার। আমাদের দেশি কর্তৃপক্ষগুলোর সীমাবদ্ধতা থাকলে বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। অতীতে সরকারিভাবে এ বিষয়ে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সেগুলোর ফলাফল কেন আশাব্যঞ্জক নয়, তা খুঁজে বের করা দরকার। সমুদ্রসম্পদ আহরণে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার পাশাপাশি এ বিষয়ে সার্বিক জ্ঞান অর্জনে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। এ খাতে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে, যাতে একসময় দেশের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে গভীর ও অগভীর সমুদ্রে খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণবিষয়ক সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্ভব হয়।

যুগান্তর : রপ্তানির সুযোগ রেখে আমাদের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দরপত্রের আহ্বান করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

ড. জাহিদ হোসেন : আমাদের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের বিষয়টি ইতিবাচক। আকর্ষণীয় উৎপাদন অংশীদারি চুক্তির (পিএসসি) কারণে সমুদ্রে বিদেশি কোম্পানির আগ্রহ বাড়বে, এটা আশা করা যায়। আমাদের সমুদ্রসীমায় মূল্যবান সম্পদ পাওয়া গেলে কীভাবে সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়েও আমাদের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে।

যুগান্তর : আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. জাহিদ হোসেন : ধন্যবাদ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম