ভাষণের পূর্ণ মাত্রায় বাঙালির বিজয়

সেলিনা হোসেন
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সংস্থাটির মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ঘোষণা দিলেন-বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি ‘বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’। ইউনেস্কো জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা। এ স্বীকৃতি ইতিহাসের বড় সময় ধরে বিশ্বজুড়ে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি করেছে। বলতেই হবে, বাঙালি-বাংলাদেশের ইতিহাস এই ৭ মার্চের ইতিহাস। ইউনেস্কোর মাধ্যমে বাঙালির অর্জন বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য। যে ঐতিহ্য মানবজাতিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের ভেতর দিয়ে মানুষের মানবিক অধিকারকে নিশ্চিত করে।
চল্লিশের দশকে প্রখ্যাত মনীষী এস ওয়াজেদ আলী এমন একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি তার ‘ভবিষ্যতের বাঙালি’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলেন : ‘রাষ্ট্রজীবনের যে পরিকল্পনা, সামবায়িক জীবনের যে ছবি বাংলাদেশের বাইরের ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করে, এ ভাবপ্রবণ কল্পনাকুশল জাতি সে আদর্শ, সে ছবি, সে পরিকল্পনা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারছে না। তার কুহেলিকা-সমাচ্ছন্ন নিগূঢ় অবচেতনায় মহামানবতার মহত্তর এক আদর্শ, পূর্ণতর এক পরিকল্পনা, সুন্দরতর এক ছবি আঁকার এবং রূপ পরিগ্রহ করতে আরম্ভ করেছে। অদূর ভবিষ্যতে সেই মোহনীয় আদর্শ, সেই পরিপূর্ণ পরিকল্পনা, সেই অপরূপ ছবি তার মনে স্পষ্ট হয়ে উঠবেই, আর তার প্রভাবে বাঙালি এক অভিনব জীবনের আস্বাদ পাবে; এবং সেই শুভ দিন যখন আসবে, তখন বাঙালি কেবল ভারতবর্ষের নয়, কেবল প্রাচ্য-ভূখণ্ডের নয়, সমগ্র বিশ্ববাসীর পথপ্রদর্শক হবে-সত্য, সুন্দর শুভ জীবন-পথের। বাঙালি এখন সেই মহামানবের প্রতীক্ষায় আছে, যিনি তাকে এ গৌরবময় জীবনের সন্ধান দেবেন-ভগীরথের মতো এ বাংলায় ভাবগঙ্গার সঙ্গম সুস্পষ্ট করে তুলবেন।’
বাঙালির সামনে অসাধারণ স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। বাঙালি বিশ্ববাসীর পথপ্রদর্শক হবে। চল্লিশের দশক থেকে ষাটের দশক-মাত্র দুদশকের ব্যবধানে এমন একটি ক্ষেত্র তৈরির সম্ভাবনা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চের ভাষণের ইউনেস্কো স্বীকৃতি লাভ একে বিশ্ববাসীর পথপ্রদর্শকের জায়গায় স্থান দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু এমনই একজন রাজনৈতিক নেতা, যিনি ভারত উপমহাদেশের মানচিত্র বদলে দিয়েছেন। বাঙালিকে যোদ্ধা জাতি হিসাবে বিশ্বের মানুষের সামনে পরিচিত করিয়েছেন। বাঙালির এই অর্জন আজকের পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের সামনে একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত। প্রাবন্ধিক এস ওয়াজেদ আলীর প্রত্যাশিত মহামানব শেখ মুজিবুর রহমান।
বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর আবেগ ছিল সীমাহীন, বাঙালিকে কেন্দ্র করে তার অভিজ্ঞতা ছিল মৃত্তিকাসংলগ্ন এবং সমুদ্র সমান ভালোবাসা দিয়ে এ জাতিকে গৌরবময় জীবনের সন্ধান দেওয়ার স্বপ্নে তৈরি করেছিলেন নিজের সবটুকু। তিনি ভেবেছিলেন, একটি ভাষাগত ও জাতিগত রাষ্ট্রের উদ্ভব হলে তা এ সময়ের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হবে। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে যদি অনেক রাষ্ট্রের জন্ম হয়, তাহলে আর কোনো বৃহৎ শক্তি থাকবে না। কেউ কারও ওপর কর্তৃত্ব করতে পারবে না। শান্তি ও কল্যাণের রাষ্ট্র হবে সেগুলো। আগামী দিনের প্রজন্ম জানবে না বিশ্বযুদ্ধ কী! বাংলাদেশের মতো একটি একটি করে গড়ে উঠবে অসংখ্য রাষ্ট্র। অসংখ্য রাষ্ট্রের যোগ সাধনে তৈরি হবে সমতার পরিবেশ। তিনি তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে এ জীবনদর্শনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন : ‘আমি নিজে কমিউনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। একে আমি শোষণের যন্ত্র হিসাবে মনে করি। এই পুঁজিবাদী সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে, ততদিন দুনিয়ার মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না। পুঁজিপতিরা নিজেদের স্বার্থে বিশ্বযুদ্ধ লাগাতে বদ্ধপরিকর। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জনগণের কর্তব্য বিশ্বশান্তির জন্য সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করা।’
সেই ভাষণে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন একটি অলৌকিক বাক্য। তর্জনী তুলে বলেছিলেন, ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ বাক্যটি ভেবে দেখতে হবে। তিনি যদি প্রমিত বাংলা ব্যবহার করতেন তাহলে বলতেন, ‘আর দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’ তিনি প্রমিত বাংলা ব্যবহার করেননি। আঞ্চলিক শব্দ সহযোগে আঞ্চলিক ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে বাঙালি জাতিসত্তার হৃদয়ের বিশাল দরজা খুলে দিয়েছেন, যে দরজা পথে বেরিয়ে এসেছে বাঙালি চরিত্রের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য। পাশাপাশি তিনি বিশ্বজোড়া মানুষের অধিকারের জায়গাটি মর্যাদার সঙ্গে ধারণ করেছেন। ছোট রাষ্ট্রগুলো যেন বৃহৎ শক্তির পুঁজিসর্বস্ব গঠন কাঠামোয় অবদমিত না থাকে। মানুষের অধিকার অর্জন মানবজীবনের মৌলিক সত্য।
এ ছোট্ট বাক্যটি সেতুবন্ধ গড়ে তুলেছে এস ওয়াজেদ আলীর একটি দীর্ঘ বাক্যের সঙ্গে, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘বাঙালি এখন সেই মহামানবের প্রতীক্ষায় আছে। যিনি তাকে এ গৌরবময় জীবনের সন্ধান দেবেন-ভগীরথের মতো এ বাংলায় ভাবগঙ্গার সঙ্গম সুস্পষ্ট করে তুলবেন।’ পার্থক্য এই যে, তাকে দীর্ঘ অর্থবহ বাক্য রচনা করতে হয়নি, তিনি রচনা করেছেন ছোট অথচ তীক্ষ্ণ, অপ্রমিত অথচ গভীর অর্থবহ বাক্য। এই একটি মাত্র বাক্য মানুষের অধিকারের পুরো জায়গা খুলে দেয়। মানুষ পীড়ন-বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পায়।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ লক্ষণীয়, এ বাক্যটি তিনি প্রমিত বাংলায় বলেছেন। এখানেও এস ওয়াজেদ আলীর আরেকটি বাক্যের সঙ্গে সংযোগ-সেতু রচিত হয়। কী আশ্চর্যভাবে এ ভাষণ জাতীয় পটভূমি থেকে আন্তর্জাতিক মাত্রায় উন্নীত হয়েছে-মুক্তির সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম প্রতিটি দেশের জন্য সর্বজনীন সত্য। মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম এককভাবে হয় না, এর জন্য প্রয়োজন হয় আন্তর্জাতিক সমর্থন, সাহায্য ও সহযোগিতা। তাই বাক্যটি উচ্চারিত হয় প্রমিত বাংলায়। বাঙালি জাতিসত্তার ঊর্ধ্বে পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে মেলবন্ধনের প্রত্যাশায়। স্পষ্ট হয়ে ওঠে ভগীরথের মতো এ বাংলায় ভাবগঙ্গার সঙ্গম। সেদিনের বক্তৃতায় তার উত্থিত সেই অমিতবিক্রম তর্জনীর সঙ্গে কণ্ঠস্বর যখন একই সমান্তরালে পৌঁছে যায়, তখনই বাঙালির অভিনব জীবন আস্বাদের স্পৃহা প্রবল হয়ে ওঠে।
এ ভাষণের প্রতিটি বাক্যই বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে। ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবে না’ বাক্যটি সাংস্কৃতিক, রাজনীতিক, অর্থনৈতিক বিষয় স্পষ্ট করে দেয়। এ বাক্যটি দেশের সীমানা অতিক্রম করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের কাছেও পৌঁছে যায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোরের কালীগঞ্জ গ্রামের একটি ঘটনা। আমার শিক্ষক, গবেষক, ফোকলোরবিদ অধ্যাপক আবদুল হাফিজ মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংবাদিকতা করেছেন। স্বাধীনতার পর সেই ঘটনাটি আমাকে বলেছিলেন। যশোরের একজন মা দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচানোর জন্য বোবা সন্তানটিকে মিলিটারির হাতে তুলে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের রাইফেলটি হাতে ধরিয়ে দিয়ে। একজন গ্রামীণ নারীর এ আত্মত্যাগ একটি ভাষণের অনুপ্রেরণায় স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ। ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন : ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি।’ বাঙালি নারী এ বাক্যেই বুঝে গিয়েছিলেন যে তাদের কী করতে হবে। এ বেদবাক্য মাথায় তুলে নিজেদের সাধ্যমতো কী করতে হবে, তার সব করেছেন। কোথাও কোনো দ্বিধা ছিল না।
একজন স্বল্পশিক্ষিত গ্রামের মেয়ে তারামন বিবি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। তার শক্তি এ ভাষণের অনুপ্রেরণা থেকে এসেছে। একটি জনজীবন সে ভাষণটিকে কীভাবে ধারণ করেছে, শুধু বাংলার নারীসমাজের দিকে তাকালে এ উপলব্ধি সবার হবে। সিলেটের কাঁকন বিবির কথা বলা যায়, যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রসদ সরবরাহ করেছেন, অস্ত্র সরবরাহ করেছেন, আবার পাকিস্তানি সেনার ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ছিল না। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ তাদের করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেই অমিত ডাক শুনে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেদিন ৭ মার্চের সেই সভায় নারীদের হাতেও বাঁশের লাঠি ছিল। এ ভাষণটি মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বাঙালিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছে।
আমাদের প্রাজ্ঞ মনীষী সরদার ফজলুল করিম ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছেন রমনার রেসকোর্সে বসে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিজেকে যত ক্ষুদ্রাবয়ব মনে করি, তেমন আর তখন যথার্থই ছিলাম না। আমার অবয়বকে আমি যথার্থই ছাড়িয়ে যাচ্ছিলাম। দেহ আমার দীর্ঘ হচ্ছিল। শরীরে আমার রোমাঞ্চ জাগছিল। সাহস বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আর তাই পাকিস্তানি জঙ্গি বিমানগুলো আমার মাথার ওপর দিয়ে সগর্জনে যখন আসা-যাওয়া করছিল এবং সে বিমান থেকে যে কোনো মুহূর্তে যে মৃত্যুর বান আমার বুকে এসে বিঁধতে পারে, সে কথা জেনেও আমার পা একটুও কাঁপছিল না। আমি ছুটে পালাতে চেষ্টা করিনি।’
ভেবে নেওয়া যায় যে, এমন উঁচু হয়ে ওঠা মাথার চিত্রকল্প নিয়েই রচিত হয়েছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বল বীর চির উন্নত মম শির’। ভারতের উর্দু ভাষার বিখ্যাত কবি কাইফি আজমী মুক্তিযুদ্ধের সময় লিখেছিলেন ‘বাংলাদেশ’ শীর্ষক কবিতা :
‘শুধু তো একটি দেশ নই যে জ্বালিয়ে দেবে
প্রাচীর নই যে তা পুরোপুরি মুছে ফেলবে
... ... ... ... ... ...
কতই না নির্বোধ তুমি
খয়রাতে পাওয়া ট্যাংক নিয়ে আমার দিকে ধেয়ে আসছ
রাতদিন নাপাম বোমার বৃষ্টি বর্ষাচ্ছ
ক্লান্ত হয়ে পড়বে দেখ
শৃঙ্খল পরাবে তুমি কোন হাতে
হাত তো আমার আছে সাত কোটি
গর্দান থেকে কোন মাথাটি তুমি আলাদা করবে
সেখানে তো মাথা আছে সাত কোটি।’
কী আশ্চর্য মেলবন্ধন! এভাবেই বুঝি কবিতার ভাষার সঙ্গে রাজনীতি এক হয়। মুখোমুখি দাঁড়ান কবি ও রাজনীতিবিদ। ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’ পঙ্ক্তিটিও একটি কালজয়ী পঙ্ক্তি। মর্যাদার সঙ্গে মানবজাতির বেঁচে থাকার এক অবিনাশী পঙ্ক্তি। এ পঙ্ক্তির ক্ষয় নেই। বিনাশ নেই। এমন একটি পঙ্ক্তি হাজার বছরের ইতিহাস হয়ে টিকে থাকে।
ইতিহাসে তিনিই অমর, যিনি সমগ্র জাতিকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন। ইতিহাস তারই পক্ষে যিনি সময়ের বিচারে নিজেকে যোগ্য বলে প্রমাণ করতে পারেন। এ সংজ্ঞায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের সেই মহামানব, সময় যাকে সৃষ্টি করেনি, যিনি সময়কে নিজের করতলে নিয়ে এসেছেন। যিনি কঠোর স্বরে নিজস্ব ভঙ্গিতে উচ্চারণ করেছিলেন সব কালের উপযোগী এবং সব দেশের জন্য প্রযোজ্য একটি অমর পঙ্ক্তি-‘মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব-এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’ রক্ত দেওয়া অর্থবহ হয় নিজের জীবন উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞায়। এ প্রতিজ্ঞা মুক্তিকামী মানুষের ঘরে ঘরে উচ্চারিত না হলে মুক্তির লক্ষ্য অনিবার্য হয়ে ওঠে না।
ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ জ্যাকব এফ ফিল্ড একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন 'We Shall Fight on The Beaches-The Speeches That Inspired History' শিরোনামে। গ্রন্থটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে 'The Struggle This Time is the Struggle for Independence' শিরোনামে। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থটি বিশ্বের অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছেছে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় ভাষণটির অনুবাদ হলে বেশি সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছাবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবে এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর।
রবীন্দ্রনাথের পূর্বদিগন্ত আজকের বাংলাদেশ। তার কবিতার পঙ্ক্তি দিয়ে বিশ্ববাসীকে বঙ্গবন্ধুর আগমন বার্তা দিয়েছেন এভাবে :
ঐ মহামানব আসে,
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে
মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে।
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ,
নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক
এল মহাজন্মের লগ্ন। ...
এই ভাষণ বিশ্বজোড়া নিপীড়িত মানুষের সামনে প্রতিরোধের প্রেরণা। মানুষের অধিকার আদায়ের জয়গানে মুখরিত হবে ভাষণের পঙ্ক্তিমালা।
সেলিনা হোসেন : কথাসাহিত্যিক; সভাপতি, বাংলা একাডেমি