বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রয়োজন যুগোপযোগী শিখন পদ্ধতি
ড. মো. আজিজুর রহমান
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির বিকল্প নেই। গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি হয়; কিন্তু দ্রুত পরিবর্তিত পৃথিবীর শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে যেসব দক্ষতা অর্জন করা দরকার, পুরোনো শিক্ষাব্যবস্থা সে ধরনের দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট এখন বেকার। আরও লাখ লাখ শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট বেকার না হলেও, এমন কর্মের সঙ্গে যুক্ত যাতে তাদের অর্জিত শিক্ষার কোনো প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এসব শিক্ষিত; কিন্তু অদক্ষ গ্র্যাজুয়েট দেশ ও সমাজের জন্য প্রত্যাশিত অবদান রাখতে পারছে না। অথচ এসব গ্র্যাজুয়েট তৈরির পেছনে সরকার ও শিক্ষার্থীদের পরিবারকে ব্যয় করতে হয়েছে শত শত কোটি টাকা।
উন্নত দেশগুলোয় গত কয়েক দশকে উচ্চশিক্ষাসহ সর্বস্তরের শিক্ষাপদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা গ্র্যাজুয়েটরা যেন দেশ ও সমাজের উন্নয়নে উপযুক্ত অবদান রাখতে পারে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাকরিবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি ও সরবরাহ করতে পারে, সেজন্য উপযুক্ত শিক্ষণ-শিখন (টিচিং-লার্নিং) কার্যক্রম নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোর্স কারিকুলামে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আউটকাম-বেজড এডুকেশন (ওবিই) বা শিখন ফলভিত্তিক শিক্ষা এরকম একটি আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি, যা সারা বিশ্বে উচ্চশিক্ষাসহ শিক্ষার সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে, উচ্চশিক্ষায় আউটকাম-বেজড এডুকেশনের (ওবিই) পাশাপাশি কম্পিটেন্সি-বেজড এডুকেশন (সিবিই) বা যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতির ব্যবহারও বাড়ছে।
ভালো খবর হলো, দেরিতে হলেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘শিখন ফলভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি’ চালু হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন আনতে এবং দেশে-বিদেশে চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী, দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (বিএসি) উচ্চশিক্ষায় ওবিই বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০১৮ সালে শিখন ফলভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতির কারিকুলামের একটি খসড়া টেমপ্লেট তৈরি করে এবং মতামতের জন্য সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো মতামত ও পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিশনের ১৫৭তম সভায় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিখন ফলভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি চালু করার জন্য Template of Outcome Based Education Curriculum নামে একটি স্ট্যান্ডার্ড টেমপ্লেট অনুমোদন দেওয়া হয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পাঠানো হয়। পরবর্তীকালে এ শিক্ষাপদ্ধতি কী এবং কীভাবে শিখন ফলভিত্তিক কারিকুলাম তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে সে বিষয়ে মঞ্জুরি কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) শিক্ষকদের জন্য কর্মশালার আয়োজন করে। ফলস্বরূপ ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ বিভাগ শিখন ফলভিত্তিক কারিকুলাম তৈরি করে সে অনুযায়ী শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেছে; কিন্তু কর্মশালাগুলো স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে এখনো অনেক শিক্ষকের এ শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার নয়। এখনো অনেক বিভাগ শিখন ফলভিত্তিক কারিকুলাম শুরু করলেও গতানুগতিক শিক্ষণ-শিখন এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। এ লেখায় আমি শিখন ফলভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি (ওবিই) এবং যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি (সিবিই) কী, গতানুগতিক শিক্ষার সঙ্গে ওই শিক্ষাপদ্ধতি দুটির পার্থক্য কী, এর বাস্তবায়নের ধাপগুলো এবং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান অবকাঠামো ব্যবহার করে ওবিই অথবা সিবিই পদ্ধতির বাস্তবায়ন সম্ভব কি না-এ বিষয়ে আলোচনা করব।
শিক্ষাবিজ্ঞানের ভাষায় শিখনফল বা লার্নিং আউটকাম হলো, কোনো কোর্স বা প্রোগ্রাম শেষে একজন শিক্ষার্থী যেসব কাজ করার সামর্থ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়, তার সমষ্টি। আর শিখন ফলভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি বা আউটকাম বেজড এডুকেশন হলো এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে একজন শিক্ষার্থী শিখন প্রক্রিয়া শেষে কী ধরনের জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে সামর্থ্য হবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। তাই এ শিক্ষাপদ্ধতি চালু করার প্রথম ধাপ হলো শিখনফল নির্ধারণ করা এবং পরবর্তী ধাপ হলো শিখনফলের ওপর ভিত্তি করে কারিকুলাম, শিক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা। আমেরিকান শিক্ষাবিদ, শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম জি স্পাডিকে এ শিক্ষাব্যবস্থার জনক বলে অভিহিত করা হয়। অন্যদিকে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতিতে কোনো কোর্স বা প্রোগ্রাম শেষে একজন শিক্ষার্থী কোনো নির্দিষ্ট কাজ বা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কী ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করবে তা সুনির্দিষ্ট থাকে। অর্থাৎ, যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতির উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের কোনো বিশেষ পেশায় যোগ্য করে তোলা। তাই বিশ্বব্যাপী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল, ফার্মেসি, নার্সিং, শিক্ষকতা ইত্যাদি পেশাভিত্তিক বিষয়গুলোর জন্য যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতি চালু হয়েছে। তবে শুধু পেশাভিত্তিক বিষয়গুলোয় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব।
ওবিই ও সিবিই পদ্ধতি দুটির মধ্যে বেশকিছু সামঞ্জস্যতা ও পার্থক্য রয়েছে; কিন্তু এ দুটি পদ্ধতিই গতানুগতিক শিক্ষা থেকে অনেক আলাদা। যেমন: গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতি বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, শিক্ষককেন্দ্রিক, মুখস্থনির্ভর এবং অংশগ্রহণমূলক নয়। গতানুগতিক শিক্ষাপদ্ধতিতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, শিক্ষার্থীদের ভূমিকা থাকে নগণ্য এবং শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখল তা যাচাইয়ের জন্য পড়ানো বিষয়বস্তুর ওপর লিখিত পরীক্ষা, কুইজ, ক্লাস টেস্ট ইত্যাদি নেওয়া হয়। অর্থাৎ এ প্রথাগত পদ্ধতিতে শুধু জ্ঞানগত অর্জনকে পরিমাপ করা হয় এবং শিক্ষার্থীরা যা জানল সেটি প্রয়োগ করতে পারল কি না, তা তেমনভাবে পরিমাপ করা হয় না। অন্যদিকে ওবিই এবং সিবিই পদ্ধতি হলো শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, সুনির্দিষ্ট শিখনফল বা যোগ্যতানির্ভর ও প্রায়োগিক। ওবিই ও সিবিই পদ্ধতির সঙ্গে গতানুগতিক বা প্রথাগত শিক্ষাপদ্ধতির পার্থক্য বোঝানোর জন্য একটি গল্প প্রচলিত আছে। একজন বালকের ফিডো নামের একটি পোষা কুকুর ছিল। একদিন ছেলেটি তার বাবাকে ডেকে খুব গর্বভরে বলল, ‘আমি ফিডোকে কীভাবে শিস দিতে হয় শিখিয়েছি।’ তখন তার বাবা বললেন, ‘খুব ভালো কথা। আমি দেখতে চাই।’ সঙ্গে সঙ্গে ফিডো তার কুকুরকে নির্দেশ দিল, ‘ফিডো শিস দাও!’ বালকের কথা শুনে ফিডো খুব জোরে লেজ নাড়াতে লাগল; কিন্তু শিস দিল না। ছেলেটির বাবা বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম তুমি ফিডোকে শিস দিতে শিখিয়েছ। সে তো শিস দিল না!’ ছেলেটি বলল, ‘আমি বলেছি, আমি ফিডোকে শিখিয়েছি কীভাবে শিস দিতে হয়, আমি তো বলিনি সে সেটা শিখেছে!’ ওবিই এবং সিবিই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা কী জানল তার সঙ্গে সঙ্গে কী করতে পারল তা পরিমাপ করা হয়; কিন্তু গতানুগতিক শিক্ষায় কোনো একটি কাজ কীভাবে করতে হয় তা শেখানো হয়। তবে সে কাজটি করতে পারল কি না, তা মূল্যায়ন করা হয় না।
দেশে উচ্চশিক্ষায় ওবিই ও সিবিই বাস্তবায়ন খুব সহজ নয়। এর বাস্তবায়নের জন্য দরকার শিক্ষকদের শিখন ফলভিত্তিক অথবা যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন, কারিকুলাম ডিজাইনের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও মনিটরিং। উচ্চশিক্ষায় ওবিই এবং সিবিই বাস্তবায়ন কীভাবে করতে হবে এর উদাহরণ হিসাবে ১৯৯৭ সালে স্কটল্যান্ডের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলে চালু হওয়া ওবিই পদ্ধতিটি বিভিন্ন দেশে মেডিকেল শিক্ষার মডেল হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে (Margery H. Davis, 2003)।
ওবিই ও সিবিই কারিকুলাম তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো প্রোগ্রাম লার্নিং আউটকাম বা প্রোগ্রামের শিখনফল (পিএলও) নির্দিষ্ট করা। কারণ, পিএলওর ওপর নির্ভর করে কারিকুলামে কী কী কোর্স এবং কোর্সের অধীন কোন বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত হবে, শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি কী রকম হবে, কী কী উপায়ে শিখন বা দক্ষতা অর্জন মূল্যায়ন করা হবে ইত্যাদি। পিএলও ঠিক করার প্রথম ধাপ হলো প্রোগ্রামের অভিলক্ষ্য (Mission), লক্ষ্য (Goals) ও উদ্দেশ্য (Objectives) ঠিক করা। এরপর সব স্টেকহোল্ডারের (শিক্ষার্থী, শিক্ষক, নিয়োগকর্তা, শিল্প বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি) সঙ্গে মতবিনিময় করে সে প্রোগ্রাম থেকে তারা কী প্রত্যাশা করে, যেমন কোন কোন দক্ষতা, জ্ঞান এবং গুণাবলি স্নাতকদের থাকা উচিত বলে তারা মনে করে তা জানা। তৃতীয় ধাপে এসে পিএলও নির্ধারণ করা হয়। পিএলওর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ একাডেমিক ডিগ্রি প্রোগ্রাম সম্পন্ন করার পরে কী কী দক্ষতা এবং যোগ্যতা অর্জন করবে বলে আশা করা হয় তা নির্দিষ্ট থাকে। পিএলওর ব্যাপ্তি অনেক প্রশস্ত। পিএলও নির্ধারণ করতে ব্লুমের শ্রেণিবিন্যাসের (Bloom's Taxonomy) উচ্চতর জ্ঞানীয় দক্ষতার বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়।
কোনো ডিগ্রি প্রোগ্রামের ওবিই এবং সিবিই কারিকুলাম তৈরির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো প্রোগ্রামের অধীন কোর্সগুলোরও কোর্স লার্নিং আউটকাম বা কোর্সের শিখনফল (সিএলও) নির্ধারণ করা। একটি কোর্সের শিখনফল (সিএলও) পিএলওর চেয়ে বেশি সুনির্দিষ্ট এবং এতে একটি নির্দিষ্ট কোর্স সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীরা কী ধরনের জ্ঞানীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারে তার রূপরেখা থাকে। সিএলও নির্ধারণ করতে ব্লুমের শ্রেণিবিন্যাসের নিম্নক্রম থেকে উচ্চক্রমের চিন্তা করার দক্ষতার ছয়টি স্তর-মনে রাখা, বোঝা, প্রয়োগ করা, বিশ্লেষণ করা, মূল্যায়ন করতে পারা এবং সৃষ্টি করার সক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়া যায়। পিএলও লেখার জন্য বিভিন্ন কর্মক্রিয়া (action verb) ব্যবহার করা এবং প্রত্যেক সিএলওর সঙ্গে পিএলওর ম্যাপিং করা আবশ্যক।
ওবিই ও সিবিই কারিকুলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উপযুক্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা। কারণ, ভুল মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রোগ্রামের পিএলও অর্জনে অন্তরায় হতে পারে। এমন মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে, যাতে নির্ধারিত শিখনফল অর্জিত হলো কি না তা পরিমাপ করা যায়। ওবিই ও সিবিই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করার সামর্থ্যরে (remember) ওপর সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়, বরং শিক্ষার্থীদের ব্লুমের শ্রেণিবিন্যাসের উচ্চতর জ্ঞানগত দক্ষতাগুলো অর্জিত হলো কি না, তা পরিমাপ করা হয়। কোনো কোর্সের সর্বমোট মার্কের প্রায় অর্ধেক ধারাবাহিক মূল্যায়নের (ক্লাস টেস্ট, প্রেজেন্টেশন, কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট, রিপোর্ট ইত্যাদি) জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। বাকি অর্ধেক মার্ক বরাদ্দ রাখতে হবে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করার সময় ব্লুমের শ্রেণিবিন্যাসের জ্ঞানীয় দক্ষতার ছয়টি স্তর থেকে প্রশ্ন করা বাঞ্ছনীয়। ব্লুমের শ্রেণিবিন্যাসের জ্ঞানীয় দক্ষতার ছয়টি স্তর বিবেচনায় নিয়ে তা থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে কী ধরনের ক্রিয়াপদ ব্যবহার করতে হয়, সেজন্য ‘পেডাগজি হুইল’ বেশ সহায়ক।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিখন ফলভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতির (ওবিই) কারিকুলাম চালু করার যে উদ্যোগ ইউজিসি নিয়েছে, তা প্রশংসাযোগ্য ও যুগোপযোগী। কিন্তু এটির বাস্তবায়ন অনেক চ্যালেঞ্জিং। অধিকাংশ শিক্ষক এখনো গতানুগতিক শিক্ষার শিক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি থেকে বের হতে পারেননি। ইউজিসি, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনকে ওবিই কারিকুলাম বাস্তবায়নে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং কারিকুলাম বাস্তবায়নে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে আলোচনার জন্য সেমিনার, কনফারেন্স ইত্যাদির আয়োজন করতে হবে। সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হলে ওবিইর উপকারিতা থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা, সমাজ, দেশ এবং নিয়োগকর্তারা বঞ্চিত হবে। শিক্ষিত; কিন্তু অদক্ষ গ্র্যাজুয়েটের বোঝা দিনে দিনে বাড়তে থাকবে। যেসব চাকরিতে উচ্চস্তরের দক্ষতা প্রয়োজন হয়, তা ধীরে ধীরে বিদেশিদের হাতে চলে যাবে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে উচ্চস্তরের চাকরিগুলোয় প্রবেশের সুযোগ হাতছাড়া হতে থাকবে।
ড. মো. আজিজুর রহমান : প্রফেসর, ফার্মেসি বিভাগ; সাবেক প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ajijur.rubd@gmail.com