বাইফোকাল লেন্স
ভাঙনের মুখে মিয়ানমার
একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রায় আড়াই বছর আগে অং সান সু চির বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার পর এই প্রথম সুসজ্জিত সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়েছে তাতমাদও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বিশেষ করে সীমান্ত শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছে তারা। মিয়ানমারে এখন শুধু সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী নয়, সেদেশের তরুণরাও জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। কাচিন, কারেন, চিন ও রাখাইনদের পাশাপাশি সু চি সমর্থক বামারদের একাংশ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হয়েছে। ২৭ অক্টোবর থেকেই দিনদিন এ যুদ্ধের মাত্র বেড়েছে; বিশেষ করে বিদ্রোহী তিনটি বৃহত্তর সশস্ত্র বাহিনী সমন্বিতভাবে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেছে। এ তিনটি বাহিনী হলো-তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বা টিএনএলএ, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি বা এমএনডিএএ এবং আরাকান আর্মি বা এএ। এগুলো পৃথক জাতিসত্তার আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন। এ তিনটি সংগঠন মিলেই ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ গড়ে তুলেছে। এ সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রথম দুটি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে সক্রিয়। তাদের অবস্থান তাং ও ককং জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে। এএ বা আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন আরাকানের রাখাইনে সরকারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতা জারি রেখেছে। তাদের লক্ষ্য সামরিক জান্তাকে উৎখাত করা এবং গণতান্ত্রিক শাসন পুনরুদ্ধার করা।
সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক লড়াইয়ে বিদ্রোহীরা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, বাণিজ্যিক রুটসহ দেশের উত্তরে একশটির মতো ফাঁড়ি দখল করে নিয়েছে। তাদের এ সমন্বিত সশস্ত্র তৎপরতা মিয়ানমারের অন্য অঞ্চলের বিদ্রোহী বাহিনীকেও সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উৎসাহিত করছে। এসব হামলার ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো এখন কার্যত বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেছে এবং সামরিক জান্তা উল্লিখিত অঞ্চলের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। বিদ্রোহী সশস্ত্র সদস্যরা ওই অঞ্চলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এবং বাহিনীর সদস্যদের মনোবলও ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় বেশকিছু সেনাসদস্য পক্ষ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে শান রাজ্য, কাহায়া, চিন, রাখাইন, মোন রাজ্য, সাগাইং ও ম্যাগওয়ে অঞ্চলে জান্তা বাহিনীর ৪৪৭ সদস্য অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে। এছাড়া শতাধিক সদস্য পক্ষত্যাগ করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের আসাম ও মিজোরাম রাজ্যে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আনুমানিক ১০৪ সদস্যকে ফেরত পাঠিয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের পোষ্য বাহিনীর বিরুদ্ধে এ যৌথ হামলা চালিয়ে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলো মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃস্থাপনের ভিত তৈরি করছে।
সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনের সম্মিলিত চাপের মুখে মিয়ানমারের জান্তারা এখন কঠিন সময় পার করছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন, বিদ্রোহীদের এ চাপ যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যেদিন তার দেশ কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। বলা হচ্ছে, মিনায়মানের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ভূমি দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জনগণকে সামরিক বাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন্ট শোয়ে। কিন্তু তার এ অনুরোধ মানুষ কানে তোলেনি। বরং মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগই সেনাবাহিনীর পরাজয়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। ২০২১ সালে সু চিকে সরিয়ে দেওয়ার পর সমাজের সর্বস্তরের জনগণ যখন ক্ষোভে রাস্তায় নেমে এসেছিল, প্রবলভাবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ও সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তখনও তারা চরম সহিংসতার মধ্য দিয়ে জনগণের সেই আন্দোলন দমন করেছিল। এমনকি বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের নামে প্রতিবাদী মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিও চালিয়েছিল। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২১ সালেই দলমতনির্বিশেষে সরকারবিরোধী ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মিলিত এ বিরোধী ঐক্যের মধ্য থেকেই তখন জাতীয় ঐক্য সরকার বা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট অব মিয়ানমার (এনইউজি) গঠিত হয়। শুধু তাই নয়, তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকারবিরোধী সশস্ত্র যোদ্ধা গড়ে তোলে। এনইউজির এসব সশস্ত্র যোদ্ধাও মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর এ সমন্বিত আক্রমণের পেছনে চীনের ভূমিকা নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, চীনের সবুজ সংকেত পেয়েই ২৭ অক্টোবর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে চীন যেমন নিরন্তর সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, তেমনই আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর সঙ্গেও তারা সদ্ভাব বজায় রেখেছে। এসব দলের অস্ত্রশস্ত্রের প্রধান উৎসও হলো চীন। তবে মিয়ানমারের খ্রিষ্টান অধ্যুষিত কারেন ও চিন প্রদেশের সশস্ত্র দলগুলোর বিষয় ব্যতিক্রম ছিল। এসব অঞ্চলে পশ্চিমা বেসরকারি সহযোগিতার হার বেশি। ২০২১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর অং সান সু চির দল পিডিএফ ২০২২ সাল থেকে যখন সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর অনেক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ অঞ্চলের সমাজের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের চার্চ সমাজের যোগাযোগ আছে। তাছাড়া বিগত কয়েক বছরে মিয়ানমারের রাজনীতিমনস্ক তরুণ সমাজের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। ওই একই তরুণ সমাজের ভেতর চীনের বিষয়ে সন্দেহ ও অনাস্থা বেড়েছে কয়েকগুণ। পশ্চিমাদের এরূপ সম্পৃক্ততা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা দেখে চীন মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে সরিয়ে আনতে তাদের দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। চীনের এমন সহযোগিতার মনোভাবকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত সামরিক জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ ২৭ অক্টোবর মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে সমন্বিত সামরিক অভিযান শুরু করে। তাদের এ অভিযান শুরুর দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এর নামকরণ করে ‘অপারেশন ১০২৭’। এ অপারেশন শুরুর পর থেকেই চিন, কাচিন ও কারেন যার যার এলাকায় সশস্ত্র তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। ওদিকে সু চি সমর্থক বামারদের একাংশও এ লড়াইয়ে শামিল হয়।
সশস্ত্র বিদ্রোহী দলের প্রতি চীনের সমর্থনে অন্য আরও কারণ রয়েছে। চীনের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের শান প্রদেশে বিভিন্ন অনলাইন কেন্দ্রে চীনা নাগরিকরা কাজ করে। বলা হয়ে থাকে, এসব চীনা নাগরিক পাচারের শিকার হয়েছেন। তাদেরকে দাসের মতো কাজ করতেও বাধ্য করা হয়। চীন তাদের নাগরিকদের সঙ্গে এমন আচরণ ভালোভাবে নিতে পারেনি। তারা বিষয়টি মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে অবহিত করে এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলে। এমনকি এ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে চীন অনুরোধ করে। কিন্তু এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের নিষ্ক্রিয়তা চীনকে হতাশ করে। ফলে তারা জান্তা সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। এ বিষয়টিও মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর প্রতি চীনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করেন। তবে উভয় পক্ষের প্রতি ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই চীনের কৌশলগত অবস্থান বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ মিয়ানমার থেকে অব্যাহত সুবিধা নিতে যুদ্ধরত দুপক্ষকে নিজেদের হাতে রাখার কৌশল নেয় চীন। এককথায়, মিয়ানমারে চীনের কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। মান্দালয়ের ভেতর দিয়ে তাদের একটি রেললাইন প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া শান প্রদেশের ভেতর চীনের গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পও রয়েছে। সেখানে ‘আন্তঃসীমান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ করতে চায় চীন। মিয়ানমারে সামরিক স্বার্থ ছাড়াও তাদের এ বিপুল অর্থের বিনিয়োগ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে চীন সব পক্ষের সঙ্গে একটা ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। তবে বর্তমানে মিয়ানমারে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে চীনের দিক থেকে এ অবস্থা মেনে নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। চীন তার স্বার্থে আঘাত লাগার বিষয়টিকে কোনোভাবেই বরদাশত করবে না। মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের ১ হাজার ৩০০ মাইলের সীমান্ত রয়েছে। এ বিশাল সীমান্তের নিরাপত্তা দেওয়ার সামর্থ্য জান্তা বাহিনী ইতোমধ্যেই হারিয়েছে। ওদিকে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে চীন খুবই স্পর্শকাতর। এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সীমান্ত ও সীমান্তের চেক পয়েন্টগুলোর ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে জান্তার সঙ্গে থাকলেও মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতার নীতি গ্রহণ করেছে চীন। চীনের মনোভাবের এ পরিবর্তন নিশ্চিতভাবেই মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র যোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, মিয়ানমার সরকারের হাতে এখন কী কী উপায় আছে? তারা সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোর তীব্র আক্রমণের মুখে পিছু হটছে। প্রায় প্রতিদিনই বিদ্রোহীদের হাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলো চলে যাচ্ছে। একে একে বড় বড় শহরের পতন ঘটছে। এসব আক্রমণে সরকারের সেনা সদস্যরা প্রাণ হারাচ্ছে। বিদ্রোহীদের মারমুখী আক্রমণে টিকে থাকতে না পেরে দলবেঁধে তারা আত্মসমর্পণও করছে। শুধু তাই নয়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়েও আশ্রয় নিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়, চারদিকের এই তীব্র চাপের মুখে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের নৈতিক মনোবল সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। আর মনোবল একবার ভেঙে পড়লে তাদের দিয়ে আর যাই হোক, সশস্ত্র যুদ্ধে জয়লাভ করা যায় না। ওদিকে পরিস্থিতি যেহেতু বিদ্রোহীদের পক্ষে, সেহেতু তারা সামরিক জান্তার পতন না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে রাজনৈতিক ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মিয়ানমার জান্তারা এ মুহূর্তে পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। এ লজ্জাজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামরিক সরকারের যে উপায় আছে তা হলো, তাদের চিরকালের বন্ধুরাষ্ট্র চীনের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করা। এর আগে তাদের যে কাজটি করতে হবে তা হলো, মিয়ানমার সরকারপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে সরিয়ে দেওয়া। প্রশ্ন হচ্ছে, মিয়ানমারের স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের নেতারা কি তাকে সরিয়ে দেবেন? মিন অং হ্লাইং একজন দুর্নীতিবাজ ও অসৎ ব্যক্তি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি নিঃসন্দেহে একজন অযোগ্য জেনারেলে পরিণত হয়েছেন। তিনি যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, বিদ্রোহী দলগুলো ততদিন আলোচনায় বসতে রাজি হবে না। অতএব, জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে সরিয়ে দেওয়ার পরই বিদ্রোহী দলগুলোর সঙ্গে মীমাংসায় বসা উচিত হবে।
ওদিকে জান্তা-পরবর্তী মিয়ানমারের ক্ষমতায় কারা আসবে, সে বিষয়ে এনইউজির একটি পরিকল্পনা আছে বলে জনা গেছে। তারা চাইবে সু চির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ মিয়ানমার নতুন করে যাত্রা শুরু করুক। কিন্তু ‘অপারেশন ১০২৭’-এ অংশগ্রহণকারী সশস্ত্র দলগুলো তা মেনে নেবে বলে মনে হয় না। তারা বরং ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থার বিষয়ে আগ্রহী, যাতে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা যায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করেন, এ মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে জান্তার শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া দরকার। তা না হলে তারা মারাত্মক ভুল করবে। তারা রাজনৈতিক মীমাংসার পথে না হেঁটে যদি জোর খাটানোর চেষ্টা করে, তাহলে তাদের পতন তো ঘটবেই; মিয়ানমারের ভাঙনও কেউ ঠেকাতে পারবে না।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কলাম লেখক