Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন

এটা কি নির্বাচনি পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র?

Icon

ড. সুলতান মাহমুদ রানা

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এটা কি নির্বাচনি পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র?

ফাইল ছবি

নির্বাচনের ধরন ও পরিবেশ নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম হয়েছে। গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের শেষ সময়ে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ নিন্দার ঝড় তুলেছে। উল্লিখিত হামলার ঘটনাটি নিঃসন্দেহে ন্যক্কারজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। নির্বাচনে একদল জিতবে, একদল হারবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একজন সংসদ-সদস্য প্রার্থীকে হামলার বিষয়টি কোনোভাবেই রাজনীতির শিষ্টাচারসম্মত নয়। শুধু সাধারণ মানুষের মনে নয়, সচেতন মহলের মাঝেও ব্যাপকভাবে প্রশ্ন জেগেছে-কারা এ হামলাটি চালিয়েছে। কেনই বা এ হামলার ঘটনা? এসব প্রশ্ন খুব স্বাভাবিকভাবেই ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। এ ঘটনার নেপথ্য কারণ অনুমান করতে গিয়ে একটি বাস্তব নির্মমতার সূত্র তুলে ধরতে চাই।

২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলে রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল ছাত্রশিবির ক্যাডাররা। হলের গেটে যখন ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা প্রবেশ করে, তখন তারা জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছিল। হলের গেটম্যানরা সহজেই যাতে গেটের তালা খুলে দেয়, মূলত সে উদ্দেশ্যেই জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছিল শিবির ক্যাডাররা। সেদিন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফারুককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি হিরো আলমের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের কারও কারও গায়ে নৌকার ব্যাজ পরা ছিল মর্মে পত্রিকায় খবর পড়লাম। এখানে আমার প্রশ্ন হলো, নৌকার ব্যাজ পরা থাকলেই অথবা জয় বাংলা স্লোগান দিলেই কি তারা নৌকার সমর্থক? এ প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই ‘না’।

হিরো আলমের ওপর যে হামলা চালানো হয়, সেটি যে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হয়নি-তা কিন্তু কোনোভাবেই ভাবা যায় না। ঘটতেই পারত সেদিন হিরো আলমের হত্যাকাণ্ড। খুব ন্যায্যভাবেই ভেবে নেওয়া যায়, একজন সংসদ-সদস্য প্রার্থী হত্যার শিকার হলে নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলা সহজ হয়ে যেত। নির্বাচনের বাইরে থাকা একটি গোষ্ঠী নির্বাচনের পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং দেশে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি করতে ওত পেতে রয়েছে। সেক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ডের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতেও তারা পিছপা হবে কিনা, সেটি ভেবে দেখা দরকার।

সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলে প্রমাণ করতে চায়, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু বা নিরপেক্ষ হচ্ছে না। উল্লিখিত হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অবশ্য এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে নিন্দাও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত। কিন্তু জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগকে বিএনপি নিজেদের রাজনৈতিক বিজয় হিসাবে বিবেচনা করছে। কারণ বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক স্ট্যান্ড হলো বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এ বিষয়টি প্রমাণ করার মূল লক্ষ্য নিয়েই যেহেতু বিএনপি রাজনীতিতে সরব হয়েছে, সেহেতু এটাকে রাজনৈতিক বিজয়ই ভাবছে।

হিরো আলমের ওপর যারা যে কারণেই হামলা চালিয়ে থাকুক না কেন, মনে রাখতে হবে, এভাবে রাজনীতিতে বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়। রাজনীতিতে সফল হওয়ার মূল শক্তি হলো গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার এবং সহনশীল মানসিকতা। নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে, তা একটি বিতর্কের বিষয় হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনি পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ঘটনাটিতে গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যায়।

রাজনীতির মাঠে গোল কে খাবে আর কে দেবে, সেটা বড় কথা নয়; আমরা চাই স্থায়ী, গ্রহণযোগ্য ও ন্যায্য সমাধান। তবে সমাধান ও সমঝোতার টানাপোড়েনে দেশে নতুন করে আবার কোনো ১/১১ হোক, এটা আমরা কেউই চাই না। একটি সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বর্তমানে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারছি, বাংলাদেশকে যে কোনোভাবেই অনিরাপদ প্রমাণ করতে মরিয়া রয়েছে একটি কুচক্রী মহল। ফলে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সুযোগে তারা ষড়যন্ত্রমূলক ও সহিংস কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যস্ত হয়ে উঠবে-এটি খুব স্বাভাবিক।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের অন্যতম নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসাবে বিবেচিত হওয়ার কথা থাকলেও আমাদের দেশের কিছু রাজনৈতিক দল নিরাপত্তার শঙ্কা হিসাবে বিবেচিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারকে বিপাকে ফেলার টার্গেট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওইসব রাজনৈতিক সংগঠন। তাতে যদি কারও জীবন বিপন্নও হয়, সেটাকেও তারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগাতে চায়। এটাকে বলা যেতে পারে ক্ষমতায় যাওয়ার ঘৃণ্য প্রতিযোগিতা।

কাজেই এ কথা বলেই শেষ করতে চাই যে, দেশে কোনো অস্থিতিশীল ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, সেটি দেশবাসীর কাছে কোনাভাবেই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে কোন্ সরকারে অধীনে নির্বাচন হবে কিংবা নির্বাচনে রেফারি কে হবে, তার চেয়ে বড় কথা হলো-সময়মতো সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে সরকারি দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক মনোভাব পোষণের ভিত্তিতে নমনীয় অবস্থানে নিয়ে আসা। নির্বাচনকে বানচাল করার কোনো অপতৎপরতা কিংবা সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই তা মানবে না।

ড. সুলতান মাহমুদ রানা : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

sultanmahmud.rana@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম