Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

স্বদেশ ভাবনা

সব পক্ষের জন্যই সতর্কবার্তা

Icon

আবদুল লতিফ মণ্ডল

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সব পক্ষের জন্যই সতর্কবার্তা

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ নতুন ভিসানীতির ঘোষণা করেছেন। মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী ঘোষিত নতুন ভিসানীতির আওতাভুক্ত হবেন এমন বাংলাদেশিরা হলেন-বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিকে সতর্কভাবে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির যথেচ্ছ প্রয়োগ হবে না। সরকার আশা করবে, এটার নিবর্তনমূলক প্রয়োগ তাদের উদ্দেশ্য নয়। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নতুন মার্কিন ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে কয়েকটি রাজনৈতিক দল/জোট যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপকে ‘একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিকে বাংলাদেশের জন্য ‘অবমাননাকর’ বলে অভিহিত করেছে। আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) বলেছেন, এ নীতি বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন দেশের জন্য ‘দুঃখজনক’ ও ‘অবমাননাকর’। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অর্থনীতিবিদরা যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও তারা একটি বিষয়ে একমত যে, ‘এ পরিস্থিতির জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা দায়ী।’

এক দশক ধরে দেশে যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বহুলাংশে অনুসৃত হচ্ছে না, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, আইনের শাসনে অবনতি ঘটছে, দুর্নীতি সুশাসনকে ব্যাহত করছে, সেসব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে যেমন নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে তথ্য জোগাড় করেছে, তেমনই অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে।

এ প্রসঙ্গে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে সেগুলো হলো-যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউজ, সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্র্যাসি (ডি-ডেম), যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি)।

কয়েক বছর ধরে এসব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা, আইনের শাসন, মানবাধিকার, দুর্নীতি নিয়ে তথ্যভিত্তিক নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। তাছাড়া লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রকাশিত বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবনমন অর্থাৎ ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র সূচক’ থেকে ‘হাইব্রিড্র রেজিম’ বা মিশ্র শাসন ক্যাটাগরিতে অবনমন নিয়ে আলোচনা ও মন্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রশ্নটি উঠতে পারে তা হলো, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু রাখতে যুক্তরাষ্ট্র অন্য কোনো পদক্ষেপের পরিবর্তে নতুন ভিসানীতির আশ্রয় নিল কেন? এর উত্তর হলো, এশিয়া মহাদেশে অন্য অনেক দেশের নাগরিকদের তুলনায় বাংলাদেশিদের জন্য মার্কিন ভিসা ইস্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। তাদের মধ্যে নতুন ভিসার আওতাভুক্ত রাজনীতিক, আমলা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং তাদের শিক্ষার্থী সন্তানদের সংখ্যা মোটেই কম নয়। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু রাখতে নতুন ভিসানীতি তাদের ওপর, বিশেষ করে রাজনীতিকদের ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করবে।

তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র গমনেচ্ছু সাধারণ বাংলাদেশিদের ওপর নতুন ভিসানীতির তেমন একটা প্রভাব থাকবে না। সাধারণ নাগরিকদের ভিসাপ্রাপ্তিতে এর কোনো ছাপ না পড়লেও রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এ ঘোষণার বহুমুখী প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতাভুক্ত সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং

বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্য যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নীতি ঘোষণার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এ দেশটি কোনো নীতি ঘোষণা করলে তার মিত্ররা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে থাকে। ফলে বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাসহ অন্যান্য দেশ তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে পারে।

যদিও আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীরা বলছেন, নতুন মার্কিন ভিসানীতি তাদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে, বাস্তবে তারা নানা অস্বস্তিতে ভুগছেন। তারা ভালো করেই জানেন, দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়নি। ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এবং বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল ৮টি দলের বর্জনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং গুটিকয়েক দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে সংসদের মোট ৩০০ আসনের ৫০ শতাংশের বেশি আসনে অর্থাৎ ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন।

জাতীয় সংসদের মোট আসনের কমবেশি তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ডিসেম্বর ২০১৮) অংশগ্রহণমূলক হলেও সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি। এ নির্বাচনে নজিরবিহীন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ছিল-নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্ধারিত দিনের আগের রাতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ব্যালট বাক্সে ভোট প্রদান। অভিযোগ আছে, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসামরিক প্রশাসন, বিশেষ করে বাস্তবে নির্বাচন পরিচালনাকারী মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বড় অংশটি দলীকরণের ফলে সরকারের অনুরক্ত হয়ে পড়ায় তাদের ব্যবহার করে

বিগত দুই নির্বাচনে জয়লাভ করা সহজ হয়ে ওঠে। নতুন মার্কিন ভিসানীতির ভয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিগত দুই জাতীয় নির্বাচনের মতো সমর্থন না জানালে দলটির পক্ষে বিরোধী দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেরে ওঠা কঠিন হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপির নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র কিছুই না বলায় এবং নতুন মার্কিন ভিসানীতি বিএনপির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠেয় আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কোনো বাধা সৃষ্টি করতে সাহস পাবে না।

মাঠের বিরোধী দল বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি এটাকে স্বাগত জানাচ্ছে এ কারণে যে, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা, এ ধরনের একটি পদক্ষেপ আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বসিত হওয়ার তেমন কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর একাধিকবার বলেছে, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বিএনপির মূল দাবি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন। অথচ মার্কিন নতুন ভিসানীতি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। নতুন ভিসানীতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মতো বিএনপির ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। নীতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এখানে যে প্রশ্নটি উঠে আসে তা হলো, বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি আদায় করবে কীভাবে?

বাংলাদেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে, তা অনেকটা আশির দশকের শেষদিক এবং নব্বইয়ের দশকের চুরানব্বই-ছিয়ানব্বই সময়কালের সঙ্গে তুলনীয়। উভয় ক্ষেত্রেই সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সংকটের অবসান হয়েছিল। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলের বর্জনে ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অনেকটা অংশগ্রহণহীন নির্বাচনের শুরু। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি সরকারের শাসনামলে অনুষ্ঠিত এ সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জনদাবি ওঠে প্রথমবারের মতো। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সরকার পদত্যাগ করে। এতে সাময়িকভাবে সমাপ্তি ঘটে আন্দোলনের। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে শেখ হাসিনা ও

খালেদা জিয়ার মধ্যকার স্বল্পকালীন সুসম্পর্কের অবসান ঘটে। বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে এবং ১৯৯৪ সালে মাগুরার একটি উপনির্বাচনে অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। অন্য দুটি বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীও এ আন্দোলনে অংশ নেয়। তাদের আন্দোলনে দেশের যাতায়াতব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়ায় জনগণ চরম বিপদের সম্মুখীন হয়,

শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখ লাখ শিক্ষার্থী, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসা-বাণিজ্য। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালের মার্চে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন এবং বিএনপির ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে সংঘাতের। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির কারণে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি আদায়ে বিএনপি এবং দলটির সহযোগী ও সমমনা দল/জোটগুলোর পক্ষে সহিংস আন্দোলন গড়ে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা আদায়ে এখন তাদের শান্তিপূর্ণভাবে গণজাগরণ সৃষ্টিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

নতুন মার্কিন ভিসানীতির ভয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন প্রদানের পরিবর্তে নিরপেক্ষ থাকাকে নিরাপদ বলে মনে করবে। পত্রপত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, এ রকম একটি চিন্তা একসময়ের আওয়ামী লীগ অনুরক্ত অনেক কর্মকর্তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

স্বাধীনতার পাঁচ দশকে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এসব নির্বাচনে দলীয় সরকারগুলোর হস্তক্ষেপ রোধে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন কমিশনগুলো নিশ্চুপ থেকেছে অথবা দলীয় সরকারগুলোর ইচ্ছা পূরণে সহায়তা করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের হস্তক্ষেপে বাধা না দিলে বা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কাজ করলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের অন্যান্য সদস্য এবং কর্মকর্তারা নতুন মার্কিন ভিসানীতির ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন।

সবশেষে যা বলতে চাই তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি সব পক্ষের জন্যই সতর্কবার্তা নিয়ে এসেছে। এ নীতি বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হতে সহায়ক হোক। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাংলাদেশে স্থায়িত্ব পাক। বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ সম্মানজনক অবস্থানে উঠে আসুক।

আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক

latifm43@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম