আইএমএফের ঋণ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত ৩০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বোর্ড সভা বাংলাদেশের জন্য ৪.৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছে। ৭ কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ দেওয়া হবে। এ ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। বর্ধিত ঋণ সহায়তা বা বর্ধিত তহবিল (ইসিএফ/ইএমএফ) থেকে দেওয়া হবে ৩৩০ কোটি ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় পাওয়া যাবে ১৪০ কোটি ডলার।
আইএমএফের প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সামস্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা, সামাজিক ও উন্নয়নমূলক ব্যয়ে আরও সক্ষমতা তৈরিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার, আর্থিক খাত শক্তিশালী করা, নীতি কাঠামোর আধুনিকায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে জনগণকে সহনশীল করার কাজে এ ঋণ সহায়তা করবে।
এ ঋণ প্রদানের আগে আইএমএফ দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিধারা, সমস্যা ও দুর্বলতা পরীক্ষা করেছে এবং সরকারি ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস, জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা বিস্তার, জনস্বাস্থ্য ও কৃষির উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি, শিল্পোন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ইত্যাদিতে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে।
১৯৭২ সালের শুরুতে যেখানে মানুষের মাথাপিছু আয় ৯০ ডলারের নিচে ছিল, তা বেড়ে ২৮২৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে (জুন ২০২২)। ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যের হার ২০১৯ সালে এসে ২০.৫ শতাংশে নেমেছে। যেখানে ১৯৭৩ সালের জিডিপির আকার ছিল প্রায় ৮ বিলিয়ন, সেখানে ২০২২ সালে তা ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
আইএমএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার সারা বিশ্বে ‘৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতি’ হিসাবে পরিগণিত হয়েছে (সূত্র : কানাডাস্থ ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট প্রকাশিত ‘দি টপ হেভি গ্লোবাল ইকোনমি’)। আইএমএফ মনে করেছে যে, করোনা মহামারি চলাকালে এবং মহামারির ভয়াবহতা-উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে বাংলাদেশ ভালো করেছে। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, মন্দা ও জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি (৫২ বিলিয়ন ডলার) রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও আমদানিও তুলনামূলক অধিক হারে বেড়েছে (৮৯ বিলিয়ন ডলার)। অন্যদিকে রেমিট্যান্স আগমন তেমন বাড়েনি। ফলে বাণিজ্য ও লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দেয়। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত নেমে যেতে থাকে। ২০২১ সালের আগস্টে যে রিজার্ভ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল তা নেমে প্রকৃত রিজার্ভ ডিসেম্বর ২০২২-এ ২৪ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। কাজেই বাণিজ্য ঘাটতি ও লেনদেনের ঘাটতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের সহায়তা প্রয়োজন।
নিঃসন্দেহে আইএমএফের উপর্যুক্ত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের আর্থ ব্যবস্থাপনার ওপর এ বহুজাতিক সংস্থাটির আস্থারই বহিঃপ্রকাশ। তবে আইএমএফের শর্ত মোতাবেক বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। যেমন রাজস্ব খাতে সংস্কার করে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে, যার মাধ্যমে সামাজিক খাত, অবকাঠামো উন্নয়ন, সরকারি অর্থায়ন ও বিনিয়োগ এবং জলবায়ু পরিবর্তন খাতে অধিক বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে।
আর্থিক খাত ও ব্যাংকব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। নীতি কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের সহায়ক পরিবেশের সৃষ্টি করতে হবে। বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়ে অর্থনীতির লোকসান কমানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফলে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়বে। বাজেটের ঘাটতি সীমিত রাখার কথাও বলা হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ে লাগাম টানা যায়।
তবে এ মুহূর্তে আইএমএফের সব শর্ত একসঙ্গে পালন না করলেও প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে অনিয়ম দূর করে সুশাসন আনয়ন এবং দেশের কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করে স্বনির্ভরতা আনয়নের জন্য এসব সংস্কার বাস্তবায়নে দেশের অভ্যন্তরে সুশীল সমাজ ও অর্থনীতিবিদদেরও পরামর্শ রয়েছে। এ অবস্থায় কৃষি, জ্বালানি ও গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে হবে।
বৈশ্বিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সরবরাহ চেইনে বিপর্যয়, মূল্যস্ফীতি প্রভৃতির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কতিপয় সমস্যার দিকেও আশু নজর দেওয়া এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও ব্যাংকাররা ব্যাংকব্যবস্থার নানা দুর্বলতা চিহ্নিত করে বিস্তর লেখালেখি করছেন, কিংবা সভা-সেমিনারে আলোচনা করছেন। গত পাঁচ বছরে ঋণখেলাপিদের যে সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দেওয়া হয়েছে তা নজিরবিহীন। এর ফলে ঋণ আদায়ের উন্নতি হয়নি; পাশাপাশি খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন ধরনের সুযোগ ও রাইট অফ করে যে খেলাপি ঋণ লুকিয়ে ফেলা হয়েছে তাসহ প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বলে অনেকের অভিমত। ব্যাংকে সুশাসনের অভাবে মন্দ ঋণ ও অর্থ পাচার বাড়ছে। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার এখন নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনবিআর, বিএফআইইউ, দুদক কিংবা সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কেউই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না; দেশের সচেতন মানুষ এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু নজর দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি চল্লিশ লাখ লোক বিদেশ থেকে চাকরি-বাকরি করছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডায় বসবাসকারী কতিপয় বাংলাদেশি ছাড়া অন্য সবাই নিয়মিত দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেন। কিন্তু অনেকেই বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেন না। হুন্ডি ব্যবসার কারণে কাঙ্ক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পৌঁছে না। আবার দেশের রপ্তানি আয়েরও একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে রেখে দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়া সত্ত্বেও সংকট কাটছে না। ইতোমধ্যে দেশীয় মুদ্রা (টাকা) প্রায় ২০-২২ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার দুষ্প্রাপ্যতার আর একটি কারণ হচ্ছে একশ্রেণির ব্যাংক কর্মকর্তা, এক্সচেঞ্জ হাউজ এমনকি সাধারণ মানুষও দাম বাড়িয়ে ডলার/পাউন্ড/ইউরো পরে বিক্রি করার জন্য বেশ কিছু দিন নিজেদের আয়ত্তে রেখে দিচ্ছে। ডলার-পাউন্ডের অবৈধ ব্যবসার কারণেও বৈদেশিক মুদ্রার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এবং রপ্তানিসামগ্রীর কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলার জন্য তফসিলি ব্যাংক ডলার সরবরাহ করতে পারছে না।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুর্বিপাকের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের পাশাপাশি দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগও ক্রমান্বয়ে কমছে। টাকার মূল্যের পতন, পুঁজি বাজারের প্রাইস সিলিং, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ডলার সংকট, এনবিআরের ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধাপ্রাপ্তি ও মুনাফা প্রত্যাবাসনে জটিলতা ইত্যাদি কারণে বিগত কয়েক বছর বৈদেশিক বিনিয়োগে নিুগতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
বিশেষ করে গতবছর ইকুইটি মূলধন, পুনর্বিনিয়োগকৃত আয় ও আন্তঃকোম্পানি ঋণ এ তিন খাতেই এফডিআই স্টক কমেছে। এ ছাড়া বিদেশি নতুন বিনিয়োগও তেমন আসছে না। দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে ব্যবসা সহজীকরণের যে প্রচেষ্টা হচ্ছে তার অগ্রগতি খুব সামান্য। বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানপূর্বক সমাধান বের করা জরুরি।
বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বর্তমান অর্থবছরে বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও অর্থ ছাড়করণের পরিমাণও কমেছে। সাধারণত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সূত্রমতে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মাত্র ১৭৬ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড়ও কম হয়েছে। দেশের রিজার্ভ কম থাকা ও ডলার সংকটের কালে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং সঠিক উন্নয়ন প্রকল্প নির্বাচনে দক্ষতার পরিচয় দেওয়া সম্ভব হলে দেশে ডলারের আগমন বাড়ত, যা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারত।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধির আশায় বার্ষিক বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ও আকার বাড়ানো হচ্ছে। বাজেট ঘাটতি চার থেকে ছয় শতাংশে সীমিত রাখার জন্য রাজস্ব সংগ্রহের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো বছরই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরিত হয় না। এর ফলে ঘাটতির পরিমাণ বাড়তে থাকে, যা অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে পূরণ করা হয়েছে। ফলে সরকারের ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার মতো সংস্থার সহজ শর্তের ঋণের সঙ্গে সঙ্গে চীন ও রাশিয়া বা ভারত থেকে উচ্চ সুদের ও অপেক্ষাকৃত কঠিন শর্তের ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে।
ফলে বার্ষিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে ২০২৩ সালের শেষে বিদেশি ঋণ দাঁড়াবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪ সালের শেষে এ ঋণ ১২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে। ২০২১ সালে সরকার সুদসহ ২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে। ২০২২ সালে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ হয়েছে পূর্ববর্তী বছরের প্রায় দ্বিগুণ। ২০২৪ সালে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের ৩ গুণ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় বহুজাতিক সংস্থার ঋণ ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে এবং ঋণের শর্তাবলির ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অবশ্য বছর বছর আমাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও বাড়ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসরকারি বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিমাণও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বর্তমানে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৬০০ কোটি ডলার। বেসরকারি খাতে গৃহীত ঋণের ক্ষেত্রেও সরকারকে গ্যারান্টি প্রদান করতে হয়। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকালে বেসরকারি ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার ওপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি করছে। ব্যাংকের ঋণের মতো বিদেশি ঋণ কোনো বেসরকারি ব্যক্তি বা কোম্পানি কর্তৃক খেলাপি হলে এর দায়ভার সরকারের ওপর বর্তাবে। কাজেই বিষয়টি সঠিকভাবে তদারকি না করলে ভবিষ্যতে সমূহ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা সদ্ব্যবহারের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া দরকার। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে গৃহস্থালি ও শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার হয়তো শিগ্গির জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পুনঃভরণ এক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন। আইএমএফের কাছ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাপ্ত ঋণের পাশাপাশি রপ্তানি বৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় দেশে আনা নিশ্চিতকরণ এবং বৈধ পথে বৈদেশিক আয় আনয়নের দিকে আশু দৃষ্টি দিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী, প্রবাসী বাংলাদেশি-সবার দেশপ্রেম ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও দক্ষতা দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া : সাবেক সিনিয়র সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান; বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত