জ্বালানি খাতে ভর্তুকি হ্রাস সমাধান নয়
একেএম মনোয়ার হোসেন আখন্দ
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কোভিড-১৯ মহামারি-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। দেশে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি একটি সংকট সৃষ্টি করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতার কারণে পণ্যসামগ্রী আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের বিদ্যমান বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট। এ উভয় সংকটে পড়ে বিদ্যুৎসহ সব খাতের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে সরকার বিভিন্ন সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ এখন একটি চরম ক্রান্তিকাল এবং কঠিন সংকটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন, তা সত্ত্বেও সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শতভাগ বিদ্যুতের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো, সব খাতের উন্নয়নে বিপ্লব সাধন, শিল্পায়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ মধ্যমআয়ের দেশ হিসাবে গ্র্যাজুয়েটপ্রাপ্তি, ভিশন-২০৪১ অর্জনসহ একটি উন্নত দেশে পৌঁছাতে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
উদাহরণস্বরূপ, মাত্র ১৪ বছরের ব্যবধানে ৪,৫০০ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৫,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তা ক্রমান্বয়ে ৬০,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। অন্যান্য দৃশ্যমান উন্নয়ন কার্যক্রম তো উদাহরণ হিসাবে আছেই।
বর্তমানের অর্থনৈতিক মন্দা এবং উন্নয়ন গতিধারার মুহূর্তে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়, বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ মুহূর্তে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে, সব খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, ছোট-বড় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, উৎপাদন ব্যাহত হবে, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে, যা জনগণ/ভোক্তা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
কার্যত শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হবে দেশ। রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে, মূল্যস্ফীতি বাড়বে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাবে, জনমনে অসন্তোষ দেখা দেবে। উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পিছিয়ে পড়তে হবে। আমাদের সব উন্নয়ন সম্ভাবনা, প্রত্যাশা, লক্ষ্যমাত্রা-সবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে আমাদের প্রতিযোগী দেশের (যেমন-ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড) চেয়ে আমরা পিছিয়ে পড়ব।
সবে ২০২৩ সাল শুরু হয়েছে। সামনে নির্বাচন। সবকিছু মিলে উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে প্রয়োজনে যথেষ্ট ভর্তুকি অব্যাহত রেখে এ উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াই সমীচীন হবে। এখানে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। পৃথিবীর প্রায় সব উন্নত দেশ, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো (ডেনমার্ক, সুইডেন, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসসহ, অন্যান্য অনেক উন্নত দেশ) তাদের উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি এবং বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদান করেছে এবং উন্নত না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রেখেছে। কোনো কোনো দেশ (যেমন-স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি) এ ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া/বন্ধ করার ফলে ওইসব দেশকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে।
জ্বালানি সাশ্রয় ও জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আমি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ‘কো-জেনারেশন প্রযুক্তির’ ব্যবহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি। জ্বালানি সাশ্রয় ও জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ‘কো-জেনারেশন’ প্রযুক্তি একটি সহজ সমাধান। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, জাপান, থাইল্যান্ড এবং ইউরোপ-আমেরিকার প্রায় সব দেশই এ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এর মাধ্যমে ওই দেশগুলো জ্বালানি সাশ্রয় করে সাশ্রয়ী মূল্যে সমন্বিতভাবে অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। কো-জেনারেশন মানেই লাভের ওপর লাভ। তবে এজন্য প্রয়োজন কো-জেনারেশন প্রযুক্তির (বহুল) ব্যবহার, সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান।
কো-জেনারেশন পদ্ধতি একটি দক্ষ এবং উন্নত প্রযুক্তি, যা একক এনার্জির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও তাপ (স্টিম) উৎপাদন এবং উচ্চ তাপে স্টিম তৈরির মাধ্যমে পৃথকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এ পদ্ধতিকে যৌথ তাপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদকও বলা হয়ে থাকে। কো-জেনারেশন একক জ্বালানির উৎস থেকে রি-সাইকেল করে, একইসঙ্গে দুই বা ততধিক ধরনের জ্বালানি উৎপাদন করার পদ্ধতিকে বোঝায়।
বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ প্লান্ট, প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত জ্বালানির (তেল, গ্যাস, কয়লা) এবং কাঁচামালের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আবর্জনা হিসাবে নষ্ট হয়, যা বায়ুদূষণ করে এবং জৈব-প্রাণী পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে ওই আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস, বায়োমাসের মাধ্যমে টারবাইন চালিত করে স্টিম তৈরিপূর্বক বাই-প্রডাক্ট হিসাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। স্টিম তৈরির মাধ্যমে উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ পরিবেশ দূষণমুক্ত, কার্বন নির্গমনমুক্ত। এ পদ্ধতি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে এবং এ বিদ্যুৎ ‘ক্লিন এনার্জি’, ‘গ্রিন এনার্জি’ ইত্যাদি নামে পরিচিত।
কো-জেনারেশন প্রযুক্তির বহুল ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে, জ্বালানি সাশ্রয়সহ বাংলাদেশে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশপ্রাপ্তিও সহজ হবে। কো-জেনারেশন পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য তেমনই একটি সম্ভাবনা ও নতুন সমাধান। এ পদ্ধতি দ্বারা নিজস্ব শিল্প-কারখানার প্রসেস প্লান্টে ব্যবহার এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ সম্ভব। এ ছাড়া ভবিষ্যতে গ্যাস সংকট মোকাবিলায় এ পদ্ধতি একটি অগ্রিম প্রস্তুতিও বটে। ফলে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
কো-জেনারেশনের ইউনিট একটি দক্ষ এবং খরচ সাশ্রয়ী হিসাবে তাপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে; ২. দূষণমুক্ত, পরিবেশবান্ধব, কার্বন নির্গমনের পরিমাণ খুবই কম; ৩. কো-জেনারেশন পদ্ধতি শিল্প-বাণিজ্যবান্ধব, যা একক বাসা থেকে শুরু করে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে তাপ (স্টিম) ও বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম; ৪. এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ কম হয়। কারণ, প্রায় অর্ধেক (৪৪ শতাংশ) জ্বালানি ব্যবহৃত হয়; ৫. এটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ খরচ হ্রাস করে। জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে কোনো খরচের প্রয়োজন হয় না; ৬. জ্বালানির আমদানি খরচ হ্রাস করে; ৭. এ পদ্ধতিতে শিল্প-কারখানাতে ব্যবহৃত কাঁচামাল, চিনি শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের বাই-প্রডাক্ট, অবশিষ্ট স্টিম ও এক্সজস্ট স্টিম পুনরায় বয়লারের মাধ্যমে শিল্পে ব্যবহার করা যায় এবং টারবাইন চালিত করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়।
কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে গ্যাসের সাশ্রয়ী ব্যবহার ও একইসঙ্গে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়। কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে প্রযুক্তির দক্ষতার তারতম্য হিসাবে শিল্প কল-কারখানায় মোট ব্যবহৃত গ্যাসের যথাক্রমে ৪২, ৩৫ বা ৩২ শতাংশ হারে (প্রযুক্তির দক্ষতার তারতম্য অনুযায়ী) সাশ্রয় ও দক্ষ ব্যবহারসহ ১৪ শতাংশ হারে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়। তাই বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কো-জেনারেশন পদ্ধতির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন দেশে বর্তমানে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলো, চীন, জাপান, নাইজেরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস্ ইত্যাদি। এসব দেশে ‘কো-জেনারেশন’ পদ্ধতিতে ট্যারিফ নির্ধারণে প্রয়োজনীয় বিধিমালা এবং বিশেষ প্রণোদনা/সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে।
এনার্জি দক্ষতা বৃদ্ধি করায় কো-জেনারেশনের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন এখন বিশ্বের অন্যতম চাহিদা এবং সব সেক্টরে জ্বালানি উৎসের সহজ সমাধান। কারণ, বিশ্বব্যাপী মাটির নিচের জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন ও পরিবেশ কর্তৃক কার্বন পরিশোধনের মাত্রা সমান করার (নেট জিরো) লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে কো-জেনারেশন পদ্ধতি বিশেষ অবদান রাখে।
বাংলাদেশে কো-জেনারেশনের পরিধি বিস্তৃত, সব খাতেই এর ব্যবহার করার উপযোগিতা রয়েছে। তন্মধ্যে বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ প্লান্ট, সারকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, চা-বাগানসহ অন্যান্য সেবাকেন্দ্রে এটি ব্যবহারের কার্যকারিতা অধিক। যদিও ইতোমধ্যে কয়েকটি খাতে যথা-চিনি শিল্প, পাল্প ও পেপার মিল, টেক্সটাইল মিলগুলো কো-জেনারেশন পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়েছে।
হিসাব করে দেখা গেছে, শিল্প কল-কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামালের অবশিষ্ট আবর্জনা/ধোঁয়া/তাপগুলোকে টারবাইনে চালিত করে বাই-প্রডাক্টস্ হিসাবে ব্যবহৃত গ্যাসের ১৪ শতাংশ হারে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এ ছাড়া ক্যাপটিভ খাতে ব্যবহৃত গ্যাস, নবায়নযোগ্য (বায়োগ্যাস, বায়োমাস, হাইড্রো, সৌরতাপ, নগর আবর্জনা) খাতসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন-সুগার মিলস, ওয়েল রিফাইনারি, ট্যানারি, টেক্সটাইল, ঔষধ শিল্প, পেপার মিল ইত্যাদি শিল্পকে কো-জেনারেশনের আওতায় আনা সম্ভব হলে, এ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
জ্বালানি খাতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রেগুলেটরি কমিশন গঠনকল্পে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ সঞ্চালন, পরিবহণ, বাজারজাতকরণে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, ট্যারিফ নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনয়ন, ভোক্তার স্বার্থসংরক্ষণকল্পে ২০০৩ সালে একটি আইনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)’ গঠন করা হয়।
২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত এ কমিশন ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় গণশুনানির মাধ্যমে জ্বালানি ও বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণ করে আসছে। এ কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্প/কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, ইউএসএইডের আর্থিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক মানের সক্ষমতা অর্জনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের স্বচ্ছতা নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর সব দেশেই এ ধরনের রেগুলেটরি কমিশন আছে। সব দেশেই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প/কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এ কমিশন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সে বিবেচনায় আমাদের বিইআরসির সক্ষমতা ও শক্তিশালীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, সহায়তা প্রদান প্রয়োজন।
গ্যাসের মূল্য অসহনীয় পর্যায়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের দামও খুব শিগ্গির বৃদ্ধি পাবে মর্মে আশঙ্কা রয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রেই দেশের উন্নয়ন ও বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়টি সামনে রাখা আবশ্যক। আইএমএফ কিংবা অন্য কোনো দাতা সংস্থার বিভিন্ন সংস্কারের চাপ কিংবা অজুহাতের কারণে আমরা যেন সবকিছু ভুলে না যাই। আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে। কিছু কিছু সংস্কার রয়েছে, যা সমন্বয় কিংবা বিকল্পভাবে সমাধান করা যায়। ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতির/ভূ-রাজনীতির কঠিন ফাঁদে যেন আমরা না পড়ি। বিভিন্ন বলয় থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে, কিংবা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
ভর্তুকি প্রদানের বিষয়টি সরকারের সহনীয় মনোভাব নিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, ভর্তুকি মানেই বোঝা নয়। আমাদের মতো উন্নয়নগামী দেশের উন্নয়নের জন্য ভর্তুকি একটি সহায়ক উপাদান বটে। পৃথিবীর সব দেশেই প্রাথমিক অবস্থায় ভর্তুকি দিয়ে থাকে। দেশটি উন্নয়নের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে, তখন ভর্তুকি হ্রাস/সমন্বয় করে থাকে। তার পূর্বে নয়। মনে রাখতে হবে, আমরা এখনো উন্নত রাষ্ট্রে পৌঁছাইনি।
তাই এ মহূর্তে ভর্তুকি প্রত্যাহার কিংবা হ্রাস করা সমীচীন হবে না। তার অনেক উদাহরণ এখানে দেওয়া হয়েছে। তবে বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি কিংবা এখনই প্রয়োজন নেই, সেসব কর্মসূচিকে পিছিয়ে দিয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার বিবেচনায়-ভর্তুকি অব্যাহত রাখা, সমন্বয় করা যেতে পারে।
একইসঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর সেবার মান উন্নীত করার এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় রোধ করার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। আমাদের সে মানসিকতা তৈরি করতে হবে। আমাদের সামনে রয়েছে ২০৩০, ২০৪১ সালের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং একটি উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে নজর দিতে হবে। তবেই আমরা সফল হব। সফল হব স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের। তাই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার ও ভর্তুকি অব্যাহত রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
একেএম মনোয়ার হোসেন আখন্দ : সাবেক অতিরিক্ত সচিব, বিইআরসি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
makhand14@yahoo.com