শতফুল ফুটতে দাও
আড়ি পাতা আইন : মানবজাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
ড. মাহবুব উল্লাহ্
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি সংসদে বলেছেন, ‘ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিংয়ের (নজরদারি) মাধ্যমে দেশ ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধে এনটিএমসিতে (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স (ওএসআইএনটি) টেকনোলজির মতো আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে।
একইসঙ্গে একটি ইন্টিগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম (আইনসম্মতভাবে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট মাধ্যমে যোগাযোগে আড়ি পাতার ব্যবস্থা) চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্য শফিউল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। মুঠোফোন ও ইন্টারনেটে নজরদারির জন্য প্রযুক্তি কেনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংসদে ‘আইনসম্মতভাবে’ আড়ি পাতার ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ গত ১০ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে বলেছে, দেশটির সাবেক এক গোয়েন্দা কমান্ডার পরিচালিত কোম্পানি থেকে নজরদারির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ সরকার। গত বছরের জুনে এ প্রযুক্তি আনা হয়।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ যে সরঞ্জাম কিনেছে, তা মুঠোফোন ও ইন্টারনেট মাধ্যমে যোগাযোগের ওপর নজরদারিতে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) কাছে এ প্রযুক্তি বিক্রি করেছে প্যাসিটোরা নামের একটি কোম্পানি। কোম্পানিটি সাইপ্রাসে নিবন্ধিত। তবে এটি পরিচালনা করেন ইসরাইলের গোয়েন্দা প্রযুক্তি ইউনিটের সাবেক কমান্ডার টাল ডিলিয়ান। দেশের অভ্যন্তরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে কিনা, তা সংসদে জানতে চেয়েছিলেন শফিউল ইসলাম।
এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে দেশের অগ্রগতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
দেশের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রে কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতে দৃঢ় অবস্থান ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে (প্রথম আলো)।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ‘আইনসম্মতভাবে’ আড়ি পাতার সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে বলেছে, ইসরাইলের নজরদারির প্রযুক্তি সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের ভয়ংকর হাতিয়ার। জনগণের করের টাকায় এমন ভয়ংকর হাতিয়ার কোন্ সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতি অনুযায়ী কেনা হলো, কী উদ্দেশ্যে কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে কার স্বার্থে এর ব্যবহার হবে, এমন মৌলিক প্রশ্নের জবাব জানার অধিকার দেশবাসীর আছে। টিআইবি তার বিবৃতিতে আরও বলেছে, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অনুপস্থিতিতে এমন প্রযুক্তির ব্যবহারে ব্যক্তিগত তথ্য ও যোগাযোগের গোপনীয়তা, সুরক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকার খর্ব হবে। টিআইবি আরও বলেছে, ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, ইসরাইলের সাবেক এক গোয়েন্দা কমান্ডার পরিচালিত কোম্পানি থেকে নজরদারির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কেনে বাংলাদেশ, যা গত বছরের জুনে বাংলাদেশে পৌঁছায়।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ও যোগাযোগের গোপনীয়তা, সুরক্ষা, বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয় এবং সর্বোপরি ব্যক্তির জীবন ও জীবিকার জন্য হুমকি হতে পারে এমন প্রযুক্তি কেনা ও ব্যবহারের বিস্তৃতি ও পরিধি সম্পর্কে সরকারের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা জানার অধিকার দেশবাসীর আছে।
সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও অন্যান্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, আইনসম্মতভাবে মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট মাধ্যমে যোগাযোগে আড়ি পাতার ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন জাগে, সংবিধান যেখানে মানুষের গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিত করেছে, সেখানে আইনসম্মতভাবে আড়ি পাতা কী করে সম্ভব? সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। কোনো আইন সংবিধানের বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে যেতে পারে না। বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের পর তৃতীয় মেয়াদ শেষ করার দিকে এগোচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচন দ্রুত এগিয়ে আসছে। আশঙ্কা হয়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধীদের কর্মকাণ্ড রুখে দিতে ‘আইনসম্মতভাবে’ আড়ি পাতার তোড়জোড় করছে সরকার। আইনি কী আইনি নয়-এমন বিতর্কের মধ্য দিয়ে আড়ি পাতার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ক্রয় করে আগামী নির্বাচনেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডকে পর্বতশৃঙ্গের মতো অসমতল করে তোলা হচ্ছে কিনা, সেটাও একটি বড় জিজ্ঞাসা। অভিজ্ঞতা বলে, গত কয়েক বছরে বেআইনিভাবে যাদের ফোনালাপ ফাঁস করা হয়েছে, তারা সবাই সরকারের সমালোচক। অর্থাৎ আড়ি পাতা ব্যবস্থা চালু হলে বিরোধীদের দমনে এটি সরকারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। সরকার সব ধরনের হাতিয়ারে সজ্জিত হয়ে লড়াইয়ের মাঠে নামবে, কিন্তু বিরোধী দলগুলো হয়ে পড়বে ‘নিধিরাম সর্দার’? এটা ভয়ানক ধরনের বৈষম্য। এ রকম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার মধ্যে জনরায় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে, তা কী করে আশা করা যায়?
সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে আড়ি পাতা হলে সেটা বৃহৎ স্বার্থে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তারও একটা কাঠামো থাকতে হবে। বেআইনিভাবে আড়ি পাতা এখনো হচ্ছে। তবে এবার সেটি আইনের আওতায় আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে। আইনিভাবে কোনো কার্যক্রম চালু করা হলে তা গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক হবে এমনটি মনে করার পক্ষে তেমন কোনো যুক্তি নেই। এদেশের সাধারণ মানুষ আইন না বুঝলেও এটা বুঝতে পারে যে কোন্ আইন দেশ ও সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।
সবাই জানে আইন দুরকম। স্বাভাবিক আইন ও কালো আইন। অভিজ্ঞতা বলে, আইন করতে গিয়ে সরকার স্টেকহোল্ডারদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয় না। এ রকম একটি অবস্থা আমরা দেখেছি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ক্ষেত্রে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে অনেকে নিগৃহীত হয়েছেন। এ আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে আড়ি পাতার জন্য নতুন করে আরও একটি আইন করা হলে জনগণ শৃঙ্খলিত হয়ে পড়বে। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, সারা বিশ্বে কর্তৃত্ববাদী সরকারের অর্থই হলো বাক স্বাধীনতা, যোগাযোগের স্বাধীনতা, বিবেকের স্বাধীনতার মতো অধিকারগুলো খর্ব বা সংকুচিত করা। পক্ষান্তরে, গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনের দেশে এসব করা হয় না। কিন্তু আমাদের এখানে সরকার তার কর্তৃত্বকে আরও সুসংহত করতে চায়। তাই এটাই স্বাভাবিক যে, সংবিধান ও আইনের শাসন উপেক্ষা করে সরকার তার সমালোচক ও বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বেআইনিভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। তাই সরকার আগে যন্ত্রপাতি কিনেছে। এখন পছন্দমাফিক আইন করবে এবং পরে সংবাদমাধ্যমসহ সবার মানবাধিকার আরও খর্ব ও সংকুচিত করবে। তিনি আরও বলেছেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোতেও আড়ি পাতা হয়। তবে সেই আড়ি পাতার আগে সেসব দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে পুলিশকে আদালতের কাছ থেকে যথোপযুক্ত প্রাথমিক তথ্যাদি পেশ করতে হয়। আদালত অনুমতি দিলে তা করা হয়।
মার্কিন লেখক শোশানা জুবফ (Shoshana Zuboff) একটি মূল্যবান গ্রন্থ লিখেছেন। গ্রন্থটির নাম হলো ‘The Age of Surveillance Capitalism’. পুঁজিবাদ যুগে যুগে তার কার্যপ্রণালি পরিবর্তন করে, সাপ যেভাবে তার গায়ের খোলস বদলায়। বর্তমান পুঁজিবাদকে জুবফ নজরদারির পুঁজিবাদ হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। একটি মানবিক ভবিষ্যতের জন্য ক্ষমতার নতুন দিগন্তে বসে লড়াই করতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। আমাদের বুঝতে হবে কীভাবে ডিজিটাল লোহার খাঁচা ধাপে ধাপে তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ব মানবতা গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বহিষ্কৃত হয়ে দুর্ভেদ্য লোহার খাঁচায় বন্দি হয়ে যাচ্ছে। অতীতে পুঁজিবাদের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয়েছে। এখন ডিজিটাল প্রযুক্তি এসে মানুষকে জড় বস্তুতে পরিণত করছে। জীবন আছে কিন্তু প্রাণ নেই এমন এক অবস্থার মধ্যে মানুষ আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে যাচ্ছে। লেখক জুবফ সাম্প্রতিক আমলের ক্ষমতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, এখন ক্ষমতার যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে। ক্ষমতার যান্ত্রিকীকরণ এখন ভিন্নভাবে বিপরীত দিগন্তের দিকে ছুটছে। সর্বেসর্বোস্যকরণের (Totalitarianism) রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকে থাকত বল প্রয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু ক্ষমতার যান্ত্রিকীকরণ করা হচ্ছে মানুষের আচরণের পরিবর্তন করে। এদিকেই আমাদের দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে। যান্ত্রিকীকৃত ক্ষমতা আমাদের আত্মা নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখায় না, অথবা শেখার জন্য কোনো নীতি পালন করে না। আত্মার মুক্তির জন্য কোনোরূপ প্রশিক্ষণ ও রূপান্তরিতকরণের ব্যবস্থা নেই। এর কোনো আদর্শ নেই যা দিয়ে আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড বিচার করতে পারি। এটি কোনো ব্যক্তির ভেতর-বাইরের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে চায় না। আমাদের দেহ ও মনকে মুছে ফেলা অথবা বিকৃত করা নিয়ে এর কোনো আগ্রহ নেই। এটা শুধু আমাদের রক্ত ও মলমূত্রের তথ্যকে সাধুবাদ জানায়। কীভাবে আমাদের মলমূত্র এ ব্যবস্থাকে নোংরা করছে সে ব্যাপারে এ ব্যবস্থার কোনো আগ্রহ নেই। এ ব্যবস্থা জানতে চায় না আমাদের দুঃখ-বেদনা অথবা সন্ত্রস্ত অবস্থাকে। কিন্তু এ ব্যবস্থা আচরণগত উদ্বৃত্ত নিয়ে খুব উৎসাহী। এ আচরণের উৎস হলো আমাদের বেদনাগুলো। এ ব্যবস্থা গভীর ও ব্যাপকভাবে আমাদের মন কী চায় তা জানতে চায় না। পরিমাপ করা যায় এমন কর্মকাণ্ডের হিসাব রাখে এ ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা জানতে চায় আমরা যেসব আচরণ করি, সেগুলো এ যন্ত্রের গম্যতার মধ্যে পড়ে। নতুন নতুন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে মানুষের আচরণ তুলে ধরা, গণনা করা, সংস্কার করা, অর্থায়ন ও নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমেই ব্যবস্থাটি টিকে থাকতে চায়।
আমরা তো এখনই দেখতে পাচ্ছি, আমাদের জীবনের অনেক কর্মকাণ্ড স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এ ছোট যন্ত্রটি দিয়ে কথা বলা যায়, ছবি তোলা যায়, রক্তচাপ নির্ণয় করা যায়, তথ্যের বিশ্লেষণ করা যায়, সংগীত ও কথাবার্তা রেকর্ড করা যায় ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়, তা এ যন্ত্র এখনো বুঝতে পারে না।
ড. মাহ্বুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ