বাইফোকাল লেন্স
বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি
একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত ২৩ নভেম্বর পাকিস্তানের বিদায়ি সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) হাতছাড়া হওয়ার পেছনে সামরিক নয়, রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেন, সেসময় পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩৪ হাজার মূল সেনাসদস্য নিয়োজিত ছিল, ৯২ হাজার নয়। ৩৪ হাজার সেনাসদস্যের অতিরিক্ত যারা ছিল তারা হলো প্যারা মিলিটারি ফোর্স ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন। তার কথায়-‘পাকিস্তানি এ ৩৪ হাজার সেনাসদস্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর আড়াই লাখ সেনা ও মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষিত ২ লাখ যোদ্ধার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে পাকিস্তানি সেনাসদস্যরা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন এবং নজিরবিহীন ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, অথচ তাদের সেই ত্যাগ দেশে কোনো স্বীকৃতি পায়নি, যা ত্যাগ স্বীকার করা সেনাসদস্যদের প্রতি চরম অন্যায়।’ জেনারেল বাজওয়া বিভিন্ন সময় সেদেশের
রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন এবং এ ধরনের হস্তক্ষেপকে তিনি ‘অসাংবিধানিক’ বলেও মন্তব্য করেন। জেনারেল বাজওয়া সম্ভবত প্রথম কোনো পাকিস্তানি সেনাপ্রধান, যিনি তার দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে স্বীকার করে নিলেন।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর দেশটিতে তিন তিনবার সফল সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান, ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউল হক ও ১৯৮৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের নেতৃত্বে এসব সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এ তিন সামরিক কর্মকর্তাই অভ্যুত্থান-উত্তর প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেশটিকে শাসন করে গেছেন। সেদেশে যে দলই শাসনক্ষমতায় আসুক, তাদের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আপস করেই দেশ চালাতে হয়।
পাকিস্তানে এ কথা প্রচলিত আছে যে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আর দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হচ্ছেন সেদেশের সেনাপ্রধান। এ কথাও বলা হয়ে থাকে, সেদেশের প্রতিরক্ষানীতি ও পররাষ্ট্রনীতি ঠিক হয় সেনাসদরে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। পাকিস্তানে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে হলেও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করেই আসতে হয়। পাকিস্তানের সংবিধানের ২৪৩ অধ্যায়ের ১নং ধারা অনুযায়ী সামরিক বাহিনীর ওপর ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে বলা হলেও স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের ইতিহাসে ৭৫ বছরের মধ্যে সামরিক সরকার দেশটিকে শাসন করেছে ৩৩ বছর। তারপরও বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় এলেও দেশটির প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতিতে সামরিক বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব থাকে। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরপরই কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। ফলে স্বাধীনতার এক বছরে মধ্যে এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বাধে। এ পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ১৯৪৮ সালে কাশ্মীর যুদ্ধ, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ও ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। এ কারণে পাকিস্তানে, সবকিছুর আগে সামরিক বাহিনী সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছে। সামরিক বাজেট থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়ে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে আসা হয়েছে। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কাউকে নাক গলাতে দেয় না। সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের স্বার্থে কাছে টানতে, সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। যে কারণে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রীয় যে কোনো বিষয়ে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে থাকে।
পাকিস্তান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার বক্তব্যে ফেরা যাক। এত বছর পরও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিষয়ে সেদেশের সামরিক কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিবর্তন হয়নি, তার প্রমাণ আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। সময়টা ১৯৮৭ সাল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে আমিসহ চারজন সেনা কর্মকর্তাকে পাকিস্তানে প্যারা কমান্ডো প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয়। তখন জেনারেল এরশাদের শাসনামল। আমি নির্বাচিত কর্মকর্তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। বাংলাদেশে তখন প্যারা কমান্ডো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। আমাদের নির্বাচন করার পর বলা হলো পাকিস্তানে প্রশিক্ষণকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেন কোনো কথা না বলি। তাতে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। এ ধরনের নির্দেশ ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালো লাগেনি। যা হোক, আমাদের প্রশিক্ষণ হবে পাকিস্তানের পেশোয়ারে। কিন্তু আমাদের যেতে হবে করাচি হয়ে। উড়োজাহাজে উঠে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি এনডিসি কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তান যাচ্ছেন। করাচি পৌঁছলে আমাদের চারজনের জন্য সেখানকার কোর অফিসার্স মেসে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। করাচিতে দুদিন অবস্থান করে অভ্যন্তরীণ বিমানে পেশোয়ার যেতে হবে।
আমরা যেদিন পৌঁছালাম, সেদিন সন্ধ্যায় সেখানকার কোর কমান্ডারের এডিসি একজন ক্যাপ্টেনের (এ মুহূর্তে নাম মনে করতে পারছি না) জন্মদিন উপলক্ষ্যে এক সান্ধ্যভোজে আমাদের নিমন্ত্রণ করা হয়। আমাদের মধ্যে আমি জ্যেষ্ঠ বলে সেই ক্যাপ্টেনের পাশের চেয়ারে আমাকে বসতে দেওয়া হলো। ভোজন পর্ব প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমাদের মধ্যে দুদেশের সেনাবাহিনী নিয়ে কথা হচ্ছিল, এমন সময় পাকিস্তানের সেই ক্যাপ্টেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে বলে ওঠেন, ‘রাজনৈতিক ব্যর্থতার জন্যই পাকিস্তান দুভাগ হয়েছে। এ কারণে পাকিস্তান দুর্বল হয়ে পড়েছে। তা না হলে পাকিস্তান আজ স্ট্রং থাকত। আজকের এ অবস্থার জন্য তখনকার রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিব ও ভুট্টো দায়ী।’ কথাটা শোনার পর আমি ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত হতে থাকি। মনে মনে ভাবলাম, দেশ থেকে আমাদের যে নির্দেশই দেওয়া হোক না কেন, এর যথোপযুক্ত জবাব আমাকে দিতেই হবে। আমি কয়েক সেকেন্ড ভেবে তাকে বললাম, ‘তুমি যা জানো না সে বিষয় নিয়ে কথা না বলাই ভালো। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তুমি সম্ভবত সে সম্পর্কে জানো না। তোমাদের জানতে দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক ব্যর্থতা যদি থাকে, সেটা পাকিস্তানি নেতাদের থাকতে পারে। আর এজন্য যদি কাউকে দায়ী করতে হয়, তাহলে এককভাবে ভুট্টোকেই দায়ী করা উচিত।’
আমরা নিচু স্বরে কথা বললেও তখন কিছুটা দূরে বসা একজন জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি কর্মকর্তা আমাদের কথা শুনছিলেন। ততক্ষণে তার খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। খাওয়া শেষ করে তিনি আমরা যে টেবিলে বসেছিলাম, তার ঠিক উলটো দিকে এসে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি ওই অফিসারের উদ্দেশে বলে উঠলেন, ‘তুমি যা জানো না, সে বিষয়ে কথা না বলাই উচিত। ১৯৭১ সালে আমার সেখানে পোস্টিং ছিল। আমি আদেশ তামিল না করায় আমাকে বদলি করে পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। আমি জানি আমাদের সেনাবাহিনী সেখানে কী অপকর্ম করেছে। বাংলাদেশের অফিসার সত্য কথাই বলছে। আমরা তোমাদের সত্য ঘটনা জানতে দেইনি।’
এ কথা শোনার পর পাকিস্তানি সেই ক্যাপ্টেন চুপ হয়ে গেলেন। পার্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি আর কোনো কথাই বলেননি। জেনারেল বাজওয়ারের ২৩ নভেম্বরের দেওয়া বক্তব্য ও ৩৫ বছর আগের সেই ক্যাপ্টেনের কথার মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পেলাম না। পার্থক্য যতটুকু তা হলো, বাজওয়া একই কথা কিছুটা কূটনৈতিক ভাষার আশ্রয় নিয়ে বলেছেন। সেদেশের জুনিয়র অফিসারদের দোষ দিয়েই বা লাভ কী। পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ সৃষ্টির ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ পাঠ দেওয়া হচ্ছে। সেদেশের নবম-দশম শ্রেণির পাকিস্তান স্টাডিজ বইয়ে বলা হয়েছে, ‘‘পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হওয়ার পেছনে বিভিন্ন ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’ কাজ করেছিল। পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারত পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করে। অন্যদিকে রাশিয়া ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে; কারণ, পাকিস্তান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে। এ পরিস্থিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের আগ্রাসনকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয় রাশিয়া।’’
আসল তথ্য হলো, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই ক্ষমতা হস্তান্তর না করার পাঁয়তারা করতে থাকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। ২০ ডিসেম্বর জুলফিকার আলী ভুট্টো লাহোরে এক জনসভায় ঘোষণা দেন, ‘পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় আসনে বসতে রাজি নয়।’ চতুর সামরিক জান্তা ভুট্টোর এ বক্তব্যকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার চক্রান্তে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ভুট্টোর এ ঘোষণাকে দেশের জন্য এক বিরাট রাজনৈতিক সংকট হিসাবে তারা প্রচার করে এবং এ সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র করে।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জানুয়ারির ১২-১৩ তারিখে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক শেষে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যান এবং ১৭ জানুয়ারি বুনো হাঁস শিকারের নামে ভুট্টোর লারকানার বাড়িতে গিয়ে এক ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠকে বসেন। সে বৈঠকে ভুট্টো ছাড়াও পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খান ও প্রেসিডেন্টের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদাও উপস্থিত ছিলেন। লারকানার সেই গোপন বৈঠকেই চূড়ান্ত হয়ে যায় আওয়ামী লীগের কাছে সামরিক সরকার কখনো ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। সে মোতাবেক ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাওয়ালপিন্ডির পাকিস্তান সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সামরিক জান্তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসে। বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল হামিদ ও লেফট্যানেন্ট জেনারেল পীরজাদাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জেনারেল উপস্থিত ছিলেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার উপপ্রধান এসএ রিজভিও সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা হবে। সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের পাশাপাশি ‘অপারেশন ব্লিৎজ’ নামে সামরিক আঘাত হানার একটি পরিকল্পনা করা হয়। ‘অপারেশন ব্লিৎজ’ মানে সব রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ করে সামরিক আইন জারি করা। প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারবে। তাতেও যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে সেনাবাহিনী চূড়ান্ত অ্যাকশনে যাবে, যা আমরা ২৫ মার্চ কালরাতে বাস্তবায়ন হতে দেখেছি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল অবশ্যম্ভাবী। পাকিস্তানের রাজনৈতিক কিংবা সামরিক কোনো শক্তিই তা ঠেকাতে পারত না। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রায় দুই যুগের অভাবিত লাঞ্ছনা ও বঞ্চনায় বাঙালি বুঝে গিয়েছিল পাকিস্তানিদের সঙ্গে আর নয়, যার জবাব তারা দিয়েছিল ১৯৭০ সালে ৭ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে। ১৯৭১-এর মার্চে বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার নামে সামরিক প্রস্তুতি এবং সর্বশেষ ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবর্ণনীয় অত্যাচার ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানের কবর রচনা করেছিল। ইতিহাসের এ সত্যকে পাকিস্তান অস্বীকার করে কী করে? ইদানীং অবশ্য পাকিস্তানের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সেদেশের বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইতিহাসের সত্যকে তুলে ধরার চেষ্টা লক্ষ করা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, নবম-দশম শ্রেণি থেকে যে শিক্ষার্থীদের ভুল ইতিহাস পড়ানো হয়েছে, তারা এ সত্যকে কতটুকু গ্রহণ করছে? তবে ডিজিটালের যুগে সেদেশের তরুণদের কাছে ১৯৭১ সালে যে অপকর্ম তারা করেছে, সে অপকর্মের কথা আর ঢেকে রাখা সম্ভব হবে না। বরং পাকিস্তানের এখন উচিত, তরুণ সমাজকে ভুল ইতিহাস পাঠ না করিয়ে সত্যকে স্বীকার করে ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনী যে অপরাধ করেছে, তার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা