Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

রাস্তার খাবার প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করতে পারে

Icon

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাস্তার খাবার প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করতে পারে

ফাইল ছবি

রাস্তায় তৈরি ও পরিবেশিত খাবারকে স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার বলা হয়। এসব খাবার বিদেশেও স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার নামে পরিচিত। উন্নত দেশের স্ট্রিট ফুড স্বাস্থ্যসম্মত, উপাদেয় ও আকর্ষণীয় হয়। বাংলাদেশের মতো অনুন্নত দেশে রাস্তায় যেসব খাবার তৈরি ও বিক্রয় হয় তা বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। খেতে উপাদেয় বা মুখরোচক হলেও এসব স্ট্রিট ফুড অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত ও পরিবেশিত হয় বলে বিভিন্ন জটিল ও মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। ঢাকার প্রায় সব স্ট্রিট ফুডের দোকান খোলা আকাশের নিচে, যেখানে উন্মুক্ত অবস্থায় খাবার তৈরি, বিক্রয় ও সাজিয়ে রাখা হয়। তাই এসব খাবার জীবাণু, পোকা-মাকড়, মাছি দ্বারা দূষিত হয়। সাধারণত সস্তা, তৈলাক্ত ও ঝাল হওয়ার কারণে রাস্তার খাবারের বেশ কদর রয়েছে। এ ধরনের খাবার খেলে মানুষ যেসব রোগে আক্রান্ত হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, আলসার, হৃদরোগ ইত্যাদি।

দেশে প্রায় ১৩০ পদের রাস্তার খাবার পাওয়া যায়। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে-শিঙাড়া, সমুচা, ছোলা ভাজি, বেগুনি, আলুর চপ, ডালপুরি, ফুচকা, চটপটি, বেলপুরি, পাকোড়া, হালিম, ঝালমুড়ি, জিলাপি, লেবুর শরবত, আখের রস ইত্যাদি। এ ছাড়াও বাড়তি খাবার হিসাবে থাকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আলু সিদ্ধ, সুপ, পোড়া পেঁয়াজ ও মরিচ, সালাদ, নুডলস এবং হরেক রকম মিষ্টান্ন। রাস্তার খাবারে পুষ্টিগুণ থাকে অতি সামান্য এবং শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব থাকে অতি বেশি। এসব খাবারের মূল খরিদ্দার হলো রিকশাচালক, টোকাই, ছিন্নমূল মানুষ, হকার, ছোট ব্যবসায়ী, শিশু, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শ্রমিক, গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষ, যাদের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্যসচেতনতা নেই। স্কুলপড়ুয়া ছোট শিশুরাও এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খায় এবং প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় মা-বাবারাও তাদের সন্তানদের এসব খাবার কিনে দেন এবং খেতে উৎসাহিত করেন। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর আচার ও অজানা-অচেনা ব্র্যান্ডের আইসক্রিম শিশুদের অতি প্রিয়। কিন্তু এসব খাবার শিশুদের জন্য মোটেও উপযোগী নয়। মা-বাবাদের প্রতি অনুরোধ-ঘরের বাইরে তৈরি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাইয়ে আপনার শিশুর জীবন বিপন্ন করবেন না। শিশুরা অবুঝ বলে হয়তো অস্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করে ও খায়। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কিভাবে নিশ্চিন্তে-নির্দ্বিধায় এসব খাবার প্রতিনিয়ত খেয়ে চলেছে, তা আমার বুঝতে কষ্ট হয়। অনেক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, সস্তা ও উপাদেয় বলে তারা এসব রেডিমেড খাবার খায়। সস্তায় নাশতার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার কারণেও তাদের রাস্তার খাবার খেতে হয়। কথা হলো, সস্তা ও উপাদেয় হলে যে খাবার স্বাস্থ্যহানির কারণ হবে না-এর কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? সস্তায় খাবার খেতে গিয়ে স্বাস্থ্যের তিন অবস্থা হলে তখন বিপদ সামলাবে কে? ছাত্রছাত্রীদের এ ব্যাপারে একটু চিন্তা করা উচিত আর একটু স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ানো দরকার।

রাস্তায় খাবার তৈরি হয় মূলত আটা, ময়দা, বেসন, মাছ, মাংস, ডিম, শাকসবজি ও তেল দিয়ে। দিনের পর দিন একই তেল ব্যবহার করা হয় বলে তা পুড়ে যায় এবং এ তেল স্ট্রোক ও হৃদরোগ সৃষ্টি করে। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন কাপড়চোপড় পরে ময়লা ও জীবাণুযুক্ত হাতে রাস্তার খাবার তৈরি করা হয় বলে এসব খাবার খাওয়া ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তার খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় দূষিত পানি। খাওয়ার পানিও বিশুদ্ধ থাকে না। ফিল্টার করা পানি ব্যবহার করা হয় না বলে পানিতে ই-কোলাই ও প্রোটিয়াস বেসিলাস ধরনের জীবাণু থাকে। যেসব থালা-বাসন বা পাত্রে খাবার পরিবেশিত হয়, সেগুলোতে ক্ষতিকর জীবাণু থাকে। এসব জীবাণুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস অ্যাপেডারমিডিস ও সালমোনেলা প্রজাতির জীবাণু। রাস্তায় তৈরি বিভিন্ন ফলের রসে থাকে অসংখ্য জীবাণু। যেসব যন্ত্রপাতি বা আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দিয়ে ফলের রস তৈরি করা হয় এবং যেসব গ্লাস বা পাত্রে তা পরিবেশিত হয়, সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ময়লা ও জীবাণুতে ভর্তি থাকে। ময়লা ও দুর্গন্ধময় পানি দিয়ে বারবার একই গ্লাস ধোয়া হয়। তবে কোনো কোনো খাবার স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে তৈরি ও বিক্রি হয়। এর সংখ্যা অবশ্য অতি নগণ্য। রাস্তায় তৈরি খাবারে অনেক সময় নিষিদ্ধ উপকরণ ও রং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন শহরে তৈরি খাবারের মধ্যে মেটানিল ইয়েলো, কমলা রং ২, রোডামিন বি, অরোমিন অরেঞ্জ জি ধরনের নিষিদ্ধ রঙের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। খাবারকে আকর্ষণীয় করার জন্য অনেক বিক্রেতা বস্ত্রশিল্পে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রং পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকে। রাস্তায় তৈরি কোমল পানীয়তে অনেক সময় আলকাতরার রংও ব্যবহৃত হয়। এসব খাবারে আরও থাকে তামা, লৌহ ও সিসার মতো ভারি ধাতু, যা শরীরের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।

শীতকাল এলে রাস্তায় তৈরি খাবারের ধরন পালটে যায়। এ সময় উল্লিখিত খাবার ছাড়াও তৈরি ও বিক্রি হয় হরেকরকম পিঠা। এসব পিঠার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-ভাপা পিঠা, পোয়া পিঠা এবং চিতই পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে থাকে নানারকম ঝাল চাটনি, গাঢ় আখের রস বা গুড়। খেতে সুস্বাদু হলেও এসব খাবারও তৈরি হয় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। যারা পিঠা তৈরি ও পরিবেশন করে, তাদের পরিধেয় কাপড়চোপড় ও হাত থাকে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন। বিক্রেতারা যে হাতে টাকা আদান-প্রদান করে, সেই একই হাত দিয়ে তারা পিঠা তৈরি ও পরিবেশন করে। এতে পিঠা জীবাণু দ্বারা দূষিত হয়ে পড়ে। অনেক দরিদ্র মহিলা ফুটপাতে বসে আটার রুটি তৈরি করে তা সাধারণ তরিতরকারি বা গুড়সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে। অনেকে আবার বাসাবাড়ি থেকে ভাত রান্না করে এনে সাধারণ তরিতরকারিসহ বিক্রি করে টুপাইস উপার্জন করে। এসব খাবারের মূল খরিদ্দার হলো রিকশাচালক, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের মানুষ।

দেশের কাগজের টাকার নোটগুলো সংক্রামক রোগ বিস্তারের আরেক বড় মাধ্যম। এসব ময়লা নোটে থাকে শত প্রকারের প্রাণঘাতী জীবাণু। নিয়ম হচ্ছে, যারা টাকার নোট স্পর্শ করবে বা আদান-প্রদান করবে, তারা খাবার স্পর্শ করবে না। কারণ টাকা আদান-প্রদানের পর খাবার স্পর্শ করলে টাকার অসংখ্য জীবাণু খাবার দূষিত করে ফেলে। এ দূষিত খাবার খেলে যে কেউ মারাত্মক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আমি হরহামেশাই দেখি, যারা টাকা আদান-প্রদান করছে, তারাই আবার সেই ময়লা হাত দিয়ে খাবার পরিবেশন করছে। বিদেশে এ ধরনের প্র্যাকটিস দেখাই যায় না। আমাদের স্বাস্থ্যসচেতনতার এত অভাব কেন আমি বুঝি না। এসব ছোটখাটো বিষয় কি বই-পুস্তকে লিখে মানুষকে শেখাতে হবে? এক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞান কেন কাজ করে না, তাও আমার বুঝতে কষ্ট হয়। কাগজের টাকার মধ্যে গ্রাম পজেটিভ, গ্রাম নেগেটিভ-দুই ধরনের জীবাণু পাওয়া যায়। টাকায় বিদ্যমান জীবাণুর মধ্যে রয়েছে-ই-কোলাই, স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস, মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকোলোসিস, ভিব্রিও কলেরি, করিনেব্যাক্টেরিয়াম, মাইক্রোকক্কাস, ক্লেবসিলা, সালমোনেলা, সিওডোমোনাস ও বেসিলাস প্রজাতির ক্ষতিকর জীবাণু। এসব ক্ষতিকর জীবাণুর কারণে খাদ্যবিষক্রিয়া, ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্মের সংক্রমণ, শ্বাস-প্রশ্বাস ও পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাসহ প্রাণঘাতী রোগ মেনিনজাইটিস ও সেপ্টেসেমিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী মানুষ অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে মোটা ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো দেশের সরকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অস্বাস্থ্যকর খাবার ও জাঙ্কফুড নিষিদ্ধ করতে বলেছে। আবার কোনো কোনো দেশের সরকার শিশু-কিশোরদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের নীতিমালা তৈরি করেছে। দেখা যাচ্ছে, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ওজন বাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। ছাত্রছাত্রীরা স্কুল ক্যাফেটেরিয়া থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার কিনে খাচ্ছে এবং এতে তারা মুটিয়ে যাচ্ছে, এটা পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ পিতা-মাতা ও স্কুল ক্যাফেটেরিয়াগুলোকে পানি, দুধ, ফলের রসের মতো পানীয় এবং পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি, পরিবেশন ও বিক্রির জন্য বিস্তৃত নির্দেশাবলি পাঠাচ্ছে। ইউরোপের ক্যাফেটেরিয়াগুলোতে আমি কোনো অস্বাস্থ্যকর খাবার দেখিনি।

বিশ্বায়নের কারণে সারা বিশ্বেই জাঙ্কফুড শিশু-কিশোরদের জন্য এক মারাত্মক স্বাস্থ্যসমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ হলেও আমাদের সমাজে বিশ্বায়নের হাওয়া পুরোপুরিই লেগেছে এবং এর খেসারতও আমাদের দিতে হচ্ছে। আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শিশু-কিশোর, এমনকি বয়স্কদের মধ্যেও ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডের প্রতি আকর্ষণ দিন দিন বাড়ছে। ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডের দোকানপাটে ভিড় ও বেচাকেনা দেখার মতো। এসব রেস্তোরাঁর মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত হলো ম্যাকডোনাল্ড, কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন (কেএফসি), পিৎজাহাট, সরমা হাউজ, ডোমিনোজ পিৎজা, বিএফসি ইত্যাদি। জাঙ্কফুডকে অস্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবেই অভিহিত করা হয়। জাঙ্কফুড হলো স্বল্প পুষ্টিসম্পন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার। প্রচুর চর্বি, লবণ, চিনি এবং মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট, টাট্রাজিনজাতীয় বিতর্কিত খাদ্য উপকরণসমৃদ্ধ খাবারকে সাধারণত জাঙ্কফুড বলা হয়। অন্যান্য দরকারি খাবারের মতো এসব খাবারে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং আঁশজাতীয় খাবারের পরিমাণ কম থাকে। বিশ্ববিখ্যাত ম্যাকডোনাল্ড, বার্গার কিং, কেএফসি, পিৎজাহাটের হ্যামবার্গার, ফ্রাইড চিকেন বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইকে জাঙ্কফুড হিসাবে অভিহিত করা হয়।

অনেক কারণে মানুষ, বিশেষ করে শিশু-কিশোররা জাঙ্কফুডের প্রতি অতিমাত্রায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। জাঙ্কফুড বা ফাস্টফুড খেতে বেশ সুস্বাদু। অল্পবয়সি তরুণ-তরুণীরা রেডিমেড খাবারেই বেশি অভ্যস্ত। পশ্চিমা বিশ্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাফেটেরিয়াগুলোতে জাঙ্কফুডের কোনো স্থান নেই। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করা হয়। ফাস্টফুডের জনপ্রিয়তার পেছনে বিজ্ঞাপনেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মুটিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসমস্যা মোকাবিলায় ২০০৩ সালে ১১৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়। উল্লেখ্য, প্রতিবছর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যানসারে মারা যায় ৫ লাখ মানুষ। অতিমাত্রায় চর্বিসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে প্রতিবছর মারা যায় ৫ লাখ মানুষ। ২০০০ সালে আমেরিকানরা ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুডের পেছনে ১১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করেছে।

আগেই বলা হয়েছে, প্রচুর চর্বি ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। পশ্চিমা বিশ্বে ক্যান্ডি, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, তেল ও চর্বিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কারণে মানুষের, বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওজন বৃদ্ধি একটি জাতীয় সমস্যারূপে আবির্ভূত হয়েছে। শরীরের মাত্রাতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিস ধরনের বহু রোগের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এসব প্রাণঘাতী রোগের কথা ভেবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্থূলকায় ব্যক্তিদের ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শরীরের শিরা-উপশিরার অভ্যন্তরীণ দেওয়ালে অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার কারণে প্রদাহ ও ক্ষত সৃষ্টি হলে প্লেটিলেট, কোলেস্টেরল, লিপিড অথবা চর্বিজাতীয় দ্রব্য ও লাইপোফেইজ পুঞ্জীভূত হওয়ার কারণে শিরা মোটা হয়ে যায় এবং সম্প্র্রসারণ-সংকোচন ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সম্প্রতি রেড মিট বা লাল মাংস খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছেন গবেষকরা। কারণ রেড মিট শরীরে ক্যানসার তৈরি করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুতরাং অধিক পরিমাণে রেড মিট খাওয়ার ব্যাপারে সবাইকে সাবধান হতে হবে। সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ অবদান রাখে। পরিমিত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, প্রোটিন বা আমিষ, লিপিড, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, বিশুদ্ধ পানীয়, আঁশজাতীয় খাবার স্বাস্থ্যকর খাবারের অন্তর্ভুক্ত। উল্লিখিত খাবারের মধ্যে শাকসবজি-ফলমূলের আধিক্য থাকা অবশ্য বাঞ্ছনীয়। শাকসবজি-ফলমূল হলো ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ পদার্থ এবং আঁশজাতীয় দ্রব্যের অফুরন্ত ভান্ডার। আমাদের দেশের শিশু-কিশোররা শুধু মাংস ও তেল-চর্বিজাতীয় খাবার খেতে চায়। ফলমূল, শাকসবজির প্রতি তাদের প্রচণ্ড অনীহা। এ প্রবণতা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। শাকসবজি, ফলমূল, আঁশসমৃদ্ধ সুষম খাবার শরীরের ওজন, হৃদরোগ, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই ছোটকাল থেকেই শিশুদের শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। না হলে পরবর্তী জীবনে তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।

পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের সবার একটু পড়াশোনা করা দরকার। আপনি এবং আপনার পরিবারের সব সদস্যের জন্য একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। সুস্বাস্থ্য আমাদের জীবনে শুধু আনন্দই বয়ে আনে না, সুস্বাস্থ্য আমাদের উপহার দেয় অফুরন্ত কর্মচাঞ্চল্য, উৎসাহ-উদ্দীপনা, শক্তি-যা জীবনে বয়ে আনে কাক্সিক্ষত সাফল্য। তাই আসুন, আমরা সবাই খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে সুস্থ থাকতে সচেষ্ট হই।

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ : প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

drmuniruddin@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম