ছাত্রলীগের আচরণ ও বঙ্গবন্ধুর বাণী
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![ছাত্রলীগের আচরণ ও বঙ্গবন্ধুর বাণী](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2022/07/04/image-569439-1656883288.jpg)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের শিক্ষার্থীরা সেদিন ভালো একটি কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২৫ জুন ঢাকার একটি জাতীয় পত্রিকার এ সংবাদটি স্বাভাবিক কারণেই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমার বিশ্বাস, আমার মতো আরও অনেকেরই সংবাদটি পড়ে ভালো লেগেছে। সংবাদটি হলো, ‘শাহ মখদুম হলের ডাইনিং হলে ৪২ বছর চাকরি শেষ করে গত ২৪ জুন বিদায় নেওয়ার সময় হলের শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন তাদের প্রিয় মজিবর ভাই।’ হলের শিক্ষার্থীরা হলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে টাকা তুলে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের সহায়তায় মজিবর রহমানের হাতে অনুদান হিসাবে তুলে দিলেন দুই লাখ টাকা। বিদায়বেলায় অশ্রুসিক্ত মজিবর রহমান ডাইনিং হলে কর্মরত তার সহকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। ভালো ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীরা মনে রাখবেন। উনষাট বছরের মজিবর রহমান তার অমায়িক ব্যবহারের দ্বারা শিক্ষার্থীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। তিনি তাদের কাছে বেশ প্রিয়ও ছিলেন।
করোনা-উত্তর গত বছরের ১৭ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার পর থেকে একের পর এক হল দখলের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত যে খবর পাওয়া যাচ্ছিল, তার মধ্যে শাহ মখদুম হলের ডাইনিং হলের স্টাফ মজিবর রহমানের বিদায়ক্ষণে শিক্ষার্থীদের এরূপ দৃষ্টান্ত স্থাপন নিঃসন্দেহে একটি ভালো সংবাদ। ভালো সংবাদ বলছি আরও একটি কারণে, বিদায়ক্ষণে মজিবর তার সহকর্মীদের যে উপদেশ দিয়ে গেলেন, তা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলবাজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনেক কিছুই শিক্ষা নেওয়ার আছে। ভালো ব্যবহারে মানুষের মন জয় করা যায়, এ সহজ কথাটি হলের নিু বেতনভুক ডাইনিং স্টাফ মজিবর রহমান বুঝলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বোঝেন না তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। অথচ বিগত কয়েক মাস ধরে আমরা কী দেখেছি? গত বছর করোনার শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার পর ছাত্রলীগ আসন দখল করতে আবাসিক হলে তালা মারতে শুরু করে। এরপর একের পর এক বৈধভাবে হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের নানা কায়দায় জোরজবরদস্তি হলছাড়া করে।
বৈধভাবে হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ কর্তৃক হলছাড়া করার ছোট্ট একটা ফিরিস্ত এখানে দেওয়া যেতেই পারে। গত ২৩ অক্টোবর শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫৬ ও ৪৭৬ নম্বর কক্ষ থেকে দুজনকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। ৮ ডিসেম্বর রাতে এক শিক্ষার্থীকে হলছাড়া করে। এ বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি মাদার বখশ হলের ১৫৩ নম্বর কক্ষ থেকে এক শিক্ষার্থীকে, ১২ এপ্রিল শেরেবাংলা একে ফজলুল হক হল থেকে একজন, ১৭ মে শহিদ হাবিবুর রহমান হল থেকে একজন, একই হল থেকে ২৮ মে অপর এক শিক্ষার্থী, ২ জুন রাতে শহিদ শামসুজ্জোহা হল থেকে একজন, ১৪ জুন নবাব আবদুল লতিফ হল থেকে একজন, সর্বশেষ একই হল থেকে ২৩ জুন গভীররাতে মারধর করে মুন্না ইসলাম নামে একজন শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগে বাধ্য করে। এ ছাড়া ১৬ জুন শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগ তাদের নেতার সিট দখল করাকে কেন্দ্র করে হলের গেটে তালা মেরে দিয়েছিল। ১৮ জুন বখশ হলে কক্ষ দখল নিতে তালা ঝুলিয়ে দেন এক ছাত্রলীগ নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এভাবেই শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিচ্ছেন। ফলে যাদের নামে আসন বরাদ্দ আছে, তারা হলে থাকতে পারছেন না। থাকছেন ছাত্রলীগ নামধারী বহিরাগতরা।
ছাত্রলীগের এ দখলদারি কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও তাদের একচেটিয়া দখলদারিত্ব। আসন বরাদ্দের বিষয়ে তারা হল প্রশাসনের ওপর অব্যাহত চাপ বজায় রাখেন। গত বছর তো খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যান্টিনের ম্যানেজার নিয়োগ নিয়ে এক শিক্ষকের ওপর ছাত্রলীগের নেতারা অব্যাহত চাপ সৃষ্টি করলে, শেষ পর্যন্ত ওই শিক্ষক সহ্য করতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা, ধমক দেওয়া, গালাগাল করা তাদের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এসব দেখার বুঝি কেউ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব অনাচার দেখেও নির্লিপ্ত থাকেন বলে শোনা যায়। তাদের এ নির্লিপ্ততা দেখে মনে হয়, তারা ছাত্রলীগের অনাচার ও অব্যাহত চাপের মুখে অসহায়; না হয় ব্যক্তিগত স্বার্থ ও রাজনৈতিক মুনাফা লাভের আশায় দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভেতর ক্ষোভ কাজ করলেও তাদের করার কিছু থাকে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ খানের লেখা সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে হলের প্রাধ্যক্ষের অসহায়ত্বের এক করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে এভাবে, একবার এক শিক্ষার্থী এসে দুঃখ করে তাকে বলেছেন, ‘স্যার আমার সিট হয়েছে, কিন্তু আমার রুমের সিট দখল হয়ে আছে, আমাকে উঠতে দিচ্ছে না’। আমি তাকে প্রাধ্যক্ষের কাছে যেতে বললাম। ক’দিন পর শিক্ষার্থীটি এসে জানালো, প্রাধ্যক্ষ নাকি বলেছেন, আমার দায়িত্ব ছিল তোমাকে সিট দেওয়া, দিয়েছি; এখন তোমার দায়িত্ব সিটে ওঠা। প্রাধ্যক্ষের এ উত্তর শুনে মনে হয়েছে, হল প্রশাসন এ ক্ষেত্রে অনেকটাই অসহায় এবং কিছুটা এড়িয়ে চলার পন্থা অবলম্বন করেছে।
সেদিন খবরের কাগজে একটি সংবাদ শিরোনাম দেখে রীতিমতো চমকে উঠেছি। ‘হল লিজ নিছি, আমরা সাংবাদিক-প্রক্টর খাই না’। এ আবার কেমন কথার শ্রী! এটা কি কোনো সভ্য লোকের মুখের ভাষা হতে পারে? সভ্য মানুষের ভাষা না হলেও এ ভাষায় কথা বলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ১৬ জুন রাত ১২টার দিকে আলাওল হলে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামের কক্ষে ঢুকে হুমকি-ধমকি দিয়ে বলেন, ‘এই হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদের হল থেকে বের করে দেব। এই রুম যদি তোদের হয়, পুরা হল তাহলে আমাদের। কী করবি তোরা? নিউজ করবি? কর। আমরা সাংবাদিক খাই না। প্রক্টরও খাই না’। তারা সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর গত ১৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার কাছে নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, এমন অশালীন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে কখনো কাম্য নয়। প্রমাণ হিসাবে বেশকিছু অডিও রেকর্ড আমাদের হাতে এসেছে। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তবে সেই তদন্ত আদৌ শেষ হয়েছে কিনা। কিংবা শেষ হয়ে থাকলে ছাত্রলীগের সেসব কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা এ লেখা যখন লিখছি, তখন পর্যন্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের অব্যাহত সিটবাণিজ্য ও দখলের প্রতিবাদে গত ১৩ জুন মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিছু কথা বলেছেন। সেখান থেকে মাত্র দুজনের বক্তব্য এখানে তুলে ধরছি। এর মধ্যে কাজী মামুন হায়দার বলেছেন, তারা কি আদৌ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আছেন, নাকি কিছু বিল্ডিংয়ের মধ্যে অবস্থান করছেন? এমন একটি কাঠামোর মধ্যে আছেন যেখানে বিল্ডিং আছে, গাড়ি আছে, আইন সব আছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় নেই। অধ্যাপক সালেহ্ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বর্তমানে যত রকম অনাচার করা হচ্ছে তার একটা বিরাট অংশ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র নামে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যখন হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দেওয়া হয়, চাঁদাবাজি করা হয়, এর চেয়ে বড় মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা আর কী হতে পারে?
মানববন্ধন ছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাদের কারণে হলের দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অন্তত পাঁচটি হলের প্রাধ্যক্ষ। তারা জানান, নানাভাবে তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। তারা আর লাঞ্ছিত হতে চান না। তারা চান, বৈধ শিক্ষার্থীরা হলের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাক। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে নিজেদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রাধ্যক্ষদের বাধ্য করেন। না হলে বিভিন্নভাবে প্রাধ্যক্ষদের অসম্মানিত হতে হয়। এসব ঘটনায় নানাভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিজ্ঞতা প্রায় সব হল প্রাধ্যক্ষের আছে বলে জানিয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, ছাত্রলীগের এমন বেপরোয়া আচরণের পেছনে কারণ কী? তাদের এমন নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার নিয়ে এর আগেও পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় বিস্তর লেখালেখি ও আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও সাবেক ছাত্রনেতারা মনে করেন, অর্থ ও সম্পদ অর্জনের লালসাই ছাত্রলীগের এমন বেপরোয়া ও নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার পেছনে মূল কারণ। অর্থ-প্রতিপত্তি অর্জন ও ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতি অধিক দুর্বলতাই শুধু নয়, ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন (হেলমেট পার্টি) ও ফৌজদারি অপরাধ করেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা আশকারা পেয়ে আসছেন। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরকারের এমন নীরব ভূমিকায় তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি ভিন্নমতাবলম্বী ছাড়াও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে নিজদলের সদস্যদেরও খুন করতে পিছপা হয় না। বিগত ছয় বছরেই ছাত্রলীগের অন্তর্কলহে খুন হয়েছে অনেকে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই খুন হয়েছে অবৈধ উপায়ে অর্থ অর্জনে কোন্দলের কারণে। তারা এমনই বেপরোয়া হয়ে পড়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনা ও উপদেশ অগ্রাহ্য করতেও সংকোচবোধ করে না।
এ প্রসঙ্গে ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের কথা মনে পড়ে গেল। তিনি সেদিন বলেছিলেন, মনে রাখতে হবে, ছাত্ররাজনীতি আমরা করব। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণ করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং সবার আগের কাজ। আগে শিক্ষা, পরে রাজনীতি। ছাত্রলীগের যে মূলনীতি শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘শিক্ষার আলোকবর্তিতা হাতে নিয়ে শান্তির পথে প্রগতির দিকে এগোতে হবে।’ দলীয় নেত্রীর এমন উপদেশের পরও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেমে নেই। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের অব্যাহত টেন্ডার দখল, জায়গা দখল, হল দখল, প্রভাব বিস্তার ইত্যাদি অপকর্মে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। এসব ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের দায়িত্ববান ব্যক্তিদের প্রায়ই বিব্রত হতে দেখা যায়।
পাকিস্তানের শাসনামল থেকে এযাবৎ প্রতিটি আন্দোলনে যে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, মুক্তিযুদ্ধে যে সংগঠনের ১৭ হাজার বীর যোদ্ধা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছে, এমন একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এমন পরিণতি দেখে বিস্মিত হতে হয় বৈকি। ছাত্রলীগ করেই এদেশের অনেক ছাত্রনেতা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হয়েছেন। আজ যারা নিজেদের দুষ্কর্মের দ্বারা সংগঠনে কালিমা লেপন করে চলেছেন, তাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার জীবনের সর্বশেষ অর্থাৎ ১৯৭৪ সালের বিজয় দিবসের ভাষণে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা স্মরণ করা উচিত। তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘একটি কথা আমি প্রায়ই বলে থাকি। আজও বলছি, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।’ সেদিন তিনি আরও বলেছিলেন, আমাদের চরিত্রের পরিবর্তন করতে হবে। চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এ অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কিনা সন্দেহ। আমাদের সবাইকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধি করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে নিয়ে যেতে পারব।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা