অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেটে’ সম্ভাবনার পথ

মুঈদ রহমান
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দুদিন বাদেই আমরা জুন মাসে পা রাখব। সাধারণত জুনের শুরুতেই জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপিত হয়। মাসব্যাপী আলোচনা, সংযোজন, বিয়োজন শেষে জুনের শেষ সপ্তাহে তা সংসদ দ্বারা চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। এবারের বাজেট উপস্থাপনের তারিখ সম্ভবত ৯ জুন। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সঙ্গে একটি সীমিত আলাপ-অলোচনা করা হয়ে থাকে, যদিও এর প্রতিফলন বাজেটে দেখতে পাওয়া যায় না। বাজেট সংসদে প্রস্তাব আকারে উপস্থাপিত হওয়ার পর দুটি চরম প্রতিক্রিয়া সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়। এক দল বলে, এ বাজেট সম্পূর্ণ গণমুখী।
অপর পক্ষ বলে, এ বাজেট সম্পূর্ণ গণবিরোধী। এ দুই চরম অবস্থানকারীর কেউই বাজেটের কোনো একটি অংশ সম্পর্কেও ধারণা রাখে না। শুধু রাজনৈতিক আনুগত্য থেকে স্ব-স্ব মত প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সমর্থন ও বিরোধিতার অবসানকল্পে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে প্রতিবছর সরকারি বাজেট উপস্থাপিত হওয়ার আগেই একটি যৌক্তিক ‘বিকল্প বাজেট’ প্রস্তাব বা উপস্থাপন করে আসছে। এটি এক ধরনের ছায়া বাজেট। এ ধারাবাহিকতায় গত ২২ মে অর্থনীতি সমিতি তাদের ৮ম বিকল্প বাজেট দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করেছে।
বিকল্প বাজেটটি উপস্থাপন করেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। ঢাকা কেন্দ্র থেকে ভার্চুয়ালি প্রচারিত অনুষ্ঠানটিতে দেশের ৬৪টি জেলা, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়, একাধিক কলেজ ও ১০৭টি উপজেলার প্রায় ৫ হাজার দর্শক-শ্রোতা অংশ নেন। ২৫০ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত এ বিকল্প বাজেটকে এই ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরতে গেলে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ব্যত্যয় ঘটার ঝুঁকি থেকে যায়। তারপরও এর কিছুটা পাঠকসমাজে তুলে ধরার জন্য ‘অতি সাহসী’ হওয়ার বিকল্প ছিল না।
অর্থনীতি সমিতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য যে বিকল্প বাজেট উপস্থাপন করেছে, তার পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় বাবদ ধরা হয়েছে ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ৩.৪০ গুণ। অধ্যাপক বারকাত প্রণীত ও উপস্থাপিত এ বাজেটের প্রায়োগিক সম্ভাবনার চেয়ে দর্শন ভিত্তিটি অধিকতর গুরুত্ব বহন করে। সমিতি মনে করে, বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের পবিত্র সংবিধান এবং তাতে উল্লিখিত সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের চিন্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার। আমার মনে হয়, অধ্যাপক বারকাত সেদিকটির প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে বাজেট প্রণয়নে আত্মপ্রত্যয়ী হয়েছেন।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যেহেতু ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ এবং যেহেতু অনুচ্ছেদ ১১ অনুযায়ী ‘প্রজাতন্ত্র হইবে গণতান্ত্রিক’, সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাজেটটি হওয়া উচিত জনগণতান্ত্রিক বাজেট। এ যুক্তির নিরিখেই অর্থনীতি সমিতির ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের নামকরণ হয়েছে ‘জনগণতান্ত্রিক বাজেট’। সরকার কোন পথে হাঁটবে, তা নির্ভর করে সরকার পরিচালনায় নিয়োজিতরা সমাজের কোন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে, কোন শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করা তাদের জন্য অপরিহার্য, এর ওপর। কিন্তু অর্থনীতি সমিতি সেই সংকুচিত গণ্ডি পেরিয়ে সমগ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে।
অর্থনীতি সমিতি দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস, অনুভব ও উপলব্ধি করে যে, দেশে বৈষম্য-দারিদ্র্যের বিপজ্জনক প্রবণতা, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, শোভন কর্মবাজারের সংকোচন, একই সঙ্গে এ প্রবণতায় করোনাকালীন ও ইউরোপে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অভিঘাত, অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বাজেটসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। কিন্তু দেশের বর্তমান নীতিনির্ধারকদের ওপর আমাদের সেই আস্থা হারিয়ে গেছে। উল্লিখিত সংকট মোকাবিলায় অধ্যাপক বারকাতের বিকল্প বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্য হলো-পূর্ণ কর্ম-নিয়োজন, শিশুর জন্য সুস্থ জীবন, সবার জন্য আবাসন, মূল্যস্ফীতি রোধ।
মনে রাখতে হবে, বাজেট হচ্ছে লক্ষ্য পূরণের মাধ্যম মাত্র, তাই লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা জরুরি, তারপর বাস্তবায়ন। ‘শোভন অর্থনীতি ব্যবস্থায়’ এ ধরনের বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে আয় ও সম্পদ বণ্টনে ন্যায্যতা বাড়বে, বৈষম্য দূর হবে, তথাকথিত কৃচ্ছ্রসাধনের প্রয়োজন হবে না, অর্থনীতিতে মোট চাহিদা বাড়বে, উৎপাদন বাড়বে, যা ইচ্ছা তা-ই উৎপাদন করা যাবে না (যেমন পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্য হানিকর ওষুধপত্র, অপসংস্কৃতি ইত্যাদি), পূর্ণ কর্ম-নিয়োজন নিশ্চিত হবে, কোনো ধরনের ঘাটতি বা ঋণ নিয়ে ভাবতে হবে না। কিন্তু শোষণভিত্তিক-ব্যক্তিস্বার্থনির্ভর-লোভ-লালসাভিত্তিক মুনাফা-উচ্ছিষ্ট পুঁজিবাদ এসব পারবে না।
এর জন্য প্রয়োজন ‘শোভন ব্যবস্থাপনা’। এই শোভন ব্যবস্থাপনা বিনির্মাণ করতে হলে চাই শোভন অর্থনৈতিক ও শোভন সামাজিক কর্মকাণ্ড, যা কিনা একটি রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রশ্ন। সেক্ষেত্রে অর্থনীতি সমিতি দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করে, মুক্তিযুদ্ধের শুভ চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব; যৌক্তিক, নৈতিক, মানবিক-সব বিচারেই তা সম্ভব; সম্ভব এদেশের দ্রুত কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন; সম্ভব উন্নত-আলোকিত বাংলাদেশ গড়া; সম্ভব বৈষম্যহীন সমাজ গড়া; সম্ভব অসাম্প্রদায়িক মানবসমাজ সৃষ্টি করা।
জনগণতান্ত্রিক বিকল্প বাজেটের লক্ষ্য শুধু আসছে অর্থবছরকে সামনে রেখে নয়, বরং আগামী ১০ বছরে অর্থাৎ ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, তার নিরিখে করা হয়েছে। এই ১০ বছরে আমাদের অন্তত সাতটি বিষয়ের বা খাতের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে হবে। খাতগুলো হলো : এক. দেশের অন্তত ৭০-৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে একটি আলোকিত, শক্তিশালী, টেকসই শ্রেণিতে রূপান্তরিত করা; দুই. দেশে বৈষম্য, অসমতা, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পারতপক্ষে সর্বনিু পর্যায়ে নামিয়ে আনা; তিন. রেন্ট সিকার, পরজীবী, লুটেরা ধনিক শ্রেণির সম্পদের যৌক্তিক অংশ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র, প্রান্তিক, নিুবিত্ত ও নিুমধ্যবিত্ত মানুষের কাছে প্রবাহিত করা; চার. দেশজ অর্থনীতিকে উন্নয়ন কৌশলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া; পাঁচ. কৃষিভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এবং কৃষিভূমি ও জলাশয় সংস্কারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং ছয়. মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক, উদ্ভাবনী শক্তি সঞ্চারিত ও আলোকিত করার সুযোগ সৃষ্টি করা; যাতে করে মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, নিরাপত্তা-সুরক্ষা এবং শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়। আর এর সবকিছুরই দায়িত্ব বর্তায় রাষ্ট্রের ওপর।
অর্থনীতি সমিতি মনে করে, আমাদের শাসনব্যবস্থাকে গণমুখী করার ক্ষেত্রে বর্তমান ব্যবস্থা অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত ও সংকুচিত; এর বিকেন্দ্রীকরণ অত্যাবশ্যক। তাই দুটি নতুন মন্ত্রণালয় এবং ১৬টি নতুন বিভাগ অথবা ডাইরেক্টরেট সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় দুটি হলো : ১. গণপরিবহণ মন্ত্রণালয় এবং ২. গবেষণা, উদ্ভাবন, বিচ্ছুরণ ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। ১৬টি বিভাগ বা ডাইরেক্টরেট হলো : সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন-১. প্রবীণ হিতৈষী বিভাগ, ২. দরিদ্র-বিত্তহীন-নিুবিত্ত-নিুমধ্যবিত্ত মানুষের জীবনকুশলতা উন্নয়ন বিভাগ, ৩. নারীর ক্ষমতায়ন বিভাগ, ৪. আদিবাসী মানুষের জীবনকুশলতা উন্নয়ন বিভাগ, ৫. শিশু বিকাশ বিভাগ, ৬. দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের জন্য বিধিবদ্ধ রেশনিং বিভাগ, ৭. সর্বজনীন পেনশন বিভাগ, ৮. দরিদ্র-প্রান্তিক-নিুবিত্ত-নিুমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য আবাসন বিভাগ। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে ৯. জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করবে-১০. নারীর বিজ্ঞান শিক্ষা বিভাগ, ১১. কারিগরি শিক্ষা বিভাগ, ১২. মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে-১৩. কৃষি-ভূসি-জলা সংস্কার বিভাগ, ১৪. হাওড়-বাঁওড়-বিল-চর উন্নয়ন বিভাগ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে-১৫. অণু ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিভাগ এবং সর্বশেষ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে-১৬. অর্থনৈতিক কূটনীতি বিভাগ। এই ১৬তম বিভাগটির কাজ অনেকের কাছে স্পষ্ট নাও হতে পারে। সেজন্য বলা প্রয়োজন, আমাদের সব সরকার জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয়। তাই অনির্বাচিত সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের দায় জনগণ নিতে পারে না। এ কারণে অগণতান্ত্রিক সরকারের আমলে নেওয়া ঋণ, বিশেষ করে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিয়ে একটা দরকষাকষির অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কূটনীতির প্রয়োজন আছে। সেই প্রয়োজন থেকেই ১৬তম বিভাগটি খোলার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মনে করছি।
অর্থনীতি সমিতির বাজেটকে যেহেতু জনগণতান্ত্রিক বাজেট বলা হয়েছে, তাই এখানে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতকে, যেখানে বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটের ২১ দশমিক ৪ শতাংশ; দ্বিতীয় অবস্থানে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত (বাজেটের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ); তৃতীয় কৃষি (৯ শতাংশ); তারপর জনপ্রশাসন (৮ দশমিক ২ শতাংশ); স্বাস্থ্য (৭ দশমিক ৭ শতাংশ) ইত্যাদি। বিকল্প বাজেটে খাতওয়ারি আনুপাতিক হারে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বিকল্প বাজেটের মোট আকার ধরা হয়েছে ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সরকারি বাজেট ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সে হিসাবে বিকল্প বাজেটের আকার প্রায় ৩ দশমিক ৪ গুণ। বিকল্প বাজেটে রাজস্বপ্রাপ্তি ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। চলতি সরকারি বাজেটে আয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বিকল্প বাজেটে আয়ের পরিমাণ সরকারি বাজেটের চেয়ে প্রায় ৪ দশমিক ৭৬ গুণ বেশি। চলতি সরকারি বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা, বিকল্প বাজেটে তা ১৫ শতাংশ কমিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো, এই বিশাল অঙ্কের অর্থের জোগান আসবে কোথা থেকে? সেই আয়ের উৎসের সন্ধানও অর্থনীতি সমিতি দিয়েছে। আয়ের তালিকায় নতুন ২৭টি উৎস আছে, যা থেকে বর্তমানে কোনো আয় নেই। এই ২৭টি নতুন উৎসের মধ্যে মাত্র পাঁচটির বিবরণ বিবেচনা করা যেতে পারে : ১. সম্পদ কর থেকে মিলতে পারে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, ২. অতিরিক্ত মুনাফার ওপর আরোপিত কর থেকে মিলতে পারে ৭৫ হাজার কোটি টাকা, ৩. অর্থ পাচার রোধ করে পাওয়া যাবে ৭৯ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা, ৪. কালোটাকা উদ্ধার করে পাওয়া যেতে পারে ১ লাখ ৭৭ হাজার ২২৮ কোটি টাকা, ৫. আমদানি শুল্কের আওতায় বিলাসী পণ্যের ওপর কর আরোপ করে পাওয়া যাবে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। নতুন ২৭টি উৎসের মধ্যে উল্লিখিত মাত্র পাঁচটি উৎস থেকেই অতিরিক্ত রাজস্ব হিসাবে পাওয়া যেতে পারে ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা।
অর্থনীতি সমিতির এই বিকল্প বাজেটকে কেউ কেউ অতি-উচ্চাভিলাষী আখ্যায়িত করতে পারেন। আবার কেউ কেউ আরেক ধাপ এগিয়ে এটিকে কাল্পনিকও বলতে পারেন, এমনকি পাগলের প্রলাপ বললেও বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের চুক্তি বাতিল করেছিল, তখন ২০১২ সালে সর্বপ্রথম অর্থনীতি সমিতিই জাতীয় সেমিনারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিল যে, নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব। সেসময়ে অনেক বরেণ্য ব্যক্তি অর্থনীতি সমিতির বক্তব্য ও যুক্তিকে পাগলের প্রলাপ বলে মন্তব্য করেছিলেন। আগামী ২৫ জুন সেই পাগলের প্রলাপই সত্য হতে যাচ্ছে।
তবে হ্যাঁ, বিকল্প বাজেটের বাস্তবায়ন প্রচলিত সরকারি প্রশাসনিক কাঠামো, আর্থিক সংস্কৃতি ও দক্ষতায় করা দুরূহ। এর জন্য সরকারের উপরিকাঠামোগত ও রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির পরিবর্তন জরুরি। সে কাজটি অর্থনীতি সমিতির আওতায় পড়ে না। সমিতি শুধু অধিকতর সম্ভাবনার পথ দেখাতে পারে; আমাদের সক্ষমতার সর্বোচ্চ মাত্রা তুলে ধরতে পারে মাত্র। বাস্তবায়নের দায় সরকারকেই নিতে হবে। তা না হলে সরকার ঘোষিত বাজেট হবে গতানুগতিক, যা ৫০ বছর ধরে এদেশের মানুষ দেখে এসেছে।
মুঈদ রহমান : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়