Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

শতফুল ফুটতে দাও

দারিদ্র্যের কশাঘাত ও মুক্তির উপায়

Icon

ড. মাহবুব উল্লাহ্

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দারিদ্র্যের কশাঘাত ও মুক্তির উপায়

দারিদ্র্য শুধু মানুষের দৈহিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না, দারিদ্র্য মানুষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। এই মানসিক দুর্বলতার ফলে মানুষ নিজের প্রতি আস্থা হারায় এবং অন্য মানুষদের দয়া দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। একবার এ নির্ভরশীলতার চক্রে আবদ্ধ হলে দরিদ্র মানুষটি ভাবতে পারে না, এ দশা থেকে তার মুক্তি আছে।

জীবন সম্পর্কে সে অতিমাত্রায় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে থাকে। দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রে যারা ঘুরপাক খায় তারা ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য মেহনত করতে হয় এমন কোনো কাজের জন্য উপযুক্ততা হারায়। যে শিশু দরিদ্র মা-বাবার ঘরে জন্মগ্রহণ করে সে শিশু দেহের চাহিদা মতো ক্যালরি, আমিষ ও পুষ্টির ঘাটতিতে ভোগে।

এসব শিশুর বয়স অনুযায়ী দৈহিক ওজন কম থাকে। এরা উচ্চতায় খাটো হয় এবং এদের শরীরের পেশিগুলো শুকিয়ে যায়। শারীরিক বাধন মজবুত হয় না বলে এরা স্বাভাবিক পরিমণ্ডলে চলাফেরা করতে লজ্জাবোধ করে। হীনম্মন্যতা এই শিশুদের পেয়ে বসে। তারা ভাবতে শুরু করে জীবনে কখনো তাদের অবস্থার পরিবর্তন হবে না এবং তারা সমাজে অপাঙ্ক্তেও থেকে যাবে।

কাজী নজরুল ইসলাম দরিদ্র মানুষের মনে আত্মবিশ্বাস এবং সাহস জোগাতে লিখেছিলেন, হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছো মহান/তুমি মোরে দানিয়াছো খ্রীষ্টের সম্মান। দারিদ্র্য সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলামের এমন ইতিবাচক চিন্তা নিঃসন্দেহে মানুষের মনে সাহস জোগায়। দারিদ্র্য শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশেও দারিদ্র্য আছে। যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই গৃহহীন মানুষদের রাস্তার ফুটপাতে বিছানা পাততে।

এমনকি এসব দেশে শীত ঋতুতে গরিব মানুষরা মাথার ওপর ছাদ না থাকার ফলে ভীষণ কষ্ট পায়। বিশ্বের উন্নত ধনী দেশগুলোও দু’শ বছর আগে এখনকার মতো সমৃদ্ধশালী ছিল না। এসব দেশ তখন বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার তুলনায় অনেক বেশি দারিদ্র্যে নিমজ্জিত ছিল। এসব দেশ উল্লেখযোগ্যভাবে দারিদ্র্যের বিস্তৃতি হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বসভায় এসব দেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। দারিদ্র্যকে জয় করার জন্য এসব দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে।

এসব দেশের সরকারগুলোও চেষ্টা করেছে দারিদ্র্য নিরসনকারী পলিসির মাধ্যমে মানুষের জীনবমান উন্নত করতে। উন্নত দেশগুলো যেভাবে মানুষের জীবনকে উন্নত করেছে, তা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমরা সৌভাগ্যবান, আমাদের সামনে উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থাকায় আমাদের পক্ষে নীতি-কৌশল প্রণয়ন করা সহজসাধ্য হয়েছে। অনুন্নত দরিদ্র দেশের সরকারগুলোর ওপর দুই ধরনের চাপ বিদ্যমান।

এসব দেশের জনগণ তাদের নিজেদের সরকারগুলোর ওপর দারিদ্র্য থেকে মুক্তির জন্য সর্বদা চাপ দিতে থাকে। তাই আমরা দেখতে পাই নির্বাচনের সময় এসব দেশের রাজনীতিবিদরা তাদের মেনিফেস্টোতে দারিদ্র্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে।

দেশে যদি গণতন্ত্র থাকে তাহলে দারিদ্র্য নিরসন সহজসাধ্য হয়ে ওঠে। কারণ সব রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়, তার মধ্যে দারিদ্র্য নিরসন অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। তবে একথা স্বীকার করতে হবে দারিদ্র্য নিরসন একটি কঠিন কাজ। দারিদ্র্যের মধ্যে জটিল সামাজিক সমস্যা এবং সম্পর্কগুলো নিহিত থাকে।

তাই উন্নয়নকামী সরকারগুলোর জন্য দারিদ্র্য নিরসন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭১-এ যখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে তখন শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। যুদ্ধ দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে প্রকট করে তুলেছিল। ওই সময় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৭০ ডলার। স্বাধীনতার ৫০ বছরে পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।

মুক্তিযুদ্ধে জয়ী জনগণ আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেছে। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, বাংলাদেশের মানুষের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আজকের বাংলাদেশে শত শত উদ্যোগের যে আয়োজন দেখতে পাওয়া যায়, তা পাকিস্তান আমলে ছিল না। আমরা কি ভাবতে পেরেছি বাংলাদেশ বিদেশে ফুল রপ্তানি করবে?

আমরা কি ভাবতে পেরেছি মাছের চাষ বাড়িয়ে মানুষর আমিষের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সহজ হয়ে উঠবে? এসবের পাশাপাশি আমরা আরও উল্লেখ করতে পারি, গরু মোটাতাজাকরণ, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন জাতের ফলের চাষ এই বাংলাদেশেরই আলসে মানুষগুলো আয়োজন করতে পারবে।

বাঙালিদের সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ উচ্চ ধারণা পোষণ করেননি। রবীন্দ্রনাথ তার দুরন্ত আশা কবিতায় লিখেছেন-

মর্ম যবে মত্ত আশা

সর্পসম ফোঁসে,

অদৃষ্টের বন্ধনেতে

দাপিয়া বৃথা রোষে,

তখনো ভাল-মানুষ সেজে

বাঁধানো হুঁকা যতনে মেজে

মলিন তাস সজোরে ভেঁজে

খেলিতে হবে কষে!

অন্নপায়ী বঙ্গবাসী

স্তন্যপায়ী জীব

জন-দশেকে জটলা করি

তক্তপোশে ব’সে।

রবীন্দ্রনাথ বাঙালির আলসেমির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, এরা ভাত চিবিয়ে খায় না, পান করে। এর তুলনায় কবি চাইছেন, আরব বেদুইন হতে। একই কবিতায় তিনি লিখেছেন, ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন/চরণ তলে বিশাল মরু দিগন্তে বিলীন। অন্য একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন, সপ্ত কোটি বাঙালীকে হে মুগ্ধ জননী/রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করোনি।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অবজ্ঞা করার মতো কোনো বিষয় নয়। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে যা কিছু হয়েছে তার পেছনে বিভিন্ন সরকারের অবদান আছে। বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় চরিত্রে পরিবর্তন সমগ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে বেগবান করেছে। এটা কোনো ব্যক্তি বিশেষের দান নয়। চীনের প্রখ্যাত লেখক ল্যু সুন তার এক লেখায় নেপোলিয়নের একটি উক্তি তুলে ধরেছিলেন। আল্পস পর্বতকে তার অভিযানের সময় অতিক্রম করতে গিয়ে নেপোলিয়ন দাবি করেছিলেন, লুক, আই অ্যাম হাইয়ার দেন আল্পস।

অর্থাৎ নেপেলিয়নের দাবি অনুযায়ী তিনি আল্পস পর্বতের তুলনায় উচ্চতর। নেপোলিয়নের এ দম্ভোক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য? নিঃসন্দেহে নেপোলিয়ন একজন বড় মাপের সেনাপতি ছিলেন। সেনাপতি হিসাবে যেসব যুদ্ধে তিনি বিজয়ী হয়ে ছিলেন, তা তার একার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না, যদি তার পেছনে সাহসী সৈনিকরা না থাকত।

একইভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু নেপোলিয়ানদের বিজয় নয়, জনগণের বিজয়ও বটে। ব্যক্তি বিশেষের অবদানকে রাজনৈতিক কারণে বড় করতে গিয়ে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যে জনগণ সংগ্রাম করে যাচ্ছে তাদের ছোট করা হয়। তবে নেতৃত্বের যোগ্যতাও নিশ্চয়ই গুরুত্ব বহন করে।

দারিদ্র্যকে সফলভাবে মোকাবিলা করতে গিয়ে ভাবতে হবে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেগুলো দীর্ঘমেয়াদে কতটা টেকসই হবে। যদি এমন হয় দুর্যোগের মুখে দারিদ্র্যবিরোধী পদক্ষেপগুলো কার্যকর থাকছে না, তাহলে বুঝতে হবে পদক্ষেপের মধ্যে ত্রুটি কিংবা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

কোভিড-১৯-এর অভিঘাতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ যারা দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠেছিলেন তারা আবার নিচে চলে গেছেন। সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু এ ধরনের কিছু যে ঘটেছে তা কি অস্বীকার করা যায়? আমার কাছে মনে হয় এখনো আমরা দারিদ্র্যের কোনো টেকসই বাংলাদেশি নীতিকৌশল উদ্ভাবন করতে পারিনি। এর জন্য আরও গবেষণা এবং চিন্তাভাবনাকে সৃজনশীল করে তুলতে হবে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপ্রবণ জেলা হলো কুড়িগ্রাম। এই জেলার ৭০.৮ শতাংশ মানুষই দরিদ্র। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, কুড়িগ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমনই প্রায় রয়ে গেছে, যেমনটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের পরপর বাংলাদেশের অবস্থা। বান্দরবানে দারিদ্র্যের হার ৬৩.২ শতাংশ। এই হার দেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ ও পার্বত্য জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ।

খুলনায় দারিদ্র্যের হার ৩০.৮ শতাংশ, তবে জেলাটিতে আয় বৈষম্যের হার দেশে সর্বোচ্চ। এসব তথ্য দৈনিক সংবাদপত্রের সূত্রে পাওয়া গেলেও এগুলোর প্রাথমিক উৎস হলো ২০১৬ সালে পরিচালিত আয়-ব্যয় জরিপ। এ তথ্য ৬ বছর আগের। অধুনা কোভিড মহামারির ফলে কী পরিবর্তন হয়েছে তা এই তথ্যগুলো থেকে জানা যায় না।

কুড়িগ্রামের জহিরুল ইসলাম (৪৮) নামে একজন দিনমজুর হিসাবে কাজ করেন। এই মানুষটি দিন আনেন দিন খান। বুঝতে কষ্ট হয় না কর্মহীন দিবসে তার পক্ষে পরিবারের সব সদস্যের জন্য আহারের সংস্থান করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিনি ও তার স্ত্রী নিলুফা কষ্ট করে তেল ছাড়া রান্না করা তরকারি খেতে পারেন। তবে তাদের সন্তান নীরব (৮) খেতে চায় না। টিসিবির কার্ড সম্পর্কে তাদের উৎসাহ নেই। কারণ টিসিবির প্যাকেজের দাম এত বেশি যে, তারা তাদের আয় দিয়ে এতগুলো টাকার ব্যবস্থা করতে পারেন না।

অবশ্য ইতোমধ্যেই টিসিবির বিভিন্ন জিনিস একটি প্যাকেটে বিক্রি করার পলিসি গণমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে। উল্লেখিত দিনমজুর কাজ পেলে দিনে মজুরি পান ৩০০ টাকা। ৩০ দিনের মাসে কাজ পাওয়া যায় মাত্র ২০ দিন। মাসিক ৬০০০ টাকার মতো আয় দিয়ে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদি ক্রয় করা এবং সংসারের অন্য প্রয়োজন মেটানো প্রায় অসম্ভব। অসুস্থ হয়ে পড়লে একজন দিনমজুর ভয়াবহ বিপদে পড়ে যান। তখন ডাল-ভাত জোগাড় করা দুরূহ হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসার ব্যয় মেটানোও হয় কঠিন। আমি এই কলামে আমার ভিন্ন একটি লেখায় লিখেছিলাম, দৈব দুর্বিপাকে পড়লে গরিব মানুষদের জীবন-কৌশল হয় খাওয়া-দাওয়ার খরচ কাটছাঁট করা।

অর্থাৎ কম করে খাওয়া। এমন পরিস্থিতিতে যে গৃহিণী রান্না করেন তাকে হতে হয় খুবই কৌশলী। পেঁয়াজ না দিয়ে বা কম দিয়ে কিভাবে রান্না করতে হয় সে কৌশল বের করতে হয় দরিদ্র পরিবারের গৃহিণীকে। এজন্যই বোধহয় আমার শিক্ষাবিদ পিতা প্রায়ই বলতেন, শিক্ষকদের গৃহিণীগুণ থাকতে হয়। এই গৃহিণীগুণটা কী? গুণটা হলো শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয় উপায় এবং উপকরণ না থাকলে অথবা কম থাকলে শিক্ষার্থীদের মনে আলোচ্য বিষয়বুদ্ধি খরচ করে গেঁথে দেওয়া। কুড়িগ্রামের দরিদ্র মানুষরা খরচ কমিয়ে যেভাবে ক্ষুধার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে তাদের উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করেন।

কুড়িগ্রামে নদী ভাঙনের শিকার সাইফুল ইসলামের (৫০) পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়। নিজের বলতে তার আছে ৪ শতাংশ জমি এবং একটি শোলার ঘর। সাইফুল সারা দিন বাড়িবাড়ি ঘুরে ভাঙারি জিনিস সংগ্রহ করেন এবং দিন শেষে বাজারে গিয়ে এগুলো বিক্রি করেন। এতে ২৫০-৩০০ টাকা পান।

তার স্ত্রী হনুফা বলেন, ‘সব দিন স্বামীর কামাই এক রকম হয় না। যেদিন কামাই না অয়, হেইদিন ধারদেনা কইরা সংসার চালাই। খাওন তো লাগেই। কতদিন তেল ছাড়া তরকারি রানদি। আমরা কোনে রহম খাইলেও পোলাপানে খাইবার চায় না।’ উল্লেখ করা যেতে পারে, গরিব মানুষদের দৈনিক আয়ের পরিমাণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি প্রতিদিন নিয়মিতভাবে কাজ পাওয়াও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে কিভাবে গরিব মানুষরা নিয়মিত প্রতিদিন কাজ পান। অথবা আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন।

সংবাদপত্রে পরিবেশিত দরিদ্রদের ওপর কেস স্টাডি উত্থাপন করা হয়েছে বান্দরবান সম্পর্কে। চাল, নাপ্পি (শুঁটকি বানা), লবণ ও কেরোসিন-বান্দরবানের ম্রোদের সংসারে এই চার পণ্যই বেশি দরকার। এর মধ্যে চাল ও কেরোসিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র ম্রো-পরিবারগুলোর সংকট আরও গভীর হয়েছে।

বান্দরবানের আলী কদম-থানচি সড়কের ক্রাউডং (ডিমপাহাড়) এলাকার দিরিপাড়ার লংয়া ম্রো এসব কথা জানিয়েছেন সংবাদপত্রের প্রতিবেদককে। তিনি বলেন, মাছ, মাংস অথবা সবজি রান্না করে খেতে ভোজ্য তেল লাগে। ম্রো-পরিবারগুলো এতই দরিদ্র যে মাছ-মাংস খাওয়ার সাধ্য তাদের নেই।

পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে বান্দরবানে দরিদ্র মানুষের শতকরা হার সর্বোচ্চ। এই জেলার মানুষরা যে ভূমির ওপরে অবস্থান করে জীবনযাপন করছে, তাতে রয়েছে হাজারও সমস্যা। তারা অত্যন্ত দরিদ্র, কারণ তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সমতলের অর্থনীতির সংযোগ প্রয়োজনমাফিক নেই। তদুপরি ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ হওয়ায় আমরা তাদের কম বুঝছি। অনেক সময় দেখা যায়, পার্বত্য জেলাগুলো নিয়ে উন্নয়নের যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা অনেকটা A square peg in a round hole-এর মতো। যেসব পলিসি গ্রহণ করা হয় সেগুলো পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের কৃষ্টি কালচারের সঙ্গে খুব একটা যায় না।

‘ইনকামপাতি কুইমে গেছে। আবার জিনিসপাতির দাম সব বাইড়ে গেছে। কোনপালি সংসারডা চালাতি চেষ্টা করতিছি। তা পাইরে উঠতিছিনে। এ টু বসেন, বেলা তিনডের দিকি বৌ দুফুরির খাবার আইনবেনে। আমার বাটিতে কটুকুনি খাবার আনে দ্যাখবেন। আসলে ভরপাট খালি তো কি টি খতি (টিকতে) পারব না।’ এই হলো জুট মিলের একজন বদলি শ্রমিকের অবস্থার বর্ণনা। এই শ্রমিক মিলের বদলি শ্রমিকের কাজ করতেন।

পাশাপাশি টুকটাক দর্জির কাজও করতেন। ২০২০ সালের জুলাইয়ে মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকে শুধুই দর্জির কাজ করছেন তিনি। তাতে মাসে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা আয় হয়। এই টাকায় স্ত্রীর চিকিৎসা, দুই সন্তানের লেখাপড়া, দোকান ভাড়া থেকে শুরু করে পরিবারের সব খরচ মেটানো যায় না।

সংসারের পেছনে মাসে খরচ ৮-৯ হাজার টাকা। বাকি টাকা ধার করে চলতে হয়। প্রতি মাসেই একটু একটু করে দেনায় ডুবছেন এই দর্জি। প্রথম আলোর প্রতিবেদকরা এই কেস স্টাডিগুলো খুব চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। এগুলো যেমন আমাদের মন ছুঁয়ে যায়, তেমনি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের জন্য এগুলো খুবই মূল্যবান উপাত্ত।

মাও জে দং বলেছিলেন, ‘দারিদ্র্য ভালো, কারণ দারিদ্র্য পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তীব্র করে। আমরা যদি দরিদ্র মানুষদের মধ্যে এমন মনোবল সৃষ্টি করতে পারি, যা দিয়ে দরিদ্র মানুষরা বেঁচে থাকার এবং ভালোভাবে বাঁচারও উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে- তাহলে দারিদ্র্য নিরসন সম্ভব হবে।’

ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম