Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

রাশিয়া কি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে?

Icon

একেএম শামসুদ্দিন

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাশিয়া কি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে?

সময় যতই যাচ্ছে, ইউক্রেন সংকট যেন আরও জটিল আকার ধারণ করছে। প্রথমে মনে করা হয়েছিল সহজেই কিয়েভ দখল করবে রাশিয়া; কিন্তু সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা মার দিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনারা। কিয়েভ দখল করতে মস্কোর আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে মনে হয়। বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তেমনই মনে হচ্ছে, রাশিয়ার কিয়েভমুখী অগ্রাভিযান ঠেকাতে যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেনীয় সেনা। তবে সময় একটু বেশি লাগলেও ইউক্রেনে রাশিয়া পরিকল্পনামাফিকই এগিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া অবশ্য ইউক্রেনে রুশপন্থি সরকার গঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। ইউক্রেনের মেলিটোপোল ও ডিনিপ্রোরুডনের বর্তমান মেয়রকে সরিয়ে দিয়ে রুশপন্থি মেয়রদের বসিয়ে এ প্রক্রিয়াটি শুরু করে দিয়েছে তারা। যদিও সংশ্লিষ্ট শহর দুটোর নাগরিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছে; তাতে রাশিয়ার মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়বে বলে মনে হয় না। বলাই বাহুল্য, কিয়েভ দখল না করা পর্যন্ত রাশিয়া তাদের মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এজন্য তাদের আরও অস্ত্র, অর্থ ও জনবল খোয়াতে হবে।

কিয়েভ শহরের নাগরিকরা ইতোমধ্যে ইউক্রেন সেনাদের সহযোগিতায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের পাশে পেয়ে ইউক্রেন সেনারা দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে রাজধানী কিয়েভে অগ্রসরমান রুশ সেনাদের ঠেকাতে শেষ চেষ্টা চালাবে সন্দেহ নেই। যদিও রাজধানীর প্রায় অর্ধেক অধিবাসী ইতোমধ্যেই অন্যত্র সরে পড়েছেন। তারপরও এখনো যারা শহরটিতে রয়ে গেছেন, তারা নানাভাবে যতটা সম্ভব সাহায্য করে যাচ্ছে ইউক্রেন সেনাসদস্যদের। রাশিয়ার সেনারা কিয়েভের আশপাশের এলাকা দখল করে নিলেও কিয়েভ দখল করতে পারেনি। রাশিয়ার সেনাবাহিনী যে টাইম এবং স্পেস অর্থাৎ সময় ও ভূমি দখলের হিসাব ধরে কিয়েভ অভিমুখে অভিযান চালিয়ে এসেছে, সে হিসাব অনুযায়ী কিয়েভকে তাদের আয়ত্তে আনতে পারেনি। অপরদিকে রাজধানীর চারপাশে, এমনকি শহরের অভ্যন্তরেও শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ইউক্রেন সেনারা। এমন পরিস্থিতিতে কিয়েভ দখলে কী পরিমাণ যে রক্তপাত ঘটবে তা এ মুহূর্তে কল্পনা করা যাচ্ছে না।

২৪ ফেব্রুয়ারি অভিযান শুরুর পর রাশিয়া ভেবেছিল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয়তো অতি সহজেই ভেঙে পড়বে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। অভিযান শুরুর পর রাশিয়া নিজেও ভাবেনি, ইউক্রেন এভাবে এতদিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুললেও রুশ বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূতে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর। কিয়েভও এ বোমাবর্ষণের বাইরে নয়। দিন দিন তারা যেভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে তা এক প্রকার দৃশ্যমান। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শত অনুরোধেও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটোভুক্ত গোষ্ঠীর কোনো দেশ সেভাবে এগিয়ে আসেনি, যেভাবে জেলেনস্কি ও তার দেশের জনগণ আশা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো যুদ্ধে যাবে না তারা। কিছু অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠিয়ে দিয়ে তারা তাদের সমর্থন জানিয়েছে কেবল। কিয়েভ যখন মস্কো বাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে গেছে, এমন সময় জেলেনস্কি ন্যাটো গোষ্ঠীর কাছে আবারও ইউক্রেনের আকাশ সীমাকে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণার আরজি জানিয়েছেন। ২০ দিন মস্কোকে ঠেকিয়ে রাখলেও পরিস্থিতি ক্রমেই যে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে ইঙ্গিত দিয়ে জেলেনস্কি অনুরোধ করে বলেছেন,‘আমি আবারও বলছি, যদি ইউক্রেনের আকাশপথ বন্ধ না করা হয়, তাহলে ন্যাটো ভূখণ্ডে রুশ মিসাইল আছড়ে পড়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ন্যাটোর নাগরিকদের বাড়িতে বোমা পড়বে।’ কয়েকদিন আগেও একই আরজি জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। সে আবেদন খারিজ করে দেয় ন্যাটো। জেলেনস্কির অনুরোধ খারিজ করার পক্ষে ন্যাটো জোটের যুক্তি ছিল, ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করলে রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।’ সে সময় জেলেনস্কি ক্ষোভ ঝেড়ে বলেছিলেন, ‘আজ থেকে সব মৃত্যুর দায় ন্যাটোর।’ যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় গোষ্ঠীর প্রলোভনে জেলেনস্কি ন্যাটো জোটে যোগদানের সীদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখনো কি তিনি একবারের জন্যও ভেবেছিলেন, বন্ধু রাষ্ট্রগুলো এমন বিপদের মুহূর্তেও তার ডাকে সাড়া দেবে না! জেলেনস্কির অনুরোধে সাড়া দেওয়া ন্যাটো জোটের জন্য দুরূহ। এর কারণ, ইউক্রেনের আকাশ নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করলে ন্যাটো জোটের দেশ থেকে যুদ্ধবিমান পাঠাতে হবে। শুধু কি তাই? প্রয়োজনে রুশ ফাইটার বিমানকে গুলি করে নামাতে হবে। এমন যদি হয়, তাহলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হতে হবে ন্যাটোর, যা তাদের কাম্য নয়।

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে পড়ছে। রাশিয়ার আগ্রাসনে ইউরোপীয় দেশগুলো উদ্বিগ্ন; যদিও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা ছাড়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে সাহায্য করতে অন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলো। তবে চূড়ান্ত পর্বে গিয়ে তারা কী করে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে জরুরি বৈঠকে বসতে পারে ন্যাটো জোটের দেশগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সে সময় ইউরোপ সফরে থাকবেন। তিনিও বৈঠকে যোগ দেবেন। সে বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়, তার ওপর নির্ভর করছে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি। প্রশ্ন হচ্ছে, ইউক্রেনের ঘটনাপ্রবাহকে কেন্দ্র করে পরাশক্তির দেশগুলো কি ‘ঠান্ডাযুদ্ধ’র সেই যুগেই ফিরে যাচ্ছে? আগের মতোই সেসব দেশের মধ্যে শক্তির ভারসাম্যের নতুন কোনো সমীকরণ রচিত হবে না তো? ১৯৯০ সালে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্টের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘ঠাণ্ডাযুদ্ধে’র অবসান হলেও বিশ্বজুড়ে শক্তির লড়াই শেষ হয়নি। সে সময় ঠাণ্ডাযুদ্ধ অবসানের পূর্বশর্ত হিসাবে ‘ওয়ারশ প্যাক্ট’ভুক্ত দেশগুলোর জোট ভেঙে গেলেও ন্যাটো জোট ভাঙেনি। ঠান্ডাযুদ্ধের অবসানের পর যুক্তরাষ্ট্রের একক মেরুকরণ শক্তির প্রদর্শন হতে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের লেজুড় হয়ে ব্রিটেনসহ ন্যাটো জোটভুক্ত ইউরোপীয় কিছু দেশের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া বিশ্ববাসী দেখেছে। ইরাক-কুয়েত সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ‘গালফ ওয়ার’ হয়েছে, ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণ করে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আরও কত লাখ মানুষকে যে ঘরছাড়া করেছে সে হিসাব কে রাখে? এবার বুঝি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক শক্তির মেরুকরণের অবসান হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’র কেউ কেউ ইতোমধ্যেই বলতে শুরু করে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একক শক্তি প্রদর্শনের পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে। পুতিনের সাম্প্রতিক উত্থান যেন গত তিন দশকের যুক্তরাষ্ট্রের একক শক্তির ভাসাম্যের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের বাড়াবাড়ি রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে। এ দুটো দেশ জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যও বটে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। ইউক্রেন ইস্যুতে যদিও চীন প্রকাশ্যে রাশিয়াকে সমর্থন জানায়নি, তবে এটি সহজে অনুমান করা যায়, প্রয়োজনে চীন রাশিয়ার পাশেই থাকবে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর জাতিসংঘে যে কয়টা ইস্যুতে ভোটাভুটি হয়েছে, তাতে চীনের ভূমিকা লক্ষ করলেই এটি বোঝা যাবে। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চীনের পেছনে লেগে আছে, তাতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্বই শুধু বাড়েনি, চীনকে রাশিয়ার দিকে ঠেলেও দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার ওপর যে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করছে, তাতে রাশিয়ার জন্য সাময়িকভাবে সমস্যার সৃষ্টি হলেও তা তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয়। অর্থনৈতিক অবরোধকালীন চীন রাশিয়াকে সহযোগিতা করে যাবে, এটি প্রায় নিশ্চিত। তাছাড়া রাশিয়া থেকে ইউরোপে যে গ্যাস সরবরাহ করা হতো তা যদি বন্ধও হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে রাশিয়ার নতুন মার্কেট খুঁজে পেতে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। রাশিয়া থেকে চীন ছাড়াও সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস ক্রয় করার বিষয়ে ভারত ইতোমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

ইউক্রেন পরিস্থিতির দ্রুতই পরিবর্তন হচ্ছে। কখন যে কী হয়ে যায় বলা মুশকিল। প্রায় প্রতিদিনই প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হচ্ছে। ইউক্রেন সংকটে ইউরোপীয় দেশগুলো যে রাশিয়াকে সহজে ছাড় দেবে না তা লক্ষণীয়। কিয়েভ দখলের ঠিক আগ মুহূর্তে ইউরোপের দেশগুলো মনে হয় নড়েচড়ে বসেছে। এরই মধ্যে ইউরোপের তিনটি দেশ পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক ও স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিয়েভ সফর করেছেন। ইউক্রেনকে কীভাবে আরও বেশি সাহায্য করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যে আগামী সপ্তাহে মিটিং হবে, তার ঠিক পূর্বক্ষণে তাদের এ সফর গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই। তবে তাদের এ মিটিং রাশিয়ার মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে হয় না।

এ কথা ঠিক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ইউরোপের কোনো কোনো দেশের সাদা চামড়ার মানুষ মুখে যত মানবতার কথা বলুক, আদতে তারা আজও বর্ণবাদী রয়ে গেছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর এযাবৎ ২০ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এসব মানুষ পোল্যান্ডসহ আশপাশের ইউরোপীয় দেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো এ উদ্বাস্তুদের সাদরে গ্রহণ করে নিলেও অতীতে অশ্বেতাঙ্গদের বেলায় ঠিক উল্টো কাজটি করেছিল তারা। অতীতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী সিরিয়া-আফগানিস্তানে বোমাবর্ষণ করে যখন দেশ দুটোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, তখন সে দেশের বাস্তুচ্যুত মানুষদের আশ্রয় দিতে ইউরোপীয় এ সাদা চামড়ার মানুষদের ছিল যত আপত্তি। রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেনের নাগরিকদেরও বর্ণবাদী আচরণ করতে দেখা গেছে। ভারতীয় শিক্ষার্থীসহ এশিয়া-আফ্রিকা মহাদেশের নাগরিকদের শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইউক্রেনীয়দের যে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছে, তার ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। সাদা চামড়ার মানুষ ছাড়া এশিয়ান ও আফ্রিকার মানুষের বাস, ট্রেন এবং অন্য কোনো পরিবহনে উঠতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাদের বর্ণবাদী এ আচরণ ছিল মর্মান্তিক ও অমানবিক।

রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে সর্বশেষ ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে, এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো হলো-ইউক্রেনের কোনো আন্তর্জাতিক সংগঠনে যোগ না দেওয়া, অস্ত্র ত্যাগ করা, লুহানস্ক ও দোনেস্ক অঞ্চলের স্বাধীনতা এবং রুশ ভাষাকে ইউক্রেনের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া। এ প্রস্তাগুলোর মধ্যে ‘অস্ত্র ত্যাগ’ করা ও ‘লুহানস্ক ও দোনেস্ক অঞ্চলের স্বাধীনতা’ মেনে নেওয়া ইউক্রেনের জন্য কঠিন হবে। রাশিয়ার প্রস্তাব মেনে না নিলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। রাশিয়া যে কোনো মূল্যেই হোক কিয়েভ দখল করে সেখানে রুশপন্থি সরকার বসাবে। কিয়েভ যদি হাতছাড়া হয়ে যায় এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যদি রাশিয়ার কাছে ধরা না দেন, তাহলে হয়তো তিনি দেশ ছেড়ে ইউরোপের কোনো একটি দেশে আশ্রয় নিয়ে প্রবাস থেকে সরকার চালানোর চেষ্টা করবেন। ইউক্রেন সেনাবাহিনী তখন জেলেনস্কির সাপোর্টারদের সঙ্গে নিয়ে Conventional war ছেড়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে Unconventional warfare বা গেরিলা যুদ্ধ শুরু করবে; অর্থাৎ ইউরোপের বুকে ইউক্রেন বসনিয়া-হার্জেগোবিনার মতো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে। রাশিয়া জড়িয়ে পড়বে আফগানিস্তানের মতো আরও একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে।

একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম