লুটপাট, বিলাসিতা ও অপচয় অমার্জনীয় অপরাধ

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ইউনাইটেড ন্যাশন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (UNEP) ও ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রণীত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার জরিপ মোতাবেক বিশ্বে প্রতিবছর উৎপাদিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন খাবার অপচয় হয় বা নষ্ট করে ফেলা হয়। এ অব্যবহৃত বা অপচয়কৃত খাবারের ৪৫ শতাংশ হলো শাকসবজি ও ফলমূল, ৩৫ শতাংশ মাছ ও সামুদ্রিক খাবার, ৩০ শতাংশ খাদ্যশস্য, ২০ শতাংশ দুগ্ধজাত খাবার এবং ২০ শতাংশ মাংস। এ অপচয়ের মূল কারণ লুকিয়ে আছে খাদ্য উৎপাদনে বা খাদ্যের সুষম ব্যবহার পদ্ধতিতে। টাকার অঙ্কে এ অপচয়ের পরিমাণ প্রায় এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ক্যালরির হিসাবে প্রতি চার ক্যালরির এক ক্যালরির সমপরিমাণ খাদ্য অপচয় হয়। আমরা এমন এক বিশ্বে বসবাস করছি যেখানে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ক্ষুধা ও অপুষ্টি এক চিরন্তন সত্য, খরা, যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে মাইগ্রেশন বা অভিবাসন, খাদ্যসামগ্রীর ঊর্ধ্বমূল্য, সামাজিক অস্থিরতা, বঞ্চনা, বৈষম্যমূলক বণ্টন ব্যবস্থার কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে এবং মৃত্যুবরণ করছে, সেই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের এ অসহনীয় অপচয় মর্মান্তিক ও দুর্ভাগ্যজনকই শুধু নয়, নৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও এক জঘন্য মানবিক অপরাধ।
প্রতি বছর শিল্পোন্নত দেশগুলোতে যে পরিমাণ খাদ্যের অপচয় হয়, তা সাব সাহারা অঞ্চলে উৎপাদিত মোট খাদ্যের প্রায় সমান, অঙ্কের হিসাবে যা ২৩০ মিলিয়ন টন। বিশ্বব্যাপী যত খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় তার অর্ধেক অর্থাৎ ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন খাদ্য বিনষ্ট হয় নতুবা অপচয় হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ৩০-৪০ শতাংশ খাদ্যের অপচয় হয় যা গড়ে প্রতি মাসে প্রতিজনের ২০ পাউন্ড খাবারের সমান। আমেরিকানরা প্রতিবছর ১৬৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের খাবার ফেলে দেয় বা ধ্বংস করে। আপনারা শুনে আশ্চর্য হবেন, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ফলমূল ও শাকসবজি বাজারে না পাঠিয়ে খেতেই ফেলে রাখা হয় বা নষ্ট করে ফেলা হয়। দেখতে নিখুঁত, আকর্ষণীয় ও কসমেটিক মানের না হওয়ার কারণে ক্রেতারা এসব শাকসবজি ও ফলমূল কিনতে চায় না বা কেনে না বলে কৃষকরা এসব ফলমূল ও শাকসবজি জমিন থেকে তোলে না বা জমিনেই নষ্ট করে ফেলে। যুক্তরাজ্যে ২০০৯ সালে যে পরিমাণ শস্য ও রুটি ফেলে দেওয়া হয়েছে বা অপচয় করা হয়েছে, তা দিয়ে বিশ্বের তিন কোটি মানুষের অপুষ্টি দূর করা যেত। বিশ্বে প্রতিদিন প্রতিজনের জন্য ৪ হাজার ৬০০ কিলোক্যালরির সমপরিমাণ ফসল ফলানো হয়। কিন্তু গড়ে তার অর্ধেকেরও কম ব্যবহৃত হয় বা খাওয়া হয়, বাকি অংশ অপচয় হয় বা নষ্ট হয়। উত্তর আটলান্টিক ও উত্তর সাগরে ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন (২৩ লাখ) টন ধৃত মাছ ফেলে দেওয়া হয় বা নষ্ট করে ফেলা হয়। ইউরোপে যত মাছ ধরা হয় তার ৪০-৬০ শতাংশ ফেলে দেওয়া হয় এ কারণে যে, সেগুলো সঠিক আকার-আকৃতির হয় না, ভিন্ন প্রজাতির হয়, নতুবা কোনো না কোনোভাবে ত্রুটিযুক্ত হয় যা বাজারে পাঠানো বা খাওয়ার মানসম্মত হয় না। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব মোতাবেক, বিশ্বে যে পরিমাণ খাবারের অপচয় হয় তা দিয়ে ৩০০ কোটি অভুক্ত মানুষের খাবারের সংস্থান করার পরও উদ্বৃত্ত খাবার দিয়ে বিশ্বের দরিদ্র দেশের মানুষের ১৩০ শতাংশ পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা যেত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার অন্য এক হিসাবমতে, বিশ্বের উৎপাদনশীল জমিতে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাবার পরিত্যক্ত হয় বা নষ্ট করা হয়, তাতে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন গ্রিন হাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়, নষ্ট হয় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন হেক্টর জমি যা বিশ্বের ফসল উৎপাদনযোগ্য জমির পরিমাণের প্রায় ২৮ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের এক হিসাবে বলা হয়েছে, বিশ্বে উৎপন্ন মোট গ্রিন হাউজ গ্যাসের ১০ শতাংশ উৎপন্ন হয় এমন সব খাবারের উৎপাদন, সরবরাহ ও সংরক্ষণের জন্য, যা আদৌ খাওয়া হয় না।
২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট লোকসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন অর্থাৎ ৯৬০ কোটি। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ আসবে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে এবং অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান লোকসংখ্যার অর্ধেক আসবে শুধু আফ্রিকা থেকে। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা ভেবে কূল পাচ্ছেন না, এসব মানুষের খাবারের সংস্থান হবে কীভাবে! জাতিসংঘের মতে, এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাড়তি খাদ্য উৎপাদনের দবকার হবে না। বিশ্বব্যাপী খাবারের যে অপচয় হয় তা রোধ করা গেলে এবং সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করা গেলে বিশ্বের কাউকেই না খেয়ে থাকতে হবে না।
আগেই বলেছি, খাবারের অসহনীয় অপচয়ের বেশিরভাগ হয়ে থাকে উন্নত বিশ্বে। ইওরোপ ও উত্তর আমেরিকায় প্রতিটি মানুষ প্রতিবছর ৯৫-১১৫ কিলোগ্রাম খাবার অপচয় করে। সাব সাহারা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবছর প্রতিজনের এ অপচয়ের পরিমাণ ৬-১১ কিলোগ্রাম। অনুন্নত দেশগুলোতে ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ উৎপাদন পদ্ধতি, অবকাঠামোগত অব্যবস্থা, সেকেলে যন্ত্রপাতির ব্যবহার, সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার জন্য খাবারের অনেক অপচয় হয়। অনুন্নত দেশগুলোর বেশিরভাগ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটালেও সম্পদশালী সম্প্রদায়ের খাবার অপচয় উন্নত দেশের মানুষের চেয়ে নেহায়েত কম নয়।
পৃথিবীর ২৫ শতাংশ খাবারের অপচয় বন্ধ করা গেলে, তার জন্য ব্যবহৃত নদী, হ্রদ, কৃষির জন্য সরবরাহকৃত যে পরিমাণ পানির সাশ্রয় হতো, তা দিয়ে বিশ্বের ৯০০ কোটি মানুষের প্রত্যেককে ২০০ লিটার পানি সরবরাহ করা যেত।
প্রতি বছর ১ কোটি ৫০ লাখ শিশু মারা যায় ক্ষুধার্ত অবস্থায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ক্ষুধার্ত। প্রতি ৩.৬ সেকেন্ডে কোনো একজন মারা যায় ক্ষুধার তাড়নায়। আমাদের উপমহাদেশ এবং আফ্রিকায় বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষুধার্ত মানুষের বসবাস। ৯০-এর দশকে দশ কোটির বেশি শিশু ক্ষুধার কারণে মৃত্যুবরণ করেছিল। এ লেখাটি পড়তে পড়তেই কম করে হলেও ২০০ মানুষ ক্ষুধায় মারা যাবে এবং বছরান্তে এ সংখ্যাটি দাঁড়াবে ৪০ লাখে। পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। বিশ্বব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, অপুষ্টিতে আক্রান্ত এসব মানুষের ৮০ শতাংশ শিশু ও মহিলা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোর প্রায় ৫০ কোটি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত। প্রতি বছর ৫ বছরের কম বয়স্ক প্রায় ৮৫ লাখ শিশু নামেমাত্র বেঁচে থাকলেও উপবাসের কারণে এরা কোনো না কোনো সময় মৃত্যুবরণের জন্য দিন গোনে।
ছোটকালে এ ভূখণ্ডে যে অসহনীয় দারিদ্র্য দেখেছি, সে রকম দারিদ্র্য এখন হয়তো নেই। তারপরও এখনো দেশের লাখো মানুষ প্রতিনিয়তই অনাহারে-অর্ধাহারে কাটায়। এ পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশে খাবারের অপচয় নেহায়েত কম নয়। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও বিয়ে-শাদি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ধনবানদের হাজার হাজার লোকের মেজবান খাওয়ানোর আয়োজনে গেলে অপচয়ের মাত্রাটা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। অনেকেই প্লেট ভর্তি করে পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, খাসি বা গরুর মাংস, কাবাব, সালাদ-সবই নেয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব খেয়ে শেষ করতে পারে না। বেশিরভাগ খাবারই ঝুটা হিসাবে বর্জন করে উঠে যায়। এ ঝুটা বর্জ্যরে জন্য হয়তো অপেক্ষা করে থাকে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা অসংখ্য অসহায়, বঞ্চিত ছোট ছেলেমেয়ে ও মানুষ। এসব ঝুটা খাবারের জন্য ক্ষুধার্ত ছেলেমেয়েদের মধ্যে কাড়াকাড়ি হতে আমি স্বচক্ষে দেখেছি এক সময়। এসব করুণ দৃশ্য আমাদের নজর কাড়ে বটে, কিন্তু বিবেককে নাড়া দেয় না।
এ বিশ্বায়নের যুগে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সরকার খেটে খাওয়া অসহায় দরিদ্র মানুষের চেয়ে ধনাঢ্য অভিজাত সম্প্রদায়ের সুযোগ-সুবিধা ও সেবার প্রতি বেশি মনোযোগী হয়। এ ধনাঢ্য সম্প্রদায়ের সম্পদ লুট, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ আহরণে সরকার সহায়ক শক্তির ভূমিকা পালন করে বা নিষ্ক্রিয় থাকে। ফলে শ্রেণিবৈষম্য বাড়ে, ধনী আরও ধনী হয়, গরিব সর্বস্ব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়। সম্পদশালীরা বছরের পর বছর ধরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে আর গরিবরা সর্বস্ব হারিয়ে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ২০১৭ সালে বিশ্বে যে পরিমাণ সম্পদের পরিবৃদ্ধি হয়েছে, তার ৮২ শতাংশের মালিক বনে গেছে বিশ্বের এক শতাংশ ধনকুবের এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৩ শত ৮০ কোটি লোকের ভাগ্যে এ সম্পদের কিছুই জোটেনি। ২০১৭ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ধনকুবের (Billionaire) সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে ৩ হাজার ধনকুবের রয়েছেন। বিশ্বে প্রতি দুদিনে একজন করে বিলিয়ন ডলারের মালিক বনে যাচ্ছেন। এ সুপার-ধনাঢ্য গোষ্ঠী তৈরিতে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানের একটিতে রয়েছে। বাংলাদেশের এসব মহাসৌভাগ্যবান ধনকুবেরদের শান-শওকত, আরাম-আয়েশ, বিলাসিতা, সম্পদের অপচয় দেশবাসীর নজর কাড়ে।
অপচয় রোধের কোনো ম্যাজিক ফর্মুলা নেই। আমার দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণ সহমর্মিতা ও উপলব্ধির ব্যাপার। হয়তো তা ব্যক্তিগত নতুবা সমষ্টিগত। তবে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা অপচয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মানবিক গুণাবলির অধিকারী কোনো মানুষের পক্ষে অনিয়ন্ত্রিত ও বেপরোয়া জীবনযাপন সম্ভবপর নয়। বিবেকের তাড়নায় সে মানুষ সব রকম অপচয় রোধে সদা সজাগ থাকবে। যে কোনো ধরনের অপচয় বা অপব্যবহার শুধু অনৈতিক নয়, অমার্জনীয় অপরাধও বটে। অপচয়ের সঙ্গে এক ধরনের স্বার্থপরতা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা জড়িত আছে। ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় বড় ধরনের গুনাহর কাজ। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা বনি ইসরাঈলের ২৬ এবং ২৭ নম্বর আয়াতে বলেন, ’আত্মীয়স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপচয় করো না। নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ উন্নত দেশগুলো অপচয়ের দিক থেকে নিঃসন্দেহে অগ্রগামী। কিন্তু মুসলিম দেশগুলোও অপচয়ের ক্ষেত্রে কোনোমতেই কম যায় না। মুসলিম দেশে কয়জন মানে অপচয় রোধের আল্লাহর এ আদেশ? বেশিরভাগ মানুষ আল্লাহর আদেশ মানে না বলে গরিব-দুঃখীদের বঞ্চিত রেখে যখন তখন বেহিসাবে অপচয় করছে, পাপে মগ্ন হচ্ছে। ব্যক্তি মানুষের অপচয়ের কথা না হয় না-ই বললাম। পৃথিবীর অনেক তথাকথিত মুসলিম দেশের রাজা-বাদশাহ ও শাসকরা নিজেদের ও পরিবারের আরাম-আয়েশের জন্য প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেন। আমরা দৈনন্দিন খবরেই এসব দেখতে পাই। বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতা করা সম্পূর্ণ আল্লাহর আদেশের পরিপন্থি। কথিত আছে, মুসলমান নামধারী এক রাজকুমার ৪৫২ মিলিয়ন ডলার দিয়ে একটি ইয়ট (প্রমোদতরী), ৪৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা মহিলার একটি চিত্র এবং নিজের দেশে অসংখ্য প্রাসাদ থাকা সত্ত্বেও ৩০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ফ্রান্সের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এক রাজপ্রাসাদ কিনেছেন। আরব দেশের অসংখ্য ধনকুবের এয়ারবাস ৩৮০ বা সমমানের বিলাসবহুল ব্যক্তিগত বিমানে চড়েন, কোটি কোটি টাকার অসংখ্য ব্র্যান্ড গাড়ি চালান। অথচ তাদের দেশের আশপাশে, এশিয়া ও আফ্রিকায় শিশু-মহিলাসহ লাখো মানুষ প্রতিনিয়তই খরা, অনাবৃষ্টি, যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ, রোগ-বিমারি, খাবারের অভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছে। এসব অবাধ্য ও স্বেচ্ছাচারী বান্দা, রাজা-বাদশাহ, রাজপুত্র-রাজকন্যা, লুটেরা শাসক, ক্ষমতাধর ব্যক্তি, যারা এ পৃথিবীতে জনগণের লাখো কোটি টাকা লুটপাট করে আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতায় মগ্ন আছেন, তাদের এ অমার্জনীয় অপরাধের জন্য জনগণ ও আল্লাহর সামনে একদিন অবশ্যই দাঁড়াতে হবে এবং জবাবদিহি করতে হবে।
ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
drmuniruddin@gmail.com