১৪ বছর পর বাড়ি ফিরলেন হারিয়ে যাওয়া রাবেয়া
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
১৪ বছর পর ঘরে ফিরেছেন রাবেয়া বেগম। ১১ সন্তানের এই জননীর হঠাৎ বাড়ি ফেরায় পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা। হারিয়ে যাওয়া রাবেয়া বেগম (৮৫) দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে ১১ সন্তানকে পেলেও ফিরে পাননি নিজের স্বামীকে। চার মাস আগে তিনি মারা যান। নাটোর সদরের ইসলাবাড়ি খামারের বাসিন্দা কৃষক মুসা মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া। ছয় মেয়ে ও পাঁচ ছেলের মা তিনি। ২০০৮ সালে নিজের বাড়ি থেকে পাশের গ্রাম ছোট হরিশপুরে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি হারিয়ে যান। আত্মীয়স্বজন, ছেলেমেয়ে, জামাই ও নাতিরা দিনের পর দিন তাকে খুঁজেছেন পথ-প্রান্তর থেকে শুরু করে দেশের নানা স্থানে। হাসপাতাল, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রমও বাদ পড়েনি। কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এক সময় সবাই মনে করেছেন হয়তো তিনি মারা গেছেন। ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে ১৪ বছর। তার সব ছেলেমেয়ের বিয়েও সম্পন্ন হয়েছে। একাধিক নাতিও বিয়ে করেছেন। বৃদ্ধার শতবর্ষী স্বামী মুসা মিয়া স্ত্রীর দীর্ঘ অপেক্ষার পর মাত্র চারমাস আগে মারা গেছেন। এর মাঝেই গত সপ্তাহে পিরোজপুরের এক ইউটিউবার হঠাৎ এক বৃদ্ধার কিছু ছবি ও ভিডিও আপলোড করে জানান, এই বৃদ্ধা তার বড় চার মেয়ে মনোয়ারা, রেনুয়ারা, রাশিদা ও মর্জিনা এবং বড় তিন ছেলে ময়েন উদ্দিন, আয়েন উদ্দিন ও বোরহান উদ্দিনের নাম বলতে পারেন। তবে তিনি তার বাড়ির কোনো ঠিকানা বলতে পারেন না। ফিরতে চান সন্তানদের কাছে। গত ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার বোতলা গ্রামে। বোতলা বাজারের পাশে তাকে একটি ছোট্ট মাচার ঘর করে দিয়েছেন স্থানীয়রা। তিন বেলা খেতে দেন হেদায়তুল ইসলাম আকন্দ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। প্রতিবেশীরাও বাড়িতে ভালো রান্না হলে তাকে দিয়ে যেত।
হেদায়তুল জানান, ঠিক ১০ বছর দুই মাস আগে নিজের মা মারা যাওয়ায় তিনি গরিব মানুষের জন্য খাবার আয়োজন করেন। সেখানে হাজির হন এই বৃদ্ধা। তারপর আর কোথাও তিনি যাননি। তাই তারাই মাথা গোঁজার মতো ছোট্ট একটু ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। শনিবার ইউটিউব ফেসবুকে এসব তথ্য, ছবি ও ভিডিও দেখে বৃদ্ধার বড় নাতি নয়ন দাদিকে চিনতে পারেন। বৃদ্ধার বড় ছেলে ময়েনও মাকে চিনতে পারেন। তাই পরের দিন রোববার ভাণ্ডারিয়ায় ছুটে যান ৩ ছেলে ও নাতি হৃদয় মাহমুদ। সেখান থেকে বৃদ্ধাকে নিয়ে সোমবার তারা বাড়ি ফিরেন।