শতফুল ফুটতে দাও
স্বাধীনতা কাম্য, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়
ড. মাহবুব উল্লাহ্
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানের পর দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন গোটা পৃথিবীকে তাদের প্রভাবিত এলাকা হিসাবে ভাগ করে নেয়। গোটা ইউরোপ মহাদেশ বিভক্ত হয়ে পড়ে পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপে। পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো সোভিয়েত প্রভাব বলয়ে অঙ্গীভূত হয়। যুগোস্লাভিয়া ও রোমানিয়া ব্যতিরেকে অন্যান্য পূর্ব ইউরোপীয় দেশ যেমন-পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া সরাসরি সোভিয়েত প্রভাব বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়। জার্মানিকে দুটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত করা হয়। সাধারণ আলোচনায় এই রাষ্ট্র দুটিকে বলা হতো পশ্চিম জার্মানি ও পূর্ব জার্মানি।
আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিম জার্মানির নাম ছিল ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানি এবং পশ্চিম জার্মানির নাম ছিল জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক। বিখ্যাত জার্মান শহর বার্লিনকেও বিভক্ত করা হয়। পশ্চিম বার্লিন ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানির অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পূর্ব বার্লিন জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকের নিয়ন্ত্রণভুক্ত হয়। যুগোস্লাভিয়ার নেতা মার্শাল টিটো ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্ব। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তার নেতৃত্বে যুগোস্লাভিয়ায় পার্টিসান আর্মি হিটলারের আগ্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে সফলভাবে প্রতিরোধ চালিয়ে যায় এবং পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও সোভিয়েত প্রভাব বলয় থেকে যুগোস্লাভিয়াকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়।
অন্যান্য পূর্ব ইউরোপীয় দেশ যুগোস্লাভিয়ার মতো জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সফল হয়নি। কারণ এসব দেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলো ছিল দুর্বল। ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে স্বকীয় শক্তিতে এরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি। এদেরকে সোভিয়েত রেড আর্মির ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। জার্মান দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজ নিজ দেশে রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখার মতো হিম্মত এই পার্টিগুলোর ছিল না। এ কারণে এসব দেশে সোভিয়েত রেড আর্মি থেকে যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো নিয়ে ন্যাটো জোট গড়ে ওঠে। ন্যাটো নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের সংক্ষিপ্ত রূপ। এর বিপরীতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো নিয়ে গঠিত হয় ওয়ারশ অফ প্যাক্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তরকালে প্যাক্ট দুটির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো প্রায় সব সময় মুখোমুখি অবস্থানে থাকত। ইউরোপে সবসময় দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছে যুদ্ধের উন্মাদনা নিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু যুদ্ধজোট গড়ে তোলে। এগুলোর মধ্যে ছিল বাগদাদ প্যাক্ট, সিয়াটো এবং আনজুস। পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পৃথক সামরিক চুক্তি ছিল। এর নাম ছিল পাক আমেরিকান মিলিটারি ট্রিটি।
একথা সত্য যে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর আজকের দিনটি পর্যন্ত পৃথিবীতে আর কোনো মহাযুদ্ধ হয়নি। প্রথম মহাযুদ্ধের সমাপ্তি এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সূচনায় সময়ের পার্থক্য ছিল মাত্র ২১ বছর। এই ভাবনা থেকে এটুকু বোঝা যায় শীতল যুদ্ধের সময়টা যুদ্ধজনিত অস্থিরতার মধ্য দিয়ে কাটলেও সর্বাত্মক যুদ্ধ হয়নি। আমরা যদি ধরে নেই শীতল যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে গত শতাব্দীর শেষ দশকে, তাহলে দেখা যাবে এ সময়ে বেশ কটি আঞ্চলিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, কোরিয়ার যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, কম্বোডিয়ার যুদ্ধ।
এছাড়া সুয়েজ খালের ওপর অধিকার এবং ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়েও একাধিক যুদ্ধ হয়েছে। এসব যুদ্ধ ছাড়াও অন্তত দুটি আঞ্চলিক যুদ্ধের কথা বলা যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৬৫-তে পাক-ভারত যুদ্ধ এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধ। কোরিয়া ও ভিয়েতনামের যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে অথবা স্থায়ী যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হতে হয়েছে। যেসব আঞ্চলিক যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি অংশগ্রহণ করেনি, সেসব যুদ্ধেও পরাশক্তি দুটির ছায়া আমরা লক্ষ করেছি। এরা নিজেরা যুদ্ধ করেনি বটে; কিন্তু অন্য রাষ্ট্রগুলো তাদের হয়ে যুদ্ধ করেছে। এজন্য এই যুদ্ধগুলোকে বলা হয় প্রক্সিওয়ার।
আফগানিস্তানের যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল শীতল যুদ্ধের শেষদিকে এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরে এলো ২০২১ সালে। শীতল যুদ্ধের সময় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল ষাটের দশকে কিউবায় সোভিয়েত মিসাইল ঘাঁটিকে কেন্দ্র করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবায় সোভিয়েত মিসাইলের অবস্থান তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করল। কিউবায় সোভিয়েত মিসাইল ঘাঁটিকে কেন্দ্র করে তৃতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হওয়ার বিপদ দেখা দিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবা থেকে মিসাইলগুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে উত্তেজনা প্রশমিত হয়।
তবে উত্তেজনায় প্রশমন ঘটতে পেরেছিল লোকচক্ষুর আড়ালে বড় ধরনের সমঝোতার মাধ্যমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কে মিসাইল ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। কিউবার মিসাইল সংকটকে কেন্দ্র করে সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শর্ত দিল তুরস্ক থেকে মার্কিন মিসাইল স্থাপনা উঠিয়ে নিতে হবে। শেষ পর্যন্ত দুই পরাশক্তির মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে আমাদের এই পৃথিবী তৃতীয় মহাযুদ্ধ থেকে রক্ষা পেল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের মূল্যবান ভূমিকা ছিল।
এ থেকে প্রমাণিত হয় বিবেকের অতি উচ্চস্তরে অবস্থানকারী একজন দার্শনিক কিংবা একজন বিজ্ঞানী পরাশক্তিগুলোকে সংঘাতের পথ ছেড়ে শান্তির পথ অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আমরা আজও জানি না কিউবার মিসাইল সংকটের আড়ালে আর কী ছিল যা বিশ্ববাসীর দৃষ্টিগোচর হয়নি। হতে পারে তুরস্ক থেকে মার্কিন মিসাইল সরিয়ে নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করার জন্যই এক ধরনের নাটকের আশ্রয় নিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
সোভিয়েত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পর নামকরা জাপানি বংশোদ্ভূত দার্শনিক ফুকুইয়ামা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন পৃথিবীতে আদর্শের দ্বন্দ্ব আর থাকবে না। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার কল্যাণে বিশ্ববাসী একটি শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তুলতে পারবে। কিন্তু ফুকুইয়ামার ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে সঠিক বলে প্রমাণিত হলো না। ইরাকের সাদ্দাম হোসেন মানববিধ্বংসী মারণাস্ত্র মজুত করেছেন এই অজুহাত তুলে ইরাকের ওপর আগ্রাসন চালানো হয়। সমগ্র ইরাক কার্যত মার্কিন উপনিবেশে পরিণত হয়। ইরাকে শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্বসহ বেশ কয়েক ধরনের ধর্মীয় দ্বন্দ্বের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
ইরাকে ইসলামিক স্টেটের অভ্যুদয় ঘটে। প্রাচীন সভ্যতার দেশ ইরাক থেকে মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী লুট হয়ে যায়। ইরাক পরিণত হলো মৃত্যুপুরিতে। প্রায় একইভাবে কোথাও গণতন্ত্রের অজুহাতে এবং কোথাও স্বৈরশাসকের উচ্ছেদের নামে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মিসর, সিরিয়া ও লিবিয়ায় নেমে এলো ভয়াবহ অত্যাচার, নিপীড়ন ও ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত। এসব দেশের কোথাও এখন গণতন্ত্র নেই। বিশ্বব্যবস্থাকে এমন একটা অবস্থার দিকে ঠেলে নেওয়া হচ্ছে যেখানে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং শান্তির সুবাতাসের প্রবাহ চিরতরে হারিয়ে যায়।
পৃথিবীতে এখন আরও এক ধরনের রাজনৈতিক বিপদ আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। এই বিপদ হলো জনতুষ্টিবাদের বিপদ। জনতুষ্টিবাদী ভাবধারা যখন মানুষের মননে ও মগজে প্রোথিত হয়ে যায়, তখন যুক্তি বা সুচিন্তা অপসৃত হয়। পাশ্চাত্য জগৎ এখন জনতুষ্টিবাদের বিপদ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছে। অতিসম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি, ইউরোপে কোভিডের টিকার বিরুদ্ধে বড় ধরনের জনবিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ খুব শান্তিপূর্ণ ছিল না। পুলিশ অনেক বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। এর পাশাপাশি আমরা দেখতে পাই, জনতুষ্টিবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো পাশ্চাত্যে তাদের সমর্থক গোষ্ঠী ক্রমান্বয়ে বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এই ভ্রান্ত রাজনৈতিক দর্শনকে প্রতিহত করতে না পারলে আগামী দিনের পৃথিবীতে গণতন্ত্রের চৌহদ্দি বহুলাংশে সীমিত হয়ে পড়বে।
আমরা এখন এক অস্থির পৃথিবীতে বাস করছি। গত কয়েক সপ্তাহজুড়ে ইউক্রেনে রুশ সামরিক হামলা অবশ্যম্ভাবী বলে পাশ্চাত্যের নেতারা সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন। এই দেশগুলো নিজেরাও সমর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল রাশিয়া দু-একদিনের মধ্যে ইউক্রেনে আক্রমণ চালাবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলে দিলেন রাশিয়া যুদ্ধ করতে যাচ্ছে না। সংবাদপত্রের পাতায় রুশ ট্যাংক বহরের ছবি ছাপানো হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হলো, এটি ছিল রুশ সৈন্যদের একটি শীতকালীন মহড়া মাত্র।
সব হিসাব-নিকাশ ভুল প্রমাণিত হওয়ায় পাশ্চাত্যের দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থার যোগ্যতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইউক্রেন সীমান্তে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত সোমবার এই বৈঠকে ইউক্রেনের রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান পুতিন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা ও সংঘাতের মধ্যে পুতিনের এই ঘোষণাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করার পুতিনের পরিকল্পনার কথা গত সোমবার ক্রেমলিন এক বিবৃতি দিয়ে নিশ্চিত করেছে। তারা বলেছে, এই স্বীকৃতির বিষয়টি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজকে জানিয়ে দিয়েছেন পুতিন।
এতদিন আমরা জানতাম আন্তর্জাতিক আইনে বিচ্ছিন্নতাবাদ কোনোক্রমেই অনুমোদিত হয় না। বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বিচ্ছিন্নতাবাদের পথে হাঁটছেন এমন ধরনের কোনো ইঙ্গিত পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের আগে দেননি। কারণ তিনি জানতেন শেষ পর্যন্ত যদি কোনো সমঝোতা হয় তাহলে সেটা জাতিসংঘ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই জাতিসংঘ বিচ্ছিন্নতাবাদকে অনুমোদন দেবে না। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী গণহত্যার অভিযান শুরু করার পর বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশে আর কোনো বাধা থাকল না। কিন্তু পুতিন যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তার পরিণতি বৈশ্বিক পর্যায়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ক্রিয়াশীল থাকবে।
এখনো পৃথিবীর অনেক দেশে বেশকিছু নিপীড়িত জাতি স্বাধীনতা চায়। তারা দীর্ঘদিন ধরে এর জন্য যুদ্ধ করছে। দৃষ্টান্ত হিসাবে আমরা মিয়ানমারের নয়টি জাতির কথা বলতে পারি। ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও তুরস্ক থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য যুদ্ধ করছে কুর্দিরা। কুর্দিরাও বিচ্ছিন্নতার কথা বলছে না।
কারণ তারা জানে বিচ্ছিন্নতার দাবি তুললে তা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। দেখা যাচ্ছে, এখনো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নিপীড়িত জাতিগুলো স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য প্রাণপণ লড়াই করছে। জাতিসংঘ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করে, কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করে না। এখন যেসব দেশ অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাদের সর্বতোভাবে চেষ্টা করতে হবে যে তারা পূর্ণ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার চায়, বিচ্ছিন্নতাবাদ তাদের কাছে পরিত্যাজ্য।
ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ