Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

একদিনের ভাষাপ্রেমে আবদ্ধ থাকলে চলবে না

Icon

মোনায়েম সরকার

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একদিনের ভাষাপ্রেমে আবদ্ধ থাকলে চলবে না

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রাম-জেল-জুলুম সহ্য করে ধীরে ধীরে তিনি পূর্ব বাংলার জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্ত বিজয়ে উপনীত হন। বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙালি বঙ্গবন্ধুর আপসহীন নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করে বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করেন।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু কলকাতা থেকে ঢাকা শহরে এসে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি পাকিস্তানের কাছে এমন একটি সমাজ কাঠামো প্রত্যাশা করেছিলেন, যেখানে কোনো শোষণ-বঞ্চনা থাকবে না, একজন মানুষ কোনো কারণে আরেকজন মানুষকে জুলুম-নিপীড়ন করবে না। কিন্তু সদ্য স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পরই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা পূর্ব বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) জনগণের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে। আহমদ রফিক যথার্থই বলেছেন-রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনই ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম সরব প্রকাশ। পুরোনো সম্প্রদায়ভিত্তিক অনুভব থেকে এর উদ্ভব হলেও এ অনুভবের মধ্য দিয়ে ক্রমে ক্রমে বাঙালি মুসলমানদের অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে।

১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের শাসকরা ‘রাষ্ট্রভাষা’ বিতর্ক উসকে দিয়ে বাংলা ভাষাকে বাংলার মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করে। ১৯৪৮ সালেই বাংলা ভাষাকে মর্যাদাসীন করার জন্য গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির এক সভায় বঙ্গবন্ধু বলেন-‘১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা প্রস্তাব করলে কোনো মুসলমান গণপরিষদ সদস্য তার প্রতিবাদ জানাননি। এর প্রতিবাদ করেছিলেন একজন হিন্দু, তিনি কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। এর সঙ্গে ছিল ছাত্রদের প্রতিবাদ।’

১৯৪৮ সালে যখন বাংলাকে হটিয়ে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়, শেখ মুজিব তখন আটাশ বছরের টগবগে যুবক। সদ্য কলকাতা থেকে ঢাকায় আসা শেখ মুজিব সাংগঠনিকভাবে কিছুটা দুর্বল হলেও ধীরে ধীরে তিনি প্রতিবাদের শক্তি সঞ্চয় করেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমানে আওয়ামী লীগ) গঠিত হওয়ার ফলে সাংগঠনিকভাবে বাঙালি তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায় করার প্লাটফর্ম খুঁজে পায়। পাকিস্তানের ভাগ্যবিধাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করলে বাংলার জনগণ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। কার্জন হলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বক্তৃতা ছাত্ররা প্রত্যাখ্যান করলে পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নেয়। শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। শেখ মুজিব ভাষা-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে কারারুদ্ধ হন। তখন বন্দি অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেই তিনি গোপনে ভাষা-সংগ্রামীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম কারও একক কৃতিত্বের বিষয় না হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন যে ভূমিকা পালন করেন, বাংলাদেশের মানুষ তা কোনোদিন বিস্মৃত হবে না। জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী তার ‘মুজিব-মানস ও ভাষা-আন্দোলন’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন-‘১৯৪৮-এর ফেব্রুয়ারিতে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা সম্পর্কিত লিয়াকত আলি খানের উক্তির মধ্য দিয়ে তার উদ্ধত নগ্ন প্রকাশ ঘটল। বাঙালি অবশ্য চুপ করে বসে থাকল না। তারা দাবি করল, বাংলাকেও উর্দুর সঙ্গে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে হবে।

যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা এবং হাজার বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি সমৃদ্ধ ভাষা হিসাবে তারা সেদিন বাংলাকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলতো, তবে তা-ও অযৌক্তিক হতো না। যাই হোক, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হলো। পাকিস্তানি শাসকচক্র ওই ধর্মঘট ব্যর্থ করার জন্য সেদিন ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করল। ঢাকার ছাত্ররা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল বের করে। পুলিশ মিছিলকারীদের ওপর বেপরোয়া লাঠি চালায়। বহু ছাত্র-জনতা আহত হয়। আন্দোলনকারী কতিপয় অগ্রণী ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে শেখ মুজিবকেও সেদিন গ্রেফতার করা হয়েছিল।’

একুশের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে রাজনৈতিক নেতা, ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিকসহ সবাই সীমাহীন নির্যাতন সহ্য করেছেন। কয়েকজন ভাষাসৈনিক ১৯৫২ সালের একুশের ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন। অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম (সদ্যপ্রয়াত) সেদিনের ঘটনাবলি ক্যামেরাবন্দি করে স্মরণীয় করে রেখেছেন। একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা কোনো সামান্য ঘটনা নয়, এ ঘটনার মধ্যেই নিহিত ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ। অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের ক্যামেরা ও কলম দুটোই সেদিন জ্বলে উঠেছিল। তিনি শখানেক দুর্লভ ছবি তুলেছিলেন।

ভাষাসৈনিক হিসাবে প্রত্যেকেই আমাদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র। কিন্তু অসংখ্য ভাষাসংগ্রামীর মধ্যে কেউ কেউ আছেন, সত্যিকার অর্থেই যাদের ত্যাগ ছিল অসামান্য। একুশের প্রথম কবিতা রচনা করেন চট্টগ্রামের কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী। তার ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ কবিতাটি একুশে ফেব্রুয়ারির বীর শহিদদের স্মরণে লেখা হয়েছিল। এ কবিতা সেদিন সারা বাংলার মানুষের মনে একইসঙ্গে শোক ও সংগ্রামের প্রেরণা জাগিয়েছিল।

১৯৫২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন পুলিশ বাহিনী ছাত্র-জনতার নির্মিত শহিদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয়, তখন তা দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আলাউদ্দিন আল আজাদ তার বিখ্যাত ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ কবিতাটি রচনা করেন (যার কয়েকটি লাইন এরকম-‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কী বন্ধু/আমরা এখনো চার কোটি পরিবার/খাড়া রয়েছি তো’)।

একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে এ পর্যন্ত যত কবিতা-গান রচিত হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কবিতা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একজন ভাষা-সংগ্রামী। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন মুহূর্তে তিনি ঢাকা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি তিনি ভাষাসৈনিকদের মিছিলে যোগদান করে কিছুটা আহত হন। এমন সময় আহমেদ হোসেন নামে একজন ভাষাসৈনিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর দিকে একটুকরো সাদা কাগজ দিয়ে বারবার অনুরোধ করতে থাকেন-‘তোমরা একটি কবিতা লেখো/তোমরা একটি কবিতা লেখো।’ ওই মুহূর্তে কবিতা লেখা সম্ভব না হলেও কথাটি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মনে গেঁথে থাকে।

রক্তাক্ত শহিদ রফিকের চেহারার কথা মনে করে ঐতিহাসিক কবিতাটির প্রথম কয়েকটি লাইন তিনি রচনা করেন প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমানের বাসায় বসে। বাকি অংশ লেখেন অন্য একটি বাসায়। এই কবিতাটিতে সুরারোপ করে গান হিসাবে প্রথম ব্যবহার করা হয় ঢাকা কলেজের একটি অনুষ্ঠানে। গানটি পরিবেশন করেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই আতিকুল ইসলাম। তিনি এবং তার কয়েকজন বন্ধু গানটি পরিবেশন করার পর ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। উল্লেখ্য, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কবিতাটিতে বিভিন্নজন সুরারোপ করলেও আজ সারা বিশ্বে শহিদ আলতাফ মাহমুদের সুরেই গানটি গীত হচ্ছে। এ গানটি একইসঙ্গে সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদ ও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে অমরত্ব দান করেছে।

আজ ড. রফিকুল ইসলাম আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার ঐতিহাসিক কাজগুলো আমাদের মাঝে রয়েছে। তার ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ নিয়ে যেসব গবেষণা ও সৃজনশীল কর্ম রয়েছে, তা চিরদিন বাঙালিকে প্রেরণা জোগাবে। আমাদের আরেক ভাষা-সংগ্রামী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীও অসুস্থ অবস্থায় লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আশি-ঊর্ধ্ব জীবনে তিনি নিয়মিতই লেখালেখি করছিলেন, হঠাৎ তার অসুস্থতার খবর শুনে সব বাঙালি কম-বেশি চিন্তাগ্রস্ত। আমরা তার দীর্ঘজীবন কামনা করি।

অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একুশে ফ্রেব্রুয়ারি আজ ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে’র মর্যাদা লাভ করেছে। পাকিস্তানিরা ভেবেছিল, বাঙালি জাতির মুখের ভাষা কেড়ে নিলেই তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা সম্ভব হবে; কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারেনি, বাংলা ভাষাকে কৌশলে হত্যা করার জন্য তারা যে উর্দু ভাষাকে লেলিয়ে দিয়েছিল, সেই উর্দু ভাষা দিয়ে কিছুতেই বাঙালিকে পরাস্ত করা যাবে না। উর্দু পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনো জনগণের ভাষা ছিল না। ওই ভাষায় পশ্চিম পাকিস্তানেই নগণ্যসংখ্যক মানুষ কথাবার্তা বলতেন; অথচ বাংলা ভাষা ব্যবহার করতেন প্রায় ৫৬ শতাংশ মানুষ। ৫৬ শতাংশ মানুষের ভাষাকে অগ্রাহ্য করে মাত্র ৪ শতাংশ মানুষের মুখের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র পৃথিবীর কোথাও বাস্তবায়িত হতে পারে না। বাংলার মাটিতেও উর্দুর শিকড় প্রোথিত হতে পারেনি।

১৯৫২ সালে যখন ভাষা-আন্দোলন পূর্ব বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তখন আমিও আমার বড় ভাইদের সঙ্গে কুমিল্লায় মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করি। বয়সে আমি তখন ছোট হলেও ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘নুরুল আমীনের কল্লা চাই’ বলে সেদিন যেসব স্লোগান দিয়েছিলাম, তা আজও আমার মনে পড়ে। যে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কথা বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে উল্লেখ করেছেন, সেই মহান মানুষটির সঙ্গে আমারও কিছুটা সখ্য ছিল। আমি আমার শৈশবে শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অসামান্য স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি। তার কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি, তবে সেসব কিছু আজ মনে না থাকলেও তার ‘Gandhi’s letters to Tagore’ বইটি উপহারের কথা আমি কোনোদিন ভুলব না। তিনি আমাকে মর্নিং ওয়াকে নিয়ে যেতেন। মর্নিং ওয়াকের ফাঁকে ফাঁকে অনেক গল্প শুনিয়েছেন এবং বই পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার মতো দেশপ্রেমিকের সাহচর্য আমি দীর্ঘদিন পেয়েছি, এটা আমার পরম সৌভাগ্য।

আমি নিজেকে এ কারণে ভাগ্যবান মনে করি, বাংলাদেশের অধিকাংশ ভাষাসৈনিকের সঙ্গেই আমি ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করার সুযোগ পেয়েছি। আমি বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদের স্নেহ পেয়েছি। আবদুল মতিন, গাজীউল হকের সাহচর্য পেয়েছি। সাহচর্য ও বন্ধুত্ব পেয়েছি ড. রফিকুল ইসলাম ও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর। কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী, এমনকি কবি আলাউদ্দিন আল আজাদও আমার ভীষণ প্রিয় মানুষ।

একুশে ফেব্রুয়ারি আজ ইউনেস্কো ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে’র মর্যাদা পেয়ে আমাদের গৌরব শিখাকে উজ্জ্বল করেছে বটে, কিন্তু এখনো বাংলাদেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি দেখে খুব বেদনাবোধ করি। বঙ্গবন্ধু সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের সর্বত্র বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ভাষাবিজ্ঞানী না হয়েও বাংলা ভাষার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেভাবেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তার আকস্মিক হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ে। বাংলা ভাষাও বাংলাবিদ্বেষীদের কবলে পড়ে অবহেলিত হয়। আজ আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করে একান্ন বছরে পদার্পণ করেছি।

স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও বাংলা ভাষার গতিপথ সরল-স্বাভাবিক হয়নি, এটি খুবই দুঃখজনক। বাংলা ভাষার মর্যাদা আজ পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) বাংলাভাষী কবি হিসাবে নোবেল পুরস্কার (১৯১৩) লাভ করে বাংলা ভাষার গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের শান্তি সম্মেলনে (১৯৫২), জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে (১৯৭৩) এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে (১৯৭৪) বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীর নজর কাড়েন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলেই (১৯৯৯ সালে) কানাডা প্রবাসী একদল ভাষাপ্রেমিকের সহযোগিতায় অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায়।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, একুশে ফেব্রুয়ারি আজ একদিনের ভাষাপ্রেমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। আমরা একদিনের ভাষাপ্রেমে আবদ্ধ না থেকে চিরদিনের জন্য বাংলা ভাষাকে ভালোবাসতে শিখব, এটাই প্রত্যাশা।

মোনায়েম সরকার : রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম