Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি

বৈষম্য কমাতে বিত্তবানদের কি কিছুই করার নেই?

Icon

ড. আর এম দেবনাথ

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বৈষম্য কমাতে বিত্তবানদের কি কিছুই করার নেই?

বন্ধু-বান্ধব, অতি পরিচিতজন ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে বসলে কত কথা হয়-এর কিছু নিছক গল্প-কাহিনি, কিছু সত্য, কিছু রং মাখানো সত্য কথা। এর মধ্যে আবার থাকে ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা। আড্ডার এসব কথার কোনটা সত্যি, কোনটা কতটুকু সত্যি, কোনটা আসলেই অভিজ্ঞতা-তা বিচার করা অনেক সময়েই কঠিন। বিশেষ করে আজকালকার ব্যবসা-ব্যবসায়ীদের জীবনের কথা।

আমরা মানুষ হয়েছি ছোট একটা পরিবেশে। হলে থাকতাম, দুই বেলা খাওয়ার জন্য লাগত মাত্র ৩০ থেকে ৩৪ টাকা। খাবারে থাকত প্রায়ই এক টুকরা ইলিশ মাছ, পাঁচ-তরকারি ও ডাল। মেস বন্ধ থাকলে মেডিকেল হোস্টেলের পেছনের ‘পপুলারে’ একবেলা মাছ, ভাত, সবজি ও ডাল খেতে লাগত বারো আনা (৭৫ পয়সা), বড়জোর ১ টাকা। ঢাকা শহর? নিউমার্কেট, রমনা, গুলিস্তান, নওয়াবপুর রোড, সদরঘাট ও গেণ্ডারিয়া, ওদিকে আজিমপুর ও লালবাগ, সোয়ারিঘাট।

দেশের বাড়ি কিশোরগঞ্জ থেকে ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনে পৌঁছতে লাগত সারাদিন। বাড়ি থেকে আসার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সঙ্গে করে আনতাম চিড়া-মুড়ি আর মায়ের আদর মেশানো নারু। ঢাকা শহর তখন হাঁটার শহর। রিকশা কিছু চলে। রাতে খেয়ে স্টেডিয়ামে যেতাম এক অবাঙালি পানের দোকানে হেঁটে। কোথায় সব বহুতল বিল্ডিং, কোথায় দালানকোঠা? একমাত্র ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছিল ‘গ্যানিজ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর্স’-বর্তমান জিপিওর উল্টোদিকে।

এই ‘স্টোরের’ ওপরই স্যার বিপণনের বিষয়ে ‘টিউটরিয়াল’ দিতেন। ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা তখন কত? ৫-৬ লাখ হবে হয়তো। অভিজাত পাড়া হচ্ছে ওয়ারী, র‌্যাঙ্কিন স্ট্রিট। ধানমণ্ডি গড়ে উঠছে তখন। বাস মানে ছিল ‘মুড়ির টিন’। সদরঘাট থেকে নিউমার্কেট। নতুন রুট হয় মিরপুর ও মোহাম্মদপুর পর্যন্ত। নারায়ণগঞ্জের বাস চলত। ভিক্টোরিয়া পার্ক (বাহাদুর শাহ) ছিল পুরান ঢাকায়। ছিল লালকুঠি। এদিকে রমনা পার্ক, রমনা রেসকোর্স। বাণিজ্যিক পাড়া ছিল মতিঝিল। গুলশান, বনানী হয় হয়।

এই হচ্ছে সংক্ষেপে আমাদের দৌড়। এক টাকা, দুই টাকা, পাঁচ টাকা আমাদের কাছে অনেক টাকা। ৩০-৩২ টাকা দিয়ে ‘টেট্রনের’ একটা সাদা ফকফকে জাপানি কাপড়ের জামা কিনলে আর কিছু লাগত না। আধঘণ্টায় তা শুকিয়ে যেত। দুপুরের ক্লাস থেকে হলে এসে তা ধুয়ে দিলে বিকালের ক্লাসে ওটা পরেই যাওয়া যেত। সিনেমা হল ‘গুলিস্তান’, পরে নিউমার্কেটসংলগ্ন ‘বলাকা’।

এরকম ছোট্ট একটা নিরিবিলি শহর ও গ্রামজীবনের লোকসংখ্যা যখন বিলিয়ন, বিলিয়ন, তা-ও আবার ডলারের হিসাবের কথা শুনি, তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কিন্তু তা বিশ্বাস করতে হয়। ‘ওপরওয়ালা’ যে গত ৫০ বছরে ‘পাহাড়কে দরিয়া করেছে, দরিয়াকে করেছে পাহাড়, ফকিরকে করেছে বাদশাহ আর বাদশাহকে করেছে ফকির’-এ কথা মনে থাকে না। যতই বয়স হচ্ছে, ততই মনে হয় গ্রামের কথা, ছোট ছোট স্মৃতির কথা, গাছপালা, নদী-নালা, মেঠোপথ, কুপি বাতি-হারিকেন, দাঁড়িয়াবান্ধা, ফুটবলের কথা।

মনে হয় যাত্রার কথা, থিয়েটারের কথা। মনে পড়ে ‘রূপবান’ সিনেমার পাগল করা গানের কথা, আর সুচিত্রা ও উত্তমের কথা। লতা মুঙ্গেশকরের (সদ্য প্রয়াত) গান তো আছেই। এই প্রেক্ষাপটে যখন শুনি পাঁচতারা হোটেলের কথা, তখন শুনি, আর শুনি; বিশ্বাস করি, করি না। এও সম্ভব, হে ঈশ্বর!

বন্ধু বলছিলেন, তার পরিচিত এক ব্যবসায়ী তার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে এক হোটেলের সব ঘর ভাড়া নেন কয়েক দিনের জন্য। বিয়ের সব অনুষ্ঠান হবে এখানে। সব আত্মীয়স্বজন এখানে থাকবে, খাবে। করবে বিয়েকে স্মরণীয়। বরপক্ষ থাকবে এখানে। খানা ও পিনা দুটোই হবে। বিশাল ভোজের ব্যবস্থা হবে। গণমান্য ব্যক্তিরা হবে এই বিয়ের সাক্ষী। খরচ কত এ সমগ্র অনুষ্ঠানের জন্য? এটা অনুমানসাপেক্ষ। তবে তা মেয়ের পিতার জন্য কিছুই না।

একথা শুনে আরেক বন্ধু বললেন তার এক অভিজ্ঞতার কথা। এটাও বিয়ের ঘটনা। এটাও মেয়ের বিয়ে। ‘নায়রী’ কারা? নায়রী মানে নিকটাত্মীয়, যাদের বিয়েতে থাকতেই হবে আনুষ্ঠানিকতা সমাধা করার জন্য। এই বিয়েতে নায়রী এসেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে। দুবাই, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে আত্মীয়স্বজন, এসেছে তাদের সে দেশীয় বিদেশি বন্ধু-বান্ধবী। থাকার ব্যবস্থা হোটেলে। কয়েক দিনের জন্য। খাওয়া-দাওয়া নামিদামি হোটেলে। বর থাকে যুক্তরাষ্ট্রে, ভালো চাকরি করে, গাড়ি-বাড়ি সবই আছে। বর ও কনের পিতামাতারা স্বনামধন্য।

এসব শুনি, আর শুনি; বিশ্বাস হয়, হয় না। শুনতে শুনতে কাগজের খবরের কথা মনে হয়। আজকাল গ্রামাঞ্চলেও বর বিয়ে করতে যায় প্রাইভেট হেলিকপ্টারে। তার ছবি কাগজে ছাপা হয়। ক্রিকেট তারকারা বাড়িতে যান, ঈদ উপলক্ষ্যে ‘দেশে’ যান প্রাইভেট হেলিকপ্টারে। এসব আর এখন খবর নয়। এই করোনার মধ্যেও নাকি ‘চার্টার’ করা বিমানে লন্ডন গেছেন কেউ কেউ। মেয়ের ঘরে ‘নাতি’র জন্ম হবে বলে। প্রাইভেট হেলিকপ্টারে অফিসে যাওয়ার ঘটনা কয়দিন পরপরই শুনি। এসবও আর কোনো খবর নয়। বিদেশে ধন-সম্পদ, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, কারখানা ইত্যাদি আছে অনেকের। এসবও কোনো খবর নয়।

ভাবতে আনন্দই লাগে, বাঙালি আজ অর্থবিত্তে বলীয়ান হয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ হয়েছে অতিধনী, ধনীশ্রেষ্ঠ। এসবে কোনো আপত্তি নেই, নেই কোনো প্রশ্ন। কেন থাকবে? এটা ‘সমাজতন্ত্র’ নয়, বাজার অর্থনীতির সময়। মেধা, শ্রম, প্রতিযোগিতা দ্বারা কেউ অর্থ-সম্পদ করলে, দেশে ভোগে মত্ত হলে অথবা বিদেশে ‘সাম্রাজ্য’ বিস্তার করলে তাতে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। এটা যদি কেউ করে, তাহলে তাকে বাঙালির চিরায়ত ‘অ্যান্টি-মানি’ দৃষ্টিভঙ্গির লোক বলতেই হয়।

তবে যদি দেখা যায় ধনী, অতিধনীরা, যারা ভোগে মত্ত তারা ধনসম্পদ করেছে মেধার জোরে নয়, প্রতিযোগিতা দ্বারা নয়, নয় শ্রম দ্বারা, তখন? হ্যাঁ, এটা হলেই তা চিন্তার বিষয়। যেসবভাবে বিত্তের মালিক হওয়া উচিত নয়, আইনসম্মত নয়, সেভাবে বিত্ত করলে এবং উৎকটভাবে ভোগে মত্ত হলে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হয়। যে পথগুলো বিত্ত বানানোর পথ হওয়া আইনসম্মত নয়, সেগুলো হচ্ছে-চোরাচালানি ব্যবসা, ড্রাগের ব্যবসা, হুন্ডি ব্যবসা, ক্যাসিনো ব্যবসা, সোনা চোরাচালান, রপ্তানির জন্য পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি করা, ভ্যাটের টাকা ফাঁকি দেওয়া, শুল্ক-কর না দেওয়া, গ্যাসের বিল ফাঁকি দেওয়া, বিদ্যুতের বিল ফাঁকি দেওয়া, ঘুস গ্রহণ, চাঁদাবাজি, ওভার-ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং করা, মজুতদারি করা, আইনবহির্ভূতভাবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করা, খাদ্যে ভেজাল মেশানো, নকল ওষুধ বিক্রি করা ইত্যাদি।

তালিকা বড় করা যায়, কিন্তু তালিকা বাড়ালাম না। এখন প্রশ্ন, যারা আজ অতিধনী, ধনী, ধনীশ্রেষ্ঠ; তারা কি এসব বেআইনি পথে অর্থবিত্ত বানিয়েছেন? যারা দেশে-বিদেশে ভোগ আর ভোগ করছেন, রয়েছেন ভোগে মত্ত, তারা কি উপরোক্ত পথের বাইরে থেকে অর্থবিত্ত করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে আমি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না। যদি এ পথে টাকা বানানো না হয়ে থাকে, তাহলে তারা নমস্য। তারা কৃতিত্ব পাওয়ার অধিকারী। রাষ্ট্রেরও তাদের পুরস্কৃত করা দরকার। তবে যদি উপরোক্ত পথে কেউ বিত্তশালী হয়ে ভোগে মত্ত থাকেন, তাহলে তাদের জাতির কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে হবে, তাই নয় কি?

বেআইনি পথ নয়, সরকারি পথেও টাকা কামাই করা যায়। সরকারি পথে মানে সরকারি আনুকূল্যে। সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা আছে। সেসব সুবিধা ভোগ করে কেউ কেউ অর্থ-সম্পদের মালিক হতে পারে। তবে এই পথ মেধা, প্রতিযোগিতা বা শ্রমের নয়, যা বাজার অর্থনীতির মূল কথা। তা পুঁজিবাদেরও মূল কথা। যেমন বিদেশে ‘কোটায়’ পণ্য বিক্রি করা, বিদেশি সরকারের শুল্ক সুবিধা ভোগ করে পণ্য বিক্রি করা ইত্যাদি। এসব প্রতিযোগিতা করে ব্যবসা করা নয়, নয় মেধায় ব্যবসা করা।

আবার দেশে আছে অনেক সুবিধা-সুযোগ। যেমন অল্পদামে সরকার থেকে ভালো এলাকায় ১০ কাঠা, ৫ কাঠা জমি নিয়ে তাতে ফ্ল্যাট বাড়ি করে অর্থ-সম্পদ বানানো। সরকারের কাছ থেকে অল্পদামে মিল-ফ্যাক্টরি কিনে লাভবান হওয়া আরেকটি সরকারি সুযোগ। বিনা পয়সায় ব্যাংকের লাইসেন্স, টিভির লাইসেন্স নিয়ে তা বিক্রি করে দেওয়াও টাকা বানানোর আরেকটি পথ।

অন্যান্য পথের মধ্যে আছে-অল্প আয়কর প্রদান, শুল্কমুক্তি, ভ্যাটমুক্তি, কর অবকাশ, কর রেয়াত, কর ছাড়, ভর্তুকি, সুদ ভর্তুকি, সুদ মাফ, প্রণোদনা ইত্যাদি। এসব সরকারি সুবিধা। সরকার নানা উদ্দেশ্যে এসব দেয়। ব্যবসার উন্নতি, রপ্তানির উন্নয়ন, দেশের স্বার্থ ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে সরকার একশ্রেণির মানুষকে এই সুবিধাগুলো দেয়। এর সঙ্গে কি মেধা, প্রতিযোগিতা বা শ্রমের কোনো সম্পর্ক আছে? না, মনে হয় না। কিন্তু এসব পন্থাতেও বহু ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক, সাধারণ নাগরিক অর্থবিত্ত বানাচ্ছেন।

বস্তুত এটা এখন স্বীকৃত পন্থা। এ পন্থাতে সরকার তার আনুকূল্য বিতরণ করছে। বলা যায়, অনুগতদের মধ্যে, কিছুটা ব্যবসায়িক স্বার্থে। এভাবে যারা টাকা বানাচ্ছেন এবং ‘অতিভোগ’ করছেন, তাদের কাজ কি আইনের মধ্যে পড়ে? আইনের বাইরে গিয়ে তারা টাকা বানাচ্ছেন, এমনটা বলা একটু কঠিনই। কিন্তু ‘অতিভোগ’ তাও আইনের বাইরে বলা হয়তো কঠিন। কিন্তু নৈতিকতার দিক থেকে নিশ্চয়ই তা সর্বজনগ্র্রাহ্য হবে না। কারণ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে, সরকারি আনুকূল্যে অর্থবিত্তের মালিক হলে জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব থাকে।

যে দেশে দারিদ্র্য কিছুটা কমলেও বৈষম্য ক্রমবর্ধমান, যে দেশে এখনো ৪-৫ কোটি মানুষ দুই বেলা ভাত পায় না, সেই দেশে সরকারি আনুকূল্যে হওয়া বিত্তবানদের কি উচিত নয় গরিবদের প্রতি একটু নজর দেওয়া। ধরা যাক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং বড় বড় সরকারি কর্মকর্তার কথা। তারা প্রায় সবাই সরকারের অর্থানুকূল্যে লেখাপড়া শিখেছেন। শিখেছেন খুবই কম পয়সায়। ভর্তি ফি, বেতন ফি, আবাসনের খরচ, খাওয়ার খরচে সরকারের বহুল ভর্তুকি ছিল। তাদের মধ্যেও অনেকে আজকাল বহু সম্পদের মালিক। ভোগ-বিলাসিতা তাদের মধ্যেও কম নয়। প্রশ্ন, তারা কি তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করছেন? গরিবের স্বার্থ, অসহায় মানুষের স্বার্থ কি তারা দেখছেন? আমি নিশ্চিত নই।

বস্তুত, দেশে এখন এমন একটি শ্রেণির জন্ম হয়েছে, যারা ভোগ ও বিলাসকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ভোগ-বিলাস বেশ কিছুটা উৎকট আকার ধারণ করেছে। অথচ বাঙালি কখনো এমন ছিল না। বাঙালি দেহতত্ত্বের কথা বলেছে। নদী-নালা, গাছপালা, পাহাড়-পর্বত, সবুজ মাঠ, পাখির কলবর, পাটের গন্ধ বাঙালিকে বিভোর করে রেখেছে। মাইজভাণ্ডারি, হাছন রাজা, লালন বাউল তার চিরসঙ্গী।

এরই মধ্যে হঠাৎ করে বাঙালির একাংশের মধ্যে এমন ভোগ-বিলাসিতার জন্ম কীভাবে হলো? এর কারণ কি আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ? প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব নয়। তবে একটা কথা বলা যায় করোনা অতিমারির প্রেক্ষাপটে। করোনা সারা বিশ্বকে বদলে দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব পশ্চিমা দুনিয়ার নেতৃত্বে চলছিল। প্রথমে দুই বিশ্বশক্তি, পরে এক পরাশক্তির কবলে ছিলাম আমরা।

আবার বিশ্ব ভাগ হতে চলেছে। মনে হয় ক্ষমতার ভরকেন্দ্র হতে চলেছে এশিয়া। অবাধ বাণিজ্য, মুক্ত বাণিজ্য, বিশ্বায়ন, বাজার অর্থনীতি ইত্যাদিও প্রশ্নের মুখোমুখি। বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। উপমহাদেশেরই এক অতিধনীর স্ত্রীর এক বোতল খাবার জলের দাম নাকি ৮০ লাখ টাকা! একেকজনের বাড়িঘরের দাম হাজার হাজার কোটি টাকা। সারা বিশ্বের বেশির ভাগ সম্পদের মালিক গুটিকয়েক ‘জায়েন্ট কোম্পানি’ ও তার মালিকরা।

তাদের অনেকেই এখন এই দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে সন্তুষ্ট নয়। তারা নভোযানে বেড়াতে যায় মহাবিশ্বে। অথচ বিশ্বের দেশে দেশে কোটি কোটি লোক না খেয়ে আছে। এই প্রেক্ষাপটে করোনা এসে সব তছনছ করে দিচ্ছে। পশ্চিমা দুনিয়ার মানুষ মনে হয় নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছে। চীনারা অতি জায়েন্ট কোম্পানিগুলোকে কড়া আইনের অধীনে আনছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ বারবার বলছে-বৈষম্য মানুষের শত্রু, উন্নয়নের শত্রু।

এ প্রেক্ষাপটে আমাদের অতিধনীরা কি তাদের ভোগ-বিলাসের কিছুটা ত্যাগ করে গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন? যে ৪-৫ কোটি মানুষ এখনো দুবেলা ভাত পায় না, তাদের পাশে কি তারা দাঁড়াবেন?

ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

rmdebnath@yahoo.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম