Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

অপরাধীর পুনর্বাসন এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব

Icon

মো. সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অপরাধীর পুনর্বাসন এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব

সম্প্রতি যুগান্তরে প্রকাশিত একটি খবর আমার নজরে এসেছে। যাবজ্জীবন সাজা শেষে কারামুক্ত লক্ষ্মীপুরের রিকশাচালক মিলন কামাল এখন বিয়ে ও সংসার করার স্বপ্ন দেখছে।

যে মিলনকে অপরাধের কারণে তার জীবনের সোনালি সময়গুলো কারাগারের লাল প্রকোষ্ঠের মধ্যে কাটাতে হয়েছে, তাকেই আবার সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের জন্য একটি সেলুন উপহার দেওয়া হয়েছে। এও কি সম্ভব!

বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও এটাই বাস্তব। মিলন কারাভ্যন্তরে থাকাকালীন শিখেছে চুল কাটা। আর এ কর্মমুখী শিক্ষা তাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

শুধু মিলন নয়, মিলনের মতো অনেক অপরাধী সরকারিভাবে এরূপ সহযোগিতা পেয়ে নিজেকে অপরাধের অন্ধকার পথ থেকে সরিয়ে সমাজের মূলধারায় ফিরে এসেছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিগত কয়েক বছরের বার্ষিক রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০০১-০২ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক এরূপ আফটার কেয়ার সার্ভিসপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীর মোট সংখ্যা ৮,৬৯৮। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে আফটার কেয়ার সার্ভিসপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীর মোট সংখ্যা ৫,৯০৮। বাংলাদেশে অপরাধী পুনর্বাসনে আফটার কেয়ার সেবা কার্যক্রমটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত, যা প্রবেশন অ্যান্ড আফটার কেয়ার সার্ভিসেস নামে পরিচালিত হচ্ছে।

আফটার কেয়ার সার্ভিস হচ্ছে কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদি বা প্রবেশনে মুক্ত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মুক্ত সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপনের লক্ষ্যে একটি পরিকল্পিত পুনর্বাসনমূলক কার্যক্রম। অপরাধীদের দীর্ঘ কারাবাসের পর সমাজে প্রত্যাবর্তন সুখকর হয় না।

সমাজ তাদের ভালোভাবে নেয় না, ঘৃণার চোখে দেখে। ফলে তারা পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয় এবং পুনরায় অপরাধ করে বসে। এরূপ অবস্থায় মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিদের জন্য পুনর্বাসনমূলক কার্যক্রম অত্যাবশক হয়ে দাঁড়ায়। এ সার্ভিসের কার্যক্রম ১৯৬২ সালে শুরু হলেও আজ থেকে একযুগ আগেও অপরাধী পুনর্বাসনে এরূপ দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

২০১০ সালে বিবিসি বাংলা নিউজে একটা খবর পড়েছিলাম। সেবার সারা দেশে এক হাজার বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছিল ৭৫ জন। কয়েকজনের সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণে দেখেছি-সবাই খুব আনন্দিত; কিন্তু বের হয়ে তারা কী করবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছিল না।

এখন দিন বদলেছে। সরকার অপরাধীদের শুধু শাস্তি দেওয়ার জন্য কারাগার করেনি, তারা যাতে সমাজের বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়, সেজন্য তাদের সংশোধন করে বন্দির হাতকে কর্মীর হাতে বাস্তবায়ন করার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশের কয়েদিরা ৩০টি কারাগারে ৩৮টি পণ্য উৎপাদন করে।

এগুলো বিক্রির লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ বন্দিদের হিসাবে জমা হয়। কারা অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, জুলাই ২০১৪ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত মোট ৫১,৭৮১ জন বন্দি প্রশিক্ষণ সুবিধার আওতায় এসেছেন। কয়েদিদের সাজা ভোগ শেষে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে অপরাধীর চাহিদা নিরূপণ করে রিকশা-ভ্যান, সেলাই মেশিন, গবাদিপশু ইত্যাদিসহ এককালীন অনুদান দেওয়া হয়। তাদের স্বনির্ভর করার জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। সম্প্রতি বন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য কারা অভ্যন্তরে কাউন্সেলিং কোর্স চালু করা হয়েছে।

বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অপরাধীদের আত্মমর্যাদাশীল ও সুনাগরিক হিসাবে সমাজে আত্তীকরণের লক্ষ্যে যুগোপযোগী কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা হচ্ছে। কয়েদিদের মানুষ হিসাবে বিবেচনা করে কারাগারগুলোকে দেখা হচ্ছে সংশোধনাগার হিসাবে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য মুক্তির কিছুকাল আগে শর্তাধীনে তদারকির মাধ্যমে তাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে এবং মুক্তির পর দেখাশোনা করার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে ফলোআপ দিচ্ছে। তারা নতুন করে আর অপরাধ না করায় মামলার সংখ্যাও বাড়ছে না। ফলে পুনর্বাসনের মাধ্যমে অপরাধীরা সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদে পরিণত হচ্ছে।

ইউরোপের নেদারল্যান্ডস দেশটি অপরাধী পুনর্বাসন ও সংশোধনে চমক দেখিয়েছে। সেখানে অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় ২০১৩ সালে একসঙ্গে ১৯টি এবং ২০১৫ সালে আরও পাঁচটি কারাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়। নেদারল্যান্ডসে বিচারকরা অপরাধীদের বিকল্প শাস্তির ব্যবস্থা করে থাকেন। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কমিউনিটির বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়, জরিমানা করা হয় এবং ইলেকট্রিক অ্যাংকেল মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে একটি প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হয়। এভাবে মূল সমাজের সঙ্গে সময়ের ধারাবাহিকতায় তাদের খাপ খাইয়ে নেওয়া হয়।

অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসনে সম্প্রতি দারুণ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ব্রাজিল। সেখানে কারাগারে আটক দাগি অপরাধীরা তাদের সাজা নিজেরাই কমিয়ে নিতে পারবেন। কোনো কয়েদি যদি কারাগারে একটি বই পড়ে, তবে তার বিনিময়ে তার শাস্তির মেয়াদ চার দিন কমিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে একজন কয়েদি শর্তসাপেক্ষে বছরে ৪৮ দিন তার শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে নিতে পারবে।

শর্তগুলো হচ্ছে বছরে তাদের সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও ক্লাসিক বইয়ের মধ্য থেকে মাত্র ১২টি বই পড়তে হবে। প্রতিটি বই পড়ার জন্য সময় দেওয়া হবে চার সপ্তাহ। পড়া শেষে এ সময়ের মধ্যে ওই বিষয়ে একটি সারমর্ম লিখতে হবে। অথচ সেখানে ধারণক্ষমতার চেয়ে কারাবন্দিদের অতিরিক্ত চাপ, কারা অভ্যন্তরে দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং এর নোংরা পরিবেশ সমালোচনার বিষয়। এ শোচনীয় অবস্থা থেকে বেরিয়ে ব্রাজিল অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসনের দিকে দৃষ্টিপাত করেছে।

বর্তমানে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেসরকারি কারাগার স্থাপিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ব্রাজিলের The Association for the Protection and Assistance of the Convicted (APAC) অন্যতম। এ কারাগারগুলো গতানুগতিক ধারার কারাগারগুলোর চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। সেখানে নেই কোনো কারারক্ষী, নেই কোনো অস্ত্র।

তাদের কারাগারের মূলনীতি হচ্ছে কঠোর পরিশ্রম এবং অন্যের প্রতি ভালোবাসা। APAC বন্দিদশা ও পুনর্বাসনের একটি বিকল্প পদ্ধতি অনুশীলন করে, শাস্তিটিকে মানবিক করে তোলে এবং অপরাধীদের সমাজে পুনরায় প্রবেশের জন্য প্রস্তুত করে। এখানে যেসব কয়েদিকে আনা হয়, তাদের বেশিরভাগই আসে মূল কারাব্যবস্থা থেকে। তারা যে তাদের অপরাধের জন্য অনুশোচনা করছেন, সেটি তাদের প্রমাণ করতে হয়। নিয়মিত শ্রম দেওয়া এবং শিক্ষা গ্রহণ করার ব্যাপারে এ কারাগারের যেসব নিয়ম-কানুন রয়েছে, তা কঠোরভাবে পালন করা হয়; যা তাদের মুক্তির পর সমাজে পুনর্বাসনে সহায়তা করে। সেখানে কয়েদিরা তাদের নিজেদের পোশাক পরতে পারেন। প্রত্যেক কয়েদির রয়েছে নিজস্ব পরিচয়।

তাদের নাম ধরে ডাকা হয়, কয়েদি নম্বর দিয়ে নয়, সেখানে কয়েদিদের ডাকা হয় ‘recuperandos’ নামে অর্থাৎ যাদের আরোগ্য লাভের প্রক্রিয়া চলছে। সেখানে কয়েদিদের সারা দিন ধরে কাজ এবং পড়াশোনা করতে হয়। কখনো কখনো স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কাজ করতে হয়। কোনো বন্দি পালানোর চেষ্টা করলে মূল কারাব্যবস্থার হাতে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ব্রাজিলে ১০০টিরও বেশি APAC রয়েছে। যদিও সীমিত পরিমাণে কারাগারটির মডেল জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, চেক প্রজাতন্ত্র, সিঙ্গাপুর ও চিলির মতো দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অপরাধীদের পুনর্বাসনের জন্য মুক্ত কারাগার (Open Prisons) নামে এক ধরনের সংশোধনাগার আছে। মুক্ত কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টায় উঠে কয়েদিরা কারাগারের বাইরে যেতে পারেন, নিজস্ব আয়ের জন্য চাকরি বা ব্যবসাও করতে পারেন। তবে কোনো কোনো মুক্ত কারাগারে কয়েদিদের ফিরতে হয় রাতের একটি নির্দিষ্ট সময়ে। বর্তমানে ভারতের ১৭টি রাজ্যে ৬৯টি কারাগার রয়েছে, যার মধ্যে রাজস্থানে ২৯টি ও মহারাষ্ট্রে ১৩টি। রাজস্থানে ২৯টি কারাগারের দুই হাজারেরও বেশি বন্দি হিসাবরক্ষক, স্কুলশিক্ষক, প্রহরী ও গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করে।

এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও চারটি উন্মুক্ত সংশোধনাগার আছে। সেগুলোতে কয়েদিরা নানাবিধ জীবনমুখী বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ফলে কয়েদিরা স্বনির্ভর হচ্ছেন, পাশাপাশি রাজ্য সরকারেরও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। তবে দণ্ডিতদের মধ্যে তারাই এই সুবিধা পাবে, যারা সাত বছর বা তার চেয়ে বেশি মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ইতোমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ সাজা খেটেছে এবং মূল কারাগারে সদাচরণের রেকর্ড বজায় রেখেছে। শুধু ভারতে নয়, ইউএসএ, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অপরাধী পুনর্বাসনের জন্য এ ধরনের মুক্ত কারাগার রয়েছে।

আমাদের দেশে কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের শর্তসাপেক্ষে মুক্তি ও মুক্তির পর সমাজে সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের বিশেষ সুবিধা আইন, ২০০৬ পাশ করা হয়। এর মাধ্যমে শর্তাধীনে ও প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে নারী কয়েদিদের সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক আফটার কেয়ার সার্ভিস প্রদানের বিষয়টি সম্প্রসারিত হয়েছে। এ আইন মোতাবেক কোনো নারী ১ বছরের বেশি সময়ের জন্য শাস্তি পেলে রেয়াদসহ ৫০ শতাংশ সময় ইতোমধ্যে পার হয়ে গেলে তিনি বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন। তবে কোনো নারী কয়েদি যদি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, রাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দণ্ডিত হন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, অস্ত্র আইন এবং মাদকদ্রব্য সংশ্লিষ্ট যে কোনো আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধে দণ্ডিত হন, তাহলে তিনি বিশেষ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন না। এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ২০২০ সালে কারাগারে আটক সাজাপ্রাপ্ত নারীদের বিশেষ সুবিধা বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ বিধিমালায় প্রবেশন অফিসারকে কারাগারের অভ্যন্তরে সাজাপ্রাপ্ত নারী কয়েদিদের ব্লক অথবা বাটিক, সূচিশিল্প, হেয়ার কাটিং, বাঁশ ও বেতের কাজ, দর্জি বিজ্ঞান, কাপড়ের ফুল তৈরি, বিউটিফিকেশন, নিটওয়্যারিং, অ্যাম্ব্রয়ডারি, কারচুপি ও জরি চুমকি, কম্পিউটার অপারেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, রন্ধনশিল্প ইত্যাদি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কারাগারে আটক নারীরা এ ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সুবিধা পেলেও শর্তসাপেক্ষে মুক্তির বিষয়টি এখনো অধরাই রয়ে গেছে। এ বিষয়ে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে একজন প্রেজেন্টারের মাধ্যমে জানলাম, আইনটি পাশের পর গত ১৬ বছরে ২/১টি জেলায় এ আইনের অধীন মুক্তি দেওয়া হলেও তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় করা হয়নি। এ আইনের সুফল পেতে হলে একদিকে যেমন প্রবেশন অফিসার, জেল সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে, পাশাপাশি ভারতের মতো মুক্ত কয়েদ স্থাপনেরও প্রয়োজন আছে। কয়েদিরা মুক্তির পর সরাসরি সমাজে না গিয়ে মুক্ত কারাগারে যেন নিজেদের সমাজের উপযোগী করে তুলতে পারে।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘প্রত্যেক সাধুর একটা অতীত থাকে, আর প্রত্যেক পাপীর জন্য থাকে একটা ভবিষ্যৎ’। কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। সুযোগ পেলে অপরাধীরাও বদলে যেতে পারে। এ পুনর্বাসন কর্মসূচি কারাগারে প্রবেশের পূর্বে, কারাগারে এবং কারা মুক্তির পর এ তিন স্তরেই হতে পারে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থাগুলো অপরাধ, অপরাধীর চাহিদা, তার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা এবং সাজার দৈর্ঘ্যরে ভিত্তিতে নির্বাচিত হতে পারে। কিছু বন্দি বা কয়েদি একাধিক ধরনের পুনর্বাসন কর্মসূচির দ্বারা উপকৃত হতে পারে।

কারা অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে, ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৬৮টি কারাগারে ধারণক্ষমতা ৪২,৪৫০ জনের বিপরীতে মোট ৮২,৬৫৪ জন কারাবন্দি রয়েছে। ধারণক্ষমতার চেয়ে এ দ্বিগুণ বন্দিরা কারাভ্যন্তরে যেমন মানবেতর জীবনযাপন করে, তেমনি মুক্তির পরও তাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারা প্রকোষ্ঠে দীর্ঘদিন সাজা ভোগ করে সমাজে ফিরে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করা অপরিহার্য। পরিকল্পিত পুনর্বাসন অপরাধীর হাত কর্মীর হাতে রূপান্তরিত হয়ে সমাজের মূলধারায় একীভূত হতে পারে।

মো. সাইফুল ইসলাম : যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, কুড়িগ্রাম

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম