উন্নয়নে রাষ্ট্রের করণীয়
ড. মো. কামরুজ্জামান
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
উন্নয়ন শব্দটি সাধারণত বিস্তৃতি, অগ্রগতি, প্রগতি ও প্রবৃদ্ধি অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিবর্তন, উত্তরণ, প্রসারণ ও বিকাশ অর্থেও এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর বিপরীত অর্থ হলো প্রত্যাবৃত্তি, পশ্চাদ্গামিতা, প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি। উন্নয়ন শব্দটি বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত ও পরিচিত একটি নাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেই উন্নয়ন বলা হয়ে থাকে। এ প্রবৃদ্ধি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এটি জাতি-রাষ্ট্রকে আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে দেয়। এ প্রবৃদ্ধি জাতীয় আয় এবং সঞ্চয়নকে গতিশীল করে তোলে; অন্যদিকে সঞ্চয়, উৎপাদন ও বিনিয়োগের গতিশীলতা নিশ্চিত করে। উন্নয়ন শব্দটি দ্বারা দেশের সুনির্দিষ্ট কোনো একটি বিষয়ের উন্নতিকে নির্দেশ করে না। দেশের আর্থ-সামাজিক ও সামষ্টিক গতিশীলতাকে উন্নয়ন বলা হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ বলেন, দেশের ধনিক শ্রেণির পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সার্বিক পুঁজির সঞ্চয়নকে জাতীয় উন্নয়ন বলা হয়। আধুনিক যুগে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতিকেই উন্নতির মাপকাঠি মনে করা হয়। পল স্টিটিন বলেন, ‘যখন একটি দেশের সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে, তখনই কেবল তাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বলা যাবে।’
উনিশ শতকের শেষের দিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নকে যুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং উন্নয়ন বিষয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিংশ শতকের প্রথমদিকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গটিও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আইএলও বলেছে, ‘একটি দেশের সকল মানুষের জন্য খাদ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, গৃহায়ণ ইত্যাদি সুবিধাপ্রাপ্তির নামই হলো উন্নয়ন।’ অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, ‘মানুষের স্বাধীনতাকে সম্প্রসারিত করার প্রক্রিয়ার নাম হলো উন্নয়ন।’ তিনি আরও বলেন, কোনো জাতি যদি নির্দিষ্ট কোনো সময়ের জন্য উন্নত জীবনযাপন করে, তাকে উন্নয়ন বলা যাবে না। উন্নয়নের নিগূঢ় অর্থ হলো, দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক উন্নতি।
এ ইতিবাচক উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে যুগসন্ধিক্ষণের চাহিদাও এক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। কারণ সময়ের পরিক্রমায় মানুষের চাহিদার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। আর যে কোনো দেশে এ পরিবর্তনের ইতিবাচক স্থায়িত্বটা বড় বেশি প্রয়োজন। ড. সেনের মতে, একটি দেশের সব অবস্থার স্থায়িত্বই মুখ্য হতে হবে, যা সাধারণ জনগণের জীবনে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়; বরং রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনেও এক টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শতকরা ৫০ ভাগ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির নাম উন্নয়ন।’ তার মতে, ‘যে কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের নিু আয়ের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে, সেটাকেই শুধু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বলা যাবে।’ সংক্ষিপ্ত এ আলোচনা থেকে বলা যায়, উন্নয়ন হলো একটি দেশের আয় বৃদ্ধির এক সহায়ক প্রক্রিয়া। আর এ প্রক্রিয়াটি অব্যাহত পরিবর্তনশীল, যা ওই দেশের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সঞ্চয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। সম্পদের সুষম বণ্টন প্রক্রিয়া সহজতর করে। দেশের সামাজিক নিরাপত্তা সুসংহত করে। দেশের সব স্তরে ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদাগুলো অপেক্ষাকৃত স্থায়ীভাবে পূরণ করা সম্ভব হয় ইত্যাদি।
সাধারণত যেসব দেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির ওপর রচিত হয়, টেকসই সামাজিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হয়, স্থবিরতা কাটিয়ে উন্নতির সূচক ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়, সেসব দেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলা হয়। একটি উন্নয়নশীল দেশ ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে ধাবিত হতে থাকে। দেশকে আস্তে আস্তে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে বড় বাধা হলো গণতন্ত্রহীনতা। কোনো দেশে যখন সুষ্ঠু গণতন্ত্রচর্চা ব্যাহত হয়, যদি গণতন্ত্রের জায়গায় সেখানে একনায়কতন্ত্র স্থান পায় এবং এ অবস্থা থেকে রাষ্ট্র বেরিয়ে আসতে আন্তরিক না হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্রটি আর উন্নত রাষ্ট্র হতে পারে না।
একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিচালন যন্ত্র থাকে। গণতান্ত্রিক একটি দেশে এসব পরিচালন যন্ত্রই সুন্দরভাবে ওই দেশকে পরিচালনা করে থাকে। ফলে ওই দেশটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু দেশের অধিকাংশ জনগণ যখন পরিচালন যন্ত্রের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ে, তখন বোঝা যায়, সে দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থা বেশ সংকটে পড়েছে। কারণ দেশে যখন সংকট সৃষ্টি হয়, গণতান্ত্রিক কাঠামো যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন এ সুযোগে কতিপয় দুষ্টচক্র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। নিজেদের অনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে তারা সদা ব্যস্ত থাকে। রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে তারা প্রকৃত অবস্থা গোপন রাখে। ফলে রাষ্ট্রপ্রধানকে তারা বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রের প্রকৃত অবস্থা জানতে ব্যর্থ হন। ফলে জনগণের মাঝে একটি চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
উন্নত রাষ্ট্র গঠনে আরেকটি বড় বাধা হলো রাজনৈতিক স্বার্থপরতা। দেশের রাজনীতি যখন জনগণের কল্যাণে পরিচালিত না হয়ে নিজের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, সেটাকে রাজনৈতিক স্বার্থপরতা বলে। কারণ রাজনীতিতে তখন মারাত্মকভাবে স্বার্থপরতা জড়িয়ে পড়ে। এসব দেশে রাজনীতিতে আগমন করেই একজন রাজনীতিক টাকাওয়ালা প্রভাবশালীতে রূপান্তরিত হন। দেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন পদ-পদবিতে অর্থ-বাণিজ্য জড়িয়ে পড়ে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থিতা পদটি তখন টাকায় বিক্রি হয়। স্থানীয় ও জাতীয় পদে নির্বাচন করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা ঘুস প্রদান করতে হয়। রাজনৈতিক বিভিন্ন পদ-পদবি তখন টাকার বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় হয়। অর্থাৎ এ দলীয় পদ-পদবি বাণিজ্যিক পদে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
আবার এ ক্ষেত্রে শুধু টাকাই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয় না। টাকা প্রদানের পাশাপাশি প্রার্থীকে বাহুবলেরও পরিচয় দিতে হয়। দলীয় হাঙ্গামায় ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে সক্ষমতার পরিচয় দিতে হয়। নিজ দলীয় রাজনীতিতে মারামারি করে বিজয়ী ব্যক্তিই কেবল ওই পদটি ক্রয়ের উপযোগী হন। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য প্রমাণ বহন করে। কারণ বর্তমান বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। কিন্তু বিগত ৫০ বছরেও দেশে কাক্সিক্ষত পরিচ্ছন্ন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একটা সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা যায়নি। নির্বাচনকালীন সরকারের অবস্থাটা আরও শোচনীয়। দীর্ঘ এত বছর পার হলেও দেশের নির্বাচনকালীন সরকারের একটা জননন্দিত কাঠামো আজও গড়ে ওঠেনি। দেশে যে কোনো সংকটে অধিকাংশ জনগণ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওপর আজও আস্থাশীল হতে পারেননি। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিই আস্থা ও ভরসা রাখেন। অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক অবস্থাও এখন স্বার্থপরতার কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ এ শব্দটি এখন কামড়াকামড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। রাজনীতিতে আগমন করেই একজন রাজনীতিক টাকাওয়ালা প্রভাবশালীতে রূপান্তরিত হয়ে পড়ছেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিচালন যন্ত্র রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বেই পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা দলীয় পরিচয় দিতে গর্ববোধ করছেন। এ পরিচয়ের পরিধি গত তিন দশক আগে শুরু হয়ে বর্তমানে এটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এটা উন্নত রাষ্ট্রের পটভূমিত মোটেই মানানসই নয়।
জাতীয় রাজনীতির মতো বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিও এখন সম্পূর্ণভাবে দলীয় দুর্বৃত্তায়নে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক প্রতিষ্ঠানেও রাজনীতি স্বার্থপরতার ভয়ানক ফাঁদে বন্দি হয়ে পড়েছে। এখানেও দলীয় পদ-পদবি পেতে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য চলছে। জাতীয় রাজনীতির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিও এখন নষ্ট হয়ে গেছে। জনগণ এবং ছাত্র সমাজের কাছে রাজনীতি মানেই হলো এখন টাকার খেলা। এতসব অনৈতিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আজ অধিকাংশ শিক্ষার্থী রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছে। রাজনীতি এখন একটা তামাশায় পরিণত হয়েছে। এটা একটি অপবিত্র বাক্য হিসাবে চায়ের দোকানে পরিচিতি পেয়েছে। কিছু হলেই মানুষকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার সাথে রাজনীতি করো না’; ও ‘রাজনীতিকে ঘৃণা করি’ ইত্যাদি।
স্বার্থপরতার এ রাজনীতি জাতি, রাষ্ট্র ও শিক্ষাঙ্গনকে সুস্পষ্ট দুটি ধারায় বিভক্ত করে দিয়েছে। বাংলাদেশের গোটা সমাজও আজ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। আর এ বিভক্তি একে অপরকে কিলারে পরিণত করেছে। সমাজ থেকে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন দূরীভূত হয়ে গেছে। সামাজিক দ্বন্দ্ব ও রেষারেষি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শোষণ ও নির্যাতনের মাত্রা দেশের সামগ্রিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। উন্নত রাষ্ট্রের পটভূমিতে একটি দেশে গুম ও খুন একেবারেই অনভিপ্রেত। কারণ গুম ও খুন কখনো দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে না; বরং এ উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। অথচ দেশে গত ১৫ বছরে অনেক গুমের ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনার অভিযোগে দেশে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। আরোপিত এ নিষেধাজ্ঞা একটি জাতি ও রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে দেশ এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। এ চ্যালেঞ্জ দেশে বৈদেশিক শিল্পনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে। উৎপাদনে স্থবিরতার বিষয়টি উদ্যোক্তাদের ধমনিতে টান ধরিয়ে দিয়েছে। পোশাকশিল্প ধসের বিষয়টি চিন্তাশীল ব্যক্তিদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এক কথায়, দেশের উন্নয়ন ও উন্নতিতে এ নিষেধাজ্ঞার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব উঁকি মারতে শুরু করেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র মানে শুধুই যুক্তরাষ্ট্র নয়; যুক্তরাষ্ট্র মানে হলো কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র মানে হলো অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র মানে হলো সমগ্র ইউরোপ। সুতরাং নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি দেশপ্রেমিক সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা উন্নত রাষ্ট্র গঠনের অন্তরায় হিসাবে আরও পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো-দুর্নীতি, অপশাসন, সামাজিক বৈষম্যের আধিক্য, মূল্যবোধের অবক্ষয় ও বিতর্কিত নির্বাচন। এ পাঁচটিই বাংলাদেশের অগ্রগতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে।
আধুনিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান ইত্যাদি দেশকে সর্বাধুনিক উন্নত রাষ্ট্র বলা হয়ে থাকে। এসব রাষ্ট্র অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাধুনিক উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে। নবউদ্ভাবিত সর্বাধুনিক কৌশল অবলম্বন করেছে। সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। এতসব কারণেই এসব দেশকে উন্নত দেশ বলা হয়ে থাকে। এ দেশগুলো নাগরিকের বাসস্থান সমস্যার সমাধান করেছে। কর্মমুখী শিক্ষার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। বাক-স্বাধীনতার উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। নিরাপদ জীবনযাপনের প্রায় শতভাগ গ্যারান্টি দিয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও মহামারিতে ব্যাপক সুরক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এসব দেশে দেশের কর্তাব্যক্তিরা মহামারির মাঝে শুধু নিজেরাই ঘরে বসে সুরক্ষিত থাকেন না; জনগণকেও ঘরে বসিয়ে সুরক্ষা দিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এসব দেশের সাধারণ জনগণকে ক্ষুধায় খাদ্য সংগ্রহ করতে দিশেহারা হতে হয় না। আমাদের দেশের মতো সেখানে রাষ্ট্রনায়কেরা এসি রুমে সুরক্ষিত থাকেন না; আর জনগণ ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায়ও বের হয় না।
উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে রাষ্ট্রকে তাই উল্লিখিত বিষয়গুলোর সমাধানকল্পে নিঃস্বার্থভাবে আন্তরিক হতে হবে। জনগণের নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে হবে। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সম্পদের সুষম বণ্টনে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বেকারত্বের চাপ কমাতে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। শুধু সনদনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা দূর করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের নিজ এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। টাকার গরমে চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করতে হবে। প্রযুক্তি ও আধুনিক কলাকৌশলে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশের শতভাগ নাগরিকের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দেশ থেকে নিরক্ষতা দূর করতে হবে। কারণ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রথম শর্ত হলো, শতভাগ মানুষের শিক্ষিত হওয়া। বাংলার অর্ধেক জনগণকে অশিক্ষিত রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হওয়া এক অসম্ভব ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে গরিবদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা ফ্রি করা যেতে পারে। দেশের উন্নয়ন টেকসই করতে উল্লিখিত বিষয়গুলোর দিকে রাষ্ট্রের বিশেষ নজরদারি বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু রাষ্ট্রপ্রধানের একার পক্ষে এটির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
ড. মো. কামরুজ্জামান : অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
dr.knzaman@gmail.com