Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

নীতি দুর্নীতি অর্থনীতি

কর্মীবান্ধব বেসরকারি খাতই কাম্য

Icon

ড. আর এম দেবনাথ

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কর্মীবান্ধব বেসরকারি খাতই কাম্য

খবরের কাগজগুলোতে ব্যাংকারদের জন্য দারুণ একটা খবর পড়লাম। এ খবরের বিষয়ে পড়ে আসছি। আগে দেখা যাক খবরটির শিরোনাম কী। একটি কাগজে ব্যাংকারদের ওপর আলোচ্য খবরটির শিরোনাম করা হয়েছে-‘ব্যাংকারদের পাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক’। আমার কাছে মনে হয়েছে, একেবারে জুতসই শিরোনাম। মানুষ কার পাশে দাঁড়ায়? দুস্থ, গরিব-দুঃখী, শীতার্ত ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়-তাই নয় কি?

এ প্রেক্ষাপটে দেখলে বলা যায়, অসহায় বেসরকারি ব্যাংকারদের পাশে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অসহায় বলছি কেন? বলছি, কারণ তারা নীরব কর্মী। এই করোনার মধ্যেও তারা জরুরি ডিউটি করেছেন কোনো প্রণোদনা ছাড়াই। তাদের ছুটিছাটা বলতে কিছু নেই। অনেক ক্ষেত্রে শুক্র, শনিবারও তাদের কাজ করতে হয়। অফিসের সময়ের কোনো সীমা নেই। অনেক সময় সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা। মাসিক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক হিসাব ‘ক্লোজিং’য়ের সময় তো রাত ১২টা-১টা। এমন পরিশ্রমী একটা গোষ্ঠীর সুখ-দুঃখ দেখার কেউ নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যস্ত মনিটরিংয়ে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুখ-দুঃখ দেখার সময় কোথায়? বরং তারা সব বদনামের ভাগীদার। ব্যাংকের বদনামের কোনো অন্ত নেই। এক সময় ব্যাংকাররা ছিল মানুষের কাছে সবচেয়ে বিশ্বাসের পাত্র, নির্ভরযোগ্য। তাদের কাছে পরামর্শ নিত। তাদের সততা ও নিষ্ঠা ছিল তুলনাহীন। আজকের দিনে তা অনেকটই ম্লান। অথচ তাদেরও অনেক সুখ-দুঃখ আছে, যা বলা দরকার। বলবে কীভাবে? তাদের কি কোনো ‘প্ল্যাটফরম’ আছে? না, নেই।

বিসিএস (প্রশাসন), পুলিশ, কর কর্মকর্তা, ডাক্তার, উকিল সবারই সংগঠন আছে। এসব সংগঠন তাদের সুখ-দুঃখ দেখে। অন্যায় হলে প্রতিবাদ করে। আবার পেশার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্বও পালন করে। এমনকি এক ‘ট্যাংকার’ থেকে অন্য ট্যাংকারে পেট্রল, ডিজেল তোলার সময় কতটুকু বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, তা মাপার কর্মীদেরও সংগঠন আছে সুখ-দুঃখের কথা বলার জন্য। অসহায় ব্যাংকারদের তা নেই। তারা অসংগঠিত। তাদের সুখ-দুঃখের কথা বলার জন্য কোনো সংগঠন নেই, নেই কোনো ট্রেড ইউনিয়ন (সরকারি ব্যাংক বাদে)। অথচ তারা নীরবে কাজ করে যাচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা কর্মসূচির অধীনে রয়েছে বিরাট অর্থায়ন কর্মসূচি। অল্প সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ, ঋণপত্র খোলা, প্রকল্প অনুমোদন, যাচাই-বাছাই। সেই সঙ্গে আবার টাকা আদায়ের দুশ্চিন্তা। যে ‘ব্যাংক-ফান্ডে’ দেশের শিল্পায়ন এবং আজকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, যে ব্যাংকারদের সহযোগিতায় হাজার হাজার উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে, তারা দৃশ্যত অসহায়। অবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। আসার কারণ আছে।

বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবার স্বার্থই দেখেছে। ব্যাংক মালিকদের স্বার্থ দেখেছে, ব্যবসায়ী ও বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখেছে, ঋণ গ্রহীতাদের স্বার্থ দেখেছে। দেখেছে ঋণখেলাপিদেরও স্বার্থ। রুগ্ণ শিল্পের স্বার্থ, পাটশিল্প ও চামড়াশিল্পের স্বার্থ তারা দেখেছে। দেখেছে তাদের নিজেদের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের স্বার্থ। এমনকি বরখাস্তকৃত কর্মচারী-কর্মকর্তাদেরও তারা পুনর্বহাল করেছে চাকরিতে। তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোষ্যদেরও চাকরির ক্ষেত্রে অনুকূল দৃষ্টিতে দেখা হয়।

এসব করে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিকট-অতীতে তাদের সুনাম ও কর্তৃত্ব অনেকটা নষ্ট করেছে। বিশেষ করে আমানতের ওপর সুদের হার কমিয়ে তারা সমালোচনার শিকার হয়েছে। আরও অনেক ইস্যু আছে, যেসবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনাম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর কতিপয় সিদ্ধান্ত, যা গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে ইতিবাচক বলতেই হবে। প্রশংসাযোগ্য। এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। অনুমান করি, তার অনুমোদন ছাড়া এত বড় ও ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হতো না। সিদ্ধান্তগুলো কী?

অনেক সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়েছে। চাকরির নিশ্চয়তা, পদোন্নতি, সর্বনিম্ন বেতন ইত্যাদি ক্ষেত্র ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক খুঁটিনাটি বিষয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সার্কুলারে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রেক্ষাপটও বর্ণনা করেছে। বলা হয়েছে, ব্যাংকারদের উজ্জীবিত রাখার জন্য এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যে অনিয়মগুলো তারা বেসরকারি ব্যাংকে দেখেছে, তার উল্লেখও দেখলাম খবরগুলোতে। শুধু বর্তমান সিদ্ধান্তই নয়, কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘আমানতবান্ধব’ কতগুলো সিদ্ধান্তও নিয়েছে।

‘আমানতবান্ধব’ মানে আমানতকারীদের স্বার্থসম্পর্কিত সিদ্ধান্ত। সরকার করেছিল ৯-৬ সুদ নীতি। শিল্পায়নের স্বার্থে সরকার ঋণের ওপর সুদের হার করে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। পাশাপাশি আমানতের ওপর সুদের হার করে ৬ শতাংশ। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল, ব্যাংক কোনো আমানত গ্রহণ করছে না। আমানতে সয়লাব ব্যাংকগুলো। কারণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি নিরুৎসাহিত। এতে সুদ কমানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতম সীমা কমানো হয়েছে। কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারী/সঞ্চয়কারীরা ওদিকে যেতে পারছে না।

মানুষ ভয়ে শেয়ারবাজারে যায় না। যাচ্ছে ব্যাংকে। ব্যাংকে আমানতের ছড়াছড়ি। এই সুযোগে কী করা হলো? আমানতের ওপর সুদ ১-২-৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাথায় হাত। এ কী হলো? তারা হস্তক্ষেপ করল। বলা হলো, মূল্যস্ফীতির নিচে আমানতের ওপর সুদ দেওয়া যাবে না। এ সিদ্ধান্তের পর ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে বর্তমান সিদ্ধান্তগুলো নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।

আশাব্যঞ্জক বিশেষ করে একটি সিদ্ধান্ত। চাকরির নিশ্চয়তা। শৃঙ্খলাজনিত কারণ প্রমাণিত হওয়া ছাড়া চাকরিচ্যুতি ঘটানো যাবে না। ‘টার্গেট’ পূরণ হয়নি, ‘পারফরম্যান্স’ ভালো না ইত্যাদি নানা অজুহাতে কাউকে বরখাস্ত করা যাবে না। একই গ্রেডে ভিন্ন ভিন্ন বেতন দেওয়া যাবে না। পদোন্নতি নিয়মিত করতে হবে। এবং সর্বনিম্ন বেতনও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

কাগজে দেখলাম, ইতোমধ্যেই বেসরকারি ব্যাংকগুলো নাকি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে লোকসানের। নতুন নিম্নতম বেতন-ভাতা চালু হলে তাদের ব্যবসায় লোকসান হবে। এর থেকে বাঁচার জন্য তারা নানা রেয়াত দাবি করেছে। আমার মনে হয় এসব আলোচনার বিষয়। বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বসে এর একটা ফয়সালা করতে পারে।

কিন্তু যে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে, সেটি হচ্ছে চাকরির নিশ্চয়তা। ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে এবং যা বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণেও এসেছে তা হলো চাকরিচ্যুতি। বিষয়টি শুধু বেকারত্বের নয়, মানবিকও। বিশেষ করে এ করোনাকালে। এ সময়ে একজন মধ্যবয়সি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা শুধু অমানবিকই নয়, অনৈতিকও। সরকারি চাকরি যাওয়া কঠিন ব্যাপার। পদোন্নতি কঠোর নিয়মের মধ্যে হয়। সিনিয়রিটির বেশ মর্যাদা, পারফরম্যান্সের নিশ্চয়ই। এর বিপরীতে বেসরকারি চাকরিতে এত অনিশ্চয়তা থাকলে কীভাবে হবে?

ইতোমধ্যেই খবরে দেখলাম, শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা বেসরকারি খাতে চাকরিতে অনীহা দেখাচ্ছে। তারা নিশ্চিত জীবনের সরকারি চাকরি চায়। চাকরি শেষে পেনশনও পাওয়া যাবে। অথচ বেসরকারি ব্যাংক যখন ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে যাত্রা শুরু করে, তখন সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা চাকরি ছেড়ে বেসরকারি ব্যাংকে যোগদান করেছে। তখন বেসরকারি ব্যাংকে বেতন-ভাতা সরকারি ব্যাংকের তুলনায় ৩-৪ গুণ বেশি ছিল। গাড়ির সুবিধা ছিল। গ্যাস, বিদ্যুতের খরচ পাওয়া যেত। চাকরি ছিল নিশ্চিত। সবাই স্বাভাবিক নিয়মে ৫৮-৬০ বছরে অবসর গ্রহণ করেছে সব সুবিধা নিয়ে। তখনকার সময় একজন প্রবেশনারি অফিসারের প্রারম্ভিক বেতন ছিল ৩০-৪০ হাজার টাকা।

এই উদ্যোক্তা-ব্যাংকাররাই বেসরকারি ব্যাংকের ভিত রচনা করেছে। ব্যাংকও ছিল লাভজনক। এখন এমন কী হলো যে, বেসরকারি ব্যাংক, বেসরকারি খাতের চাকরি অনিশ্চয়তার চাকরি হয়ে দাঁড়িয়েছে? বেতন-ভাতা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুলনায় বরং এখন কম। সরকারি বেতন সম্প্রতি দ্বিগুণে উন্নীত করা হয়েছে। গাড়ির জন্য ঋণ দেওয়া হচ্ছে বিনা সুদে। ৫ বছরে তা শোধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অল্প সুদে বাড়ির ঋণের ব্যবস্থা হয়েছে। আরও কত কী? এতগুলো টাকা নিয়ে তারা অবসরে যায়, মাসে মাসে পেনশনও পায়। পেনশন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মৃত্যুর পর তার পরিবারও পাবে। সেই তুলনায় বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা এখন অনেক কম। বরং অনেক ব্যাংকে অনেক সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হয়েছে বলে কাগজে দেখি।

১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে বেসরকারি ব্যাংকে বেতনের স্কেল ছিল মাত্র ১০-১৫টি। সর্বনিম্ন বেতন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্য ছিল মাত্র ১০ গুণ। ১০ টাকা সর্বনিম্ন বেতন হলে সর্বোচ্চ ছিল ১০০ টাকা। তখনকার মালিকরা সমতার দিকে লক্ষ রাখতেন। বৈষম্য দূরীকরণে লক্ষ রাখতেন। বলতেন, ব্যাংক হচ্ছে মালিক-কর্মচারীদের মিলিত পরিবার (ফ্যামিলি)। পরিবার হিসাবে ধরে মালিকরা ব্যাংক চালাতেন। এতে ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি ঘটে ভালোভাবেই।

লক্ষণীয়, আজকের যারা উদ্যোক্তা/ব্যাংকের মালিক, বড় বড় ব্যবসা ও শিল্পের মালিক, তারা কিন্তু এই ব্যাংকারদেরই সৃষ্টি। তাদের উদার অর্থায়নে, সাহায্য-সহযোগিতার এ বিশাল উদ্যোক্তা শ্রেণি তৈরি হয়েছে-একথা কি অস্বীকার করার মতো? আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে ব্যাংক মালিকরা কেন ব্যাংকারদের ন্যায্য স্বার্থ দেখবেন না? দেখাই তো উচিত। এ প্রসঙ্গে একজন বেসরকারি খাতের বড় ব্যবসায়ীর কথা স্মরণ করতে পারি, যিনি প্রয়াত হয়েছেন।

একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মকর্তার চাকরি চলে যায় ‘অসদাচরণের’ জন্য। ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনি দুঃখে-কষ্টে পড়েন ও মালিকের কাছে যান। মালিকের নির্দেশে তিনি তার চাকরি ফেরত পান। এ প্রসঙ্গে একবার তিনি বললেন, ‘মানুষের পেটে লাথি মারতে নেই। মারলে ওপরওয়ালা নাখোশ হন।’ কী ভীষণ কথা, ভাবা যায়! ভাবা যায় এমন মালিকের কথা।

আমি আরেকজন মালিকের কথা জানি, যার একজন বিশ্বস্ত হিসাবরক্ষক ছিলেন আমার এক আত্মীয়। দুইদিন পরপর মালিকের ছেলের সঙ্গে তার বনিবনা হতো না। তিনি তার কথামতো ‘চেকে’ সই করতেন না। এমন হলে অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিতেন। মালিক নিজে এসে তাকে আবার অফিসে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেন। তিনি যখন মারা যান, তখন মালিক তার পারলৌকিক ক্রিয়াকাণ্ডের সব খরচ বহন করেন। তার সব পাওনা শোধ করেন। উপরন্তু ওই পরিবারের একজনকে চাকরি দেন।

এ ধরনের বেসরকারি খাত দেখতে দেখতে আমরা বড় হয়েছি। আমেরিকার ম্যানেজমেন্ট দেখিনি, শুনেছি। ‘ধরো, মারো, ছাড়ো’-এই হচ্ছে তাদের নীতি। ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’। তাদের ওই নীতি অন্ধের মতো অনুসরণের ফলেই কি আজকের বেসরকারি খাত এত আগ্রাসী হয়ে উঠছে? আমি জানি না। তবে জানি ওইসব নীতি পশ্চিমারা পর্যন্ত এখন ত্যাগ করছে। তাদের কর্মচারীরা ক্লান্ত-ভারাক্রান্ত, টার্গেটের ভারে ন্যুব্জ, অবসাদগ্রস্ত, হতাশ, মাদকাসক্ত। ডাক্তার, ওষুধ, হাসপাতাল, ইনজেকশন, টিকাই তাদের জীবন। একাকিত্ব তাদের পেয়ে বসেছে। কেউ বিয়ে করে না। কুকুর তাদের সঙ্গী। পরিবার বলতে কিছু নেই। বাবা-মার পরিচয় নেই।

এমন ‘নিউ রিয়েলিটি চাইল্ডে’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভরপুর। আমরা কি তাদের দেশের ব্যবস্থাপনা রীতি হুবহু অনুসরণ করে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে চাই? মনে হয় না। ইতোমধ্যেই বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা দেখা যাচ্ছে। তারা ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিসে ভুগছে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায়। অবসাদ, ডিপ্রেশনে ভুগছে। ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ তারা অন্ধকার দেখছে।

কোম্পানি আনুগত্য (লয়ালিটি) ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে। বলতে পারি, এসব কাম্য পরিস্থিতি নয়। শত হোক আমাদের বেসরকারি খাত উদীয়মান। এ খাতের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির নিশ্চয়তা দেবে, ন্যায্য বেতন-ভাতা-পদোন্নতি দেবে-এটিই জাতি চায়। মালিকরা তাদের সুখ-দুঃখ কর্মচারীদের সঙ্গে ভাগ করে নেবে-এটিও তারা চায়। আশা করা যায়, বেসরকারি খাত বিষয়টি ভেবে দেখবে।

ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম