Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

শতফুল ফুটতে দাও

দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কের রসায়ন

Icon

ড. মাহবুব উল্লাহ্

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কের রসায়ন

ভৌগোলিক এলাকা হিসাবে ভারতের পরিচিতি শুধু তার ধন-সম্পদ এবং জ্ঞান-সম্ভারের জন্য নয়। ভারতের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, দেশটিকে নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছে।

প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক হেগেল বলেছেন, ‘সুদূর প্রাচীনকাল থেকে আজকের দিন পর্যন্ত সব জাতি ভারতকে কেন্দ্র করে এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছে, যার লক্ষ্য ছিল এ অঞ্চলের মূল্যবান সম্পদ। ভারত পরিচিত ছিল মার্বেল পাথরের জন্য। মার্বেল একটি অত্যন্ত মূল্যবান পাথর।

এ ছাড়াও প্রকৃতি ভারতকে উজাড় করে দিয়েছে অনেক সম্পদ, যেমন মুক্তা, হীরা, সুগন্ধি দ্রব্য, গোলাপের নির্যাস, হাতি, সিংহ ইত্যাদি।

এ ছাড়াও ছিল মূল্যবান জ্ঞান সম্পদ। কিভাবে এসব সম্পদ পাশ্চাত্যের হাতে চলে গেল তা বিশ্ব ইতিহাসে একটি বড় ধরনের আলোচনা হয়ে উঠেছিল। এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল নানা জাতির ভাগ্য।’

হেগেল আরও বলেছেন অনেকটা অনুমোদনের ভাষায়, ‘ইংরেজরা অথবা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই ভূখণ্ডের প্রভু হয়েছে। কারণ ইউরোপিয়ানদের দাসত্বের শৃঙ্খলে এশীয় সাম্রাজ্যগুলো আবদ্ধ হয়েছিল এবং এটাই ছিল তাদের নিয়তি।’ বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে গান্ধী তার রচিত গ্রন্থ ‘হিন্দ্ স্বরাজ’-এ লিখেছেন, ‘‘ইংরেজরা ভারতকে নিয়ে যায়নি, আমরাই তাদের এটা দিয়েছি। তাদের শক্তিমত্তার বলে তারা ভারতে আসেনি। কিন্তু আমরাই তাদের বলেছি ‘কোম্পানি বাহাদুর’। কে তাদের বাহাদুর বানাল? এটা সত্য যে আমরা ভারতকে ইংরেজদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। ভারত হারিয়ে গেল।”

ভারতকে আমাদের হাতে নিয়ে আসা শুধু রাজনৈতিক সংগ্রামে সম্ভব হয়নি। আমাদের ধ্যান-ধারণার জগতেও সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিপিন চন্দ্র পাল তার ‘The Soul of India’ গ্রন্থে প্রাচীন ভারতের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে ভারত সম্পর্কে পশ্চিমের দেওয়া সংজ্ঞা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্য দেশ থেকে যে আগন্তুকরা আসত তারা এটাকে বলেছে ইন্ডিয়া অথবা সিন্ধুর দেশ। যার ফলে এর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য গুরুত্ব পেয়েছে। ভারতের সন্তানেরা ভারতকে ভালোবেসে বলত ভারতবর্ষ। ভারত নামে এক প্রাচীন রাজা ছিলেন সেই নাম থেকেই ভারত নামক দেশ। বিপিন পালের দৃষ্টিতে এটা কোনো ইন্ডিয়া অথবা ট্রান্সভালের মতো কোনো ভৌগোলিক সত্তা নয়, এমনকি গোত্রীয় কিংবা জাতিসত্তা নয়। এটাকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করা যায় না, অথবা এটা আর‌্যাবর্তও নয়। এর রয়েছে সুস্পষ্ট এবং নির্ভুল ঐতিহাসিক পরিচিতি যাকে রোমের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ইন্ডিয়া নামটি হয়তো বিদেশিরা দিয়েছেন, কিন্তু এর আবেগগত আকর্ষণ যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে পুঞ্জীভূত হয়েছে। ইরানি এবং আরবরা এ দেশটিকে সিন্ধু নদী অতিক্রম করে দেখতে পেয়েছিল। সিন্ধুর সঙ্গে মিল রেখে এটির নামকরণ করা হয়েছিল আল হিন্দ্ অথবা হিন্দুস্তান। যারা হিন্দুস্তানে বাস করত তাদের বলা হতো হিন্দু। ইন্ডিয়া অথবা ইন্ডিয়ান শব্দ দুটি যথাক্রমে গ্রিক, রোমান এবং ফার্সি থেকে ইংরেজদের গ্রহণ করা।

ধীরে ধীরে হিন্দু শব্দটি একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হতে থাকল। এই নামকরণ শুধু ভাষাগত সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। হিন্দু শব্দটি একটি একক ধর্মীয় সম্প্রদায়কে বোঝায় না। বিংশ শতাব্দীর মুসলিম কবি ড. ইকবাল উর্দু ভাষায় নিজের পরিচয় জানিয়েছিলেন হিন্দুস্তান নামক একটি দেশের মানুষ হিসাবে।

ইকবাল তার তারানাই হিন্দ্ (হিন্দ্-এর জাতীয় সংগীত) ১৯০৪ সালে রচনা করেন এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি তার জন্মভূমি সম্পর্কে প্রাণময় ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন, আমরা তারানাই হিন্দি থেকে দুটি লাইন উদ্ধৃত করতে পারি। ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা, ইয়ে হিন্দুস্তা হামারা, হাম বুলবুলি হ্যায় ইসকে, ইয়ে গুলিস্তা হামারা।’

গত শতাব্দীর আশির দশকে ইকবালের এ গানটিকে জাতীয় সংগীতরূপে গ্রহণ করার জন্য আলোচনার ঝড় উঠেছিল। অনেক ভারতীয় মত পোষণ করেছিলেন যে, রবীন্দ্রনাথের জনগণ মনো অধিনায়কো গানটি জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেতে পারে না। তারা যুক্তি দিয়েছিলেন, গানটি সম্রাট পঞ্চম জর্জের অভিষেক অনুষ্ঠানকে নিবেদিত করে রচিত হয়েছিল। তাই এ গান স্বাধীন ভারতের জাতীয় সংগীত হতে পারে না। অবশ্য এক পর্যায়ে এ বিতর্ক থেমে যায়।

ইকবাল পরবর্তী জীবনে ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমির দাবিতে অন্যতম প্রবক্তায় পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৪৭-এ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টির সময় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জিন্নাহ দৃঢ়ভাবে মনে করতেন, ভারত রাষ্ট্র থেকে পৃথক হয়ে পাকিস্তানের জন্ম হয়নি। তিনি মনে করতেন মুসলিমপ্রধান এলাকাগুলো ছাড়া ভারতীয় ইউনিয়ন হতে পারে না। ১৯৪৭ থেকে পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক চিন্তা এবং আদর্শবাদিতার দিক থেকে পাকিস্তানি জনগণের চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে। এদের মধ্যে উপমহাদেশের আত্মার মালিকানার দাবি তীব্রতর হয়েছে।

এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় যে, ইতিহাসের চাপে বিশেষ প্রেক্ষাপটে একটি জনগোষ্ঠী অন্য প্রেক্ষাপটে ইতিহাসবিহীন হয়ে উঠতে পারে। পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবিশারদরা গত ২০০ বছরে ভারত উপমহাদেশকে কেন্দ্র করে বিপরীতধর্মী প্রতিচ্ছবির কথা ভেবেছেন। অবশ্য শেষের দিকে এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। অন্যদিকে ভারত প্রশংসা পেয়েছে একটি প্রাচীন ভূমি হিসাবে, যার রহস্য এবং রোমান্স, অঢেল ধন-সম্পদ এবং গভীর আধ্যাত্মবোধ বিশেষভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করে। অন্যদিকে ভারতকে নিন্দা করা হয় যুক্তিহীনতা এবং অমানবিকতার জন্য। তার ওপর রয়েছে দারিদ্র্য ও দুস্থতা। এটা কি বিস্ময়কর নয় যে, এক সময়ের প্রবল প্রতাপান্বিত মহারাজা এখন কেরিকেচারে পরিণত এবং ভারতের জাতীয় এয়ারলাইন্স-এর অ্যাডভার্টাইজমেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়? যদি কোনো টেলিভিশনের দর্শক চ্যানেল পরিবর্তন করে সোপ অপেরাকে বাছাই করে অথবা নিউজে চলে যায় তাহলে তিনি দেখবেন তার কাক্সিক্ষত রাজমুকুটে খচিত মণি-মানিক্য পরিণত হয়েছে দুর্যোগ, বিভ্রান্তি এবং গোলযোগে। ভারতে যে দুর্যোগ এবং বিভ্রান্তি এখন দেখা যায় তার কাছে মণি-মানিক্য একান্তভাবে নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে। ভারতের ভয়াবহ দারিদ্র্য দেখলে মনে হয় না, এটি এক সময় ধন-সম্পদের দিক থেকে ঐশ্বর্যময় ছিল। ভারতে ধর্মীয় সংঘাত হয়। এসব সংঘাত সমাজের শান্তি কেড়ে নেয়, ধ্যানমগ্নতাকে নিরর্থক করে ফেলে এবং গৌতম বুদ্ধ এবং গান্ধীর বাণীকে মশকরায় পরিণত করে। এভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ উদ্ভট রকমের জটিলতা সৃষ্টি করে চলেছে।

একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিপরীতধর্মী প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি হয়েছে। ব্যতিক্রম বাদে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতিশীল, সেদেশে উচ্চ মার্গের বিলিয়নার উদ্যোক্তার আবির্ভাব ঘটেছে এবং শহরাঞ্চলে ভোগবাদী সংস্কৃতির বিস্ফোরণ ঘটেছে। গণচীনেও জাতীয় সমৃদ্ধি এসেছে এবং সেখানেও একটি সম্পদশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছে। এসব ছবির বিপরীতে ভারতে উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলে মাওবাদী বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষকরা ঋণ শোধ করতে না পেরে অথবা দু-বেলা খেতে না পেয়ে আত্মহত্যা করছে। এ থেকে বোঝা যায়, অসাম্য ও উৎকট পার্থক্য সমাজের বুননিকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বায়ন পরিস্থিতিকে অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি পাকিস্তানেও চলছে ভয়াবহ ওলটপালট। ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসবাদী হামলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য করে ফেলেছে। নয়-এগারোর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে কাতারে বসে তালেবানদের সঙ্গে সমঝোতা করে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ত্যাগ করে। এখন আফগানিস্তানে তালেবানদের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রলম্বিত যুদ্ধ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী অর্জন করেছে, তা আদৌ বোধগম্য নয়। সন্ত্রাসবাদী তালেবানরা আত্মহননকারী বোমা হামলা ঘটিয়ে শত শত মুসলমানকে হত্যা করেছে। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নয় এমন সব নিরপরাধ নারী-শিশু ও পুরুষদের হত্যা করে তালেবানরা কেমন ধরনের ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় তা আমাদের বুদ্ধি বিবেচনায় আসে না।

দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান কোনোরকম পিসমিল অ্যাপ্রোচে সম্ভব নয়। এ যেন সুফি কবি জালাল উদ্দিন রুমির অন্ধের হাতি দেখার দৃষ্টান্ত। ভারত উপমহাদেশের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হলে অন্ধের হাতি দেখার দৃষ্টান্ত এড়িয়ে চলতে হবে।

ভারতীয় উপমহাদেশকে দক্ষিণ এশিয়াও বলা হয়। নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য আজকাল ভারত উপমহাদেশের পরিবর্তে দক্ষিণ এশিয়া বলা হয়। দুটিই ভৌগোলিক পরিচয়। এ উপমহাদেশে বেশকিছু স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেপাল, আফগানিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপ। কেউ কেউ এর সঙ্গে মিয়ানমারকেও যোগ করতে চান, কারণ ১৯৩৫ পর্যন্ত মিয়ানমার ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল। ইন্ডিয়া নামটি খুব পুরোনো। দক্ষিণ এশিয়া বললে প্রাচীনতার রূপটি ধরা পড়ে না। কিন্তু এ নামটি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ। ভারত উপমহাদেশ বললে আমাদের মন-মগজে এমন একটি ধারণার উৎপত্তি হয়, যেখানে সূর্যরূপী ভারতকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে রাষ্ট্ররূপী ভারতের তুলনায় ক্ষুদ্রতর কিছু রাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়া শুধু তার জনগোষ্ঠীর ওজনকে বহন করে না, তার আছে পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস থেকে বিচ্যুতির অভিজ্ঞতা রাশি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সঙ্গে আধুনিকতাকে যুক্ত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রসঙ্গে বলা হয়, এর রয়েছে ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র্য। বিষয়টি আরও সঠিকভাবে বলা হবে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। বিশাল ঐক্যের সমতলে রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য।

পর্বতমালা ও সমুদ্রঘনিষ্ঠতা এ অঞ্চলকে অন্য অঞ্চল থেকে পৃথক রূপ দিয়েছে। তা সত্ত্বেও জনগণের মধ্যে সংস্কৃতি ও জীবনবোধে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ ২০টি প্রধান ভাষায় কথা বলে। এর মধ্যে রয়েছে দুই শতাধিক ডায়লেক্ট। অতীতকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়া বিশ্ব সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রেখেছে। এ অঞ্চলে পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মের অনুসারীদের দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বের অন্তত দুটি বড় ধর্মের অনুসারী এ উপমহাদেশে বিদ্যমান। প্রাচীন শেকড়, আধুনিক রূপান্তর এবং বহুবিধ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হিন্দু ধর্মকে রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে ভূমিকা পালনের সুযোগ দিয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি এখানে হলেও এর প্রবল উপস্থিতি নেই। উপমহাদেশে ইসলাম মহত্তর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্বের ১.৬৫ বিলিয়ন মুসলমানের মধ্যে একটি বড় অংশ এ উপমহাদেশে বাস করে। ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান নিয়ে মুসলমানদের সংখ্যা প্রতিটি দেশে ১৭৫ মিলিয়নের ঊর্ধ্বে। এ ছাড়াও রয়েছে জৈন, জরুথ্রুস্টের অনুসারী, খ্রিষ্টান এবং শিখ। একটা সময় ছিল যখন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এ অঞ্চলে বিরাজমান নির্বাচনি গণতন্ত্রের প্রশংসা করত। তবে প্রায় সব সময়ে এ অঞ্চলে কঠিন কর্তৃত্ববাদী শাসন ছিল বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। এ উপমহাদেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন জারি আছে। যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় অর্থাৎ রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে মুক্ত প্রতিযোগিতার সুবাতাস বইতে শুরু করে, তাহলে এ অঞ্চলে বিশ্বে নেতৃত্ব প্রদানকারী শক্তির উন্মেষ ঘটতে পারে।

মনে রাখতে হবে, এ অঞ্চলের দুটি দেশ আণবিক অস্ত্রের অধিকারী। এ কারণে আণবিক অস্ত্রের অধিকারী দেশ দুটি যাতে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে তার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সব ধরনের সংঘাতের অবসানের জন্য কাজ করতে হবে। সম্পর্ক গড়ে উঠবে সমতার ভিত্তিতে। আণবিক শক্তি ভারত ও পাকিস্তানের জন্য অবশ্যই একটি হুমকি, তবে অন্য রাষ্ট্রগুলোও এ অস্ত্রের রেডিয়েশন থেকে রক্ষা পাবে না। সে কারণে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র দেশগুলোকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র দুটির সঙ্গেও কূটনৈতিকভাবে এনগেইজ্ড হতে হবে।

ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম