শতফুল ফুটতে দাও
বাংলাদেশে কৃষির রূপান্তর কোন পথে

ড. মাহবুব উল্লাহ্
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষি-প্রশ্নে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে একটি মিল আছে। মিলটি হলো, উভয় ব্যবস্থার চূড়ান্ত লক্ষ্য বৃহদায়তন খামার ব্যবস্থা গড়ে তোলা। বৃহদায়তন খামারের নানাবিধ উপযোগিতা রয়েছে। যেমন খামারে উৎপাদনের জন্য যন্ত্রপাতির ব্যবহার। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে ট্রাক্টর, কমবাইন্ড হার্ভেস্টার, সিডার, প্লান্টিং মেশিন এবং পোকামাকড় দমনের জন্য উড়োজাহাজ থেকে ওষুধ নিক্ষেপ।
কৃষিতে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য চাই বৃহদায়তন খামার। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রায় সবার জানা একটি বৈশিষ্ট্য হলো এদেশের কৃষি জোতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লটে বিভক্ত। কৃষি জোতের খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাওয়ার মূলে রয়েছে উত্তরাধিকার আইন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে কৃষি প্লটগুলো ক্ষুদ্রতর হচ্ছে।
বিষয়টি শুধু প্লটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কালের প্রবাহে কৃষি খামারগুলো ছোট হয়ে আসছে। এ রকম অবস্থায় কৃষিতে যন্ত্রায়ণ সার্থকভাবে করা সম্ভব হয় না। গত ৩-৪ দশকে দেখা গেছে, বাংলাদেশের কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশের কৃষি প্লটগুলো ক্ষুদ্র হওয়ার ফলে বড় আকারের ট্রাক্টর ব্যবহার করা সম্ভব হয় না, এর পরিবর্তে ব্যবহার করতে হয় পাওয়ার টিলার। এতে জমি কর্ষণের কাজ সহজতর হলেও প্রযুক্তির পূর্ণমাত্রার উপযোগিতা লাভ করা সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশে কিছু এলাকায় ক্ষুদ্র যন্ত্র ব্যবহার করে রোয়া রোপণের কাজ করা হয়। ধান কাটার পর গুচ্ছ আকারে কাটা ধান কাঁধে করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার যে দৃশ্য আমাদের চিরপরিচিত ছিল, সে দৃশ্য এখন লোপ পেতে শুরু করেছে। এখন কৃষকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজ বাড়িতে ফসল নিয়ে যেতে ভ্যান গাড়ি ব্যবহার করে। বাড়িতে নেওয়ার পর ধান মাড়ার কাজে গরুর ব্যবহার প্রায় উঠে গেছে।
এখন ধান মাড়ানোর কাজটি সারা হয় স্টিলের স্পাইকখচিত এক ধরনের কাঠের তৈরি গোলাকৃতি যন্ত্র ব্যবহার করে। এর ফলে ধান মাড়াই করতে শ্রমের ব্যবহার কমে গেছে। নারী শ্রমিকরা, যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিল ঘরের মানুষ, তারা মুঠি মুঠি ধানের গোছা হাতে কাঠের বেঞ্চিতে পিটিয়ে গুচ্ছ থেকে ধানগুলো আলাদা করত। এ কাজটি নারীরা প্রয়োজনে রাত জেগেও করত। এখন ছোট আকারের থ্রেশার মেশিন বা মাড়াই কলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ফলে পারিবারিক নারী শ্রমের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে। ধান ভানার কাজটি এখন রাইস মিলে করা হয়।
একটা সময় ছিল যখন প্রায় প্রত্যেক কৃষকের গৃহস্থালিতে ঢেঁকির ব্যবহার দেখা যেত। এখন ঢেঁকি প্রায় নির্বাসিতই বলা যায়। তবে পিঠা পায়েশ তৈরি করার জন্য চাল গুঁড়া করার কাজে এখনো কিছু কিছু ঢেঁকির ব্যবহার দেখা যায়। চাল গুঁড়া করার কাজটিও এখন রাইস মিলে করা হয়। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে কৃষিতে যন্ত্রায়ণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এ যন্ত্রায়ণ এসেছে বাস্তব পরিস্থিতির চাপে। হালের বলদ ব্যয়বহুল হওয়ায় জমি চাষের জন্য পাওয়ার টিলারের ব্যবহার শুরু হয়েছে।
গ্রামাঞ্চলে এখনো কৃষি মজুররা রোয়া রোপা এবং ধান কাটার মাঝামাঝি সময়ে বেকার থাকে। কিন্তু ফসলের ভরা মৌসুমে, যেমন জমি প্রস্তুতকরণ, রোপণ এবং ধান কাটার সময় শ্রমের চাহিদা এতটা বেড়ে যায় যে, শ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। এ সমস্যা থেকে উতরানোর জন্য জমির মালিকরা নানা ধরনের বন্ধনে খেতমজুরদের বেঁধে ফেলার প্রয়াস পায়। এ বেঁধে ফেলার কাজটি ঋণ প্রদানের মাধ্যমে সম্পন্ন করার চেষ্টা হয়।
বছরের যেসব সময়ে খেতমজুররা পর্যাপ্ত কাজ পায় না, তখন তারা জমির মালিকদের কাছ থেকে ধার-কর্জ করে কালাতিপাত করে। জমির মালিকরা ঋণের শর্ত হিসাবে বলে দেয় ঋণ পরিশোধ করতে হবে ধান কাটার মৌসুমে মেহনত দিয়ে। প্রায়ই দেখা যায়, ঋণের বিনিময়ে শ্রম দিতে গিয়ে খেতমজুররা বাজার নির্ধারিত মজুরির চেয়ে কম মজুরি পায়। এর মধ্যেই থাকে ঋণের লুক্কায়িত সুদ।
বাংলাদেশে কৃষিতে যন্ত্রায়ণের যে সূচনা হয়েছে, সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে না, জমি খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বহাল থাকার ফলে। এ অবস্থায় কৃষির উৎপাদন কাম্য পর্যায়ে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন বৃহদায়তন খামার। কিন্তু এটা কী করে সম্ভব হবে? এমন একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের কৌশলের কথা ভাবতে পারি।
আজ থেকে ৪০-৪৫ বছর আগে বাংলাদেশে ভূমি সংস্কারের ইস্যুটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। তখন ভূমি সংস্কার করা হলে বেশকিছু উদ্বৃত্ত ও খাস জমি প্রান্তিক কৃষক ও খেতমজুরদের মধ্যে বিতরণ করা সম্ভব হতো। যারা ভূমি বিতরণের ফলে উপকৃত হতো তাদের ওপর সমবায়ভিত্তিক কৃষিকাজের শর্ত আরোপ করা যেত।
কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব নয়। কারণ, কৃষি জোতের আকার ক্ষুদ্রতর হয়ে গেছে এবং অনেক কৃষি জমি কৃষিবহির্ভূত ব্যবহারে চলে গেছে। এ কারণে ভূমি সংস্কারের ইস্যুটি রাজনৈতিক মহলের কাছ থেকে উত্থাপিত হচ্ছে না। এমনকি বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো এক সময় ভূমি সংস্কারের প্রশ্নে সরব থাকলেও এখন তাদের মুখে ভূমি সংস্কারের কথা শোনা যায় না।
বাংলাদেশে এখন নতুন একটি প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে। দেখা যায় অনেকে বড় আকারে সবজির চাষ, ফুলের চাষ, ফলের চাষ, চা পাতার ও মাছের চাষ করছে। ইদানীংকালে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উচ্চমূল্যের ফসলের আবাদ করতে বড় আকারের জমির ব্যবহার হচ্ছে। এ জমি কীভাবে সংগ্রহ করা হলো তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে খামারিরা লিজ নিয়েছে বলে দাবি করে। কীভাবে অন্য জমির মালিককে লিজ দিতে সম্মত করানো হলো, সে সম্পর্কে কোনো খবর দেখা যায় না।
এ রকম লিজ নেওয়ার জন্য লিজগ্রহীতা এবং লিজদাতার মধ্যে এক ধরনের অসম সম্পর্ক কাজ করছে বলে মনে করা অযৌক্তিক হবে না। দেখা গেছে এ ধরনের খামারিরা খুবই সফল হয়েছে। কৃষি কাঠামোর রূপান্তরে নতুন ধরনের এ প্রক্রিয়াটি কতদূর গড়াবে তা এখনই বলে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে নতুন একটি উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার দাবি করছে খাদ্যশস্য উৎপাদনে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু খাদ্যশস্য আমদানির পরিমাণ এ দাবির যথার্থতা নাকচ করে দেয়। যদি উচ্চমূল্যের ফসল আবাদের জন্য খাদ্যশস্যের জমি ব্যবহারের এসব প্রক্রিয়া থাকে, তাহলে খাদ্যশস্য নিয়ে উদ্বেগ আরও ঘনীভূত হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৩-৮৪ সালে কৃষি খামার ছিল মোট গৃহস্থালির ৭২.৭০ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে এটি হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬.১৮ শতাংশে এবং ২০০৮ সালে তা আরও কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮.৬৬ শতাংশে। এ তথ্যের তাৎপর্য হলো, কৃষির ওপর নির্ভরশীল গৃহস্থালির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, বৃহৎ খামার যার আকৃতি ৭.৫০ একর বা তার ঊর্ধ্বে সেগুলোর শতকরা হার ১৯৮৩-৮৪-তে ছিল ৮.৬৭ শতাংশ, ১৯৯৬-তে ছিল ১০.১৮ শতাংশ এবং ২০০৮-এ ছিল ৯.৫৮ শতাংশ। কৌতূহলের বিষয় হলো, ১৯৯৬-তে এ ধরনের খামার ১৯৮৩-৮৪-এর তুলনায় বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮-এ নিম্নমুখী হয়েছে।
কী কারণে অন্তর্বর্তী সময়ে বড় খামারগুলো একবার বৃদ্ধি পেল, তারপর হ্রাস পেল, এর কারণ জানাটা খুবই জরুরি। এ থেকেই বাংলাদেশে জমি সঞ্চয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যাবে। মাঝারি খামার (২.৫০-৭.৪৯ একর) ১৯৮৩-৮৪-তে ছিল ২৪.৭২ শতাংশ, ১৯৯৬-তে ছিল ১৭.৬১ শতাংশ এবং ২০০৮-এ ছিল ১৪.১৯ শতাংশ।
স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, মাঝারি আকারের খামারগুলো হ্রাসমান। ছোট খামারের (০.০৫-২.৪৯ একর) শতকরা অংশ ১৯৮৩-৮৪-তে ছিল ৭০.৩৪, ১৯৯৬-তে ছিল ৭৯.৮৭ এবং ২০০৮-এ ছিল ৮৪.২৭। ছোট খামারের সংখ্যা সময়ের প্রবাহে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়, কৃষিতে নিঃশ্বায়ন প্রক্রিয়া তীব্রতর হচ্ছে। কৃষির এ বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে আমাদের ভাবতে হবে বাংলাদেশে কৃষির রূপান্তর কোন পথে আসবে?
কৃষির রূপান্তর সম্পর্কে যেসব তত্ত্ব রয়েছে তার ভিত্তিতে মোটা দাগে বলা যায়-রূপান্তর প্রক্রিয়া দুই ধরনের। এর একটি হলো বলপূর্বক কৃষি থেকে কৃষকদের বিতাড়ন। ইংরেজি ভাষায় এ বিতাড়নকে বলা হয়, Expropriation. দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি হলো বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্র জোতের কৃষকদের বিলুপ্তি এবং বৃহৎ জোতের কৃষকদের আবির্ভাব। বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতি কৃষি জোতের বিলুপ্তি ঘটে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হওয়ার মাধ্যমে।
ক্ষুদ্র জোতের মালিকরা একপর্যায়ে তাদের প্রতিযোগিতার শক্তি হারায় উপকরণ, বিশেষ করে আধুনিক উপকরণ সংগ্রহের সামর্থ্য না থাকার ফলে। ক্ষুদ্র কৃষকরা তাদের প্রতিযোগিতার শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চালায় জমিতে নিবিড়ভাবে শ্রম ব্যবহার করে। কৃষিতে যতই আধুনিক উপকরণের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, সেগুলো ক্ষুদ্র কৃষকরা সামর্থ্যরে অভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে তাদের উৎপাদিকা শক্তিও হ্রাস পায়।
এ গরিব কৃষকরা জানে, শহরে যে গতিতে শিল্প ও সেবা খাতভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, তা প্রায় ডুবন্ত ক্ষুদ্র কৃষকদের রক্ষা করার জন্য খুবই অপ্রতুল। ক্ষুদ্র কৃষকরা আপ্রাণ চেষ্টা করে তাদের ক্ষুদ্র জমির টুকরোগুলো ধরে রাখতে। এর জন্য তারা ক্ষুধার চাবুকে জর্জরিত হওয়ার জীবন-কৌশল বেছে নেয়।
কিন্তু এক পর্যায়ের পর এ কৌশল অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। কত আর পারা যায় উপবাস করে কিংবা আধপেটা খেয়ে! এ রকম পরিস্থিতিতে ক্ষুধা-জর্জরিত খুদে খামারিদের একটি বহুল আলোচিত কৌশল হলো কৃষিবহির্ভূত কর্মসংস্থান অন্বেষণ করা। যারা এ অন্বেষণে সফল হয় তারা তাদের কৃষি জমিটি বেশ কিছুকাল ধরে রাখতে সক্ষম হয়। কিন্তু যারা কৃষিবহির্ভূত খাত থেকে আয়-রোজগার করতে পারে না, তারা ভয়ানক জীবন-দুর্যোগের মুখোমুখি হয়।
২০১০ সালে কৃষিতে কাজ করত কর্মসংস্থানে জড়িত শ্রমশক্তির ৪৭.৫ শতাংশ। ম্যানুফেকচারিং, নির্মাণ কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহণ, জনপ্রশাসন ও দেশ রক্ষা এবং অন্যান্য কাজে একই সময়ে নিয়োজিত ছিল যথাক্রমে ১২.৪, ৪.৮, ১৫.৫, ৭.৪, ৪.৩ এবং ৮.১ শতাংশ। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (রিভার সাইড) ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রফেসর এ. আর খান তার এক গবেষণা প্রবন্ধে লিখেছেন, শ্রমশক্তির নিয়োগ বিন্যাসে ১৯৯৯-২০০০ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য ত্রুটিপূর্ণ। সে কারণে তিনি ম্যানুফেকচারিংয়ে ৯.২ শতাংশ নিয়োজিত বলে হিসাব কষেছেন।
এ হিসাব পূর্ববর্তী বছর এবং পরবর্তী বছরের মধ্যে ইন্টারপোলেশন করে নির্ণয় করা হয়েছে। এ হিসাব অনুযায়ী বলা যায়, ম্যানুফেকচারিংয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫ শতাংশ এবং চলতি মূল্যে জিডিপিতে এর হিস্যা ৩৬ শতাংশ। এ তথ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি ধারণা করেন, তৈরি পোশাকের মতো শ্রমনিবিড় ম্যানুফেকচারিংয়ের বিকাশের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু ইদানীংকালে পোশাকশিল্প মালিকরা বলছেন, এ শিল্পে অটোমেশন এবং অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পোশাকশিল্প খাতের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি রুদ্ধ হয়ে গেছে। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে প্রয়োজন অধিকতর দক্ষ শ্রমিক। সংখ্যা কম হলেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম।
এ থেকে অনেকেই অনুমান করছেন, এখন পোশাকশিল্প খাতে উৎপাদন বাড়ছে বটে, কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ছে না। এটা হয়ে উঠেছে কর্মসংস্থানহীন একটি কর্মকাণ্ড, যাকে অর্থনীতির পরিভাষায় বলা হয় ‘জবলেস গ্রোথ’। দেখা যাচ্ছে কৃষকদের ভাগ্য অনেকাংশে শিল্প ও সেবা খাতে ব্যবহৃত প্রযুক্তির দ্বারা নির্ধারিত হয়।
বাংলাদেশে কৃষির রূপান্তর ঘটছে নিশ্চিত পথে, কিন্তু ধীরগতিতে। প্রশ্ন হলো, এ রূপান্তরের মূল বৈশিষ্ট্য কী? মূল বৈশিষ্ট্যটি একমুখী কিছু নয়। আজ যে প্রক্রিয়া দৃশ্যমান, তার ভিত্তিতে বলা যায় বাংলাদেশের কৃষিতে দুটি ধারাই প্রক্রিয়াশীল। এ ধারাগুলো হলো Expropriation এবং
Differentiation. দুটি ধারার মধ্যে বাংলাদেশে এক ধরনের ফিউশন লক্ষ করা যায়।
ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ