একজন বৈমানিকের বর্ণনায় ৩ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহ
নাজমুল আহসান শেখ
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নভেম্বর ১৯৭৫ সাল। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর আড়াই মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ বঙ্গভবনে পাকাপোক্তভাবে গেড়ে বসেছে।
১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই খুনি মোশতাক ও ফারুক-রশিদ গং সেনাবাহিনীর ‘চেইন অফ কমান্ড’ ভেঙে ট্যাংক দ্বারা বেষ্টিত অবস্থায় বঙ্গভবনে অবস্থান করছিল। কর্নেল ফারুকের নেতৃত্বাধীন ‘বেঙ্গল ল্যান্সারে’র ট্যাংকগুলো বঙ্গভবনের চতুর্দিক ঘিরে রেখেছিল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকে অবস্থান গ্রহণ করেছিল। বেশ কিছুদিন ধরেই অনুমান করা হচ্ছিল, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
৩ নভেম্বর : ২-৩ নভেম্বর মধ্যরাতে মেজর ইকবালের অধীনস্থ বঙ্গভবন পাহারায় নিয়োজিত প্রথম বেঙ্গলের কোম্পানি কোনো কারণ দর্শানো বা বঙ্গভবনের নির্দেশ ছাড়াই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ফিরে গেলে শুরু হলো খালেদ মোশাররফ আর শাফায়াত জামিলের বহুল আলোচিত ‘চেইন অফ কমান্ড প্রতিষ্ঠার’ অভিযান বা ৩ নভেম্বরের পালটা অভ্যুত্থান।
৩ নভেম্বরের এ অভ্যুত্থানের ফলে খুনি মোশতাক ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, মোশতাক ও তার সহযোগীদের অপসারণ করা হয় ক্ষমতা ও বঙ্গভবন থেকে। ৩ নভেম্বর রাতে ফারুক, রশিদ, ডালিম গং দেশত্যাগে বাধ্য হয়। বলা যেতে পারে, এর মধ্য দিয়ে এ অভ্যুত্থানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য সাধিত হয়, যার নেপথ্যে মূল নায়ক ছিলেন কর্নেল শাফায়াত জামিল বীর বিক্রম, মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত আলী খান বীর উত্তম এবং বিমানবাহিনীর আরও কয়েকজন অসম-সাহসী বৈমানিক, কর্মকর্তা ও বিমান সেনা!
গত কয়েক দশক ধরে আমি বিমানবাহিনীর সেই সব সাহসী বৈমানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং তাদের কাছ থেকে সেদিনের ঘটনাবলি তাদের মুখ থেকে শুনেছি। সেদিনের বিমানবাহিনীর অসম-সাহসী বৈমানিকদের একজন হচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট লে. ইকবাল রশীদ। ফ্লাইট লে. ইকবাল রশীদ (অবসরপ্রাপ্ত) নভেম্বরের দিনগুলোর সেই ঘটনাবলি সম্প্রতি আমার কাছে ইংরেজিতে বর্ণনা করেছেন; তারই বাংলা অনুবাদ তুলে ধরছি পাঠকের সামনে [অনুবাদক/লেখক]।
৩ নভেম্বরের পটভূমি : একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির পিতা এবং তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমার কাছে ছিল একইসঙ্গে প্রচণ্ড রকমের আঘাত ও বিস্ময়, যা আমি কখনোই মেনে নিতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে খুনি মোশতাক ও তার সামরিক-বেসামরিক সহযোগীরা বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের মতবাদকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে ফেলে। ‘দেশের আদর্শ’ বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে চরম ডানপন্থি জাতীয়তাবাদে পরিণত হয়ে যায়। সে সময় সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ বপন করা হয়েছিল, বর্তমানে তা বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দেশগুলো যেমন চীন ও সৌদি আরব মোশতাক সরকারকে সঙ্গে সঙ্গে স্বীকৃতি প্রদান করে! এক সময়কার আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও তার সহযোগী সেনাবাহিনীর পাকিস্তানপন্থি এবং সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্তকৃত কর্মকর্তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আদলে ধর্মভিত্তিক এক রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করে। আশ্চর্যজনকভাবে এ ন্যক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ হয়নি। ঘটনার আকস্মিকতায় সমগ্র জাতি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল সেদিন। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী বড় সংগঠনগুলোও ছিল নিশ্চুপ! নেতাদের অনেকেই বন্দি হয়েছিলেন অথবা আত্মগোপন করেছিলেন। একমাত্র কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমই ছিলেন ব্যতিক্রম। এজন্য এই সাহসী সন্তানকে অভিবাদন জানাই।
মোশতাক অতিদ্রুত পাকিস্তানপন্থি কর্মকর্তাদের (নিয়তির পরিহাস, বঙ্গবন্ধু এসব কর্মকর্তাকে ক্ষমা করেছিলেন) দ্বারা সম্পূর্ণ প্রশাসন ঢেলে সাজান। এমনকি পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা এবং পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেন। উদাহরণস্বরূপ, পরবর্তীকালে তাদের একজনকে (যিনি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন) পররাষ্ট্র সচিব পদে উন্নীত করা হয়!
১৫ আগস্ট সকাল : অনেকের মতোই এয়ার ভাইস মার্শাল খন্দকার, মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান এবং মেজর জেনারেল দাস্তগীর মোশতাক সরকারের প্রতি সঙ্গে সঙ্গেই আনুগত্য প্রকাশ করেননি। বলার অপেক্ষা রাখে না, তারা সবাই সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন! এয়ার কমডোর এমকে বাশার বিমানবাহিনীর সব অফিসারকে তেজগাঁও অফিসার্স মেস এলাকায় জড়ো করেন এবং এয়ার ভাইস মার্শাল খন্দকারের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। সেসময় কেউ নিশ্চিত ছিলেন না কী ঘটেছে এবং রেডিওতে মেজর ডালিমের ঘোষণা আদৌ সত্য কিনা। এয়ার ভাইস মার্শাল খন্দকার তখন আমাকে ডাকলেন (আমি আজ পর্যন্ত জানি না কেন, হয়তো শেখ কামালের সঙ্গে আমার পূর্বপরিচয় থাকার কারণেই অথবা বিপজ্জনক কাজের উপযুক্ত মনে করে) এবং জিজ্ঞাসা করলেন, রেডিওতে যা ঘোষণা করা হয়েছে, আমি কি তা নিশ্চিত করতে পারি? আমি বললাম, ‘শুধু ৩২ নম্বরে গিয়েই তা নিশ্চিত করা সম্ভব।’ [এখানে উল্লেখ্য, ফ্লাইট লে. ইকবাল রশীদ শাহীন স্কুলে শেখ কামালের দুই বছরের সিনিয়র ও পরিচিত ছিলেন এবং বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তিনি মুক্তিযুদ্ধে পদাতিক বাহিনীর অফিসার হিসাবে ৬ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। -অনুবাদক/লেখক]
আমি তখন ফ্লাইট লে. কাইউম এবং ফ্লাইং অফিসার জামানসহ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যাই। বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ঘিরে রাখা সৈনিকরা প্রথমে আমাদের ভেতরে ঢুকতে অনুমতি দেয়নি। কিন্তু সেখানে আমি আমার পূর্বপরিচিত ৬ নম্বর সেক্টরের সহকর্মী অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহরিয়ারকে দেখতে পাই, যিনি সম্পূর্ণ বাসভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। আমি তার কাছে গেলে তিনি আমাকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেন।
কী অতিসাধারণ ছিল প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন! ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে আমরা দেখলাম সেই নারকীয় হত্যা ও খুনের অবর্ণনীয় দৃশ্য : মৃতদেহগুলো সর্বত্র ছড়িয়ে আছে, যাকে যেখানে হত্যা করা হয়েছে, ঠিক সেখানেই পড়ে আছে, কাউকেই সরিয়ে নেওয়া হয়নি; বঙ্গবন্ধু সিঁড়ির ওপর পড়ে রয়েছেন! এ দৃশ্য আমি সারা জীবনে ভুলতে পারব না। মানুষ কীভাবে এত নিষ্ঠুর ও নির্মম হতে পারে? অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারীরা সবকিছুর ছবি তুলে রেখেছিল, যা আমাকে দেখায়। এর মধ্য দিয়েই প্রমাণ হয় এ অভ্যুত্থানের পেছনে ছিল কোনো মহাপরিকল্পনাকারী।
১৫ আগস্টেই আমরা বিমানবাহিনীর কিছু সদস্য এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম; কিন্তু বিশ্বাস করার মতো কোনো নেতাকে পাওয়া যায়নি। সবাই বিভ্রান্ত, কেউ জানত না কী করণীয়। তাই সবাই অনেকটা ভেড়ার পালের মতো আচরণ করছিল। এ অবস্থায় আমরা জুনিয়র অফিসাররা সিদ্ধান্ত নিলাম, যা করণীয় তা আমাদেরই করতে হবে।
সেপ্টেম্বরের শেষদিকে স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত আলী খান (বীর উত্তম) আমার স্কোয়াড্রনে আসেন এবং আমাকে জিজ্ঞাস করেন, বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি কী ভাবছি? আমি বরাবরের মতোই বললাম, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার কী পরিকল্পনা?’ তিনি বললেন, ‘যে কোনো মূল্যে সামরিক বাহিনীর চেইন অফ কমান্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে এ হত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে। সেনা (পদাতিক) বাহিনী এ হত্যার প্রতিশোধ নিতে উন্মুখ, কিন্তু ট্যাংকের বিরুদ্ধে তাদের বিমানবাহিনীর সাহায্য প্রয়োজন।’ আমি তখন প্রশ্ন করলাম, ‘কে এই অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘মেজর জেনারেল জিয়া।’ আমি তখন জানতে চাইলাম, ‘বিমানবাহিনীর কী হবে!’ আমি আরও জিজ্ঞেস করলাম, ‘বিমানবাহিনী প্রধান কে হবেন?’ কারণ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার জন্য এয়ার ভাইস মার্শাল তওয়াবকে আমি পছন্দ করতাম না। তিনি বললেন, ‘গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম।’ (অনুবাদক ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের বিখ্যাত বীর বৈমানিক)
লিয়াকতের যুক্তি ছিল-সব পুরোনোদের বদলে নতুন রক্ত সঞ্চালিত করতে হবে। আমি এ ধারণার সঙ্গে ঠিক একমত হতে পারিনি। কারণ আমি আমার মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এয়ার কমডোর বাশারের কথা ভাবছিলাম। লিয়াকত বললেন, ‘এয়ার কমডোর বাশারকে অ্যাম্বাসেডর বানানো হবে।’ আমি তখন লিয়াকতকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমার কী করণীয়?’ লিয়াকত বলল, ‘দুটি এমআই আট হেলিকপ্টার অস্ত্র, গোলাবারুদ ও ক্রুসহ প্রস্তুত করতে হবে; মিগ ২১ স্কোয়াড্রন এবং ক্রু প্রস্তুত।’ আমি লিয়াকতকে বললাম, ‘আমার দুই দিনের সময় দরকার, কোনো ধরনের কমিটমেন্ট করার আগে।’ আমি এয়ার কমডোর বাশারের সঙ্গে দেখা করলাম এবং সংক্ষেপে আমাদের পরিকল্পনার কথা জানালাম। তিনি জানতে চাইলেন, ‘এই অভিযানের নেতৃত্ব কে দিচ্ছেন?’ জানালাম, ‘জিয়াউর রহমান।’ তিনি তখন সম্মতি দিলেন। এয়ার কমডোর বাশার ১৯৭১ সালে আমার সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এবং তার প্রতি আমার শর্তহীন আনুগত্য ছিল। তার সম্মতি পাওয়ার পর আমি লিয়াকতকে আমার পক্ষ থেকে আমার কমিটমেন্ট নিশ্চিত করলাম এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করলাম।
লিয়াকত খুবই উৎসাহী ছিলেন এবং সবসময় বলতেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বদলা নিতে হবে। আমিও কোনো কিছুর পরোয়া করিনি, কারণ আমারও একই উদ্দেশ্য ছিল। আমার ধারণা ছিল, এ সামরিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর চেইন অফ কমান্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সঙ্গে সঙ্গে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, কামরুজ্জামান, মনসুর আলীসহ বেসামরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে; এবং অন্যসব জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ধারাও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
এ কাজের জন্য আমাদের বিমানবাহিনীর প্রয়োজন ছিল সেনা (পদাতিক) বাহিনীর, এবং সেনা (পদাতিক) বাহিনীর প্রয়োজন বিমানবাহিনীর সাহায্য। গতিশীল ট্যাংকের বিরুদ্ধে পদাতিক বাহিনীর জন্য ‘ট্যাংক বাস্টার’ হিসাবে বিমানবাহিনীর সাহায্য ছিল অপরিহার্য। তাই আমরা সেনা (পদাতিক) বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় শুরু করি। পদাতিক ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিল এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দিতে সম্মত হয়েছিলেন, কিন্তু শর্ত ছিল তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করলেই তিনি সম্মত আছেন। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড নীতি ও আদর্শবান একজন মানুষ। তিনি বিমানবাহিনীর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন; কারণ ট্যাংক বাহিনী শুধু বিমানবাহিনীকেই ভয় পায় ও সমীহ করে। অভিযান শুরুর জন্য বিমানবাহিনী প্রস্তুত হয়ে যায়, সব পরিকল্পনা চূড়ান্ত। কিন্তু পদাতিক বাহিনী প্রস্তুত ছিল না, সমগ্র অভিযানের কে নেতৃত্ব দেবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না থাকায়।
এ অবস্থায় মেজর ইকবালের (পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টির মন্ত্রী) বাসায় একদিন আমি, লিয়াকত ও মেজর হাফিজ যখন আলাপ করছিলাম, তখন মেজর ডালিম সেখানে আচানক উপস্থিত হয় এবং প্রশ্ন করে, ‘এখানে কী হচ্ছে?’ আমরা সেটাকে সামাজিক আড্ডা বলে চালিয়ে দিলেও আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না যে, মোশতাক সরকার আমাদের সম্পর্কে অবহিত আছে। ৪৬ পদাতিক ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিলকে রাজি করানোর জন্য আমাদের ঊর্ধ্বতন কাউকে প্রয়োজন ছিল। আমাদের পরিকল্পনা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হওয়ায় আমরাও মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম।
জিয়া রাজি না হওয়ায় (আরও অপেক্ষা করার পক্ষে ছিলেন) তৎকালীন সিজিএস খালেদ মোশাররফই আমাদের পরবর্তী গ্রহণযোগ্য সিনিয়র অফিসার হিসাবে পরিগণিত হন। কর্নেল শাফায়াত জামিল এবং মেজর হাফিজ তাকে প্রস্তাব দিলে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই সম্মতি দেন। খালেদ মোশাররফ সম্মত হলে আমি তখন অভিযান শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্রু, টেকনিশিয়ান, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, অন্যান্য বিমান-সেনা, গোলাবারুদ ও রসদ নির্বাচন ও সংগ্রহ শুরু করে দেই। এয়ার ক্রুদের মধ্যে ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার বদরুল আলম (বীর উত্তম), ফ্লাইট লে. কাইউম, পাইলট অফিসার দিদার এবং আমি। অক্টোবরের মধ্যেই পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়ে যায়। (বাকি অংশ আগামীকাল)
নাজমুল আহসান শেখ (অনুবাদক/অনুলেখক) : মুক্তিযুদ্ধ গবেষক