Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় অগ্রযাত্রার বাইশ বছর

Icon

ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় অগ্রযাত্রার বাইশ বছর

আজ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরের বছরই সরকার সিদ্ধান্ত নেয়- যে পুরনো জেলাগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সেগুলোতে একটি করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। ফলে টাঙ্গাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

এ অবস্থায় সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (সইবি) ট্রাস্টি বোর্ড সরকারের কাছে সন্তোষেই একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করে। সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, টাঙ্গাইল এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আরও গতি লাভ করে।

অবশেষে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক সন্তোষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন। শুরু হয় দেশের ১২তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা। মাওলানা ভাসানী তার জীবদ্দশায় সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। মৃত্যুর পর তার মাজার প্রাঙ্গণে তারই নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

২০০১ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে ‘মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১’ পাস হয়। ২০০২ সালের ২১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইউসুফ শরীফ আহমেদ খানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন

টেকনোলজি- এ দুটি বিভাগে ৮৩ জন শিক্ষার্থী এবং ৫ জন শিক্ষক নিয়ে ২০০৩ সালের ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ছয় মাস পর এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ দুটি খোলা হয় লাইফ সায়েন্স অনুষদের অধীনে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বিকশিত হতে থাকে। ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের অধীনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং লাইফ সায়েন্স অনুষদের অধীনে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে গণিত, পরিসংখ্যান, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয়। ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে যাত্রা করেছে অর্থনীতি বিভাগ। ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে লাইফ সায়েন্স অনুষদের অধীনে যুক্ত হয় ফার্মেসি ও বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ দুটি। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনে অ্যাকাউন্টিং ও ম্যানেজমেন্ট এবং কলা অনুষদের অধীনে ইংরেজি বিভাগ খোলা হয়। ৬টি অনুষদভুক্ত ১৮টি বিভাগ বর্তমানে সেমিস্টার পদ্ধতিতে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬৪০০। কর্মরত শিক্ষক ২৩৯, কর্মকর্তা ২৩৮ এবং কর্মচারী ৩১২ জন।

শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি চরম অবকাঠামো সংকটে ভুগতে থাকে। ট্রাস্টি বোর্ডের প্রায় ৫৭ একর জমিসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সরকারি নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হলেও এর খুব সামান্য অংশই ব্যবহার করা গেছে। পুরোনো দালানকোঠাগুলো প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। এ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বেশকিছু পুরোনো প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। শুরুর দিকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাক্সিক্ষত মাত্রায় হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের আবাসন সংকট ছিল চরমে। এমনকি একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্রয়োজনমতো জায়গা বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। ধীরে ধীরে এ সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলতে থাকে। বর্তমানে আবাসিক হল রয়েছে ছাত্রদের তিনটি এবং ছাত্রীদের দুটি। ছাত্রছাত্রী উভয়ের জন্য একটি করে হলের সম্প্রসারণসহ নতুন একটি করে বহুতলবিশিষ্ট হলের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। এ হল দুটি চালু হলে ছাত্রছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হবে।

২০১৬ সাল থেকে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন, গবেষণাগার ও লাইব্রেরির মান উন্নয়ন, বহুতলবিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন, ১০ তলাবিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, মাল্টিপারপাস ভবন, শিক্ষক কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবনসহ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এ কার্যক্রমগুলো সমাপ্তির পথে। ভৌত অবকাঠামোগত এসব উন্নয়নের ফলে চলমান বিভাগগুলোর সংকট কাটিয়ে নতুন কিছু বিভাগ খোলা সম্ভব হবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য কর্মগুলো ক্যাম্পাসকে অনেক আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মাভাবিপ্রবির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগই প্রথম এ বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান শুরু করে। কয়েকটি বিভাগ ইতোমধ্যেই এমফিল, পিএইচডি প্রোগ্রামে গবেষক ভর্তি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ খোলার বিষয়টি ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। করোনার এ মহাদুর্যোগের প্রায় শুরু থেকেই মাভাবিপ্রবি অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করে এবং দুই সেমিস্টারের ক্লাস শেষ করেছে। এর মধ্যে প্রথমে শেষ করা সেমিস্টারের অনলাইন পরীক্ষাও শেষের পথে।

২০১৩ ও ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় সমাবর্তনের আয়োজন করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনকারীরা বিসিএসসহ নানা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিপ্রাপ্তিতে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বেশকিছু মেধাবী সাবেক শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় জায়গা করে নিয়েছেন।

আগামী দিনগুলোতে আরও বেশিসংখ্যক ছাত্রছাত্রী এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন প্রায়োগিক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে দক্ষ ও আলোকিত মানবসম্পদে তথা বিশ্বমানবে পরিণত হোক। জ্ঞানচর্চা, জ্ঞান সৃজন এবং বিতরণের মাধ্যমে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলস ভূমিকা রেখে চলুক- ২৩তম বছরে পদার্পণে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান : পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সন্তোষ, টাঙ্গাইল

rahmanmbstu@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম