Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

কোভিড-উত্তর বাংলাদেশ কি বদলে যাবে?

Icon

ড. মাহবুব উল্লাহ্

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কোভিড-উত্তর বাংলাদেশ কি বদলে যাবে?

পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে মহামারির প্রাদুর্ভাব হয়েছে। মহামারি যখন ব্যাপক বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তখন একে অতিমারি বলা হয়।

পৃথিবীতে যখন বিমান যোগাযোগ ছিল না, অথবা সমুদ্রপথে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের জাহাজ ছিল না, তখন মহামারি সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারত না। অথচ এখন আমরা যখন কোভিড অতিমারির ফলে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছি, তখন এই অতিমারি দ্রুত বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। স্থলভাগের বিচারে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।

কোভিড অতিমারির প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল চীনে। কিন্তু বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ থাকার ফলে অচেনা এ রোগটি এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি খুব সামান্যই হয়েছে।

একদিকে আটলান্টিক অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপ বা এশিয়ার অন্যতম শক্তি জাপান খুব একটা ক্ষতির মধ্যে ফেলতে পারেনি। কারণ উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা দুটি মহাসাগরের কারণে আক্রমণের সীমায় পড়েনি। একমাত্র পার্ল-হার্বারের ঘটনা ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গায়ে আঁচড় লাগাতে পারেনি।

অবশ্য মার্কিন সৈন্যরা জাহাজযোগে আটলান্টিক অতিক্রম করে ইউরোপে এসে পৌঁছেছিল। তারা যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ইউরোপ ছিল থিয়েটার অব ওয়্যার। যুদ্ধে ইউরোপ বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। ইউরোপীয় দেশগুলোর অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল।

যুদ্ধ শেষে ইউরোপকে পুনর্গঠন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘মার্শাল প্ল্যান’ নামে একটি পরিকল্পনা নিয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল ইউরোপকে যুদ্ধপূর্ব অবস্থায় নিয়ে আসা। অবশ্য পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য মার্শাল প্ল্যানের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কারণ, এ দেশগুলোতে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বাভাবিক মিত্রে পরিণত হয়। বর্তমানের বিশ্বায়িত পৃথিবী যে কোনো মহামারি দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার জন্য খুবই জুতসই অবস্থার মধ্যে রয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারির স্বরূপ এবং এর সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা বুঝে ওঠার আগেই এটি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। এটি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে মিউটেশনের মাধ্যমে। একই ভাইরাসের একাধিক ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব ঘটে। ফলে এ অতিমারির নিয়ন্ত্রণ বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।

মহামারি ও অতিমারির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এগুলোর অভিঘাতে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। আমরা দেখেছি চতুর্দশ শতাব্দীতে ইউরোপে ভূমিদাস প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং শ্রমবাজারের উৎপত্তি ও বিকাশ হয়। সুতরাং আমাদের জন্য বড় একটি চিন্তার বিষয় হলো কোভিড ১৯-এর অভিঘাতে আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় কী ধরনের পরিবর্তন আসবে। আমরা বাংলাদেশ নিয়ে ভাবছি। একই ভাবনা ভাবতে হবে কোভিড-১৯ অতিমারির অভিঘাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিয়েও।

সাধারণভাবে ধারণা করা হয়েছিল, অতিমারির ফলে অর্থনীতি সংকুচিত হবে। কারণ বিভিন্ন সময়ে লকডাউন ধরনের অবস্থা সৃষ্টি করার ফলে কলকারখানা বন্ধ থাকায় শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয়। আমাদের ইনফরমাল ইকোনমিতে বিরাট ধরনের আঘাত আসে। যারা ইনফরমাল ইকোনমির মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করত, তাদের একটি বিরাট অংশ শহরে রোজগার করতে না পেরে নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গত দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা বই-পুস্তকের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে। শিশু, কিশোর ও যুবকদের অনেকে গৃহবন্দির মতো অবস্থায় আটকা পড়ে মানসিক চাপে জর্জরিত হয়। অভিভাবকরা অনেকেই বলেছেন, তাদের সন্তানদের বইয়ের সংস্পর্শে আনতে পারছেন না। তারা মোবাইলে গেমের নেশায় মত্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষার বিষয়টি সুইচ অন অফ করার মতো নয়।

শিক্ষা থেকে অফ থাকা যত সহজ, তার তুলনায় এটা পুরোদমে শুরু করা হাজারগুণ কঠিন। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে- স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীরা যেভাবে প্রস্তুতির সংকটে পড়েছে, তা থেকে তাদের বের করে আনা খুবই কঠিন হবে। দেশ এবং দেশের ভবিষ্যৎ এ ধরনের প্রস্তুতিহীন শিক্ষার্থীদের চাপে ন্যুব্জ হয়ে পড়বে।

আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কী ধরনের পঙ্গুত্বের মধ্যে আছে, তা দেশবাসীর কাছে কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে দৃশ্যমান হয়েছে। এ ধরনের পঙ্গু স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সতেজ করার জন্য প্রয়োজন অর্থের বরাদ্দ বৃদ্ধি। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ঘুণ পোকার বসতি সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘুণ পোকার নাম হলো দুর্নীতি। যদি দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা সম্ভব না হয়, তাহলে অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না।

২১ সেপ্টেম্বরের সংবাদপত্রের একটি শিরোনাম-‘অর্থ আত্মসাৎ মামলা : অবশেষে আসামি হলেন স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি’। একই দিনের সংবাদপত্রের আরেকটি শিরোনাম হলো-‘স্বাস্থ্যের সেই মালেকের ৩০ বছর জেল’। এই মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক ছিলেন। সামান্য একজন গাড়িচালক আজ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক! তার হাত ছিল খুব দীর্ঘ। সে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আড়াল থেকে নিয়ন্ত্রণ করত। এ কারণে অনেক চিকিৎসক ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে বলেছেন, তাদের চিকিৎসক হওয়ার জন্য এত লেখাপড়া না করে গাড়িচালক হওয়াই ভালো ছিল।

বাংলাদেশে কোভিডের অতিমারি দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন, বাল্যবিয়ে বেড়ে যাবে। এখন যখন স্কুলগুলো খুলছে, তখন দেখা যাচ্ছে মেয়ে শিক্ষার্থীরা আগের মতো স্কুলে আসছে না। কারণ এরই মধ্যে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। অনেক কারণেই মেয়ে সন্তানের অভিভাবকরা মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতা বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কেউ ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এই ১৮ বছর বয়সটি খুবই তাৎপর্যময়। ১৮ বছর বয়সের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী এইচএসসি পাশ করতে পারে।

এইচএসসি পাশ করার পর যদি কোনো মেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ে হয় এবং সে যদি সন্তান প্রসব করে, তাহলে তার পক্ষে নিজ সন্তানের লেখাপড়ায় সাহায্য-সহযোগিতা অনেক বেশি কার্যকর হবে। অথচ আমরা এখন লক্ষ করছি, অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতাকে এসব বিয়ের পেছনে অন্যতম কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মফস্বল অঞ্চলে তথা গ্রামাঞ্চলে মেয়ে শিশুদের বিয়ের হিড়িক পড়ে গেছে। কয়েক দশক আগে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। এর কারণ নিহিত আছে মেয়ে সন্তানকে ঘিরে তাদের পিতামাতাদের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে।

এ দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি বোঝা যাবে বহুকাল ধরে গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত মেয়ে সন্তান সম্পর্কিত একটি ছড়ায়। ছড়াটি হলো-‘লাজ শরম ডর/উঠান বাড়ি ঘর/পান পানি পাকান চুন/ এই দশটি আওরাতের গুণ।’ এ ছড়াতে শিক্ষা কিংবা লেখাপড়ার কোনো উল্লেখ নেই। এটাই ছিল পুরুষপ্রধান সমাজে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। এমন একটি সমাজে মেয়ে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর কথা কি ভাবা যায়! কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হলো নব্বইয়ের দশকের প্রথম পাঁচ বছরে। তখন মেয়ে শিশুদের জন্য ‘খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা’ কর্মসূচি চালু করেছিল খালেদা জিয়ার সরকার।

এ কর্মসূচি চালু হওয়ার পর গ্রামবাংলার ছবি পালটে যেতে শুরু করল। গ্রামের পথে স্কুলের পোশাক পরা মেয়েদের স্কুলে যাওয়া গ্রামবাংলার পটে নতুন এক দৃশ্যের অবতারণা করল। পরবর্তীকালে স্কুলে পড়া উৎসাহিত করতে এ কর্মসূচি নানাভাবে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় একটি কঠিন শব্দ চালু আছে। শব্দটি হলো ‘অসূর্যম্পশ্যা’। এর অর্থ হলো, সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখেনি এমন নারী। নারীকে অন্তঃপুরবাসিনী রূপেই দেখতে চাইত সমাজ। এমন একটি সমাজে যখন দেখা গেল মেয়েরা শতকরা ১০০ ভাগ স্কুলে যায়, তখন এটাকে এক ধরনের সমাজবিপ্লব বললেও অত্যুক্তি হবে না। দুর্ভাগ্যের বিষয়, কোভিড-১৯ অতিমারি দেখা দেওয়ার পর দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু করল। একদিকে স্কুলগুলো বন্ধ।

এ অবস্থায় মেয়ে শিশুরাও ঘরবন্দি থাকতে থাকতে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে। তারা ঘরের বাইরে দিনের একটা সময় কাটাতে অভ্যস্ত ছিল। এখন তাদের হাঁসফাঁস অবস্থা। এ অবস্থা থেকে দৈনন্দিন জীবনে ভিন্ন একটি মাত্রা যোগ করার জন্য মেয়ে সন্তানেরা সুযোগ পেলেই বাইরে যায়। কিন্তু গ্রামেরও পরিবেশ তো বদলে গেছে। গ্রামেও ইভটিজিংয়ের ঘটনা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে বিদ্যমান অপরাজনীতির প্রভাবে গ্রামেও ককটেল ফোটানো এবং প্রতিপক্ষের ঘর-বাড়িতে হামলা করার মতো ঘটনাবলিও বাড়তে শুরু করেছে।

এ অবস্থার ফলে মেয়ে সন্তানের পিতা-মাতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করল। তাদের দৃষ্টিতে নিরাপত্তাহীনতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত থাকার সহজ সমাধান হলো মেয়ে সন্তানটিকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে চালু হলে আমরা বুঝতে পারব মেয়ে শিশুদের কত অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে।

কোভিড অতিমারির ফলে অনেক গ্রামীণ পরিবার অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। কারণ এসব পরিবারের রোজগেরে সদস্যরা শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছে। তারা যখন শহরের ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করত, তখন তাদের যে আয় হতো তার একটি অংশ দিয়ে তারা শহরজীবনের খরচ মেটাত এবং বেঁচে যাওয়া অর্থ গ্রামে থাকা পিতামাতার জন্য পাঠাত।

গ্রামের যেসব পরিবারে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার ফলে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, সেসব পরিবারের সদস্যদের প্রাণ রক্ষার অন্যতম কৌশল হলো পরিবারে খাওয়া খরচের চাপ হ্রাস করা। এর সহজতম উপায় হলো শিশু বয়সি মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া। তবে এতে সমস্যার সমাধান না হলে এটা নতুন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছেলে পক্ষের কাছ থেকে যৌতুকের চাপ আসতে থাকে। সুতরাং দারিদ্র্য এমন একটি সমস্যা, যা থেকে উঠে আসে বিচিত্র ধরনের সমস্যা। মেয়েদের বাল্যবিয়ের ওপর গভীর গবেষণা হওয়া উচিত।

২১ সেপ্টেম্বরের একটি সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম হচ্ছে-‘২০ হাজার কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে’। এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যেগুলো টিকে আছে সেগুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। এ প্রতিবেদনটি প্রধানত কেস স্টাডি হিসাবে লেখা হয়েছে। প্রতিবেদক লিখেছেন, ‘আশার আলো বিদ্যানিকেতন-মিরপুরের রূপনগর থানার ইস্টার্ন হাউজিংয়ের এল-ব্লকের এই বিদ্যালটি গত বছরের মার্চেও শিক্ষার্থীদের পদচারণায় জমজমাট ছিল। শিক্ষক ছিলেন ১০ জন। ২০১৮ সালে এ কিন্ডারগার্টেন চালু করেছিলেন মো. জাকির হোসেন। তিনিই ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক।

করোনা মহামারির কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর সরকার স্কুল-কলেজ খুলে দিলেও এ প্রতিষ্ঠানটি আর খোলেনি। সম্প্রতি সরেজমিনে বিদ্যালয়টির অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিপুল ভাড়া বকেয়া থাকায় বাড়িওয়ালা বাসাটি নতুন করে ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। নিভে গেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জাকির হোসেনের সব আশার আলো। গত রোববার বিকালে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, মহামারি করোনায় আর্থিক সংকটে পড়ে তিনি দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিলেন।

একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে নিজের ভাড়া বাসাও ছেড়ে দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ায়। চিন্তা করছেন, জীবন ধারণের জন্য নতুন করে কী করা যায়! জাকির হোসেনের আশার আলো বিদ্যা নিকেতনের মতোই বন্ধ হয়ে গেছে সারা দেশের অন্তত ২০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল। এসব স্কুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত লক্ষাধিক শিক্ষক এখন বেকার।’

যতই দিন যাবে ততই উন্মোচিত হবে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংকটের ছবি। বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে বহুবিধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সামান্যসংখ্যক কর্মকাণ্ড কোভিডকালে বিকশিত হলেও কিংবা টিকে থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর অভিঘাত বিপর্যয়কর।

কোভিড অতিমারি শেষে আমরা বাংলাদেশের কী চেহারা দেখব, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। চিন্তাশীল মানুষরা তাদের আশপাশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জোয়ার-ভাটার দিকে লক্ষ রাখলে আমরা সংকটের স্বরূপটি আরও ভালো করে বুঝতে পারব। তবে অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন যে অবশ্যম্ভাবী, সে ব্যাপারে দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই বললেই চলে।

ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম