Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

দেশপ্রেমের চশমা

বর্ণহীন এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ

Icon

মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বর্ণহীন এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ

শিরোনাম দেখে যদি ভাবেন, নিজে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ণহীন শিক্ষক হওয়ায় আমি বড় চারটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলব, তাহলে আপনাদের ধারণা ঠিক আছে।

দেশে এখন ৫৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৪। বর্তমান সরকারের জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নীতির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।

এর মধ্যে পুরোনো এবং বড় চারটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ/আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। কাগজে-কলমে এমন দাবি করা হলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে হরহামেশা পদে পদে এ অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করা হয়।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেট সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত তিন সদস্যের প্যানেল থেকে আচার্য কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার চর্চা কদাচিৎ লক্ষ করা যায়। পরিবর্তে, সরকারি গুডবুকে থাকা দলীয় আনুগত্য পোষণকারী কাউকে ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ প্রক্রিয়ায় ভিসি নিয়োগ দেওয়ার ফলে শিক্ষকদের মধ্যে দলীয় রাজনীতির চর্চা এবং ভিসি হওয়ার জন্য তদবিরের প্রবণতা ও প্রতিযোগিতা তীব্রতা পায়।

শিক্ষকদের রাজনীতি করার মধ্যে দোষ নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ তাদের ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে। কারণ, ডিন, উপাচার্য, সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য ইত্যাদি পদে শিক্ষকরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। কিন্তু এর চর্চা করতে গিয়ে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত করে এর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজেদের পেশাগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনীতি না করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বর্ণের ছদ্মাবরণে জাতীয় দলীয় রাজনীতির চর্চা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক চরিত্র ম্লান করেছেন। আর সব সরকারই এ প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। কারণ, সরকার মুখে বলছে, রাজনীতি করা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাজ নয়, শিক্ষকতা ও গবেষণা করাই তাদের কাজ; কিন্তু কোনো পদে কোনো অধ্যাপককে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে তার বর্ণ পরিচয় যাচাই করছে। নিজদলীয় সমর্থক না হলে তাকে সে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এ সরকারি দ্বিমুখী নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে দলীয় রাজনীতি করার প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানের ওপর প্রকাশিত সূচকগুলোয় বাংলাদেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লজ্জাজনক অবস্থানে থাকতে হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার পরিবর্তে যদি জাতীয় দলীয় রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা তীব্রতা পায়, তাহলে তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান হ্রাস পাওয়ারই কথা।

বর্তমান বাস্তবতায় আলোচ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, খুব কমসংখ্যক শিক্ষকই রাজনৈতিক বর্ণ পরিচয়হীন। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন সরকারের আমলে কমবেশি ক্ষমতাসীন দলীয় সমর্থক না হলে তার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার পরিবর্তে গুরুত্ব পায় রাজনৈতিক বিবেচনা ও আর্থিক লেনদেনের প্রভাব।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০১৬ সালে ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যকার প্রভাষক নিয়োগের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখায় যে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। আলোচ্য গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কমসংখ্যক পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। টিআইবি প্রতিবেদনে ১৪টি বিজ্ঞপ্তিতে ৪৪ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়ে ৯২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার তথ্যও উপস্থাপিত হয়।

টিআইবি প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগের অনিয়ম অনেক ক্ষেত্রে শুরু হয় সংশ্লিষ্ট চাকরি পাওয়া প্রভাষকের ছাত্র থাকার সময় থেকে। শিক্ষকদের কেউ কেউ বিশেষ পছন্দের শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে তাকে বিভিন্ন উপায়ে আনুকূল্য দিয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল করিয়ে শিক্ষক হিসাবে বিভাগে যোগদান করানোর চেষ্টা করেন। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ।

যুগান্তরের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া আবেদনকারীদের কাছ থেকে ১২ লাখ এবং ৩টি ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া প্রভাষক পদে আবেদনকারীদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুস গ্রহণবিষয়ক কথোপকথনের তথ্য উপস্থাপন করে (যুগান্তর, ০২.০৪.২০১৭)।

এক কথায়, এমনভাবে নিযুক্ত শিক্ষকদের প্রায় সবাই প্রথম থেকেই দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হন। এদের অনেকেই একাডেমিক কাজের চেয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজে অধিক আগ্রহী হন। ফলে শিক্ষকের মুখ্য কাজ শিক্ষকতা ও গবেষণায় তারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েন। পদোন্নতির সময় এসব শিক্ষকের কেউ কেউ বিভিন্ন রকম দুর্নীতিমূলক কাজও করেন। অতি সম্প্রতি শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকের এমন অবৈধ কর্মকাণ্ডের তথ্য ফাঁস হলে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং গবেষণায় নকলবাজি প্রমাণিত হওয়ার কারণে তাদের শাস্তিও প্রদান করা হয়।

কেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিন দিন জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় অবদান সৃষ্টিকারী শিক্ষক তৈরি করতে পারছে না। আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানের সূচকে বাংলাদেশি বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খুঁজতে হলে হাজার পাঁচেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচে নেমে অনুসন্ধান শুরু করতে হবে। নিকটতম এশীয় দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গেও আলোচ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। এ পশ্চাৎপদতা থেকে বের হতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেবল গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়ালে কাজ হবে না। ওই গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহার করার মতো কত সংখ্যক শিক্ষক আছেন তাও খুঁজে দেখতে হবে। আর প্রদত্ত অর্থ ব্যবহার করে যেসব গবেষণা কাজ করা হয়েছে, তারও মান যাচাই করে দেখা দরকার। সে সঙ্গে ছাত্র এবং শিক্ষকদের মধ্যে দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি কমাতে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

১৯৭০ বা ১৯৮০-এর দশকেও এ দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি এত বেশি দল-প্রভাবিত বা রাজনীতি-প্রভাবিত ছিল না। কারণ, তখনো শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর বণিকবৃত্তির ঢেউ লাগেনি। একজন শিক্ষক ইচ্ছা করলে কোনো বর্ণ দলে নাম না লিখিয়েও শিক্ষক হতে এবং শিক্ষকতা করতে পারতেন। আমি নিজেও এ প্রক্রিয়ায় ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছি। তবে আমি কখনো কোনো বর্ণদলে নাম লেখাইনি।

কোনো ‘নীল’, ‘সাদা’, ‘গোলাপি’, বা অন্য কোনো বর্ণদলের কোনো সভায় আমার প্রায় চার দশকের শিক্ষকতা জীবনে কখনো যোগ দেইনি। আমাকে যে দু-একবার বিভিন্ন বর্ণদলীয় গ্রুপ থেকে দলে যোগ দিতে বলা হয়নি এমন নয়, তবে আমি সে আহ্বানে সাড়া দেইনি।

বর্তমান সময়ে যারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে যোগ দিচ্ছেন, তাদের পক্ষে বর্ণদলে যোগ না দিয়ে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িযেছে। প্রভাষক হিসাবে যোগ দিয়ে অনেকেই লেখাপড়া ও গবেষণার চেয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কারণ, ওইসব পদগুলোতেও (প্রোভোস্ট, হাউস টিউটর, প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর ইত্যাদি) দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে পদায়ন করা হয় বলে শিক্ষকরা সেসব পদ পেতে চেষ্টা করেন। আমি বর্ণহীন হওয়ায় আমাকে কখনো এসব পদে কাজ করতে বলা হয়নি। ফলে, যারা বর্ণ রাজনীতি করেন, তারা উল্লিখিত পদগুলোতে কাজ করে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, বর্ণহীন হওয়ায় আমি তেমন সুযোগ পাইনি। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আমার বাস্তব জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। তবে আমি যদি কোনো অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকি, তার সবই শ্রেণিকক্ষে পড়িয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। অবশ্য সব শিক্ষকেরই নিয়মানুযায়ী পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সভাপতি হওয়ার একটি সুযোগ আসে।

আমি বিভাগীয় সভাপতি হিসাবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করে কিছুটা প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এর সঙ্গে একাডেমিক কাউন্সিল, বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ ইত্যাদি পর্ষদের সভাগুলোয় অন্যান্য শিক্ষকের মতো আমিও অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। এ ছাড়া বিভাগীয় একাডেমিক ও প্লানিং কমিটির সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করেও আমি অনেক কিছু শিখেছি।

বর্ণের রাজনীতিতে যুক্ত না হওয়ায় আমার যুগপৎ লাভ ও লোকসান হয়েছে। লোকসানের কথাটি আগে বলি। বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে কখনো রেমুনারেটিভ কোনো পদে নিয়োগ দেয়নি। কলেজ পরিদর্শন, কলেজে শিক্ষক নিয়োগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পদে যেহেতু দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়, সে কারণে আমি বর্ণদলীয় সদস্য না হওয়ায় সঙ্গত কারণেই এসব পদে কাজ করার সুযোগ পাইনি। এমন দায়িত্ব পালন করতে পারলে কিছু অভিজ্ঞতা যেমন হতো, তেমনি কিছু অর্থপ্রাপ্তিও ঘটত। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও হতো। কারণ, দলীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়ার পর ক্ষমতাসীন বর্ণদলের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতাম না। আবার বর্ণদল না করায় আমার প্রতি অন্যায় করা হলে কেউ আমার পাশে দাঁড়ান না। কারণ, আমি তাদের দলের লোক নই। আর বর্ণদলে যোগ না দিয়ে আমার যে লাভ হয়েছে তার মধ্যে হলো, আমি যে কোনো সভা-সমাবেশে স্বাধীনভাবে যা ভালো মনে করেছি, তা অকপটে বলতে পেরেছি। কোনো বর্ণদলের লাভ লোকসানের কথা আমাকে ভাবতে হয়নি। আর বাড়তি দায়িত্ব পালন না করায় যে সময় পেয়েছি, সে সময় ব্যবহার করে একাডেমিক কাজ করতে পেরেছি। এর ফলে লেখালেখি ও প্রকাশনা করার দিক দিয়ে আমি লাভবান হয়েছি।

আমি একজন বর্ণহীন শিক্ষক। কিন্তু তার অর্থ এ নয় যে আমার কোনো রাজনৈতিক বিশ্বাস নেই, বা আমি রাজনীতিসচেতন নই। রাজনীতিসচেতন হলেও আমি কখনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তির চর্চা করতে পছন্দ করিনি। নির্বাচন হলে আমি ভোট দেই। সেখানে যাকে ভালো মনে হয় তাকেই সমর্থন দেই। বর্ণ দেখি না। তবে দুঃখের বিষয়, এখন বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলোয় সব গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড হয় দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে। সেখানে বর্ণহীনদের স্থান নেই। ফলে দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত শিক্ষকরা গবেষণা ও প্রকাশনার দিকে মনোযোগী হতে কম সময় পান। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভাবমূর্তি হ্রাস পায়। আমার দৃষ্টিতে কয়েকটি কাজ করে বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এদের হারানো একাডেমিক ইমেজ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে পারে।

প্রথমে যে কাজটি করা দরকার তা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৯৭৩ সালের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ/আইন পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করবে। ক্ষেত্রবিশেষে এ আইনের অনুসরণ করে ভিসি নিয়োগ বা অন্য আরও অনেক ক্ষেত্রে এ আইন লঙ্ঘন করা যাবে না। প্রয়োজনে এ অধ্যাদেশকে যুগোপযোগী করার কথা ভাবতে হবে।

আমরা দেশের সংবিধান ১৭ বার সংশোধন করেছি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ/আইন সংবিধানের চেয়ে বড় কিছু নয়। এটি কার্যকর করতে না পারলে একে যুগোপযোগী করতে আপত্তি থাকবে কেন? আমরা আইনও রাখব আবার সে আইন পদে পদে লঙ্ঘন করব, তা হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ব্যবস্থা যুগোপযোগী করতে হবে। নামমাত্র, লোকদেখানো একটি মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে প্রভাষক নিয়োগের নীতি সমর্থনযোগ্য নয়। যেখানে স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিবন্ধন পরীক্ষাসহ দু-তিন রকম পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেখানে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক নিয়োগে এমন ব্যবস্থার উদ্ভাবন করতে হবে, যাতে মেধার মূল্যায়ন সুনিশ্চিত করা যায়। উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে একাডেমিক ও প্রশাসনিকভাবে সবচেয়ে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকরা উপাচার্য হতে পারেন। কারণ, একজন উপাচার্য হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রধান।

তিনি যদি বিতর্কিত কাজ করেন, দলবাজিতে ব্যাপকভাবে জড়িত হয়ে পড়েন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক উন্নতি হবে কীভাবে? সাম্প্রতিককালে অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাদের দৃশ্যমানভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি। কোনো উপাচার্যের দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াকে কি শাস্তি বলা যায়? এ কারণে নবাগত উপাচার্যরা আবারও একইভাবে দুর্নীতিতে জড়িত হতে ভয় পান না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দায়িত্বশীলতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

akhtermy@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম