Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

শতফুল ফুটতে দাও

বাজেট ও অর্থনীতি নিয়ে কিছু ভাবনা

Icon

ড. মাহবুব উল্লাহ্

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাজেট ও অর্থনীতি নিয়ে কিছু ভাবনা

বাজেট পেশের একদিন আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আগামী বাজেট নিয়ে মোটা দাগে আপনার বার্তা কী? জনাব মুস্তফা কামাল এর জবাবে বলেছিলেন, ‘সব শ্রেণির মানুষকে মাথায় রেখে বাজেট করছি।

এটা হবে মানুষের জীবন রক্ষার বাজেট। মানুষের জীবিকা রক্ষারও বাজেট এটা। এটা হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে ব্যবসায়ী শিল্পপতি সবার বাজেট। সবার যাতে অংশীদারিত্ব থাকে, এমন কৌশল অবলম্বন করেই আমি প্রণয়ন করছি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। অপেক্ষা করুন, দেখতে পাবেন। এ বাজেট দিয়েই হবে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশের অভিযাত্রা।’

আমরা অপেক্ষা করেছি, জনগণ অপেক্ষা করেছে। আমরা দেখেছি এ বাজেট কতটা সর্বস্তরের মানুষের জীবনকে স্পর্শ করেছে। সবার অংশীদারিত্ব কতটুকু হয়েছে-সেটাও আমরা উপলব্ধি করেছি।

২০২১-২২ অর্থবছরের নতুন বাজেট প্রস্তাবে ব্যবসায়ীরা খুশি হয়েছেন। কারণ, করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে, সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে স্থানীয় শিল্পকে। কমেছে ব্যবসায়িক টার্নওভার ট্যাক্সের হার। মনে হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য যা কিছু করা যায় তার সবকিছুই করার জন্য অর্থমন্ত্রী প্রাণ-মন ঢেলে দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের জন্য। প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের জন্য কী সুবিধা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী?

যাদের আয় কমেছে, তাদের জন্য তেমন কিছু নেই। এমনকি যারা দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করে একটু উপরে উঠেছিলেন, তাদের এক বিরাট অংশ আবার দারিদ্র্য রেখার নিচে পড়ে গেছে। এ মানুষগুলোর জীবন এখন খুবই কষ্টের। আর্থিক অবস্থা একটু ভালো হওয়ার পর যখন অবনতির দিকে চলে যায় তখন কষ্টটা হয় অপরিসীম। কিছুদিন আগেও বলা হতো, বাংলাদেশে দরিদ্রদের সংখ্যা ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। এটা সরকারের বিরাট সাফল্য।

কিন্তু যারা দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করে কিছুটা উপরের দিকে উঠে তারা প্রকৃতপক্ষে দুর্দশাকাতর অবস্থায় থাকে। যে কোনো রকম দুর্যোগ, দুর্দশা, রোগব্যাধি তাদের আগের অবস্থায় ঠেলে দিতে পারে। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলেছেন, করোনা দুর্যোগের পর অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। এদের অনেকেই বেকারত্বের শিকার হয়েছেন। এ মানুষগুলোর জন্য কী ধরনের সহায়তা প্যাকেজ দেওয়া যায় তা নির্ধারণ করা সহজসাধ্য নয়।

এককালীন অর্থ সহায়তা এ করোনাকালে কীভাবে উৎপাদনশীল কাজে লাগানো যায় সেটাও নির্ণয় করা কঠিন। তবে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষগুলো হারানো অবস্থা পুনরুদ্ধারে খুবই সৃজনশীল। তাদের একটু সমর্থন দিলে তারা জানে এ সমর্থনটা কীভাবে কাজে লাগাতে হয়। সবার ক্ষেত্রে এ কথাটি প্রযোজ্য না হলেও বেশিরভাগের ক্ষেত্রে যে প্রযোজ্য তা আমরা বাংলাদেশের গত অর্ধশতাব্দীর ইতিহাসে প্রত্যক্ষ করেছি।

বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল তখন অনেকেই একটি সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সৃষ্টির পর দেখা গেল শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে অনেকেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রয়াসী। সমষ্টিগতভাবে ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে সমভাবে পরিবর্তনের সুফল ভোগ করার চেতনা প্রায় হারিয়ে গেল। সমষ্টির পরিবর্তে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজ নিজ আকাক্সক্ষা অনুযায়ী ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রায় সবাই মনোযোগী হয়ে উঠল।

ডারউইনের তত্ত্ব অনুযায়ী ‘যোগ্যতমের ঊর্ধ্বতন’ অনেকেরই মন্ত্র হয়ে দাঁড়াল। দেখা গেল, সরকারি চাকরির নিরাপত্তা এবং ঝুট-ঝামেলাহীন জীবন আর সবার কাম্য নয়। এ ছাড়া ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সবার পক্ষে সরকারি চাকরি পাওয়াও সম্ভব নয়। সুতরাং নতুন নতুন ব্যবসা উদ্যোগের মাধ্যমে সুখী জীবন গড়ার প্রচেষ্টায় অনেকেই নিয়োজিত হলো। শুধু তাই নয়, দেশের বাইরে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কর্মসংস্থান জোগাড়েও অনেকে নিয়োজিত হলো।

সব মিলিয়ে দেখা গেল আমাদের দেশের জনগণের জীবনযাত্রায় লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটে গেছে। বাংলাদেশিদের জীবনে জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে। দারিদ্র্যের বৃত্তকে অতিক্রমেও এ দেশের প্রান্তিক মানুষগুলো কম সৃজনশীলতা দেখায়নি। করোনাকালে অতিরিক্ত ২ কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে। অনেকেই কর্মস্থল ত্যাগ করে গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। এ মানুষগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের হারানো সুখ-শান্তি কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিতে পারলে আমরা অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে পারতাম।

এখন ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বিশেষ করে বড় ব্যবসায়ীরা যে সুযোগ-সুবিধা পাবে সেটা ব্যবহার করে খুব বেশি সংখ্যক মানুষকে কর্মসংস্থান প্রদান করা সম্ভব হবে না। নতুন এ দরিদ্ররা কাব্যের উপেক্ষিতা উর্মিলার মতো উপেক্ষিতই থেকে গেল। কিন্তু এ অবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধিক মাথাপিছু আয়ের দেশটির জন্য লজ্জার বিষয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে বৈষম্য কলঙ্ক তিলক হয়ে দাঁড়িয়েছে সে বৈষম্য আরও প্রকট হবে।

এ দেশে অনেক ধরনের মানুষের তালিকা আছে। কিন্তু দরিদ্র মানুষের তালিকা নেই। যারা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তর্ভুক্ত তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যহীন দরিদ্রদের মিল নেই। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তারা অনেকেই দরিদ্র বটে। কিন্তু করোনার অভিঘাতে যারা দরিদ্র হয়েছে তাদের অনেকেই কোনো ধরনের নিরাপত্তা সহায়তা পেত না। এদের মধ্যে সঠিক মানুষটির কাছে কীভাবে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায়, সে সম্পর্কে এখনো ভাবার সময় পার হয়ে যায়নি। বাজেটে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা যায়।

৫ জুনের সংবাদপত্র থেকে জানা যায়, অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক বেশি কর ছাড় দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কর হার আস্তে আস্তে কমালেই কর সংগ্রহ বাড়বে। আর বাজেট পুরোটাই ব্যবসাবান্ধব। মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়। চাহিদা পূরণে ব্যবসায়ীদেরও পরিবর্তন আছে। সারা বিশ্ব কী করছে সেটাও দেখতে হবে। উন্নত বিশ্ব যদি পিছিয়ে পড়ে, তাহলে আমরা এগোতে পারব না। কারণ, উন্নত বিশ্বেরও আমাদের দরকার।

আজ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আমাদের শেখায় যে আমরা একে-অপরের সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত।’ অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, “ব্যবসায়ীদের প্রতি আমরা ওয়াদাবদ্ধ। ফলে তারা সুযোগ নেবেন। সুযোগ নেওয়া মানে হচ্ছে উৎপাদনে যাওয়া। তারা উৎপাদনে গেলেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ লাইনটা ব্যবহার করতে শুরু করেছি। সময় উপযোগী পদক্ষেপ এটা। সেখানেই সম্ভাবনা ও সক্ষমতা আছে, সবটুকু কাজে লাগানো হবে।

এ ছাড়া ভবিষ্যতে ভ্যাট কর কমিয়ে দেশীয় শিল্পকে আরও সুরক্ষা দেওয়া হবে। ভ্যাট কর আর বাড়ানো হবে না। কমানো হবে আরও বেশি রাজস্ব সংগ্রহের জন্য।” অর্থনীতি শাস্ত্রে Tax Elasticity বলে একটি কথা আছে। ট্যাক্সের মাত্রা অনুসারে কর আদায় নির্ভর করে। আমাদের দেশে Tax Elasticity নিয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সুতরাং করের মাত্রা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটি গবেষণা হওয়া উচিত, যে গবেষণা আমাদের বলে দেবে কী মাত্রায় ভ্যাট কর আরোপ করলে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।

এটি নিশ্চিত নয় যে, ব্যবসায়ী শ্রেণিকে ছাড় বা সুবিধা দিলে উৎপাদন বাড়বে এবং উৎপাদন বাড়ার ফলে কর্মসংস্থানও বাড়বে। আজকাল কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি বলে একটি কথা চালু হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেই কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনিবার্য নয়। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নির্ভর করে কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর। সব দেশের ব্যবসায়ীদের প্রবণতা হলো সর্বোন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। এক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়লেও কর্মসংস্থানে খুব একটা হেরফের হবে না। করোনাকালে যারা নতুনভাবে দরিদ্র হয়ে গেছেন তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন শ্রমনিবিড় প্রযুক্তি।

সারা বিশ্বে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার ফলে কেইনসীয় অর্থনীতি নতুন করে প্রাধান্য পেতে চলেছে। করোনা মহামারি অনেক দেশেরই অর্থনীতিকে সংকুচিত করে ফেলেছে। ফলে মানুষের আয় কমে গেছে, ক্রয়ক্ষমতাও কমে গেছে। উৎপাদিত পণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বাড়বে এমনটি মোটেও আশা করা যায় না। চাহিদার ঘাটতি দূর করা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা এবং আয় বৃদ্ধি করার জন্য রাষ্ট্রকেই ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্রদান এবং বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কর্মসূচি এসব ঘাটতি পূরণ করতে পারে। রাষ্ট্রকে তাই বেশি মাত্রায় অর্থ ব্যয় করতে হবে। যদি অভ্যন্তরীণভাবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কর সংগ্রহ করা সম্ভব না হয়, তাহলে ঘাটতি অর্থায়নের আশ্রয় নিতে হবে। অর্থাৎ রাষ্ট্রকে বেশি পরিমাণে ঋণ নিতে হবে। আমরা এখনো জানি না করোনাভাইরাস আর কতকাল আমাদের জীবন ও জীবিকাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে আটকে রাখবে। যদি এ মহামারি বেশ কয়েক বছর ধরে অব্যাহত থাকে এবং এর ভাইরাস তার স্বরূপ পালটাতে থাকে তাহলে উত্তরোত্তর নতুন ধরনের টিকারও প্রয়োজন হবে। টিকার কার্যকারিতা এক বছরেরও বেশি হবে বলে এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণা থেকে জানা যায়নি। টিকার কার্যকারিতার মেয়াদই কেবল বিবেচ্য বিষয় নয়, এর খরচটাও বিবেচনায় নিতে হবে। প্রতিবছর যদি টিকা দিতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে খুব বেশি সময় কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে টিকা বিতরণ করা সহজসাধ্য হবে না। সে জন্যই কথা উঠেছে, টিকাকেন্দ্রিক মেধাস্বত্ব আইনকে নমনীয় করতে হবে। তাহলে অনেক দেশেই টিকা উৎপাদন সম্ভব হবে এবং এর দামও কমে আসবে। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এ নমনীয়তার পক্ষে নেই। তবে সুখবর হলো, অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক করোনার টিকার মেধাস্বত্ব আইনকে আরও নমনীয় করার পক্ষে।

এক হিসাবে দেখা গেছে, আগামী তিন অর্থবছরে শুধু সুদ পরিশোধেই ব্যয় করতে হবে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ২ লাখ ৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ব্যয় করা হবে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি সংক্রান্ত ভাষ্য থেকে একথা জানা গেছে। জানা গেছে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৬৮ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। তার পরবর্তী দুই অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হবে যথাক্রমে ৭৭ হাজার ৫৫ কোটি ও ৮৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। মোট অর্থায়নের একটি বড় অংশ বাইরের উৎস থেকে রেয়াতি সুবিধায় ঋণ পাওয়ায় সরকারের পক্ষে সামগ্রিক অর্থায়ন ব্যয় তুলনামূলকভাবে কমিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিগত ৫ বছরে অর্থাৎ ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশবহির্র্ভূত অর্থায়নের জন্য সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছিল সরকারি ব্যয়ের ০.৯ শতাংশ। এ অর্থায়নের জন্য গড় সুদ হার ছিল মাত্র ১.১ শতাংশ। তবে বাইরের উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বহিঃঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ব্যয় সামান্য বেড়েছে। নিকট অতীতে সরকারকে প্রায়ই ব্যয়বহুল ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ নিয়ে অর্থায়নের চাহিদা মেটাতে হয়েছে। তাই অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে পরিশোধিত সুদ সরকারের মোট সুদ ব্যয়ের প্রধানতম অংশ ছিল। বিগত ৫ বছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ গড় ব্যয় ছিল বাজেট ব্যয়ের ১২.৪৪ শতাংশ। এতে অন্তঃস্থিত সুদের হার ছিল ৯.৪২ শতাংশ। ৮ বছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এত বড় ঘাটতির মূলে রয়েছে কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে না পারার ব্যর্থতা। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে সময়মতো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে না পারা এবং প্রকল্প ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া। করোনাকালে একদিকে যেমন সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে হবে, অন্যদিকে এর ফলে রাষ্ট্রীয় ঋণের সুদ ব্যয় অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে। এর জন্য আমাদের কি কোনো প্রস্তুতি আছে? রাষ্ট্রের ঋণ সাধ্যাতীতভাবে বৃদ্ধি পেলে রাষ্ট্রের কল্যাণ করার ক্ষমতাও হ্রাস পাবে। চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন প্রকল্প কি গ্রহণ করা সম্ভব হবে? কোথায় যাবে উন্নয়নের মহাসড়কে চলার বাগাড়ম্বর?

ড. মাহবুব উল্লাহ : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম