Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

শতবর্ষের দুয়ারে দাঁড়িয়ে

Icon

বিমল সরকার

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শতবর্ষের দুয়ারে দাঁড়িয়ে

খুব কাছাকাছি সময়ে তিনটি উৎসব-আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী (২০২১), স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পূর্তি (২০২০) এবং গর্বের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্তি (২০২১)।

অল্পদিনের ব্যবধানে তিনটি উৎসবই গর্বিত জাতি পরম শ্রদ্ধাভরে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় এবং মহা ধুমধামের সঙ্গে বছরব্যাপী উদযাপনের যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখনই বৈশ্বিক মহামারি করোনা সারা দুনিয়ার মতো আমাদের ওপরও হামলে পড়ে। ফলে সবকিছুর হিসাব-নিকাশ এলোমেলো হয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ জুলাই (২০২১) সমাগত। এ দিনই শতবর্ষ পূরণ করবে একদা প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত গর্বের বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রধানত, পূর্ববঙ্গের অনগ্রসর মুসলমানদের স্বার্থ-সুবিধার কথা বিবেচনা করেই ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রাচ্যে ইংরেজি তথা আধুনিক শিক্ষার গোড়াপত্তন হয় ইংরেজদের হাত দিয়ে। ১৮৫৭ সালে কলকাতা, বোম্বে ও মাদ্রাজ-এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উপমহাদেশে আধুনিক শিক্ষার শুরু।

এরপর একে একে ৬৪ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পূর্ববঙ্গবাসী বাঙালির সে কী আনন্দ! এখন থেকে আর অন্যত্র, বিশেষ করে কলকাতায় যেতে হবে না। ঢাকাতেই উচ্চশিক্ষা-অনার্স, মাস্টার্স কোর্স। শিক্ষা ও গবেষণা। জ্ঞানদান, জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান সৃষ্টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় ও গোটা উপমহাদেশের মধ্যে ১১তম বিশ্ববিদ্যালয়।

ইংরেজরা প্রথমবারের মতো বাংলাকে (ব্রিটিশ বাংলা) ভাগ করে ১৯০৫ সালে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামে স্বতন্ত্র একটি প্রদেশ সৃষ্টি করে। নবগঠিত প্রদেশটির রাজধানী স্থাপন করা হয় ঢাকায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনঅধ্যুষিত এলাকার চাহিদা ও অন্যান্য যৌক্তিক কারণে বঙ্গভঙ্গ করা হলেও ছয় বছরের মাথায় ১৯১১ সালে তা বাতিল করা হয়। বঙ্গভঙ্গ এবং বঙ্গভঙ্গ রদকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী শহর ঢাকাসহ গোটা পূর্ববঙ্গ এবং এ এলাকার মুসলিম জনগণের প্রতি শাসককুল ইংরেজদের একটি বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। বঙ্গভঙ্গের সময় (১৯০৫) অবিভক্ত বাংলায় একটিমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছিল-কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ১৮৫৭ সাল)। এ ছাড়া অবিভক্ত বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম ইত্যাদি) কলেজ ছিল মোট ৩৭টি। এ ৩৭টির মধ্যে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসামে’ (নবগঠিত প্রদেশ) ১১টি এবং অবশিষ্ট বঙ্গে ছিল ২৬টি কলেজ। একই সময় (১৯০৫) সমগ্র বাংলায় এমএ পড়ার কলেজ ছিল মোট তিনটি। তবে পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) এলাকায় এমএ পড়ার মতো কোনো কলেজ বা বন্দোবস্ত ছিল না সে সময়।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন শর্ত অনুযায়ী, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী ২৫ মাইল পর্যন্ত এলাকায় অবস্থিত কলেজগুলোই (ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ ইত্যাদি সাতটি) এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রাখা হয়। পূর্ববঙ্গের বাকি সব কলেজ থেকে যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববঙ্গের প্রথম, অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় (প্রথমটি কলকাতা) এবং উপমহাদেশের ১১তম বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গভঙ্গ এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চলে নতুন উৎসাহে কলেজসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে।

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়। পূর্ববঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় পাকিস্তানের সঙ্গে এবং তখনই পূর্ববঙ্গ শিক্ষা অধ্যাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক-কাম শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ‘এফিলিয়েশনে’র ব্যবস্থা যোগ করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৫৫টি কলেজের এফিলিয়েশন ও তত্ত্বাবধানের ভার এ বিশ্ববিদ্যালয়টির (ঢাকা) ওপর ন্যস্ত হয়।

পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় একটিই ছিল-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মেডিকেল কলেজও একটিই-ঢাকা মেডিকেল কলেজ (১৯৪৬ সালে স্থাপিত)। এ ছাড়া সারা দেশে কলেজ ছিল মোট প্রায় ৬০টি (এগুলোর মধ্যে সরকারি কলেজ ৮টি)। দেশে এখন মোট ৫২টি পাবলিক ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের এবং এ কাজ এগিয়ে চলেছে।

যে কথাটি এখানে না বললেই নয় তা হলো-আমাদের দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে স্থানে স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ স্থাপন এবং এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান গ্রহণ ও গবেষণার যে পরিবেশটি তৈরি হয়েছে, বিগত অন্তত ৫০ বছরে তা মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরেই। অত্যন্ত সাধনার ধন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মানুষের গৌরব-গরিমা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো শেষ নেই। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, দীর্ঘ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি পথও হারিয়েছে অনেকবার অনেকখানি। গণ্যমান্য সবার সুদৃষ্টি থাকলে এখনো ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়টির হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অমর-অক্ষয় থাকুক।

বিমল সরকার : অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম