Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

স্বদেশ ভাবনা

খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা : তথ্য বিভ্রাট কাম্য নয়

Icon

আবদুল লতিফ মন্ডল

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২১, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা : তথ্য বিভ্রাট কাম্য নয়

অবকাঠামো সুবিধার উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য উন্নতজাতের খাদ্যশস্যের উদ্ভাবন, উন্নতমানের বীজ ও সার সরবরাহের সুব্যবস্থা, আধুনিক চাষাবাদে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহায়তাদানের মাধ্যমে দেশে কৃষকদের অধিক পরিমাণে খাদ্যশস্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা যেমন কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন অধিদপ্তর ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ, তেমনি খাদ্যশস্য কাটা ও ঘরে তোলার মৌসুমে বাজার স্থিতিশীল রেখে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সহায়তা করা, সরকারি খাদ্য গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত সন্তোষজনক পর্যায়ে রেখে বাজারে এসব পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময় খোলাবাজারে (ওএমএস) ও ন্যায্যমূল্যের দোকানে খাদ্যশস্য বিক্রির মাধ্যমে দাম স্থিতিশীল রাখা, বেআইনিভাবে খাদ্যশস্যের মজুত গড়ে তোলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, সরকারের লক্ষ্যমুখী খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা এবং সর্বোপরি বাজারে খাদ্যশস্যের অবাধ সরবরাহ নিশ্চিত করা খাদ্য মন্ত্রণালয় ও এর অধীন অধিদপ্তরের দায়িত্ব।

খাদ্যশস্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় একদিকে যেমন প্রয়োজন দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের সঠিক তথ্য, তেমনি অন্যদিকে দরকার এসব পণ্যের জনপ্রতি ভোগের সঠিক হিসাব। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে এসব পণ্য উৎপাদন ও জনপ্রতি ভোগের পরিমাণের সঠিক তথ্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন অধিদপ্তর এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো খাদ্যশস্য, বিশেষ করে চালের প্রকৃত উৎপাদনের চেয়ে বেশি পরিমাণ উৎপাদন দেখিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় প্রদত্ত প্রকৃত পরিমাণের চেয়ে বেশি পরিমাণে চাল উৎপাদনের তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধান্বিত করেছে-এ কথা স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন।

এতে খাদ্য মন্ত্রণালয় খাদ্যশস্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় একাধিকবার প্রধান খাদ্যশস্য চালের সংকট দেখা দেয় এবং চালের দাম, বিশেষ করে দেশের কমবেশি ৭০ শতাংশ মানুষের প্রধান খাদ্য মোটা চাল হতদরিদ্র, দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়ে তাদের খাদ্যনিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করে। একইসঙ্গে মাঝারি ও সরু চালের দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। খাদ্যশস্য উৎপাদনে ও এসব পণ্যের মাথাপ্রতি ভোগের সঠিক তথ্যের অভাব সুষ্ঠু খাদ্যব্যবস্থাপনায় কীভাবে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে-তা আলোচনা করাই মূলত এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।

এ নিবন্ধে খাদ্যশস্য বলতে এখন পর্যন্ত দেশের মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত চাল ও গমকে বোঝানো হয়েছে। ভুট্টা এখন পর্যন্ত মূলত পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় সেটিকে এ নিবন্ধে খাদ্যশস্যের আওতাভুক্ত করা হয়নি। দেশের প্রধান খাদ্য হিসাবে কমবেশি ৯০ শতাংশ মানুষ চালের ওপর নির্ভরশীল। দেশের অনেকে খাদ্য বলতে চাল বা চাল থেকে রূপান্তরিত ভাতকে (শর্করা) বোঝায়, যদিও খাদ্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে আমিষ (মাছ, মাংস, ডিম), স্নেহজাতীয় পদার্থ (ভোজ্যতেল, দুগ্ধজাতীয় খাবার), মিনারেলস (শাকসবজি), মসলা (পেঁয়াজ, আদা, রসুন) এবং পানীয় (চা, কফি)।

শুধু তাই নয়, চাল দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। অতীতে কোনো সরকারই চায়নি এবং বর্তমান সরকারও চায় না দেশে চালের ঘাটতি দেখা দিক এবং পণ্যটির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যাক। এ কারণেই স্বাধীনতা-পরবর্তী সব সরকারই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দেশকে খাদ্যে, বিশেষ করে প্রধান খাদ্য চালে স্বনির্ভর করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।

এখন দেখা যাক, দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্য এবং এসব পণ্যের জনপ্রতি ভোগের প্রকৃত তথ্যের অভাব খাদ্যশস্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কীভাবে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) দেশে চালের উৎপাদন দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৭ লাখ টনে। আর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক বলেছিলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে গত অর্থবছরে চালের প্রকৃত উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৬৬ লাখ টন। বিবিএসের হিসাবের সঙ্গে ডিএইর হিসাবের পার্থক্য দাঁড়ায় প্রায় ২১ লাখ টন। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) হিসাবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়।

এতে পার্থক্য দাঁড়ায় ২৮ লাখ টন। ডিএইর হিসাবের এ গরমিলের কারণে সঠিক সময়ে চাল আমদানি করতে পারেনি সরকার- স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এ অভিযোগ করেন। এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ করা তথ্যের চেয়ে প্রায় ২১ লাখ টন চাল কম উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। উৎপাদনের সঠিক তথ্যটি যথাসময়ে জানা গেলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। কেননা চাল আমদানির সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জড়িত।

দেশে উৎপাদিত মোট চালের ৫৫ শতাংশ আসে বোরো ফসল থেকে। গত বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণভাবে ধান-চাল সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তা পূরণ হয়নি। সরকার নির্ধারিত দামের (কেজিপ্রতি ২৬ টাকা) চেয়ে খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় ধানচাষিরা সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে আগ্রহী হননি। ধানচাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ৮ লাখ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মৌসুম শেষে সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ২ লাখ টন।

এদিকে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালকল মালিকরা চুক্তিমূল্যে (প্রতি কেজি ৩৭ টাকা) সরকারকে চাল সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করে চালের কেজিপ্রতি দাম বৃদ্ধির দাবি করেন। সরকার দাম বৃদ্ধিতে রাজি না হওয়ায় মৌসুম শেষে সাড়ে ১১ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাড়ে ৭ লাখ টন চাল সংগৃহীত হয়। ওই বছর সরকারি খাতে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি। আর চাল আমদানিতে অতি উচ্চ হারের শুল্ক বিদ্যমান থাকায় বেসরকারি খাতে চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ৪ হাজার টনে।

একদিকে সময়মতো চাল আমদানিতে ব্যর্থতা, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি; তাই চাল আমদানিতে শুল্ক হার ড্রাস্টিক্যালি হ্রাস করেও বেসরকারি খাতকে চাল আমদানিতে তেমন উৎসাহিত করা যায়নি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরকারি খাতেও চাল আমদানি সম্ভব হয়নি। এদিকে গত আমন মৌসুমে চাল উৎপাদনের পরিমাণ সরকারিভাবে জানা না গেলেও ইউএসডিএর হিসাবে আমন চালের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৩ লাখ টনে, যা গত বছরের চেয়ে ৭ লাখ টন কম। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে উপর্যুপরি বন্যা ও করোনাভাইরাসের কারণে এ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।

এসব কারণে গত এপ্রিলে সরকারি গুদামে চালের মজুত একযুগের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এর সুযোগ নেয় চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীরা। দেশের শতকরা ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য মোটা চালের কেজিপ্রতি দাম ৫০ টাকায় পৌঁছে। আর মাঝারি ও সরু চালে দামে বল্গাহীন ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যায়।

ইউএসডিএর এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ১৭ মে দ্য ডেইলি স্টারে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিটশক ও পোকার আক্রমণের কারণে বাংলাদেশে চলতি মৌসুমে বোরো চালের উৎপাদন দাঁড়াবে ১ কোটি ৯০ লাখ টনে, যা লক্ষ্যমাত্রার (২ কোটি ৫ লাখ টন) চেয়ে ১৫ লাখ টন এবং গত অর্থবছরের উৎপাদনের তুলনায় ৬ লাখ টন কম। এদিকে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক গত মাসে এক অনুষ্ঠানে বলেন, অনুকূল আবহাওয়া, গত বছরের তুলনায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো চাষ হওয়া এবং একই সঙ্গে গত বছরের তুলনায় ৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ বাড়ায় গতবারের তুলনায় এবার বোরোর উৎপাদন ৯ থেকে ১০ লাখ টন বেশি হবে। দেশে ধান উৎপাদনে শীর্ষস্থানে থাকা বোরো ফসলের উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ে যে মতপার্থক্য ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে, তা আগামীতে সুষ্ঠু খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনায় যে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে; তা অনেকটা জোর দিয়ে বলা যায়।

খাদ্যশস্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা গম উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ে তেমন কোনো মতবিরোধ নেই। এর কারণ, বর্তমানে দেশে উৎপাদিত গম প্রয়োজনের ছয় ভাগের মাত্র এক ভাগ পূরণ করে। সরকারি তথ্য মোতাবেক, ১৯৮৯-৯৯ অর্থবছরে দেশে বার্ষিক গমের উৎপাদন হয়েছিল ১৯ লাখ ৮ হাজার টন, যা হ্রাস পেয়ে এখন ১২-১৩ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। দেশে বছরে কমবেশি ৭৫ লাখ টন গমের প্রয়োজন।

তাই বাকি ৬০ লাখ টন বা তদূর্ধ্ব পরিমাণ গমের চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে শীতের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব হ্রাস, গম ফসলে মারাত্মক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ, গম চাষের জমি অন্য ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হওয়া প্রভৃতি কারণে গমের উৎপাদনে ধস নেমেছে, যদিও মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চালের তুলনায় আটার দাম কম হওয়ায় গমের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এবং গম আমদানিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে দেশে গমের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

সুষ্ঠু খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনায় আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, মাথাপিছু খাদ্যশস্যের পরিমাণ নির্ধারণ নিয়ে মতানৈক্য। বিবিএস তাদের সর্বশেষ ২০১৬ সালের হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের (হায়েস) রিপোর্টে জানিয়েছে, দেশে জাতীয় পর্যায়ে মাথাপিছু দৈনিক খাদ্যশস্য ভোগের পরিমাণ ৪০৬ দশমিক ৫ গ্রাম। এর মধ্যে চাল এবং গমের পরিমাণ যথাক্রমে ৩৬৭ দশমিক ২ এবং ১৯ দশমিক ৮ গ্রাম। অন্যান্য খাদ্যশস্যের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৫ গ্রাম।

২০১০ সালের হায়েসে মাথাপিছু দৈনিক খাদ্যশস্য ভোগের পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ৪৬৩ দশমিক ৯ গ্রাম। এর মধ্যে চাল এবং গমের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪১৬ এবং ২৬ গ্রাম। অন্যান্য খাদ্যশস্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২১ দশমিক ৯ গ্রাম। আর ২০১০ সালের হায়েসে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের মাথাপিছু দৈনিক খাদ্যশস্য ভোগের পরিমাণ যখন ৪৮৫ দশমিক ৬ গ্রামে দাঁড়িয়েছিল, ২০১৬ সালের হায়েসে তা কমে দাঁড়ায় ৪২২ দশমিক ৬ গ্রামে। বিশেষ করে প্রধান খাদ্য চালের ভোগে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। ২০১০ সালের হায়েসে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জনপ্রতি দৈনিক চাল ভোগের পরিমাণ ছিল ৪৪১ দশমিক ৬ গ্রাম, যা ২০১৬ সালের হায়েসে কমে দাঁড়ায় ৩৮৬ দশমিক ১ গ্রামে।

আর তাদের গম ভোগের মাথাপিছু দৈনিক পরিমাণ ২০১০ সালের হায়েসের ২৩ দশমিক ৩ গ্রাম থেকে কমে ২০১৬ সালের হায়েসে ১৭ দশমিক ৪ গ্রামে দাঁড়ায়। এখানে যে প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই উঠতে পারে তা হলো, মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে কী এমন ঘটে গেল যাতে জাতীয় পর্যায়ে মানুষের চাল ও গম ভোগের পরিমাণ কমে গেল। গ্রামাঞ্চলে খাদ্যশস্য ভোগের তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চাল ও গম ভোগের পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে তাদের চাল ভোগের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার তথ্য কিছুটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। কারণ আগের মতো এখনো গ্রামাঞ্চলের ৯০ শতাংশ খেটে খাওয়া মানুষের প্রধান খাদ্য চাল থেকে তৈরি ভাত।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্যের বরাত দিয়ে একটি দৈনিকের (বণিক বার্তা, ২৩ অক্টোবর, ২০২০) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইফপ্রি ও বিআইডিএস মনে করে, বিবিএস দৈনিক চাল ভোগের যে তথ্য দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের জনগণের ভোগের সঠিক চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না। একজন মানুষ দৈনিক কত গ্রাম চাল ভোগ করে, তা নিয়ে একটি জরিপ করেছিল ইফপ্রি। সে জরিপে তারা দেখিয়েছিল- ২০১৮ সালে বাংলাদেশে দৈনিক জনপ্রতি চাল ভোগের পরিমাণ ছিল ৩৯৬ দশমিক ৬ গ্রাম, যা ২০১৬ সালেও ছিল ৪২৬ গ্রাম।

অন্যদিকে, ২০১৬ সালে দৈনিক জনপ্রতি চাল ভোগের পরিমাণ ৪৬০ গ্রাম ছিল বলে তথ্য দিয়েছে বিআইডিএস। আর একই বছরে দৈনিক জনপ্রতি চাল ভোগের পরিমাণ ৩৬৭ গ্রাম দেখানো হয়েছে বিবিএসের হায়েসে। তিন সংস্থার তথ্যের তুলনা করলে দেখা যায়, জনপ্রতি চাল ভোগের পরিমাণ ইফপ্রির চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ এবং বিআইডিএসের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম উঠে এসেছে বিবিএসের তথ্যে। এ তথ্য বিভ্রাট সুষ্ঠু খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সবশেষে বলতে চাই, সুষ্ঠু খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনার জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদনের এবং এসব পণ্যের মাথাপ্রতি ভোগের সঠিক তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এসবের প্রকৃত তথ্য না থাকলে নীতিনির্ধারকদের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়। প্রকৃত তথ্যের অভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া গেলে খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মুখেই রয়ে যাবে, যা দেশের জন্য মোটেই শুভ হবে না।

আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক খাদ্যসচিব, কলাম লেখক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম