
প্রিন্ট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২০ এএম
হিন্দুত্ববাদের বিপরীতে বাঙালিয়ানার জয়

একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল প্রকাশ হলো। অনেক উৎকণ্ঠা-উত্তেজনা পেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস টানা তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠনের টিকিট পেয়ে গেল। বিজেপির এবার আর বাংলা দখল হলো না। এই কলাম লেখা পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফলে তৃণমূল পেয়েছে ২১৩টি আসন এবং বিজেপির আসনের সংখ্যা ৭৭।
তবে এবার ভরাডুবি হয়েছে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও বামপন্থি দলগুলোর। তারা সর্বসাকুল্যে পেয়েছে একটি আসন মাত্র। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের তুলনায় বিজেপির এবারের সাফল্য নেহায়েত কম নয়! তবে বিজেপি এবার যে আটঘাট বেঁধে নির্বাচনে নেমেছিল তাতে অনেকে মনে করেছিলেন, এবার হয়তো তারা বাংলায় সরকার গঠন করবে। অবশ্য এমন ভাবার কারণও আছে।
২০১৯ সালের পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তৃণমূলের তুলনায় মাত্র চার আসনে পিছিয়ে থেকে যে চমক সৃষ্টি করেছিল তাতে এমনটি ভাবা অস্বাভাবিক নয়। সেবার লোকসভার ৪৪টির মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ২২টি এবং বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। বিজেপি লোকসভা নির্বাচনের সে সাফল্য ধরে রাখার জন্য এবার প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন ২৭ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোট আট পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ২৯৪ আসনের জন্য ২ হাজার ১৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও শেষ পর্যন্ত দুটি কেন্দ্রের প্রার্থীর করোনায় মৃত্যু হলে ২৯২টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বাকি দুটি আসনের ভোটগ্রহণ করা হবে ১৬ মে। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আরও তিনটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছে। এগুলো হলো আসাম, কেরালা ও তামিলনাড়ু। আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি হলো পুদুচেরি। তবে সেসব রাজ্যের চেয়ে সবাই যেন পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ফলাফল নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে বেশি।
আগেই উল্লেখ করেছি, গত লোকসভার নির্বাচনে তৃণমূলের তুলনায় মাত্র চারটি আসন কম পেয়েছিল বিজেপি। সেসময় তাদের ভোট শতাংশেরও উন্নতি ঘটেছিল উল্লেখযোগ্য হারে। সেজন্য বিজেপি নেতারা ভেবেছিলেন, এ বিধানসভা নির্বাচনে একটু জোর দিয়ে লেগে থাকলে পশ্চিমবঙ্গের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে আসবে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সর্বভারতীয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনি প্রচারে ঘনঘন পশ্চিমবঙ্গে আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে।
স্বয়ং নরেন্দ্র মোদিই ১২ সফরে ১৮টি সমাবেশে নির্বাচনি ভাষণ দিয়েছেন। শুধু কি তাই? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে অংশগ্রহণের সুযোগ নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দিতে ‘মতুয়া’ সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু প্রতিষ্ঠিত পবিত্র মন্দিরও সফর করে গেছেন নরেন্দ্র মোদি। উদ্দেশ্য, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত প্রায় দেড় কোটি মতুয়া ভোটারদের মন জয় করা। বিজেপি বরাবরই হিন্দুধর্মীয় বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে সেখানকার মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করেছে।
এজন্য তারা আগাগোড়াই ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। নির্বাচনি প্রচারণাকালে বিজেপির অনেক নেতাকে বলতে শোনা গেছে, তৃণমূল তথাকথিত অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের ভোটে এ পর্যন্ত নির্বাচনে জিতে এসেছে। এসব নেতা সরাসরি মুসলিম না বললেও বাংলাদেশি উল্লেখ করার মাধ্যমে সেখানকার মুসলমান ভোটারদের কথাই বলেছেন।
তারা আগেই বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে এনআরসি চালু করবেন। তাতে আসামের আদলেই পশ্চিমবঙ্গেও হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সহজে বিভাজন করা যাবে। বিজেপি এভাবেই হিন্দু ধর্মের আড়ালে হিন্দুত্ববাদের বীজকে মানুষের মনে বপন করার চেষ্টা চালিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ‘রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদীরা সাধারণত হিন্দু ধর্মের পক্ষে থাকেন না, থাকেন হিন্দুত্বের পক্ষে’। হিন্দু ধর্ম এবং হিন্দুত্ববাদ এক নয়। তাদের মতে, হিন্দু ধর্ম হাজার বছরের ধর্ম। আর হিন্দুত্ব একশ বছর আগের, যা হিন্দু মহাসভার সাবেক সভাপতি সাভারকরের আবিষ্কার। বিজেপি এ হিন্দিত্ববাদকেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়েছে।
তারা সব সময়ই হিন্দু ও মুসলমানদের স্বার্থ পরস্পরবিরোধী বলে প্রচার করে এসেছে। তবে এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে তারা কিছুটা ভুল করেছে। খাদ্য সমস্যা, বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব, স্বাস্থ্য সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে যে হিন্দু ও মুসলিমদের স্বার্থ অভিন্ন, তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের পাশাপাশি হিন্দুত্ববাদের মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করা অন্যতম লক্ষ্য বিজেপির।
এ কারণে মোদি ও শাহ জুটিসহ দলের নেতাদের বলতে শোনা গেছে, নির্বাচনে জেতাটাই বড় কথা নয়, আসল কথা হলো মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। এসব কিছু মিলিয়েই দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের মূল সংঘাতটা যতটুকু না রাজনৈতিক, ততটুকুই সাংস্কৃতিক। বিজেপি ‘হিন্দু-হিন্দুত্ববাদ নিয়ে যতটা এগিয়েছে, তৃণমূল ততটাই নির্ভেজাল বাঙালিয়ানা দিয়ে তা ঠেকিয়েছে। এ বাঙালিয়ানায় ধর্ম যতটুকু না প্রভাব ফেলেছে, এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে জাতিগত আচার-আচরণ ও সহমর্মিতা।
বিজেপির বিভাজনের এ রাজনীতি বাঙালিকে সহাবস্থান ও সহনশীলতার আদর্শ থেকে টলাতে পারেনি। বরং বিজেপির এ মতাদর্শের বিরুদ্ধেই মমতার সোচ্চার কণ্ঠস্বর ও লড়াই বাঙালির মন জয় করতে সাহায্য করেছে। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের সিংহভাগ বাঙালি ভোটারের মনের ভেতর সব সময়ই একটা বাম ভাবাদর্শ কাজ করে। এ ভাবাদর্শের অন্যতম উপজীব্য বিষয় হলো ধর্মনিরপেক্ষতা। এ ভাবাদর্শের সঙ্গে মমতার মতাদর্শের কোনো বিরোধ ছিল না।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদের আদর্শকে চাপিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিজেপি ভোটে জেতার কৌশল হিসাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আরও দুটি ইস্যুকে ভোটারদের মাঝে উসকে দেওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা করেছে। ইস্যু দুটো হলো-এক. দুর্নীতি; দুই. বড় মাপের শিল্পায়নে তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতা।
তারা ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গের ভারী শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হবে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন; তাতে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে বলে প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এ দুটি ইস্যুর কোনোটাই বাঙালির মনে দাগ কাটতে পারেনি। বাঙালি বেশির ভাগ ভোটারের কাছে বড় মাপের শিল্পায়ন তেমন গুরুত্ব পায়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির এমন উত্থান হলো কীভাবে? বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু তারা ইতোমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে বিরোধী দল হিসাবে যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তাই বা কম কীসে? পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থানের কথা জানতে হলে কিছুটা পেছনে তাকাতে হবে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ের পর তাদের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় অমিত শাহকে বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তারপর থেকেই কিন্তু মোদি-শাহ যুগের সূচনা।
অমিত শাহ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ঘোষণা দিলেন বিজেপিকে সর্বভারতীয় দল হিসাব প্রতিষ্ঠিত করতে হলে পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণভারত এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল সর্বত্র তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে হবে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা সেদিনই ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর তিনি নিজে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছেন। জেলায় জেলায় সফর করে জনসংযোগ স্থাপন করেছেন। তবে এটি ঠিক, এবারের নির্বাচনে বিজেপি ৭৭টি আসন পেলেও তাদের লক্ষ্য ২০০টি আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ ব্যর্থতার জন্য তাদের ভেতর নির্বাচনোত্তর আত্মবিশ্লেষণ হবে নিশ্চয়ই। এবারের নির্বাচন পরিচালনার ভার অমিত শাহ নিজের হাতেই রেখেছিলেন। তিনি সশরীরে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান করে দলের নির্বাচনি কার্যক্রম সমন্বয় করেছেন। তারপরও নির্বাচনি পরিকল্পনার কিছু বিষয় নিয়ে তাদের দলের ভেতর এখনই সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। কলকাতার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, ২০০ আসন পাবে বলে ঘোষণা দিয়ে একশ’ আসনও পেতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজ্যের বিজেপি নেতাদের একাংশ মোদি ও অমিত শাহর দিকে ইঙ্গিতে বলেছেন, সেনাপতি হয়েছিলেন যারা ভোটে জিতলে নিশ্চয়ই তারা কৃতিত্ব নিতেন, এখন হারের দায়ও তাদের নিতে হবে।
তারা বলেছেন, প্রথম থেকেই বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব রাজ্যের হাত থেকে তুলে নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। জেলায় জেলায় অন্য রাজ্য থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি অবিশ্বাস দেখিয়েছেন। বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও নিজেদের রাজ্যের অভিজ্ঞতা তারা বাংলায় প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। বারবার বলেও কাজ হয়নি। সুতরাং যা হওয়ার তাই হয়েছে।
ওদিকে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, বাংলায় বিজেপির এ হারের সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের স্থায়িত্বের ওপর। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলায় এ হার কার্যত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ব্যক্তিগত পরাজয়’।
অন্যদিকে বাকি চারটি রাজ্যের মধ্যে একটি বাদে বাদবাকি তিনটি রাজ্যেই বিজেপির ধরাশায়ী হয়েছে। এ লেখা যখন লিখছি, তখন পর্যন্ত আসামে ৬০ আসনে জিতে গিয়েছে বিজেপি। গতবারও একই সংখ্যক আসনে বিজেপি জিতেছিল। বিজেপির জোটসঙ্গী আসম গণপরিষদ ৯টি আসন, ইউপিপিএল ছয়টি আসনে জিতেছে। ফলে ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য মোট ১২৬ আসনের মধ্যে এ সংখ্যক আসনই যথেষ্ট। এ প্রথম অকংগ্রেসি সরকার হিসাবে আসামে পরপর দুবার সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত করেছে বিজেপি।
চার দশকের প্রথা ভেঙে কেরলে দ্বিতীয়বারে জন্য ক্ষমতায় ফিরেছে পিনারাই বিজয়ন নেতৃত্বাধীন এলডিএফ। উল্লেখ্য, গত ৪০ বছরে কেরলে কোনো দল লাগাতার দুইবার সরকার গঠন করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত ১৪০ আসনের কেরল বিধানসভায় ৯২ আসনে এগিয়ে রয়েছে এলডিএফ। অনেকটাই পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইউডিএফ। অন্যদিকে বিজেপির অবস্থা দিশাহারা।
ঠিক পশ্চিমবঙ্গে বাম শক্তির মতো হাল কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা এ দলটির। তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে এবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ ডিএমকে ক্ষমতায় যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে সর্বশেষ ভোটগণনার ফল। ২৩৪ আসনের মধ্যে ১৫৭টি আসনেই এগিয়ে রয়েছে বিরোধী দল ডিএমকে।
অন্যদিকে ৭৭টি আসনে এগিয়ে থেকে শাসক দল থেকে বিরোধী দলে পরিণত হচ্ছে বিজেপি জোটবদ্ধ দল এআইএডিএমকে। চূড়ান্ত ফল ঘোষণা না হলেও ১৫৭টি আসনে এগিয়ে থাকায় ইতোমধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংখ্যা পার করেছে ডিএমকে। কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরিতে বিজেপি অবস্থাও ভালো নয়। মোট ৩০ আসনে এআইএনআরসি পেয়েছে ১০টি এবং বিজেপি ছয়টি আসন। অন্যান্য দল পেয়েছে বাকি ছয়টি আসন।
পশ্চিমবঙ্গ প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসি। বিজেপির নেতিবাচক বক্তব্যও ভোটের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। বিগত কয়েক মাসে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে রাজ্য নেতাদের মুখে মুখে মমতাকে উদ্দেশ্য করে ‘চাল চোর’, কাটমানি খাওয়া ভাইপো’, ‘দিদি ও দিদি’ বলে কটাক্ষ করে ডাকা, সঙ্গে ‘জয় শ্রীরাম’ ‘জয় শ্রীরাম’ বলে হাসি-তামাশা করা বাঙালি ভালো চোখে দেখেনি।
সবচেয়ে নির্মম যেটি ছিল তা হলো, নন্দীগ্রামে প্রচার করতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেলে বিজেপি নেতারা মমতাকে যে ভাষায় ব্যঙ্গ করেছেন তার প্রভাবও পড়েছে ভোটের ফলাফলে। তবে বিজেপির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব থেকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে কাউকে ঠিক করতে না পারা। এখানে মমতা বাজিমাত করেছেন। মমতার এ বিজয়ে বিজেপিবিরোধী যে জোট গঠনের চেষ্টা চলছে তা আরও এগিয়ে যাবে। এ জোট বাঁধার বিষয়ে অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারা অনেকটাই ভরসা রাখছেন মমতার ওপর।
এ ফলাফলকে সামনে রেখে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নামতে চায় অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলো। এক্ষেত্রে মমতাই তাদের অনুপ্রেরণা তা একরকম পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন বিরোধী নেতারা। সুতরাং বলা যায়, বিধানসভা নির্বাচনের এ বিজয় বিজেপিবিরোধী জোটের মুখ্য নেতা হতে সাহায্য করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পশ্চিমবঙ্গসহ পাঁচটি রাজ্যের (আসাম বাদে) বিধানসভার যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তা বিজেপির ক্ষয়িষ্ণু জনপ্রিয়তার ইঙ্গিত বহন করে কি না দেখার বিষয়।
ধর্মের ওপর ভর করে ক্ষমতায় আসা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে হলে এখন আঞ্চলিক দলগুলোকেই জোটবদ্ধ হতে হবে। এ চিন্তাধারায় মমতা ও অন্যান্য বিরোধী নেতারা কতটুকু সফল হবেন তা হয়তো ভবিষ্যৎই বলতে পারবে। এজন্য আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগের তিনটি বছর তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা