Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

অপরিকল্পনা ও অদক্ষতার পরিণতি

Icon

নজরুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২১, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অপরিকল্পনা ও অদক্ষতার পরিণতি

পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। কয়েকজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অগ্নিদগ্ধ বেশ কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনার খবরে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঢাকায় মাঝেমধ্যেই ঘটছে।

এর আগে পুরান ঢাকার চকবাজার ও নিমতলীতে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। ওই দুটি ঘটনার জন্যও রাসায়নিক পদার্থ অনেকাংশে দায়ী। কোথাও রাসায়নিক পদার্থ থাকাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অসাবধান হলে অগ্নিকাণ্ড ঘটতেই পারে।

নগর পরিকল্পনার নীতিমালা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে রাসায়নিক পদার্থ সরিয়ে নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আদালতেরও নির্দেশনা রয়েছে। অথচ তা বাস্তবায়নের কাজটিতে বিলম্ব হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এসব কাজ সহজে বাস্তবায়ন হয় না। আমরা স্বস্তি পেয়েছিলাম- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বারবার ঘোষণা দিয়েছিলেন, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে। তিনি এ ব্যাপারে মালিকদের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

কারখানা সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে অবশ্য পুনর্বাসনের প্রশ্ন জড়িত। এর সঙ্গে মানুষের জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে। ফলে কোনো ব্যবসা সরিয়ে নেওয়া হলে এর সঙ্গে পুনর্বাসনের ব্যাপারটি চলে আসে। এ কাজটিও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে করতে হয়। হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প সাভারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে; কিন্তু সেখানে পুনর্বাসনের কাজটি ঠিকমতো হয়নি। সেখানে ইটিপি সময়মতো বা সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়নি। এটি অনেক সমস্যা তৈরি করেছে।

পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে সেই কাজটি যেন হয় রাজউকের নীতিমালা অনুসরণ করে। পুনর্বাসনের কাজটি দ্রুত ও সঠিকভাবে করতে হবে। এটা ঠিক, কাজটি সহজসাধ্য নয়। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্ন জড়িত। তবু কাজটি করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদে রাজউকের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পর্যায়ক্রমে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবশ্যই তা সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে, যেভাবে সিঙ্গাপুরে করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজন অত্যন্ত ডিটেইল (পুঙ্খানুপঙ্খ) পরিকল্পনা; দক্ষ, নিষ্ঠাবান ও সৎ প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে রাজউকের প্রতি মানুষের আস্থা কম। কয়েক বছর আগে ভাষানটেক বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ হাজার মানুষ। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটি সুন্দর পরিকল্পনামতো হয়নি। দুটিই মানবিক বিপর্যয়। এর পেছনে রয়েছে পরিকল্পনার অভাব, সুব্যবস্থার অভাব এবং কর্তৃপক্ষের দক্ষতার অভাব। এর ফলে কর্তৃপক্ষের প্রতি মানুষের আস্থার অভাব তৈরি হচ্ছে।

শুধু পুরান ঢাকায় নয়, নতুন ঢাকাতেও অপরিকল্পিতভাবে নানা কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। এমন ঢিলেঢালাভাবে রাজউকের কার্যক্রম চললে নগরীর ভবিষ্যৎ ভালো দেখতে পাই না। নানা দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বাড়াতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্তরিকতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। পুনর্নির্মাণের কাজটি সঠিকভাবে ও নিয়ম মেনে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব সময় কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকা উচিত। মোট কথা, সার্বিক নগর পরিকল্পনা সঠিকভাবে হওয়া উচিত, যাতে কোনো পরিকল্পনা অনুমোদনের পর সঠিকভাবে তার বাস্তবায়ন হয়। আমরা প্রায়ই কর্তৃপক্ষের জনবল ঘাটতির কথা শুনে থাকি। এ ক্ষেত্রে সত্যতাও থাকে। জনবলের ঘাটতি দূর করতে হবে এবং দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে।

সবশেষে বলব, পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা পর্যায়ক্রমে সরিয়ে ফেলতে হবে। একইসঙ্গে মানুষের সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে।

প্রফেসর নজরুল ইসলাম : নগর পরিকল্পনাবিদ; সাবেক চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম