পিটিএ’র মাধ্যমে সম্পর্কের নতুন মাত্রায় বাংলাদেশ-ভুটান
ড. এ কে আব্দুল মোমেন
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২১, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশের পুরোনো বন্ধুরাষ্ট্র ভুটান। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগেই ডিসেম্বরের ৬ তারিখ ভুটান বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে।
তারপর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। নিকটতম প্রতিবেশী হিসাবে উভয় দেশ একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন সময়।
বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রায় ভুটান যেমন পাশে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশও ভুটানের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশটির বিভিন্ন উন্নয়ন ও সহযোগিতায়।
ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের এ হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক আরও একধাপ এগিয়ে গেছে এবার। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশ আগমন উভয় দেশের সম্পর্কে দিয়েছে নতুন মাত্রা। অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত হয়েছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত ‘চিরন্তন মুজিব’ শিরোনামের ঐতিহাসিক আয়োজনে যোগ দিতে ২৪ মার্চ ঢাকায় এসেছিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।
ঐতিহাসিক এ আয়োজনে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে যোগদান উভয় দেশের জন্যই একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর আগমনে বাংলাদেশ সম্মানিত হয়েছে যেমন, তেমনি উভয় দেশের পুরোনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও উন্নীত হয়েছে অনন্য উচ্চতায়।
এ সময় বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন।
পাশাপাশি ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়েও দুই সরকারপ্রধান ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে তার আগমনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের এবারের সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও পঞ্চাশ বছর পূর্তি হয়েছে এ বছর। যে কোনো বিবেচনায় এ সময় উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘটনা।
বাংলাদেশ সফরকালে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করেন এবং উভয় দেশের বিভিন্ন সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা ও লোটে শেরিংয়ের আলোচনায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ, জলবিদ্যুৎ, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে।
এ সময় উভয় দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আগে গত বছর ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর হয়েছে; যা উভয় দেশের আন্তঃবাণিজ্য সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
টিএ চুক্তি স্বাক্ষর বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে এ চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ চুক্তিটি বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পিটিএ চুক্তি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে এক কোটি ২৮ লাখ ডলার বাণিজ্য হয়েছিল। ধীরে ধীরে তা বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ ভুটানে রপ্তানি করেছে ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য। আর ভুটান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের পণ্য। প্রধানত পাথর আমদানি হয় ভুটান থেকে। এ বাণিজ্যের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ভুটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।
উভয় দেশের সরকারপ্রধানদ্বয়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) এবং বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক যত দ্রুত সম্ভব অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা আন্তঃরাষ্ট্রীয় পানিপথ ব্যবহারের জন্য এসওপি এবং ট্রানজিট চুক্তির খসড়া প্রটোকল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করার বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেছেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বাড়ানোর ওপরও জোর দিয়েছেন। স্বল্পতম ব্যয়ে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ভুটানে সরবরাহের ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে ভুটান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা কাজ করছে।
সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ট্রেন সংযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখতেও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন। ভুটানের গেলেফু ও বাংলাদেশের সঙ্গে; বিশেষ করে লালমনিরহাট ও সৈয়দপুরের সঙ্গে কার্গোবিমান যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাবনার বিষয়টি খতিয়ে দেখার বিষয়েও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন। যদি এসব উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, উভয় দেশই এর সুফল ভোগ করবে। দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে এগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
পারস্পরিক সম্মান, রাজনৈতিক সমঝোতা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এবং উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অত্যন্ত চমৎকার, বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভালো প্রতিবেশীসুলভ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়; বিশেষ করে ২০১৯ সালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পরীক্ষিত বন্ধুত্বের প্রতিফলন ঘটেছে। দুই দেশের ঐতিহাসিক ও ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় গভীর।
ভুটান-বাংলাদেশের এ কূটনৈতিক সুসম্পর্কের ইতিহাস বহু পুরোনো। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বের সম্পর্কের ভিত্তিকে জোরদার করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিন দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন ভুটানের তৎকালীন রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক।
ওই সফরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং রাজা জিগমে এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে একমত পোষণ করেন যে, সব সম্পর্কের নীতি হবে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক সংহতি, পারস্পরিক অনাগ্রাসন, পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক সুবিধা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। পরবর্তীকালে দুদেশের সম্পর্ক এসব নীতির ওপর ভিত্তি করেই আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে। হিমালায় কন্যা ভুটানের সঙ্গে সুসম্পর্কের বীজ বপন করেছিলেন মূলত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতির পিতার কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী সময়ে ভুটানের সঙ্গে এ সুম্পর্ককে আরও অগ্রসর করতে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। ২০০৯ সালে ভুটান সফর করেন তিনি। এ ছাড়াও ২০১০ সালে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে অনুষ্ঠিত সার্কের ১৬তম শীর্ষ বৈঠকে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সফরের ক্ষেত্রে ভুটানও ছিল আন্তরিক। ভুটানের রাজা ২০১১ সালের মার্চে এবং ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সার্কের চেয়ারপারসন হিসাবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ২০১২ সালে ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুককে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেন। ভুটানের রানী মাতা ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভুটান সফরে যান। ভুটানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২০১৯ সালের এপ্রিলে এক দ্বিপাক্ষিক সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই সময় দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক বেশ কয়েকটি দলিলও স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভুটানের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়, বিশেষ করে চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়ন করছে; এমন কী ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. টেনডি দরজী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্র। বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় কাঠামো উন্নয়ন করে আরও অধিক হারে ভুটানের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাশাস্ত্রসহ অন্যান্য সব বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের বিরাট সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্বব্যাপী চলমান কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার জন্য ভুটানের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এ সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভুটানকে জরুরিভাবে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের এ মানবিক উদ্যোগটি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে। দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। বাংলাদেশকে তিনি নিজের দ্বিতীয় বাড়ি বলে মন্তব্য করেছেন। কারণ, তার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে বাংলাদেশে। এ দেশেই পড়াশোনা করেছেন তিনি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। বাংলাদেশের একটি মেডিকেল কলেজে অধ্যয়ন করেছেন, এমন একজন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন- এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্ব ও সম্মানের বিষয়।
উভয় দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের এ পঞ্চাশ বছরে দুই দেশের বন্ধুত্ব যেমন শক্তিশালী হয়েছে; তেমনি প্রসারিত হয়েছে সহযোগিতার নানা ক্ষেত্র। দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়সহ নানা পর্যায়ের অসংখ্য সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা ক্ষেত্রে চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও দলিলাদি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সম্পর্ক দৃঢ়তর হয়েছে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধুত্বের বন্ধনকে যেমন শক্তিশালী ও বেগবান করেছে, তেমনি দুই দেশের উন্নয়নকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের সাম্প্রতিক সফর উভয় দেশের এ অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করবে নিঃসন্দেহে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার এ আগমন ভুটান-বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের প্রতি তার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের জন্য এ কোভিড মহামারির সময়েও বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং সফর শেষে স্বদেশে গিয়ে তাকে এবং তার প্রতিনিধিদলকে দীর্ঘ ২১ দিন বাধ্যতামূলক ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এ সময়কালে কোনো সহকর্মী বা পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। এ বাধ্যবাধকতার মধ্যেও বাংলাদেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ থাকার কারণেই তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তার এ ত্যাগের জন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশ সবসময়ই ভুটানকে অকৃত্রিম বন্ধু মনে করে এবং বিপদ-আপদে তার পাশে দাঁড়াতে সচেষ্ট থাকে। আমরা আশা করি, দুই নেতা দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সহযোগিতার সব ক্ষেত্র আন্তরিকতার সঙ্গে ন্যায়সংগত আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন, যা দুই দেশের জনগণের জন্য একটি সুন্দর এবং সমৃদ্ধিশালী ভবিষ্যৎ রচনা করবে।
এ দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের নেতা ও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার ভিত্তিই নিশ্চিত করবে দুই দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা।
যে বন্ধুত্বের শক্তিতে ইতোমধ্যে দুই দেশ প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করেছে, আগামীতে একসঙ্গে পথ চলতে গিয়ে তা আরও শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশ-ভুটান বন্ধুত্ব চিরজীবী হোক।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার