আমার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠা
এএমএম রশিদউদ্দিন
প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তখন ভোলায় সাংগঠনিক সফর শেষ করে এক কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে আমি এবং আমার রাজনৈতিক সহকর্মী আব্দুস সালাম খোকন লঞ্চে চাঁদপুরে পৌঁছাই। রাত আনুমানিক ২টার সময় লঞ্চ থেকে নামার পরই জানতে পারি ঢাকার পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টার ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকিস্তানিদের হামলার খবর। লঞ্চ থেকে নামতেই মনে হলো পুরো চাঁদপুরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। জায়গায় জায়গায় জটলা করে ঢাকার খবরাখবর নিয়ে আলোচনা করছে। বুঝতে পারি এ পরিস্থিতিতে কর্মী সম্মেলন বাতিল করে ঢাকায় ফেরা জরুরি। অতঃপর রাতটা লঞ্চঘাটে কাটিয়ে পরদিন সকাল ৬টায় যে লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে সে লঞ্চে উঠে বসে থাকি। লঞ্চে উঠে বসতেই লঞ্চের সুপারভাইজার জানালেন, ঢাকায় কারফিউ চলছে, তাই এ লঞ্চ সদরঘাট পর্যন্ত যাবে না, আমাদের মুন্সীগঞ্জে নেমে যেতে হবে।
আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ১৯৬৮-৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। তখন থেকেই বুঝতে পারি পশ্চিমারা আমাদের শোষণ করছে। ওদের হাত থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতেই আমার ছাত্র রাজনীতিতে আসা।
দুপুর ১২টায় মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টিতে নেমে প্রথমে নৌকায় চরসৈয়দপুর, তারপর হেঁটে নারায়ণগঞ্জ শহরে আসি। সর্বত্র থমথমে ভাব। একটি রেস্তোরাঁয় সামান্য কিছু খেয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকার রেললাইন ধরে হেঁটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই। পথে চাষাঢ়া রেলগেটের কাছে এসে দেখি মালগাড়ির বগি ফেলে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে যাতে পাকসেনারা শহরে ঢুকতে না পারে।
ঢাকার দিকে যতই এগোচ্ছি ততই দেখতে পাই বহু মানুষ দলবেঁধে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ আমাদের ঢাকার দিকে যেতে বারণও করেছেন। কিন্তু আমাদের ঢাকা যেতেই হবে। আমরা আমাদের গন্তব্য ঠিক করি। প্রথমে মাতুয়াইল যাব। ওখানে আমাদের কয়েকজন বন্ধু থাকেন। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তারপর না হয় ঢাকায় প্রবেশ করব।
ঢাকা-ডেমরা রোডের পাশেই মাতুয়াইলে আমাদের বন্ধু শহীদের বাসায় গিয়ে উঠলাম। বেলা তখন মধ্য দুপুর। আমরা ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। শহীদের বাসায় খেয়ে বিকাল ৪টায় ঢাকার দিকে রওনা দিলাম। ঢাকায় তখনো কারফিউ চলছে। মেইনরোড এড়িয়ে আমরা বাসাবো গিয়ে উঠব ঠিক করেছি। অতঃপর কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাসাবো পৌঁছাই। সূর্য তখন পশ্চিমে হেলে পড়েছে। বাসাবোয় আমার আরেক স্কুল বন্ধু শাহাবুদ্দিনের বাসায় গিয়ে উঠি। দোতলা বাড়ি, বাড়ির ছাদে উঠে প্রিয় ঢাকা শহরকে দেখে রীতিমতো শিউরে উঠি। বিভিন্ন জায়গায় ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে সন্ধ্যার আকাশকে আরও অন্ধকারময় করে তুলেছে। টিকাটুলির ইত্তেফাক অফিসের আগুনের ধোঁয়া তখনো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। শাহাবুদ্দিনের বাসায় রাতটা কাটিয়ে পরদিন খুব ভোরে আমাদের আরামবাগের বাসার উদ্দেশে রওনা দিই। দিনটি ছিল ২৭ মার্চ। কারফিউর সময় এক মহল্লা থেকে আর এক মহল্লায় যাওয়ার নিরাপদ পথ আমাদের জানা ছিল। আমরা রেললাইন পার হয়ে প্রথমে রেলওয়ে কলোনিতে ঢুকে পড়ি। তারপর সেন্ট্রাল গভ. স্কুলের (মতিঝিল উচ্চবিদ্যালয়) ও মতিঝিলের সরকারি কলোনি হয়ে আরামবাগ পৌঁছাই। পথে শুনতে পাই, সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। বাসায় পৌঁছলে সবাই খুশি হয়। কারণ, ঢাকায় ক্র্যাকডাউন শুরুর পর থেকে গত দুদিন বাসার কারও সঙ্গেই কোনো যোগাযোগ ছিল না। ফলে সবাই ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিল। বিশেষ করে আমার মা।
বাসায় পৌঁছে নাস্তা খেয়ে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বের হয়ে যাই। এ সময় কমলাপুর থেকে সাইকেল নিয়ে খুরশীদ এসে হাজির। কাঁধে ঝোলানো ক্যামেরা। খুরশীদ পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ছোট ছেলে, আমার বন্ধু। ওর সাইকেলে করে আমরা বেরিয়ে পড়ি গত দুদিনে পাক জল্লাদদের ধ্বংসলীলা নিজ চোখে দেখতে। প্রথমেই আমরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গেলাম। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত শহিদ মিনারের ছবি তুলে গেলাম জগন্নাথ হলে। হল প্রাঙ্গণে মাটি চাপা দেওয়া গণকবর। দেখি, কয়েকজন শহিদের হাত পা বেরিয়ে আছে। খুরশীদ ছবি তুলল। ওখান থেকে চলে আসি পুরান ঢাকার দিকে। নবাবপুর রোড ধরে ভিক্টোরিয়া পার্ক, হিন্দু অধ্যুষিত শাঁখারী পট্টি, সর্বত্র একই দৃশ্য; মৃতদেহ ও ধ্বংসলীলা। খুরশীদ একে একে এসব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করল।
সন্ধ্যার পর নরপিশাচদের বর্বরতা নিয়ে যখন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম, এমন সময় আমাদের এক বন্ধু এসে জানালেন চট্টগ্রামে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি অফিসার ও সেনারা বিদ্রোহ করেছে এবং বেতারকেন্দ্র দখল করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। মুহূর্তে পুরো শরীরে যেন শিহরণ জেগে উঠল। মনে হলো, গাঢ় অন্ধকারের ভেতর যেন আলোর রেখা দেখতে পেলাম। তাড়াতাড়ি বাসায় এসে রেডিওর নব ঘুরিয়ে চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র ধরার চেষ্টা করে এক সময় পেয়েও গেলাম। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়ার কণ্ঠে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা তখন বারবার প্রচার হচ্ছিল। স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার পর মনে মনে ভাবছিলাম ভীতুর মতো আর বসে থাকা নয়, আমাদেরও কিছু করা উচিত। কিন্তু কীভাবে?
ঢাকা শহরে আমরা সবাই যেন খাঁচায় বন্দি। শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট ও প্রবেশপথে ওরা চেকপোস্ট বসিয়েছে। নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও যাচ্ছে না। তাদের কাছ থেকে কোনো রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাও পাচ্ছি না যে, আমাদের এখন কী করণীয়। এদিকে বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার খবরে শুনেছি ভারত সীমান্ত খুলে দিয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার শরণার্থী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। এজন্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় শরণার্থী শিবিরও খোলা হয়েছে। এর মধ্যেই খবর পেলাম আওয়ামী লীগের কিছু কেন্দ্রীয় নেতা ভারতে চলে গেছেন। অপরদিকে বেঙ্গল রেজিমেন্ট, বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরের তরুণদের সংগঠিত করে স্বল্পমেয়াদে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করে দিয়েছে। আশার আলো যেন দেখতে পেলাম। এখন শুধু একটাই ভাবনা কী করে সীমানা পেরিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেব।
এরই মধ্যে খবর পেলাম কমলাপুরের কয়েকজন বন্ধু মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে আগরতলা চলে গেছে। সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম, যেভাবেই হোক আমাকেও আগরতলা যেতে হবে। প্রথমে কিছু অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। অনেক ভেবেচিন্তে একটি উপায় বের করি। বাবা সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর প্রাপ্ত অর্থ তৎকালীন এএনজেড গ্রিন্ডলেইজ ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় জমা রেখেছেন। আমি মাঝে মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনে দিতাম। বাবার স্বাক্ষর ছিল টানা হাতের ইংরেজিতে; যা নকল করা সহজ। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ ও অনৈতিক হলেও সে মুহূর্তে অন্য কোনো উপায়ও ছিল না। প্রথম সুযোগেই ব্যাংকের চেক বইয়ের একটি পাতা সরিয়ে ফেলে বাবার স্বাক্ষর নকল করে ২০০ টাকা তুলে নিই। ওই সময়ে ২০০ টাকা নেহাত কম ছিল না।
মহল্লায় বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র আলম ছাড়া কেউ নেই। প্রায় সবাই গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। আমাকেও যত তাড়াতাড়ি ঢাকা ছাড়তে হবে। মুক্তিবাহিনীতে যাওয়ার মতো এখানে আর কেউ নেই। ভেবে দেখলাম, গ্রামের বাড়ি থেকে আগরতলা যাওয়া সহজ হবে। পথও কম, তা ছাড়া গ্রামে সঙ্গীও পাওয়া যাবে। আমাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায়। রাতে বাবাকে জানালাম আগামীকাল গ্রামের বাড়ি যাব। বাবা খুশিই হলেন। কারণ ঢাকা আমার বয়সিদের জন্য নিরাপদ ছিল না। তবে তিনি আমাকে একা ছাড়তে নারাজ। রাস্তায় আর্মির চেকপোস্ট আছে। বিশেষ করে ডেমরা ফেরিঘাটের চেকপোস্টে ভীষণ কড়াকড়ি। দুদিন পর ডেমরা চেকপোস্ট এড়িয়ে নন্দিপাড়া দিয়ে বালু নদী পার হয়ে আবার নৌকায় শীতলক্ষ্যা নদীর ওপারে নেমে হেঁটে গ্রামে চলে গেলাম।
এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য হলো কয়েকজন সঙ্গী জোগাড় করা। ঠিক হয় আমাদের গ্রামের মনু ও লোকমানের সঙ্গে আগরতলা পাড়ি দেব। নৌকাও পেয়ে যাই। নৌকার মাঝির পথ চেনা। এর আগে কয়েকটি মুক্তিবাহিনীর গ্রুপকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন। জুনের ১৫-১৬ তারিখ দুপুরে খাওয়ার পর আমরা তিনজন গ্রামের স্কুলঘাট থেকে রওনা দিই। পথের মধ্যে গোপালদি বাজার থেকে আরও চারজন যাত্রী আমাদের নৌকায় ওঠে; ওরাও আগরতলার যাত্রী। গোপালদি ছেড়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা মূল মেঘনা নদীতে গিয়ে পড়ি এবং সন্ধ্যার মধ্যে নবীনগর থানার মরিচাকান্দি বাজারে পৌঁছি। এখানে আমরা রাত যাপন করব। রাতে মাঝির রান্না করা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
পরদিন খুব ভোরে মাঝি নৌকা ছাড়েন। এবার আমাদের গন্তব্য চারঘাট। চারঘাট পৌঁছাতে সেদিন আমাদের সন্ধ্যা হয়ে যায়। চারঘাট আগড়তলা সীমান্তের কাছাকাছি একটি গ্রাম। চারঘাটে পৌঁছে দেখি, বিভিন্ন বয়সি নারী, পুরুষ ও শিশু সবাই সীমান্ত অতিক্রম করবে বলে অপেক্ষা করছে। এখান থেকে স্থানীয় কোষা নৌকায় ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-কুমিল্লা রোড যা সিএন্ডবি রোড নামে পরিচিত ছিল এবং আখাউড়া-চট্টগ্রাম রেললাইন অতিক্রম করে ত্রিপুরায় পৌঁছুতে হবে। এক ভদ্রলোক বারবার সবাইকে সতর্ক করে বলছিলেন, তিনি না বলা পর্যন্ত যেন কোনো নৌকা না ছাড়ে। তার পরিচয় জানতে চাইলে একজন জানালেন তিনি চারঘাট এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান।
রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টায় আমরা সবাই নৌকায় উঠে রোড ক্লিয়ারেন্স সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকি। মুক্তিবাহিনী ও শরণার্থীদের নৌকা আলাদা করে ভাগ করা হয়েছে। নৌকা থেকে সিএন্ডবি রোডের ব্রিজ দেখা যাচ্ছে। রাস্তার ওপাশে রেললাইন। আমাদের রোড ও রেলওয়ে উভয় ব্রিজ যথাসম্ভব দ্রুত ক্রস করতে হবে। তিন চারজন রাজাকার সদস্য ব্রিজটি পাহারা দিচ্ছে। ঘনকালো অন্ধকার। কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই। কেবল ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। এমন সময় হঠাৎ দূরে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার দিক থেকে রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়ে দুটি গাড়িকে ব্রিজের দিকে আসতে দেখা গেল। ব্রিজ পর্যন্ত এসে গাড়িগুলো থেমে গেল। একটি মিলিটারি জিপ ও একটি পিক্যাপ ভ্যান গাড়ি। আমরা সবাই যেন দম বন্ধ করে আছি যাতে ওরা টের না পায়। দূর থেকে লক্ষ্য করলাম দু’তিনজন পাকসেনা গাড়ি থেকে নেমে পাহারারত রাজাকারদের সঙ্গে কথা বলে যেদিক থেকে এসেছিল আবার সেদিকেই চলে গেল। পাকসেনারা চলে যেতেই শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান একটি নৌকা নিয়ে দ্রুত ব্রিজের কাছে গিয়ে রাজাকারদের সঙ্গে কী যেন কথা বলে ফিরে এসে বললেন, ‘রোড ক্লিয়ার, প্রথমে মুক্তিবাহিনীর নৌকা যাবে, তারপর শরণার্থীরা। আপনারা সবাই নৌকা চালিয়ে দ্রুত ব্রিজ অতিক্রম করে চলে যাবেন’। ভদ্রলোক শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হলে কী হবে, মুক্তিবাহিনীতে যোগদানকারী ছাত্র-যুবক এবং শরণার্থীদের নিরাপদে সীমান্ত অতিক্রম করাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্রিজের পাহারারত রাজাকাররাও চেয়ারম্যানের পথ ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
রোড ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর আল্লাহর নাম নিয়ে আমরা রওনা দিলাম। দ্রুত ব্রিজ দুটি ক্রস করতে হবে। আমরাও নৌকার পাটাতন নিয়ে বৈঠার মতো হাত চালালাম। প্রথমে সিএন্ডবি ব্রিজ ও পরে রেলওয়ের ছোট ব্রিজ পার হয়ে অল্প কিছুদূর যাওয়ার পর, আমাদের নামিয়ে দিয়ে নৌকার মাঝি বললেন, ‘এটাই ত্রিপুরার মাটি। এখান থেকে কিছুদূর গেলেই হাঁপানিয়া শরণার্থীশিবির পাবেন’। মাঝির কথা শুনে আমরা সবাই যেন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি। দম বন্ধ করা পরিবেশ থেকে যেন খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের সামনে খোলা দিগন্ত পথ; এ পথ আমাদের পাড়ি দিতেই হবে। সে রাতে নৌকা থেকে আগরতলার মাটিতে পা রেখে একটি দীর্ঘশ্বাস নিলাম।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক