শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি : সম্পর্ক উন্নয়নে অভিন্ন যাত্রা

অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ভিত্তি ভাষা, অভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ, যা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে রক্তস্রোতে আরও দৃঢ় ভিত্তি পেয়েছে। আর এই ভিত্তির রূপকার বাঙালির ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক ইন্দিরা গান্ধী। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারত সুখে-দুঃখে পরস্পরের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ নামে জাতিরাষ্ট্রের মহান স্থপতি, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে অটটু বন্ধনেরও পথনির্দেশক।
গণতান্ত্রিক দর্শন ও আদর্শিক বাস্তবতা দুদেশের সম্পর্কের মৌলিক ভিত্তি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহিদের আত্মদান এবং অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর মধ্যদিয়ে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে ভারত এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে পাশে পেয়েছিলেন। ভারত বাংলাদেশের প্রায় এক কোটিরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের অনেক সৈনিক প্রাণ দিয়েছিল এবং আহত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মুক্তি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতির পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন করতে ইন্দিরা গান্ধী প্রায় ৩০টি দেশ সফর করে একদিকে সরকারপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সহানুভূতি গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড গঠন, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান, বিজয় অর্জন এবং এর মধ্যদিয়ে দুদেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। বিজয়ের মাত্র তিন মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ বাহাত্তরের মার্চে কুচকাওয়াজের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানিয়ে ভারতীয় মিত্রবাহিনী বাংলাদেশ থেকে ফেরত চলে যায়। এ ঘটনা এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে তুলনাহীন। বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি ‘মৈত্রী চুক্তি’ সম্পাদিত হয়, যেখানে অন্যতম একটি ধারা ছিল-তৃতীয় কোনো রাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশ কিংবা ভারত আক্রান্ত হলে সেই আক্রমণ যৌথভাবে মোকাবিলা করা হবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান নামক ব্যর্থ, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের দর্শন ও আদর্শের রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন হয়। প্রকারান্তরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। অনেকের ধারণা, একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি ভোলার জন্য এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার নেপথ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চির ধরে। গঙ্গার পানিবণ্টন, বাণিজ্য এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে চরম টানাপোড়েন পরিলক্ষিত হয়। ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে মাত্র কয়েক মাসে দুদেশের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টনে ৩০ বছর মেয়াদি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
আবার ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় এলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। মহাজোট সরকারের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দৃঢ় অবস্থানের কারণে একদিকে যেমন বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা ক্রমে সুদৃঢ় হতে থাকে, অপরদিকে ভারতবিরোধী শক্তি কিছুটা হলেও দুর্বল হয় এবং ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার এক সুযোগ পায়। এ ছাড়া ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আমদানি এবং বাংলাদেশকে ভারতের এক মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদান উল্লেখযোগ্য। তবে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ও অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ আমাদের পথচলাকে আরও সুদৃঢ় ও সুসংহত করবে।
বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসাবে ভারতের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্পর্কের ৫০ বছরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন সমুদ্রসীমা ও স্থলসীমানা চুক্তি এবং তা সম্পাদিত হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি রোহিঙ্গা-শরণার্থী বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক সাহসী পদক্ষেপ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। বাংলাদেশ চায় এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে। তবে অনেকের মতে, রোহিঙ্গা ইস্যু নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক। কারণ, উগ্রবাদীরা মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাতে চাইবে এবং এতে সামাজিক নিরাপত্তা দারুণভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য হুমকি নয়, ভারতের জন্যও। এটা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। সুতরাং এই ইস্যুতে ভারতকে আরও কার্যকর ভূমিকায় আশা করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দ্বিপক্ষীয় অগ্রগতি সাধিত হয় ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের মধ্যদিয়ে। এ সময়ে ১৯টি মেগা প্রকল্পের যৌথ উদ্বোধন, ১৯৪৭ সাল থেকে অমীমাংসিত ভারত-বাংলাদেশ স্থল ও সমুদ্রসীমা নির্ধারণ এবং ছিটমহল নিষ্পত্তি, মহাকাশ, তথ্য-প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক, সাইবার নিরাপত্তা, বেসামরিক, পারমাণবিক জ্বালানি, নৌপরিবহণসহ ৯০টির বেশি চুক্তি স্বাক্ষর, ৩০০ কোটি থেকে ৮০০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা, ব্যবসায় বিনিয়োগ বাস্তবায়নে ভারত সরকারের ১৫০০ কোটি টাকার পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প অর্থায়ন, রপ্তানি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে ভারতে বিলিয়ন ডলারের ঋণ, দুই দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে মৈত্রী এক্সপ্রেস রেল সার্ভিস, উপকূলীয় নৌ-চলাচল প্রবর্তন, ভারত থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ, ১৩২০ মেগাওয়াট রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য বিশেষ বৃত্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা মূল্যে ভারতে চিকিৎসা প্রদান, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, দুই দেশের মধ্যে ভিসা সহজীকরণসহ জনগুরুত্বসম্পন্ন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের অভূতপূর্ব সহযোগিতা পরিলক্ষিত হয়। আর তা অত্যন্ত সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির গতিশীল এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই।
‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই’-নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের সফল বাস্তবায়নই বিগত কয়েক বছর পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দূরদর্শী পদক্ষেপে বাংলাদেশ আজ তথ্য-প্রযুক্তির মহাসড়কে নিজেকে সংযুক্ত করেছে।
কোভিড-১৯ অতিমারিতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবন-জীবিকার সব ক্ষেত্র বাংলাদেশ মোটামুটিভাবে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে; যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বহির্বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অত্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে ভারত ১০টি হাইটেক পার্ক প্রকল্পে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। যার মাধ্যমে ভারতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে হাইটেক পার্কের আওতায় বাংলাদেশের সব আইটি সেক্টর বিকশিত হবে। দুই দেশের যৌথ আগ্রহে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সমন্বয় সাধন করে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ভারতকে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে অংশ নিতে সহযোগিতা করছে। ভেড়ামারা, মীরসরাই ও মোংলা অঞ্চলে ভারতের শিল্প প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গড়ে তোলার আগ্রহ রয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল মেঘনা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার অপেক্ষায়। সেখানে যৌথ উদ্যোগে কালি উৎপাদিত হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের অভিন্ন ধারা হাজার বছরের। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে বিগত কয়েক বছর ঢাকায় অত্যন্ত সফল ও কার্যকর উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি নিয়ে বিশ্বভারতীসহ ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এ ধারাকে এগিয়ে নিতে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন স্থাপন করা হয়েছে এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি আরও সুদৃঢ় করতে কাজ হচ্ছে।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভারত থেকে ইতোমধ্যে করোনার টিকা বাংলাদেশে এসেছে, যার মধ্যে উপহার রয়েছে ২০ লাখ ডোজ। এ টিকা দেওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে দুই দেশের উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং সরকারপ্রধানদের দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে।
উল্লেখ্য, পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ এখনো টিকার আওতায় আসতে পারেনি।
দুই বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সম্পর্কের গভীরতা ও পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে সামরিক কুচকাওয়াজে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর চৌকশ একটি দলের সর্বাগ্রে অবস্থানের মাধ্যমে, যা কিনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ও অনন্যসাধারণ ঘটনা হয়ে থাকবে। মুজিববর্ষ ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি ভারতের সম্মান ও ভালোবাসা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, ভারত ও বাংলাদেশ সব সময় একে অপরের সঙ্গে আছে ও থাকবে।
অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার : গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; কার্যকরী সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি; সদস্য-সিনেট ও সিন্ডিকেট (সাবেক)