Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

দীর্ঘ সীমান্ত, অসীম সংগ্রাম

Icon

বিজয় গোস্বামী

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দীর্ঘ সীমান্ত, অসীম সংগ্রাম

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম সীমান্ত, যা ইঙ্গিত দেয় সুরক্ষা ও নিরাপত্তার। দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ এ সীমান্তের শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিত করে।

তবে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে জটিল সীমান্ত হিসাবে পরিচিত। এ সীমানা অবারিত এবং অনেকটা বিপজ্জনকভাবেই। উভয় দেশের মধ্যে ৪০৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানা নদী ও জলাভূমি থেকে শুরু করে কৃষিজমি এবং কিছু জায়গায় মানুষের বসতবাড়ির মধ্য দিয়ে গেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশকে সীমান্তের সুরক্ষার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সীমান্তের কেবল একটি অংশ কাঁটাতারের বেড়াযুক্ত রাখা হয়েছে।

মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডকে পৃথককারী মূল সীমান্ত-জিরো পয়েন্টের পরিবর্তে প্রকৃত সীমানা ভেবে বেড়াগুলোকে ভুল বোঝে। তাছাড়া উভয় দেশের সাংস্কৃতিক ও জাতিগত মিল সীমান্ত কর্মীদের জন্য একটি অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ।

গত তিন বছরে দেড় হাজারের বেশি সীমানা বেড়া অতিক্রমের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। রাতের গাঢ় অন্ধকারে চোরাকারবারি ও অপরাধীরা অবৈধভাবে প্রতিবেশী দেশের সীমানায় প্রবেশ করে। এ ধরনের সব ঘটনা মধ্যরাতের পরে ঘটে।

ফলে সব সীমান্ত হত্যা সংঘটিত হয়েছে রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে। কখনো কখনো সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে এবং নিরাপত্তা কর্মীরাও আহত হন। গত এক দশকে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৭ বিএসএফ সদস্য শহিদ এবং ১ হাজার ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। জিরো লাইনের ১৫০ গজ ছাড়িয়ে এ ধরনের বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অপরাধীদের কখনো কখনো অন্য দেশের সীমানার এক থেকে চার কিলোমিটার অভ্যন্তরে দেখা গেছে, যা মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং সীমান্ত হত্যাকে যথাযথভাবে বললে ‘সীমান্তের ভেতরে হত্যা’ বলা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ও ভারত উভয় সরকারই সীমান্তে টহল সক্ষমতা জোরদার করছে। প্রকৃতপক্ষেই বিএসএফ ও বিজিবি উভয় বাহিনীরই উন্নত আইন প্রয়োগের কারণে সীমান্তে মানব পাচার, চোরাচালান ও অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপের ঘটনা প্রতিটি সূচকেই উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ভূখণ্ডের কারণে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হওয়া সত্ত্বেও আগে প্রচলিত জনপ্রিয় ক্রসিং পয়েন্টগুলো অনস্বীকার্য উন্নতি করেছে। সীমান্তে অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপ হ্রাস পেয়ে মাদকের চালান আটক, জনবল এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সমস্যার মাত্রা সুদূরপ্রসারী।

উদাহরণস্বরূপ, ইউএস-মেক্সিকো সীমান্তে উঁচু দেওয়াল, উন্নততর প্রযুক্তি, ড্রোন ও ওভারহেড হেলিকপ্টার থাকা সত্ত্বেও সীমান্ত লঙ্ঘন করা হয়েছে। সব সময় এমন কয়েকটি অঞ্চল থাকবে যেখানে বেড়া দেওয়া অসম্ভব এবং নিরাপত্তা রক্ষা করা কঠিন।

সীমান্ত টহল কর্মীরা বলেছেন, তারা তাদের সর্বোচ্চ প্রয়াস নিচ্ছেন। বাংলাদেশ ও ভারত ইতোমধ্যেই একটি অ-প্রাণঘাতী অস্ত্র নীতি অনুসরণ করে। বিএসএফ ও বিজিবির দ্বারা গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি ও যৌথ টহল আগের চেয়ে ভালো। সম্প্রতি সব নিরস্ত্র ও নিরীহ সীমান্ত অতিক্রমকারীকে বিজিবির হাতে তুলে দিয়েছে বিএসএফ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ ধরনের ৬০ জন নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছেন।

জীবিকা নির্বাহ, ব্যবসা এবং দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের জন্য প্রতিদিন অনেক মানুষ আইনসঙ্গতভাবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে। প্রকৃতপক্ষে, ভারতে পর্যটকদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশি, যারা স্থল সীমান্ত দিয়ে ভারতে যায়। অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপ কেবল এই মানুষে-মানুষে যোগাযোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

প্রশ্ন থেকেই যায়, একটি সুরক্ষিত সীমানা বলতে কী বোঝায়? ১ হাজার ১১টি সীমান্ত জেলায় বসবাসকারী কয়েক মিলিয়ন মানুষের জন্য এর মানে হলো নিরাপদ আশ্রয় এবং তাদের জীবিকা নির্বাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যা সীমান্তরক্ষী বাহিনী করে থাকে। ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলের অব্যাহত অর্থনৈতিক বিকাশ এবং সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের জন্য আশার আলো দেখাতে পারে।

বিজয় গোস্বামী : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম